সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৩ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

সুস্থতার জন্যে সচেতনতা প্রয়োজন
তৌফিক সুলতান

চিকিৎসাসেবা পাওয়া মানুষের মৌলিক অধিকার। যদিও মানুষ টাকার বিনিময়ে ওষুধ, চিকিৎসা পরামর্শ নিয়ে থাকে। তথাপি এ চিকিৎসা মানুষের পাঁচটি মৌলিক অধিকারের মধ্যে অন্যতম। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য চিকিৎসা নামের সোনার হরিণ আসলে কতটা মৌলিক- এটাই বর্তমানে সবার মৌলিক প্রশ্ন।

বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট ছাড়াও বেশ কিছু কারণে জনগণের এই মৌলিক অধিকারটি আজও পূরণ করা সম্ভব হয়নি। সরকারি-আধাসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো এবং এনজিওগুলো এ ক্ষেত্রে একযোগে সেবার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে না এলে সবার জন্যে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণ আদৌ সম্ভব হবে কি না সন্দেহ। চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতকরণে আমাদের দেশে পর্যাপ্ত ডাক্তার, দক্ষ নার্স ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব অনেক বেশি। সেই সঙ্গে আমাদের অসচেতনতা রোগীদের দুর্ভোগের মাত্রা বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ। এমন অনেক শিক্ষিত লোকও দেখা যায়, যারা জানেনই না- কোন রোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল কোনটি এবং তার অবস্থানটাই বা কোথায়। সবাইকে এমএলএফএফ ডিগ্রিধারী হতে হবে এ কথা আমি বলছি না। তবে স্বাস্থ্য সচেতনতা, প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান, কোন রোগের বিশেষায়িত হাসপাতাল কোনটি এবং তার অবস্থান সম্পর্কিত জ্ঞান যে অনেক ভোগান্তির হাত থেকে রক্ষা করতে পারে, তা সবাই মেনে নিতে বাধ্য। এ সম্পর্কিত জ্ঞান নিঃসন্দেহে বাঁচিয়ে দিতে পারে অনেক মূল্যবান প্রাণ।

আমাদের আশপাশে বা চলার পথে নানা দুর্ঘটনা ঘটে। এই দুর্ঘটনাকবলিত মানুষদের পাশে দাঁড়ানো একজন সুনাগরিকের কর্তব্য। তবে এই পাশে দাঁড়ানোটা যদি হয় আন্তরিকতাপূর্ণ এবং ফাস্ট এইড জ্ঞানসম্পন্ন তবেই তা হয় যথার্থ। ডাক্তার আসার পূর্ব পর্যন্ত আহত বা আক্রান্ত ব্যক্তির আরোগ্যের পথ সুগম করা এবং অবস্থার অবনতি না ঘটে, সে মতো ব্যবস্থা করাই প্রাথমিক চিকিৎসা।

তাই বিশেষ শিক্ষার মাধ্যমে সাধারণ জনগণের মধ্যে চিকিৎসাসেবার প্রাথমিক শিক্ষা ও সচেতনতা প্রদান করা অত্যন্ত জরুরি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কথাই যদি বলি, এখানে প্রতিদিন অসংখ্য নতুন রোগী আসছেন, রোগীকে সহযোগিতা করার মতো অজ্ঞ-বিজ্ঞ দুই ধরনের লোকই পাওয়া যাবে। তারা কাছাকাছি কোনো নিরাময় কেন্দ্রে নিয়েও যাবেন। সমস্যার শুরুটা হয় এরপর থেকে। আমাদের একটি জাতীয় চরিত্র হলো, আমরা ততক্ষণ পর্যন্ত অন্যের স্বার্থের বেলায় আন্তরিক, যতক্ষণ না তার সঙ্গে নিজ স্বার্থের সংযোগ ঘটে। আর এ কারণেই সমস্যার শুরু হয়, কেননা এর পরবর্তী সময় ধাপগুলোই কারো না কারো স্বার্থসংশ্লিষ্ট।

কিছু অভিযোগ, যা অনেক আগে থেকে করা হচ্ছে। যেমন- বিভিন্ন হাসপাতালে নার্স এবং ডাক্তারের কাজ করে থাকেন ওয়ার্ডবয় ও আয়ারা। ফলে অনেক দুর্ঘটনাও ঘটে। মানুষের জীবন ঝুঁকিতে ফেলে এ ধরনের কাজ যে শুধু সরকারি হাসপাতালেই লক্ষ্য করা যায়, বিষয়টি এমন নয়। প্রাইভেট হাসপাতালে তা আরও ভয়াবহ রূপ ধারণ করে।

