প্রকাশ : ২২ মে ২০২৩, ০০:০০
যাঁরা মাতৃত্ব ধারণের বয়স-শ্রেণিতে আছেন অর্থাৎ যাঁদের বয়স পনের হতে চুয়াল্লিশ বছরের, সে রকম নারীদের এক বিশেষ রোগ-সমষ্টিকে এক কথায় পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম বলে। পলি মানে অনেক আর সিস্ট মানে ভেতরে জলীয় অংশ ধারণকারী মটরের দানার মতো গঠন বিশেষ। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত সন্তান ধারণকারী বয়স-সীমার নারীদের ডিম্বাশয়ের চারদিকে অন্যূন দশটা বা তার অধিক সিস্ট মুক্তোর মালার মতো জড়িয়ে থাকে। এতে নারীদেহে পুরুষ হরমোন তথা অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যায়। সারাবিশ্বে শতকরা ২.২% ভাগ হতে ২৬.৭% ভাগ নারীরা এই রোগের শিকার হয় এবং শতকরা ৭০% ভাগ নারী এ রোগে আক্রান্ত হলেও তা অনির্ণীত থাকে।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের চারিত্র
* রক্তে অতিরিক্ত পুরুষ হরমোন বা অ্যান্ড্রোজেন বা টেস্টোস্টেরন
* মাসিক ঋতুস্রাব অনিয়মিত হওয়া
* ডিম্বাশয়ে সিস্ট বা ক্ষুদ্র রসথলি।
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে আক্রান্ত নারীদের দেহে বেশকিছু পরিবর্তন ঘটে। যেমন :
* ওজন স্বাভাবিকের চেয়ে অধিক বৃদ্ধি পাওয়া
* গলার স্বর মোটা হয়ে যাওয়া
* মুখে ব্রণ ওঠা
* মাথার চুল পড়ে যাওয়া
* দেহের বিশেষ ও বিভিন্ন অংশে পুরুষের মতো লোম জাগ্রত হওয়া
* মাসিক ঋতুস্রাব অনিয়মিত হওয়া
* সন্তান ধারণে অক্ষমতা তৈরি হওয়া
* রক্তে কোলেস্টেরল বা চর্বির মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়া।
* রক্তে ইনসুলিনের প্রতি প্রতিরোধ গড়ে তোলা ও ফলশ্রুতিতে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়া
* রক্তে কোলেস্টেরলের উচ্চমানের কারণে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়া
* ইনফ্ল্যামেশন বা বিভিন্ন অঙ্গের প্রদাহ তৈরি হয়। এই প্রদাহ শরীরে ইনসুলিন নিঃসরণ বাড়িয়ে দেয়।
রোগ নির্ণয়
* রোগী হতে রোগের বিবরণ ও ইতিহাস অবগত হওয়া। এদের বছরে আটবারের বেশি মাসিক ঋতুস্রাব হয় না।
* রোগীর ওজন পরিমাপ
* ওভারি ও জরায়ুর আল্ট্রাসনোগ্রাম
* রক্তে ডায়াবেটিস পরিমাপ
* রক্তে অ্যান্ড্রোজেন বা টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা পরিমাপ
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের ঝুঁকি
* বন্ধ্যাত্ব
* অবেসিটি
* হার্সুইটিজম
* হার্ট ডিজিজ
* মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন
* ডায়াবেটিস
* মুখমণ্ডলে ব্রণ
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম হতে পরিত্রাণের উপায়
* নিয়মিত শরীর চর্চা
* দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণ
* খাদ্যাভাসে পরিবর্তন আনয়ন
* নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবনের মাধ্যমে অ্যান্ড্রোজেনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ
যেসব খাবার গ্রহণযোগ্য
* উচ্চমাত্রার আঁশজাতীয় খাবার গ্রহণ যেমন : ব্রকলি, ফুলকপি
* মাছ
* প্রদাহ বিরোধী মশলা জাতীয় খাদ্য ও স্বাদকারক সেবন না করা।
* টমেটো
* কাঁচা ও লাল মরিচ
* সীম
* চীনা বাদাম
* শুকনো মরিচ ও কাঁচা মরিচ
পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমে ব্যবহৃত ঔষধ
* ওজন কমাতে মেটফরমিন
* মাসিক ঋতুস্রাব নিয়মিত রাখতে জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি সেবন
* ডিম্বস্ফোটন ত্বরান্বিত করতে ক্লমিফিন সাইট্রেট ব্যবহার।