প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
ফেসবুক আইডি বা পেজ হ্যাক হলে ফিরে পাবেন যেভাবে
বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির। এই যুগে স্মার্ট ফোন ব্যবহার করেন, কিন্তু ফেসবুক ব্যবহার করেন না, এমন ব্যক্তির সংখ্যা নগণ্য। ফেসবুক শুধুমাত্র ফেস দেখানোর বুক নয়, এখন তা সবাই জানেন। এখন ফেসবুককেন্দ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে অনেক কিছুরই সুবিধা রয়েছে। আবার এটা ব্যবহার করে অনেকেই অসুবিধায়ও পড়ে যান। আজ তাই এসব সুবিধা অসুবিধা এবং এর প্রতিকার সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বা পেইজটি যদি হ্যাকড হয়ে থাকে, তাহলে বেশ কিছু উপায়ে সেটা পুনরুদ্ধার করতে পারেন। হ্যাকড হওয়া ফেসবুক অ্যাকাউন্ট পুনরুদ্ধারে আপনি যে পদ্ধতিগুলো প্রয়োগ করতে পারেন, সে বিষয়ে আলোচনা করা যাক আগে।
ফেসবুক অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে প্রথমে আপনাকে পাসওয়ার্ড রিসেট করতে হবে। এর জন্যে আপনাকে ফেসবুক ওয়েবসাইটে যেতে হবে। এরপর ‘ফরগট পাসওয়ার্ড?’ অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। অ্যাকাউন্টটি চালু করার সময় যে মোবাইল নাম্বার বা ই-মেইল আইডি দেওয়া ছিলো তা’ লিখতে হবে। এরপর মেন্যু থেকে ‘রিসেট ইয়োর পাসওয়ার্ড’ সিলেক্ট করতে হবে। তারপর নতুন পাসওয়ার্ড ব্যবহার করে ফেসবুক লগ ইন করা যাবে। কিন্তু হ্যাকার বা হ্যাকাররা যদি ফেসবুক আইডি হ্যাক করার পর অ্যাকাউন্ট খোলার সময় যে ই-মেইল আইডি বা মোবাইল নম্বর দেওয়া ছিলো সেটা পরিবর্তন করে দেয়, তাহলে কী হবে?
সেই পরিস্থিতিতে প্রথমেই যা করতে হবে তা হলো, আইডি হ্যাক হওয়ার বিষয়টি ফেসবুককে জানাতে হবে। এটা করার জন্যে িি.ভধপবনড়ড়শ.পড়স/যধপশবফ-এ যেতে হবে এবং 'সু ধপপড়ঁহঃ রং পড়সঢ়ৎড়সরংবফ' অপশনটি সিলেক্ট করতে হবে। এরপর সঠিকভাবে ব্যবহারকারীর নাম, ই-মেইল অ্যাড্রেস বা মোবাইল নম্বর দিয়ে অ্যাকাউন্টটি শনাক্ত করতে হবে। এরপর ‘সিকিউরিটি চেক’ অপশন হিসেবে ক্যাপচা (বিশেষ কোড) লিখলে ফেসবুক আপনাকে পুরানো পাসওয়ার্ডসহ একাধিক নিরাপত্তা সংক্রান্ত বিষয়ে প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করবে।
আপনি সঠিকভাবে প্রশ্নগুলোর উত্তর দিয়ে সাবমিট বাটন সিলেক্ট করলে আপনার অভিযোগটি ফেসবুকের কাছে চলে যাবে।
হ্যাকাররা প্রায়ই ফেসবুক আইডিতে অ্যাক্সেস নিয়ে সেটা থেকে বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সদস্যদের কাছে অশ্লীল বার্তা, ছবি বা ভিডিও পাঠায়। আবার কিছু হ্যাকার পরিচিত লোকজনের কাছ থেকে অর্থ আদায় বা সাহায্য চেয়ে অনুরোধ করে। অনেকে আবার অযাচিত পোস্ট স্প্যাম ছড়িয়ে দিতে পারে। তাই কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই সবাইকে জানিয়ে দিতে ভুলবেন না যে, আপনার অ্যাকাউন্টটি হ্যাকড হয়েছে।
যেভাবে হ্যাক হচ্ছে আপনার ফেসবুক পেজ
