বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ২১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় ওসির অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ
  •   ভারত-মিয়ানমার থেকে ৮৯৮ কোটি টাকার চাল কিনবে সরকার
  •   মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ ও কীটনাশক পাওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  •   মশার উপদ্রবে চাঁদপুর পৌরবাসী ॥ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
  •   শাহরাস্তিতে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়

প্রকাশ : ১৪ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বর্তমান প্রজন্ম এবং তথ্য-প্রযুক্তির লাভ-ক্ষতিকর দিকসমূহ

ক্ষুদীরাম দাস
বর্তমান প্রজন্ম এবং তথ্য-প্রযুক্তির লাভ-ক্ষতিকর দিকসমূহ

বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাংলাদেশও এগিয়ে যাচ্ছে। ভূমিকর, পৌরকর ইত্যাদি করসমূহ অনলাইনের মাধ্যমে সহজে প্রদান করতে পারছেন সবাই। শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত দেশে এমন কোনো পরিবার নেই, যেখানে মোবাইল ব্যবহার হচ্ছে না। প্রবাসীরা ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে প্রতিনিয়ত তাদের স্বজনদের খোঁজখবর নেয়াসহ ভাব বিনিময় করতে পারছেন।

সত্যিকারে বর্তমানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, দ্রুততম সময়ে দেশে অভাবনীয় উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। সেই সাথে আমাদের জীবন-জীবিকারও উন্নয়ন ঘটছে দ্রুতগতিতে। অতএব, পৃথিবীর কোথায় কী ঘটছে, কখন ঘটছে, তা’ খুব দ্রুতই আমরা ঘরে বসেই জানতে পারছি। তাছাড়া নিত্যনতুন ধ্যানধারণা, উন্নয়নের গতিধারা সম্পর্কেও আমরা জানতে পারছি।

আমাদের কী জানার প্রয়োজন, কী বিষয়ে দেখার প্রয়োজন--সবই আমরা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে করতে পারছি। এখন সীমাবদ্ধ নেই তথ্য প্রযুক্তি। প্রত্যন্ত অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। সুতরাং আমরা বলতেই পারি যে, বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয়। কয়েক যুগ আগেও যখন যে কোনো তথ্য আদান-প্রদানে মানুষকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ছুটে যেতে হতো, এখন সেসব কথা বর্তমান প্রজন্মের কাছে গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়। আর বর্তমানে চিঠিপত্র আদান-প্রদান, টাকা-পয়সা লেনদেন বা যে কোনো পণ্যসামগ্রী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে আনা-নেয়া মুহূর্ত সময়মাত্র। কিছুদিন আগেও আমাদের ডাকঘরে ছুটে যেতে হতো। দিনের পর দিন টেলিগ্রাম, মানিঅর্ডার বা চিঠিপত্রের জন্যে ডাকপিয়নের অপেক্ষায় প্রহর গুণতে হতো। এখন আর সেভাবে অপেক্ষা করতে হয় না। মুহূর্তেই সবকিছু আমরা পেয়ে যাচ্ছি।

ভালোর পাশাপাশি তথ্য প্রযুক্তিরও খারাপ দিক লক্ষ্যণীয়। বর্তমান প্রজন্মের দিকে তাকালে আমরা তা’ স্পষ্ট দেখতে পাই যে, অধঃপতনে যাচ্ছে নতুন প্রজন্ম। শুধু নতুন প্রজন্মর দিকে আঙ্গুল তোলাই যথেষ্ট নয়, এর সাথে জড়িত সব বয়সেরই মানুষজন। কাজেই খারাপ দিকগুলো ত্যাগ করে জীবনে উন্নতি সাধন করার দিকে আমাদের দ্রুত এগিয়ে যেতে হবে।

