রবিবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৪ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   বয়ারচর সংযোগ ব্রিজ ও বেড়িবাঁধ রক্ষায় এলাকাবাসীর মানববন্ধন
  •   জার্মানিতে কঠিন হচ্ছে রাজনৈতিক আশ্রয়
  •   ইতালির দ্বীপে নৌকাডুবিতে নিখোঁজ ২১
  •   অভিভাবকহীনতায় দিশেহারা চাঁদপুরের আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা
  •   আহতদের দেখতে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে প্রধান উপদেষ্টা

প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর কণ্ঠে আমার এক দশকের ভালোবাসা

উজ্জ্বল হোসাইন
চাঁদপুর কণ্ঠে আমার এক দশকের ভালোবাসা

সালটা ২০০৩। চাঁদপুর সরকারি কলেজের লাইব্রেরীতে অন্যান্য পত্রিকার সাথে দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ পড়া মানে পুরো চাঁদপুরকে নিজের আয়ত্তে নেয়া। যদি না পড়তাম, তাহলে মনে হতো আজকে অনেক কিছুই অজানা রয়ে গেলো। সেই থেকে কখন যে প্রিয় পত্রিকার প্রেমে পড়ে গেলাম তা বুঝতেই পারিনি। শুধু সেটা নয়, এবার মনের কোণে শখ হলো কীভাবে এই পত্রিকাটির সাথে কাজ করা যায়। ২০১৪ সালের শেষদিকে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় মনের ইচ্ছার কথা বলে ফেললাম। আমাকে জানালেন, তোমাকে চাঁদপুর কণ্ঠে কী হিসেবে কাজ করাবো আগে সেটি আমাকে ভাবতে হবে। কারণ তোমাকে তো আর যেমন তেমন কাজে লাগানো যাবে না। তিনি আমাকে নিয়ে তাঁর উচ্ছ্বাসটুকু এভাবেই প্রকাশ করেছিলেন।

ক’দিন পরে চাঁদপুর কণ্ঠের সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপনের মাধ্যমে আমাকে অফিসে ডাকা হলো। আমার হাতে একটি খাম দিয়ে বললেন, এটি পরে খুলে দেখলেও চলবে। তিনি আমাকে জানালেন, বেতন দিয়েতো তোমাকে রাখা যাবে না, তবে তুমি যে কাজটি করবে সেটির জন্যে সামান্য সম্মানী দিতে পারবো। আমার বুঝতে বাকি রইল না যে, আসলে খামটি আমার চাঁদপুর কণ্ঠে নিয়োগপত্র। আমি মনে মনে খুবই আনন্দিত হলাম। সহাস্যে জনাব কাজী শাহাদাতকে জানালাম, আমি সম্মানীর চিন্তা করে আপনার কাছে আসিনি। আমি আসলে আপনার কাছাকাছি থাকতে চাই। আমি আপনার কাছ থেকে সংবাদপত্র ও নিউজ সম্পর্কে অনেক কিছু শিখতে চাই। তিনি অনেকটা শাসনের চোখে আমাকে বললেন, কাজই প্রমাণ করবে কী শিখতে পেরেছ।

২০১৪ সালের ডিসেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে অফিসিয়ালি চাঁদপুর কণ্ঠের সাথে জড়িত হই। আমার ওপর আস্থা রেখে কাজী শাহাদাত মহোদয় চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনটি দেখতে বলেন। আমার পদবী হলো সিস্টেম ডেভেলপার। শুরুতে আমার টার্গেট ছিলো নূতন নূতন প্রযুক্তির সাথে পত্রিকাটিকে খাপ খাইয়ে নেয়া। সে মোতাবেক চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনটি নিয়ে কাজ করা শুরু করি। শুরুতে সাদামাটা একটি অনলাইন ভার্সন ছিলো। সাদামাটা হলেও তখনই চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সন সাত বছর পেরিয়েছিলো। যেটি তখন মফস্বলের কোনো কোনো পত্রিকা চিন্তাও করেনি। একসাথে অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে চাঁদপুর কণ্ঠ ছিলো সকলের চেয়ে আলাদা। শুরু করলাম নতুন এক অভিযাত্রা। যখনকার খবর তখনই প্রকাশ। এক সাথে অনলাইন ও মাঝে মাঝে প্রিন্ট ভার্সনের কাজ করতে থাকি। কাজ করতে গিয়ে অর্জন করেছি নানা রকম অভিজ্ঞতা। চাঁদপুর কণ্ঠের স্টাইল, বানান রীতি অন্যদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা।

