প্রকাশ : ১২ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০
আজকাল সরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ ছাড়া সুনাম খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই অবস্থা শহরের চেয়ে গ্রামে আরো ভয়াবহ। যার মূল কারণ, গ্রামের সরকারি হাসপাতালে নিয়োগপ্রাপ্ত চিকিৎসকরা গ্রামে থাকতে চান না। প্রায় সকলেই সুযোগ পেলে শহরে ছুটে যান। আবার অনেকেই এলাকায় থাকলেও নিজের প্রাইভেট প্র্যাকটিসকে জমিয়ে তোলার চেষ্টা করেন। যদিও এতে কিছুটা হলেও গ্রামের মানুষের সুবিধাই হয়।
কিন্তু হাসপাতালই সকল ধ্যান ও জ্ঞানের কেন্দ্র এমন চিকিৎসক খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। সেক্ষেত্রে ভাগ্যবান ফরিদগঞ্জবাসী। অর্থের লোভকে দূরে ঠেলে হাসপাতালে আসা রোগীদের আপন মনে নিরবচ্ছিন্ন সেবা দিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত তৈরি করেছেন ডাঃ মুজাম্মেল হোসেন। বিশেষ করে সুনামের সাথে আলোচনায় আসার কারণ ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফরিদগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আরএমও (আবাসিক মেডিকেল অফিসার)-এর দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি রোগীর নিরবচ্ছিন্ন সেবা দেয়া। উপজেলা ছেড়ে সমগ্র জেলায় সুনামের খ্যাতি অর্জন করে রোগীদের মনে আস্থার পেরেক গেড়েছেন তিনি।
সরজমিন পরিদর্শনে সবচেয়ে বেশি নজর কেড়েছে, নির্দিষ্ট অফিস ডিউটির দিকে না তাকিয়ে সকাল-বিকেল-রাত সমানে হাসপাতালের দায়িত্ব পালন করছেন এ চিকিৎসক। নিজের অফিস রুমে বসে না থেকে কখনো জরুরি বিভাগে বা শিশু ওয়ার্ড অথবা অন্য কোনো ওয়ার্ডে ছুটাছুটি করছেন এবং রোগীদের সাথে পরিবারের সদস্যের মতো কথা বলছেন। তিনি শিশুর চিকিৎসার ক্ষেত্রে অ্যান্টিবায়োটিক চিকিৎসাপদ্ধতি বাদ দিয়ে খুবই সাধারণ চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করে তুলছেন। রোগীর প্রতি তার ব্যস্ততা দেখে যে কোনো মানুষের সরকারি হাসপাতালে প্রতি নেতিবাচক ধারণা পরিবর্তনের সাথে গলাকাটা বাণিজ্য বেসরকারি হাসপাতালের দৌরাত্ম কমে যাবে।
নবজাতক শিশুর বাবা বেসরকারি চাকুরিজীবী রিয়াজ বলেন, আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান অপারেশনের মাধ্যমে একটি প্রাইভেট হাসপাতালে কন্যাসন্তান হয়েছে। জন্মের পর থেকে আমাদের কন্যা বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলো। প্রাইভেট হাসপাতালের লোকজন বলেছিলো, তাকে জেলা হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে। কিন্তু অন্য রোগীদের পরামর্শে মুজাম্মেল ডাক্তারকে (ডাঃ মুজাম্মেল হোসেন) দেখালে তিনি কোনো প্রকারের অ্যান্টিবায়োটিক ছাড়াই প্রয়োজনীয় ঔষধ আর পরামর্শ দিয়েছেন, এতে আমার মেয়ে সুস্থ হয়ে উঠেছে।
পূর্ব বড়ালী গ্রামের সোহাগী নামের এক রোগী জানান, মুজাম্মেল ডাক্তারের পরামর্শে প্রাইভেট হাসপাতাল ছেড়ে আমি এখানে ভর্তি হয়েছি। পরে নরমাল ডেলিভারির মাধ্যমে আমার কন্যাসন্তান হয়েছে।
কাছিয়াড়া এলাকার ফখরুল আলম নামের এক শিশুর বাবা জানান, আমি প্রাইভেট হাসপাতালের চিকিৎসকদের অনেক সেবা নিয়েছি আমার ছেলের জন্য, তেমন ভালো কোনো রেজাল্ট পাইনি। পরে সরকারি হাসপাতালে এসে মুজাম্মেল ডাক্তারের সেবার ধরন দেখে অনেক ভালো লেগেছে। আমার ছেলের অবস্থাও আগের চেয়ে অনেক ভালো। বেশ কজন রোগী ও তাদের স্বজনদের সাথে কথা হলে তারাও জানান একই কথা।
ডাঃ মুজাম্মেল হোসেন বলেন, একজন চিকিৎসক হিসেবে শপথ নিয়েছি মানুষের সেবা করার। তাই আমার কাছে আসা রোগীকে প্রথমেই তার মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠতে সাহস দেয়ার চেষ্টা করি। ফলে তার মনের জোর বেড়ে যায়। এতে রোগী দ্রুত আরোগ্য হয়।
* চিকিৎসাঙ্গন বিভাগের লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]