সমাজের অবক্ষয় : বর্তমানে অস্বীকরার করার উপায় নেই যে, আমাদের যুব সমাজ খারাপ ভিডিও দেখে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। যে কোনো স্থানে তারা সহজে ইন্টারনেটের মাধ্যমে খারাপ কিছু দেখতে পারে। এটাকে রোধ করা খুবই কঠিন। ইন্টারনেটে নোংরা অশ্লীল পর্নোগ্রাফি শিশু-কিশোরদের বিপথে নিয়ে যাচ্ছে। কিশোর গ্যাং মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সমাজে অস্থিরতা বিরাজ করছে। এতে করে সামাজিক নিরাপত্তা বিঘ্নিত হচ্ছে। অতিরিক্ত প্রযুক্তির ব্যবহারকারীদের মধ্যে তরুণদের সংখ্যাই বেশি এবং এদের বেশিরভাগই অনিদ্রাসহ বিভিন্ন মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এর ফলে তাদের মধ্যে এক ধরনের একঘেঁয়েমি লক্ষ্য করা যায় এবং সামাজিকতা তেমন বৃদ্ধি পায় না। আমরা জানি যে, খেলাধুলার মাধ্যমেই শিশুদের মধ্যে সৃজনশীলতা, ভাষার দক্ষতা, সামাজিকতা, কল্পনাশক্তি বাড়ে এবং সমবয়সীদের সাথে কাজ করার ক্ষমতা, মডেলিং ও রিইনফোর্সমেন্ট-এর মাধ্যমে সক্রিয় করে তোলা হয়। শিশু মাঠে বা পরিবারে খেলার মাধ্যমে যেমন আনন্দ, আরাম পাবে এবং অনুমান ক্ষমতা বাড়বে; সেইসাথে পরিবারের সদস্যদের সাথে হৃদ্যতা, সহমর্মিতা, সহানুভূতি বাড়বে এবং সহপাঠীদের সাথে খেলার মাধ্যমে মতবিনিময়, মতামত, অন্যের কথাকে শ্রদ্ধা, সম্মান দিতে শিখবে; কিন্তু সেটি আর হয়ে উঠছে না।

সময় নষ্ট : তথ্য প্রযুক্তি নিঃসন্দেহে আকর্ষণীয়। ফলে অযথাই আমরা এর পিছনে সময় ব্যয় করছি। গুরুত্বপূর্ণ কাজ রেখে ইন্টারনেটকে গুরুত্ব দেয়া ও অযথা সময় ব্যয় করে ইন্টারনেটে ডুবে থাকতে দেখা যায় মানুষকে। সন্তানরা কোথায় যাচ্ছে, কার সঙ্গে মিশছে, লেখাপড়া ঠিকমতো করছে কি না ইত্যাদি বিষয় দেখভাল করতে না পারায় অনেক পরিবারেই উঠতি বয়সের সন্তানদের নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। স্মার্টফোন ছোট-বড় সবাইকে মাদকের মতো নেশাগ্রস্ত করে ফেলেছে। শুধু সন্তানদের কথাই বা বলি কেন, অবিভাবকরাও স্মার্ট ফোনের প্রতি নেশাগ্রস্ত হওয়ায় সন্তানদের দিকে সুদৃষ্টি দেয়ার সময় পাচ্ছেন না। সেই সময় অযথাই নষ্ট হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির পিছনে। অতিরিক্ত সময় প্রযুক্তি ব্যবহারে পিছিয়ে নেই আমরাও। তাই আমাদের দেশেও দিন দিন বেড়ে চলছে শারীরিক ও মানসিকভাবে আক্রান্ত বিভিন্ন রোগীর সংখ্যা। ফেসবুক, ইন্টারনেট ও মোবাইল ফোন অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে দিন দিন এ জাতীয় মানসিক রোগীর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।