চাঁদপুর কণ্ঠের অফিস ছিলো রেড ক্রিসেন্ট ভবনের ২য় ও ৩য় তলায়। ২য় তলায় যুগ্ম সম্পাদক গিয়াসউদ্দিন মিলন ভাই, ম্যানেজার সেলিম রেজা ভাই, সহ-সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন ভাই ও সিস্টেম ডেভেলপারের কক্ষ ছিলো। আর রিপোর্টাররা আমাদের কক্ষের বাইরে চেয়ার টেবিলে বসে নিউজ লিখতেন। ৩য় তলায় বিশাল আকারে ছিলো প্রধান সম্পাদক মহোদয়ের কক্ষ। বার্তা বিভাগে এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাই, ভেতরে কম্পিউটার বিভাগ, আর কম্পিউটার বিভাগের সামনে যুগ্ম সম্পাদক মির্জা জাকির ভাই, বার্তা সম্পাদকের কক্ষের পাশেই সম্পাদক ও প্রকাশক অ্যাডঃ ইকবাল-বিন-বাশারের সজ্জিত কক্ষ। বেশ সাজানো-গোছানো মফস্বলের একটি পত্রিকা অফিস। এতো বড়ো অফিস মফস্বলের কোনো পত্রিকা অফিসের ছিলো বা আছে কি না তা আমার জানা নেই। পত্রিকা অফিসটি রেড ক্রিসেন্ট ভবনের ২টি ফ্লোরে বিস্তৃত হওয়ায় যে কারো মনে খটকা লাগতো। এতো বিশাল অফিসের একটাই কারণ ছিলো, সেটি হলো নিজস্ব স্টাইল, অফিস ব্যবস্থাপনায় কঠোর নিয়ম রক্ষা। চাঁদপুর কণ্ঠের আর্কাইভ, যেটি নিখুঁতভাবে সংরক্ষিত। বেশ ভালোভাবেই চলছিলো সব কাজ।

হঠাৎ একদিন ঘোষণা না দিয়েই চাঁদপুর কণ্ঠের কম্পিউটার বিভাগের মৃদুল রায় টিটু, বড়ো সাব্বির, ছোট সাব্বির অফিসে অনুপস্থিত। একসাথে তিনজন অপারেটর পত্রিকা অফিসে না আসায় মন খারাপ করে বসে ছিলেন প্রধান সম্পাদক মহোদয়। তিনি কোনো উপায় না পেয়ে আমাকে অফিস সহায়ক তাপসের মাধ্যমে খবর পাঠালেন। সাধারণত তিনি আমাকে ইন্টারকমে ডাকেন। আজকে হঠাৎ তাপসের মাধ্যমে ডাকায় আমার বুঝতে বাকি রইলো না অফিসে কিছু একটা হয়েছে।

আমি কালক্ষেপণ না করে ৩য় তলায় প্রধান সম্পাদক মহোদয়ের কক্ষে গেলাম। তিনি অনেকটা হতাশ হয়েই আমাকে বললেন, আজকে তিনজন অপারেটর না বলেই কম্পিউটার বিভাগে অনুপস্থিত। কী করবো বুঝতেছি না। ওরা দুজন (রিয়াজ ও জয়ন্ত) আছে, তারা কি পারবে? আমি বললাম, আপনি কোনো চিন্তা করবেন না, আমিতো আছি। আমার কথা শুনে তিনি সাহস পেলেন। এর সাথে আমাকে এটিও বললেন, কম্পিউটার বিভাগে অপারেটর না নেয়া পর্যন্ত তুমি ওই বিভাগে কাজ করো। কিছুদিন পর লোক পাওয়া গেলে তুমি তোমার বিভাগে চলে যেও। আমি বললাম, ঠিক আছে, আপনি এ ব্যাপারে কোনো চিন্তা করবেন না।

