প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০
নিপাহ ভাইরাস একটি জুনোটিক বা প্রাণীবাহিত ভাইরাস, অর্থাৎ এটি প্রাণী থেকে মানুষের শরীরে ছড়ায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ রোগটি জীবাণু ধারণকারী প্রাণীর মাধ্যমে সংক্রমিত খাবার থেকে অথবা সংক্রমিত মানুষের শরীর থেকে সুস্থ মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হলে একেবারে উপসর্গবিহীন থেকেও মারাত্মক মস্তিষ্কের প্রদাহজনিত (এনকেফালাইটিস) সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বাংলাদেশে ২০০১ সালে মেহেরপুর জেলায় সর্বপ্রথম এ রোগটি দেখা দেয়, যেটি ২০০৪ সালে ওই ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করে নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা হয়। এর পর থেকে প্রায় প্রতিবছরই বাংলাদেশে নিপাহ ভাইরাস আক্রান্ত রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর ঝুঁকি প্রায় ৪০-৭৫ শতাংশ। নিপাহ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশের ৪ থেকে ১৪ দিনের মাঝে সাধারণত রোগের লক্ষণ প্রকাশিত হয়। আবার লক্ষণ প্রকাশ ছাড়াও ভাইরাসটি ৪৫ দিন পর্যন্ত সুপ্তাবস্থায় থাকতে পারে।
উপসর্গ
প্রথম দিকে জ্বর, মাথাব্যথা, পেশিতে ব্যথা, বমি, গলাব্যথা বা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো উপসর্গ নিয়ে অধিকাংশ রোগী চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হন। কিন্তু অতিদ্রুত মাথাঘোরা, তৃষ্ণা, বেহুঁশ হয়ে যাওয়া, অসংলগ্ন প্রলাপ এবং মস্তিষ্কের তীব্র সংক্ৰমণজনিত স্নায়বিক লক্ষণ, শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা দেখা দেয় এবং অধিকাংশ রোগী মৃত্যুমুখে পতিত হন। অল্পসংখ্যক মানুষ প্রাথমিকভাবে সুস্থ হয়ে উঠলেও পরবর্তীকালে মস্তিষ্কের সংক্রমণে ভুগতে পারেন।
সংক্রমণ
বাংলাদেশ ও ভারতে মূলত ফলভোজী বাদুড়ের প্র¯্রাব অথবা লালা দিয়ে দূষিত ফল বা ফলের পণ্য (যেমন, কাঁচা খেজুরের রস) খাওয়ার মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। পরবর্তী সময়ে আক্রান্ত মানুষের সংস্পর্শে অন্য মানুষ আক্রান্ত হয় এবং এভাবে রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকে। মালয়েশিয়া ও সিঙ্গাপুরে প্রধানত শূকরের মাধ্যমে নিপাহ ভাইরাস ছড়ালেও বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত কাঁচা খেজুরের রসের মাধ্যমে এ রোগ ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে। আবার বরই, পেয়ারা ইত্যাদি ফল যা বাদুড় খেয়ে বিভিন্ন স্থানে ফেলে রাখে, সেই আধা খাওয়া ফল খেলেও মানুষ আক্রান্ত হতে পারে। আমাদের দেশে সাধারণত শীতকালে (ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল) এ ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর পাওয়া যায়।
পরীক্ষা
প্রস্রাব, রক্ত, সেরেব্রো স্পাইনাল ফ্লুইড, থ্রোট সোয়াব ইত্যাদি নমুনা পরীক্ষা করে ভাইরাসটি শনাক্ত করা যায়। যেহেতু নিপাহ ভাইরাস একটি প্রাণঘাতী জীবাণু, সেহেতু এটি বায়োসেফটি লেভেল-৪ ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হয়। তবে সংগ্রহের সময় নমুনাগুলো যদি নিষ্ক্রিয় করা হয়, সে ক্ষেত্রে এটি বায়োসেফটি লেভেল-২ পরীক্ষাগারে সাবধানতার সঙ্গে পরীক্ষা করা যেতে পারে।
সতর্কতা
কাঁচা খেজুরের রস ও বাদুড়ে খাওয়া ফলমূল খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। সেবা বা জরুরি প্রয়োজনে আক্রান্ত রোগীর কাছে যেতে হলে বিশেষ সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে বা পিপিই পরিধান করতে হবে। এখন পর্যন্ত নিপাহ ভাইরাসের কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। বাংলাদেশের নিপাহ ভাইরাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোতে সচেতনতা বৃদ্ধিতে বিভিন্ন উদ্যোগ বা কর্মসূচি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যাতে সাধারণ মানুষ এই রোগ থেকে রক্ষা পেতে পারে।