ক্রাইম : তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে সহজেই অনেক ভিডিও ও কৌশলগত দিক তুলে ধরা হয়। তা দেখে সমাজের মানুষ ক্রাইম শিখছে ও তা বাস্তবে কাজে লাগাচ্ছে। মেয়েদের লাইফ প্রোগ্রামে বিভিন্নভাবে তুলে ধরে হেনস্তা করা হচ্ছে। যৌন নিপীড়নমূলক অশ্লীল ছবি প্রকাশ করা হচ্ছে। অ্যাকাউন্ট হ্যাকিং করে আর্থিক প্রতিষ্ঠানসহ ব্যক্তি পর্যায়েও ক্ষতিগ্রস্ত করা হচ্ছে। তথ্যপ্রযুক্তির যথেচ্ছ ব্যবহার রোধে তথ্য আইনের সদ্ব্যবহার করতে হবে। আর তা’ করতে না পারলে যতো উন্নয়নই হোক না কেনো, পারিবারিক ও সামাজিক অবক্ষয় আমাদের ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে, যা’ কখনই কারো কাম্য নয়।

সম্পর্ক নষ্ট হচ্ছে : প্রযুক্তি দিয়েছে বেগ, কিন্তু কেড়ে নিচ্ছে স্নেহ, মমতা ভালোবাসার মতো আবেগ-অনুভূতিগুলোকে। জানা মতে, দেশের অধিকাংশ পরিবারে প্রযুক্তির মন্দ প্রভাব মারাত্মকভাবে স্বাভাবিক পরিবেশ বিঘ্নিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আমরা হয়তো বলতে পারি যে, তথ্য প্রযুক্তি উপকার করছে; কিন্তু পরস্পরের মধ্যে সম্পর্কও যে নষ্ট করছে সেটাও আমরা অস্বীকার করতে পারি না। একটু চিন্তা করুন তো, আপনার কয়জন আত্মীয় নিয়মিত তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে খোঁজ-খবর নিচ্ছেন অথবা তারা আপনার নিচ্ছে! ঘরে বা পরিবারে অসুস্থ রোগী থাকলেও খবর নেয়া বা সেবাযত্ন করার মতো সময় বা মানসিকতা কোনোটাই তাদের নেই। তথ্য প্রযুক্তি পারিবারিক বন্ধনগুলোকে ঢিলে করে ফেলেছে। প্রায় প্রতিটি পরিবারেই স্বামী স্ত্রীর প্রতি, স্ত্রী স্বামীর প্রতি, সন্তান বাবা-মায়ের প্রতি, বাবা-মা সন্তানের স্নেহ, মমতা, ভালোবাসার বন্ধন থেকে দূরে সরে আসছে। স্মার্টফোন আসক্তির ফলে সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের আচরণ বদলে যাচ্ছে। শিশুরা নিষ্ঠুরভাবে উপেক্ষার শিকার হচ্ছে। এটি মাদকের মতো জীবন ও পরিবারের বন্ধনকে ধীরে ধীরে অবক্ষয়ের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনের মতো যখন প্রযুক্তির আধিক্য ছিলো না, তখন পরিবারগুলোর মধ্যে একটা নিবিড় বন্ধন ছিলো। ছিলো স্নেহ-আদর-ভালোবাসায় ভরা। আর ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে সম্পর্কের উন্নয়ন পরিপূর্ণ ছিলো; কিন্তু বাস্তবে এখন আর সেরকম দেখা যায় না। ফোনের আসক্তি সম্পর্কগুলোর বন্ধনকে আলগা করে দিচ্ছে। আমাদের পারিবারিক, সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হলো, ভালোবাসার বন্ধনে জড়ানো, যা’ পশ্চিমা দেশগুলোতে নেই। পশ্চিমা সমাজব্যবস্থার মতো আমাদের পরিবার বা সমাজব্যবস্থা নয়; কিন্তু আমাদের সেই ঐতিহ্য, সেই পারিবারিক বন্ধন ধীরে ধীরে ঢিলে হয়ে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমরা হারিয়ে যাচ্ছি কালের গর্ভে। বাবা-মা, ভাই-বোন, দাদু-দিদিমা, মামা-মামী, কাকাণ্ডকাকী, পিসা-পিসিসহ স্বজনদের সবার মধ্যে, এমনকি প্রতিবেশীদের মধ্যেও একটা হৃদ্যতাপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। সবাই নিজেদের মধ্যে সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করতো। একজনের বিপদে অন্যজন পাশে গিয়ে দাঁড়াতো। আজকাল এই আন্তরিকতাপূর্ণ সম্পর্কগুলো আর তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যায় না। পরিবারের সবার সঙ্গে হাসি-আনন্দ ভাগাভাগি করার চেয়ে স্মার্টফোনের মধ্যে ডুবে থাকতেই অধিক স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। এর ফলে পরিবারের অন্য সদস্যদের চেয়ে প্রবীণ সদস্যরা একাকিত্বের যন্ত্রণায় ভুগছেন বেশি; সেই সাথে শিশুরাও। তাছাড়া সন্তানদের প্রতি বাবা-মায়ের সময় না দেয়া। বাবা-মা ব্যস্ত থাকেন চাকরি বা ব্যবসার কাজে। কিছু বাবা-মা তার চঞ্চল শিশুকে অন্য কোনো উপায়ে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অগত্যা মোবাইল দিয়ে বসিয়ে দেন। আবার অনেক মা তার সন্তান খেতে না চাওয়ায় মোবাইল ফোন হাতে দেন। তারা ইউটিউবে গান শুনতে শুনতে, কার্টুন দেখতে দেখতে খায়। সুতরাং অভিভাবক নিশ্চিন্ত হন। বিনা ঝামেলায় বাচ্চারা এখন পেটপুরে খায়। শিশুদের অতিরিক্ত ফোন আসক্তির কারণে শিশু পরিবারের সাথে গল্প-গুজব করা, প্রয়োজনে এগিয়ে যাওয়া, সবার সঙ্গে মিশতে পারার দক্ষতা ধীরে ধীরে হারিয়ে ফেলে। এই চিত্র হরহামেশা শহরে লক্ষ্যণীয়। তাছাড়া অতিরিক্তভাবে মোবাইল ফোনের আসক্তি আন্তঃব্যক্তিক সম্পর্ককে নেতিবাচকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। কারণ, ব্যক্তিরা মুখোমুখি মিথস্ক্রিয়ায় জড়িত হওয়ার পরিবর্তে ভার্চুয়াল সংযোগের ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল হতে পারে। সত্যিকারে যোগাযোগ সক্ষম করা সত্ত্বেও মোবাইল প্রযুক্তি সামাজিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে অবদান রাখতে পারে।