প্রাইভেট হাসপাতালে ওয়ার্ডবয় গলার অপারেশন করতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুর মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটতে দেখা যায়। একই ইনস্ট্রুমেন্ট কোনো ধরনের ভায়েল ছাড়াই একের অধিক রোগীর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতেও দেখা যায়। তারপরও বন্ধ হচ্ছে না এসব অনিয়ম। বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটলে অভিযুক্ত হাসপাতাল কিছুদিনের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়। কিছুদিন পর আবার হাসপাতালের সব কার্যক্রম চালু করা হয়।

সমস্যার সমাধানে প্রস্তাবনা

১. একই ডাক্তার দিয়ে যাবতীয় জটিল রোগের চিকিৎসার সনাতনী পদ্ধতি পরিহার।

২. সঠিকভাবে সরকারি ওষুধ সরবরাহ এবং বিলি নিশ্চিত করা।

৩. ডাক্তারদের চাকরির বয়স এবং যোগ্যতা সাপেক্ষে প্রমোশনের ব্যবস্থা করা।

৪. প্রতিটি নিরাময় কেন্দ্রে অন্তত একজন পাবলিক রিলেশন্স অফিসার নিয়োগ।

৫. প্রয়োজন অনুযায়ী মানসম্মত মেডিক্যাল কলেজ ও নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা।

৬. পরিচালনা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনতে হবে।

৭. জেলা, উপজেলা, গ্রাম পর্যায়ে অবস্থানরত ডাক্তারদের শহরের তুলনায় বেশি সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা।

৮. প্রতিটি নিরাময় কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সংখ্যক চিকিৎসক-নার্স এবং মেডিক্যাল ইক্যুপমেন্টের ব্যবস্থা করা।

৯. প্রত্যেক ডাক্তারকে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এফসিপিএস ও উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে বিশেষজ্ঞ করা।

১০. সিভিল সার্জন অফিস থেকে প্রতিটি নিরাময় কেন্দ্র ক্লোজ মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা গ্রহণ।

১১. যেসব ব্যক্তি হাসপাতাল পরিচালনা করেন, তাদের দেশের বাইরে চিকিৎসা গ্রহণ নিষিদ্ধ করা উচিত।

১২. জনপ্রতিনিধি এবং সরকারি কর্মকর্তাদের স্থানীয় সরকারি নিরাময় কেন্দ্র থেকে চিকিৎসা নেওয়া উচিত।

১৩. রোগী থেকে শুরু করে চিকিৎসক, নার্স, ওয়ার্ডবয়সহ সবার সুযোগ-সুবিধা এবং সেবা নিশ্চিত করা।

১৪. স্বাস্থ্যখাতের বাজেট কীভাবে কোথায় খরচ করতে হবে, তার পরিকল্পনা ও তদারকি করার দক্ষতা।

১৫. পরিকল্পনামাফিক কাজ না হলে জবাবদিহি করার পরিবেশ থাকতে হবে।

১৬. চিকিৎসকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।

১৭. রোগীর সঙ্গে চিকিৎসকদের যোগাযোগ দক্ষতা বাড়ানো জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে।

ঢামেক হাসপাতালের আশপাশের পরিবেশের দিকে নজর দিতে হবে। এর সমাধান খুঁজে বের করতে হবে। একই সঙ্গে প্রতিটি হাসপাতালের আশপাশের পরিবেশ সুন্দর রাখতে হবে। সরকারি হাসপাতালগুলোর ভেতরে-বাইরে দালালের আনাগোনা রোধ করতে হবে। ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।

স্বাস্থ্য বা চিকিৎসাসেবা পাওয়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার। সরকারের দায়িত্ব স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা। সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত নিরাময় কেন্দ্রগুলোতে রোগীরা সেবা নিতে আসেন মূলত বিনামূল্যে মানসম্মত চিকিৎসার আশায়। গরিব রোগীদের শেষ আশ্রয়স্থল সরকারি হাসপাতাল। তাই প্রয়োজন যুগোপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ এবং ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা খাতের আমূল পরিবর্তন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়