২য় তলা থেকে আসি ৩য় তলার কম্পিউটার বিভাগে। প্রথম দিনের ধাক্কা সহকর্মী রিয়াজ, আমি ও জয়ন্ত সামলে নিলাম। সেদিন কাজ করতে করতে আমাদের প্রায় রাত ২টা বেজে গেলো। পেস্টার জাহাঙ্গীর ট্রেসিং পেপার নিয়ে বিপণীবাগ আনন্দ অফসেট প্রেসে যাবেন। তিনি আমাকে বললেন, আপনার বাসাতো তালতলা, চলেন আমার সাথে। তার সাথে প্রেসে গিয়ে দেখি মেশিনম্যান ও শিমুল বসে আছে পত্রিকা ছাপার অপেক্ষায়। আমি সেখান থেকে তালতলার বাসায় গেলাম। আমার সহধর্মিণী আমাকে দেখে বললেন, এতো রাত হলো কেনো? আমি বললাম, অফিসে একটু ঝামেলা হয়েছে তাই। সকাল ৮টায় কীভাবে চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতালে (আমার স্থায়ী চাকুরিতে) যাবো, সেটাই ভাবছিলাম। রাতের আহার সেরে ঘুমাতে ঘুমাতে ৩টা। ৪ ঘন্টার চিন্তাযুক্ত ঘুম দিয়ে সকালে ঠিকই উঠে গেলাম। অফিসে গেলাম আধো আধো ঘুমে। অফিসের ডিউটি শেষে (দুপুর ২টায়) বাসায় এসে লাঞ্চ সেরেই ঘুমিয়ে পড়লাম। ঠিক ৬টায় আমার ঘুম ভাঙ্গলো। ঘুম থেকে উঠেই আবার পত্রিকা অফিসে। আজকের প্রস্তুতি নিয়েই অফিসে গেলাম। কাজ কীভাবে হবে সেটা কাজী শাহাদাত সাহেব আগেই প্লান করে রেখেছেন। রিয়াজ আর আমিও প্রস্তুত, সাথে আছে জয়ন্ত। এর মাঝে শিক্ষানবিশ হিসেবে সোহাগ, মমিন যোগদান করে। তাদের যোগদানের পর কাজ ভাগাভাগি হয়ে গেলো। রাতের ডিউটি ভাগ করা হলো। অল্পদিনের মধ্যেই মমিন খান, সোহাগ, আল-আমিন তারা দক্ষতা অর্জন করলো।

চলতে থাকলো প্রিন্ট ভার্সন ও অনলাইন ভার্সনের কাজ এক সাথে। দুটো কাজ এক সাথে করতে করতে অবশেষে এগুলোই আমার মনে গেঁথে গেলো। মাঝে মাঝে পত্রিকার নিউজ এডিট করতে গিয়ে খুন, ধর্ষণ ও পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু কিংবা আগুনে পুড়ে বা দুর্ঘটনায় মানুষের বীভৎস ছবি দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতো। এমনও হয়েছে পত্রিকার এসব নিউজ দেখে আমি বহু রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি। একবার চাঁদপুর শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কে তেলের দোকানে আগুন লাগে। নিউজ সংগ্রহ করতে আমাদের রিপোর্টার ও ফটোগ্রাফার চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম সেখানে গেলেও আমরা নিউজ পাচ্ছিলাম না। কারণ আগুনের ভয়াবহতা ও বীভৎসতা এতোই ছিলো যে, ফায়ার সার্ভিস কোনোভাবেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারছিলো না। দেরি দেখে আমি, বার্তা সম্পাদক এএইচএম আহসান উল্লাহ ভাই পেস্টার জাহাঙ্গীর আলমসহ সরেজমিনে গেলাম। আগুন দেখে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠলো। সেই নিউজটি ছিলো--বঙ্গবন্ধু সড়কে স্মরণকালের ভয়াবহ আগুন : চাঁদপুর জেলা শহরের বঙ্গবন্ধু সড়কের মিজি বাড়ি সংলগ্ন এলাকায় একটি জ্বালানি তেলের দোকানে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ রাত পৌনে ১টার দিকে আগুনের সূত্রপাত হয়। চাঁদপুর ফায়ার সার্ভিস (উত্তর), পুরাণবাজার ফায়ার সার্ভিস মিলে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ করছে। স্থানীয় ক’জন জানিয়েছেন, আগুন তেলের দোকানে হওয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং লেলিহান শিখা অনেক উপরে উঠায় বিদ্্ুযতের লাইনে লেগে গেছে। প্রত্যক্ষদর্শী আরেকটি সূত্র জানিয়েছে, জ্বালানি তেলের বাউচার থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়। ...ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের বরাত দিয়ে রাত ১টা ৩৩ মিনিটে জানা গেছে, আগুন তেলের থেকে সূত্রপাত্র হওয়ায় ফায়ার সার্ভিসের পানির সাথে তেলের আঁচ লেগে যাচ্ছে, আর আগুন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সবশেষ খবর : আগুন নিয়ন্ত্রণ এখনো সম্ভব হয়নি। চাঁদপুর জেলা শহরে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। আশেপাশে কয়েকটি গ্যাস লাইন ও সংযোগ থাকায় আগুন আরো বেশি ছড়িয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সেই আগুন নিয়ন্ত্রণে এলে আহত ও ক্ষতির পরিমাণ জেনে চাঁদপুর কণ্ঠ পূর্ণাঙ্গ নিউজ প্রকাশ করে সেদিন। সেই নিউজ এডিট, ট্রেসিং ও পেস্টিং করতে আমাদের ভোর ৫টা বেজে যায়। সচরাচর আমাদের ১টা থেকে দেড়টার মধ্যে কাজ শেষ হয়।