মানুষ অলস হয়ে পড়ছে : তথ্য প্রযুক্তিতে সময় দিতে দিতে মানুষ অলস সময় কাটায়। কাজে মনোযোগ দিতে পারে না। শারীরিক অলসতায় ডুবে থেকে এসব যন্ত্রের অতিরিক্ত ব্যবহার মানুষকে প্রযুক্তির দাস বানিয়ে দিচ্ছে। এতে মানুষ ধীরে ধীরে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাচ্ছে। তাছাড়া এসব প্রযুক্তি অনেক ক্ষেত্রেই মনের ওপর চাপ সৃষ্টি করে, আর এতে অনেকেই বিষণ্ণতাসহ অন্যান্য মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন। ‘সেদিন খুব বেশি দূরে নয়, যেদিন মোবাইল ফোনকে সিগারেটের চেয়ে বেশি ক্ষতিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হবে’--এ কথা বলার সময় দ্রুতই চলে আসছে। তবে এই ক্ষেত্রে গ্রামীণ শিশুরাও পিছিয়ে নেই; যদিও সেখানে ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক তেমন সক্রিয় না থাকায় শিশুরা অ্যাপস ডাউনলোড সবসময় না দিতে পারলেও মোবাইলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গেইম খেলা, গান শোনা, কার্টুন দেখার প্রতি আসক্তি দেখা যায়। ফোনে নিত্যনতুন ভিডিও, গেইম পাওয়ার ফলে মাঠে খেলার প্রতি আগ্রহ তেমন দেখা যায় না। তাই তারা ধীরে ধীরে অলস হয়ে যাচ্ছে।

হ্যাকারদের দৌরাত্ম্য : এক শ্রেণীর অসামাজিক মানুষ ওরা। অন্যের ক্ষতির জন্যে সময় সুযোগ খুঁজে ও তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হ্যাক করে অন্যের মূল্যবান তথ্য হাতিয়ে নিয়ে ক্ষতি করে থাকে। হ্যাকারদের কারণে অনেকে ব্যাংকের টাকা হারিয়েছেন। মূল্যবান তথ্য ও একাউন্টের সব তথ্য হারিয়েছেন ও সমূহ ক্ষতির শিকার হয়েছেন।

কম্পিউটারে ভাইরাস ছড়ানো : বর্তমানে কাজের গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হলো কম্পিউটার। কিন্তু দুষ্ট প্রকৃতির মানুষজন ভাইরাস ছড়িয়ে নিজেদের অর্থের সম্পদ বাড়িয়ে নিচ্ছে। আর গরীবদের সম্পদ নষ্ট করে তাদেরকে আরো গরীব বানিয়ে দিচ্ছে।

গোপনীয়তা প্রকাশ হয় : একটু একটু করে তথ্য প্রকাশ করতে করতে গোপনীয় সব তথ্যই প্রকাশ হয়ে যায় একজন মানুষের। এতে হঠাৎই একজন মানুষের সব তথ্য নিজের অবস্থান থেকে বের হয়ে যায়। ফলে কেউ কেউ সেই তথ্য সংগ্রহ করে ক্ষতির পরিকল্পনা করে থাকে। এই গোপন তথ্য প্রকাশ হওয়ার কারণে মানুষের অনেক ক্ষতি হয়। অবশ্য মানুষ বেখেয়ালে নিজের তথ্যগুলো প্রকাশ করে থাকে। মানুষ চিন্তাও করে না যে এর মাধ্যমে তার ক্ষতি হতে পারে। মোবাইল ডিভাইসের ওপর ক্রমবর্ধমান নির্ভরতার সাথে গোপনীয়তা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকিগুলো আরও প্রচলিত হয়ে উঠেছে। ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত রাখতে প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন না করার কারণে গোপনীয়তা প্রকাশ হয়ে যায়।

আসক্তরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয় : বিশেষ করে শিশুরা বা শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় অমনোযোগী হয়ে উঠেছে। এই অভিযোগ অভিভাবকসহ শিক্ষকরাও করে থাকেন। ‘হায় হায় অধঃপতনে যাচ্ছে’ এমন রব শোনা যাচ্ছে চারিদিকে। প্রায় সবসময়ই তাদেরকে মোবাইল হাতে নিয়ে থাকতে দেখা যায়। আমরা অভিভাবকরা বুঝে হোক বা না বুঝে হোক, অপ্রাপ্তবয়স্ক সন্তানদের হাতে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সুবিধাসহ ল্যাপটপ তুলে দিচ্ছি। বর্তমান প্রজন্ম ভীষণ নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। অবুঝ সন্তানরা লেখাপড়ার চেয়ে সিনেমা, গান, সিরিয়াল, টিকটক, পর্নোগ্রাফি ইত্যাদি ক্ষতিকর বিষয়ের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। অধিকাংশ শিক্ষার্থী পাঠ্যপুস্তকের বাইরে কোনো বই পড়তেই চায় না। কেননা তাদের সেই মনোযোগটা হারিয়ে গেছে অমনোযোগিতার কারণে। কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরিগুলোতে ছাত্র-ছাত্রীরা আর অগের মতো ভিড় জমায় না। বইপড়ার চেয়ে স্মার্টফোনের দিকেই তাদের মনোযোগ বেশি। পড়াশোনার দিকে তাদের আগ্রহ কমে যাওয়ায় জ্ঞানের পরিধি বাড়ছে না। যদিও গাদা গাদা ছাত্র-ছাত্রী জিপিএ-৫ নিয়ে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় পার হলেও চাকরির বাজারে তারা প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। ফলে বেকারের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।