প্রিন্ট ভার্সনে কাজ করলেও অনলাইনের উন্নয়ন নিয়ে সবসময় মনের মধ্যে একটা চিন্তা থাকতো কীভাবে এটির উন্নতি করা যায়। কিন্তু আমি তো একা পারবো না। ওয়েব ডেভেলপার ‘অরেঞ্জ বিডি’কে বারবার তাগিদ দিলেও তারা বলতো, আপনি একা পারবেন না। প্রযুক্তির উন্নয়ন বিবেচনায় পূর্বের অনলাইন ভার্সনটি আমার পছন্দের ছিলো না। প্রায় সময় বিষয়টি নিয়ে শাহাদাত আংকেলের সাথে কথা হতো। কিন্তু সাহস করতাম না। কারণ আমিতো দু ভার্সনে কাজ নিয়ে ব্যস্ত। এভাবে অনলাইন ও প্রিন্ট ভার্সনে কাজ করতে করতে ৬টি বছর অতিক্রম হলো।

এরই মাঝে অনেক মফস্বলের পত্রিকা ঢাকা থেকে প্রিন্ট করা শুরু করলো। কিন্তু চাঁদপুর কণ্ঠ নিজস্ব প্রেসে চাঁদপুর থেকেই প্রিন্ট হতো। সময় যতো যেতে থাকলো, আনন্দ অফসেট প্রেসের মেশিনের ঝামেলা ততোই বাড়তে থাকলো। আজ এটা নষ্ট তো কাল ওটা নষ্ট। আমি জনাব কাজী শাহাদাতকে বললাম যে, আমরা পত্রিকাটি কম্পিউটারে সেটআপ দিতে চাই। তিনি আমাকে বললেন, সেটি কীভাবে সম্ভব? আমি বললাম যে, ইলাস্ট্রেটরে পেজ মেকআপ দিবো। সেজন্যে অন্তত দুজনকে প্রস্তুত করতে হবে। কথামতো সহকর্মী আলআমিন হোসাইন, কাজী আজিজুল হাকিম নাহিনকে মাই কম্পিউটারে এডোবি ইলাস্ট্রেটরের কাজ শেখানোর জন্যে প্রেরণ করা হলো। প্রায় দুই-তিন মাসে তারা মোটামুটি এ বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করলো। এখানে একটি কথা না বললেই নয়, চাঁদপুর কণ্ঠের নিবেদিতপ্রাণ, তরুণ লেখক ও গবেষক মুহাম্মদ ফরিদ হাসানের নিয়ন্ত্রণাধীন ফিচার পাতাগুলো তিনিই প্রথম ইলাস্ট্রেটরে বের করতেন। অবশেষে তাদের অভিজ্ঞতা যাচাই করে চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক জনাব কাজী শাহাদাতকে জানালাম যে, আলআমিন হোসাইন ও নাহিন পত্রিকার পেজ মেকআপ করতে পারবে। এরই মাঝে আমরা কয়েকটি পাতা ইলাস্ট্রেটরে মেকআপ দিতে শুরু করলাম। আগে যেখানে ট্রেসিং বের করে টুকরো টুকরো করে কাটা হতো, সেখানে আমরা চার-পাঁচটি ট্রেসিং দিয়েই পুরো একটি পাতা সাজাতাম। কাজ করতে করতে দেখলাম যে, আসলে এভাবে করা সম্ভব।

দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের কার্যালয় রেড ক্রিসেন্ট ভবন হতে স্ট্র্যান্ড রোডস্থ বর্তমান কার্যালয় ডাঃ এমএ গফুরের বিল্ডিংয়ে স্থানান্তর করা হলো। মুছে গেলো আমাদের অফিসে অনেকের কক্ষের অবস্থান। নতুন কার্যালয়ে এসে কম্পিউটার রুম এবং প্রধান সম্পাদকের রুমের সাথে ট্রেসিং টেবিল স্থাপন করা হলো। আমরা পূর্বের মতো এ-ফোর সাইজের চার-পাঁচটি ট্রেসিং দিয়েই পত্রিকার মেকআপ সম্পন্ন করতাম। চাঁদপুর কণ্ঠের আনন্দ অফসেট প্রেসের মেশিন বিকল হওয়ার কারণে আমাদের বাধ্য হয়ে ইলাস্ট্রেটরে পেজ মেকআপ দিয়ে ঢাকা পাঠিয়ে পত্রিকা প্রিন্ট করার কাজ শুরু করতে হলো। যেখানে আগে পত্রিকার কাজ শেষ হতে রাত দুটা-তিনটা বেজে যেতো, সেখানে ইলাস্ট্রেটরে পেজ মেকআপ দিয়ে ঢাকা পাঠানোর জন্যে প্রস্তুত করতে রাত দশটা-এগারোটার বেশি লাগছে না। এভাবে চাঁদপুর কণ্ঠ আরেকটি নতুন অধ্যায়ে নতুনভাবে কাজ শুরু করলো। কমে এলো চাঁদপুর কণ্ঠের জনবল সংখ্যা। মেশিনম্যান-পেস্টার কোনো কিছুর প্রয়োজন নেই। এখন পত্রিকা মেকআপ দিয়ে ঢাকার প্রেসে মেইলে পাঠানো হলে সেখান থেকে পত্রিকা প্রিন্ট হয়ে চাঁদপুরে পৌঁছে যায় পাঠকের হাতে হাতে।

চাঁদপুর কণ্ঠের অনেক আগের সহকর্মী আবু সাঈদ কাউসার চাঁদপুরে স্থায়ী হওয়ার কারণে অনলাইন নিয়ে আবারো নতুনভাবে শুরু করতে চাইলাম। প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত, আশিক-বিন-ইকবাল আনন্দ, জমির হোসেন জনি, আবু সাঈদ কাউসারসহ সকলে রাজি হলেন। আমি এক প্রকার জোর করেই অরেঞ্জ বিডিকে বাধ্য করলাম চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইনটি নতুনভাবে করে দিতে। অনলাইন নতুনভাবে যাত্রা শুরু হলো সহকর্মী আবু সাঈদ কাউসারকে নিয়ে। এর মধ্যে করোনা মহামারীর কারণে চারদিন পত্রিকা বন্ধ রইলো। বাড়তে থাকলো অনলাইনের চাহিদা। এখন যে কোনো খবর মুহূর্ত পৌঁছে যায় পাঠকের হাতে। চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনে এডসেন্স আপলোড করালাম। অনলাইন ভার্সন থেকে কিছুটা আয়ও হলো। ২-৩ বছর যেতে না যেতেই চাঁদপুর কণ্ঠের অনলাইন ভার্সনটি ফাইবার অপটিক্যাল জটিলতার কারণে কিছু কিছু অপারেটরে ওপেন হচ্ছিল না। আমরা বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে খোঁজ করার জন্যে চাঁদপুর কণ্ঠের একনিষ্ঠ সুহৃদ রাসেল হাসানকে পাঠালাম। সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টির কোনো সমাধান দিতে পারেনি। তবে তারা এটা বলেছে, অপটিক্যাল ফাইবার সমস্যা থাকতে পারে। সর্বশেষ অরেঞ্জ বিডি থেকে জানতে পারলাম, ফাইবার অপটিক্যাল সমস্যার কারণে শুধু আমাদের নয় বাংলাদেশের অনেক নিউজ পোর্টাল এই সমস্যায় আক্রান্ত হয়েছে। অবশেষে আমরা বাধ্য হলাম www.chandpurkantha24.com নামে নতুন ইউআরএল নেয়ার জন্যে। এরপর চাঁদপুর কণ্ঠের www.chandpurkantha24.com অনলাইন নিউজ পোর্টাল জনগণের চাহিদা পূরণ করে চলছে অবিরাম। এভাবে চাঁদপুর কণ্ঠের ভালোবাসায় আবদ্ধ হয়ে রইলাম।

লেখক : সিস্টেম ডেভেলপার, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ ও আইটি কর্মকর্তা, চাঁদপুর ডায়াবেটিক হাসপাতাল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়