স্বাস্থ্য ঝুঁকি : শুধু শিশু কেন, সবশ্রেণীর মানুষই অনেকক্ষণ কম্পিউটার বা ফোন স্কিনের দিকে চাওয়ার দরুণ চোখের ক্ষতি হচ্ছে। প্রায় শোনা যায়, চোখের ডাক্তাররা বলে থাকেন বর্তমানে মানুষের চোখের সমস্যা হচ্ছে স্কিনের দিকে দীর্ঘসময় তাকিয়ে থাকার কারণে। একটু খেয়াল করলেই আমরা দেখবো যে, ‘চশমা শিশু’ চারিদিকে দিনে দিনে বেড়ে যাচ্ছে। অথচ, দুই যুগ আগেও শিশুদের এমন দৃশ্য দেখা যেতো না। শুধু তাই নয়, রাস্তাঘাটে চলাফেরার সময়ও ফোনে নিমগ্ন থাকায় পথেঘাটে কত অঘটন ঘটছে তার হিসাব নেই। গাড়িচালকরা গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ব্যবহার করতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছেন। আইন করে নিষিদ্ধ করা হলেও এ আইনের কোনো কার্যকারিতা নেই। সেই সাথে স্মার্টফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ এখন কর্মক্ষেত্রে কাজের পাশাপাশি ফ্যাশনের জন্যেও প্রচুর ব্যবহৃত হলেও মনে রাখতে হবে, এসবের অতিরিক্ত ব্যবহার শরীর ও মনের জন্যে ক্ষতিকর। তাছাড়া বাবা-মায়েরা সন্তানকে শান্ত রাখতে তাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন স্মার্টফোনসহ নানা ধরনের দামি গেজেট। এতে একদিকে যেমন বাবা-মায়েরা নিশ্চিন্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে তেমনি তারা এটাকে আভিজাত্যের অংশ মনে করেন। আবার অনেকেই আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন; কারণ তার সন্তান ইন্টারনেট থেকে সব তথ্য, অ্যাপস ডাউনলোড করতে পারে এবং খুব ভালো গেইম খেলতে পারে। শিশুদের হাতে মোবাইল ফোনসহ কোনো ইলেকট্রনিক্স গেজেট দেয়া উচিত নয়। এতে চোখের ক্ষতিসহ নানা রোগের জন্ম হয় শিশুদের শরীরে। মোবাইলের প্রতি আসক্তি শিশুদের সামাজিক দক্ষতা নষ্ট করছে। ফলে তৈরি হয় শিশুদের নানা ধরনের শারীরিক ও মানসিক সমস্যা। এ ছাড়া প্রযুক্তির এ আসক্তি শিশুদের জীবনে বড় ধরনের দীর্ঘমেয়াদি নেতিবাচক প্রভাবও ফেলছে। দীর্ঘসময় মোবাইল স্ক্রিনে চোখ রাখার ফলে শিশুর চোখের সমস্যা তৈরি হচ্ছে। আবার দীর্ঘ সময় বসে থাকতে শিশুর স্থূলতাও বেড়ে যাচ্ছে, কমে যাচ্ছে শিশুর কল্পনাশক্তিও। ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের শারীরিক, সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক বিকাশের উপর মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলে।

অনলাইনে প্রতারণা বৃদ্ধি : তথ্য প্রযুক্তির কারণে প্রতারণা বেড়ে গেছে। প্রতারকের সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। নৈতিক স্খলিত মানুষ নিত্যনতুন কৌশল বের করে প্রতারণা করেই যাচ্ছে। মোবাইল ব্যাংকিং, বিকাশে সহজে টাকা পাঠানো, ঘরে বসে অনলাইন, শপিং সুবিধাজনক হলেও প্রতারণাও কম হচ্ছে না। অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অনেকে ভোক্তাদের বিভিন্নভাবে প্রতারিত করছে। অনলাইন প্রতারণার শিকার হয়ে অনেকেই সম্মান হারানোর পাশপাশি মূল্যবান সম্পদও হারিয়েছেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়