হঠাৎ দেখলেন কোনো এক ভদ্রলোক হোয়াটসঅ্যাপ বা ইমেইলের মাধ্যমে আপনাকে ম্যাসেজ করেছে এবং আপনার ফেসবুক পেজে বিনামূল্যে ২-৩ হাজার ডলার বুস্ট করে দেওয়ার অফার করছে। আপনি খুব আগ্রহের সাথে ভদ্রলোকের অফারে রাজি হলেন, ভদ্রলোক এবার আপনাকে দিয়ে আপনার পেজটি তার বিজনেস ম্যানেজারে কানেক্ট করিয়ে নিবে। এবার আপনার মাথায় আকাশ ভাঙার পালা। ভদ্রলোকটি আসলে অভদ্র হ্যাকার ছিলো, আপনার পেজ অলরেডি হ্যাকারের কন্ট্রোলে চলে গিয়েছে।
বর্তমানে আমাদের দৈনন্দিন জীবনের কার্যক্রম অনেকটাই ফেসবুকের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি অনলাইন বিজনেস বা ই-কমার্সের বড় একটা অংশ ফেসবুক পেজ নির্ভর। যাহোক ফেসবুক পেজের গুরুত্ব বা ভূমিকা কম-বেশি আমরা সবাই জানি, তাই আমাদের আলোচনার বিষয় ফেসবুক পেজ হ্যাক নিয়ে।
ইদানীং লক্ষ্য করা যাচ্ছে, পাবলিক ফিগার পেজ বা বিজনেস পেজ হ্যাক হওয়ার হার বৃদ্ধি পেয়েছে। এক শ্রেণীর হ্যাকার চক্র খুব কৌশলে হ্যাক করে নিচ্ছে মূল্যবান ফেসবুক পেজগুলো। হ্যাকারদের টার্গেট একটু বড় পেজের দিকে, অর্থাৎ বেশি লাইকের পেজে।
শুরুতেই বিজনেস ম্যানেজার-এর মাধ্যমে হ্যাক হওয়ার ব্যাপার উল্লেখ করেছিলাম, বিজনেস ম্যানেজারের নাম শুনলেও অনেকেই হয়তো জানেন না এটা কীভাবে কাজ করে, তাই শুরুতেই চলুন জেনে নেওয়া যাক বিজনেস ম্যানেজার কী এবং কীভাবে কাজ করে :
ফেসবুক বিজনেস ম্যানেজার এমন একটি একাউন্ট বা ফাংশন যা একটি ফেসবুক পেজের জন্যে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। যদি কোনো ফেসবুক পেজে বিজনেস ম্যানেজার একাউন্টে সংযুক্ত করা থাকে, তাহলে সেই বিজনেস ম্যানেজার একাউন্ট থেকে পেজের যেকোনো এডমিনকে যেকোনো সময় পেজ থেকে রিমুভ করে দেওয়া যায়। কিন্তু পেজে থাকা একাধিক এডমিন মিলেও পেজ থেকে বিজনেস ম্যানেজার একাউন্টটি রিমুভ করতে পারবেন না। তাহলে বুঝতেই পারছেন বিজনেস ম্যানেজার একাউন্ট-এর ক্ষমতা।
এছাড়াও বিজনেস ম্যানেজার দিয়ে ফেসবুকে বুস্ট বা অ্যাডস রান করাসহ অনেক কাজ করা যায়, কিন্তু আমরা আজ শুধু আমরা আলোচনা করবো বিজনেস ম্যানেজারের সাথে ফেসবুক পেজের সম্পর্ক নিয়ে।
ধরুন আপনার একটি বিজনেস ম্যানেজার একাউন্ট আছে, এখন আপনি যদি চান আপনার বন্ধুর ফেসবুক পেজ আপনার বিজনেস ম্যানেজারে সংযুক্ত করবেন, এতে আপনার বন্ধুর পেজে আপনি এডমিন না থাকলেও চলবে। আপনাকে আপনার বিজনেস ম্যানেজার-এর পেজ অপশন থেকে আপনার বন্ধুর পেজ এড করতে হবে এবং আপনার বন্ধুর ই-মেইলে ফেসবুক থেকে মেইল যাবে যে, আপনি তার পেজ আপনার বিজনেস ম্যানেজারে এড করতে চাচ্ছেন। আপনার বন্ধু যদি একসেপ্ট করে তাহলে আপনি তার পেজের সমস্ত এক্সেস পেয়ে যাবেন। এমন আরো কিছু অপশন আছে যার অপব্যবহার করে হ্যাকার আপনার আমার পেজ হ্যাক করে নিয়ে যাচ্ছে।
যেভাবে হ্যাক হচ্ছে ফেসবুক পেজগুলো :
পদ্ধতি ১ : আপনার ফেসবুক পেজ মেনশন হয়েছে এমন একটা নোটিফিকেশন আসবে আপনার কাছে, সেখানে যেয়ে দেখতে পাবেন ফেসবুক কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস, ভেরিফিকেশন পেজ ইত্যাদি টাইপের পেজ থেকে আপনার পেজসহ আরো অনেক পেজ মেনশন করেছে এবং লিখে রেখেছে আপনার পেজে ভায়োলেশন হয়েছে তাই ভেরিফিকেশন করতে হবে, সেই মর্মে একটা লিংকে ক্লিক করতে বলবে।
আপনি যদি ভুলে সেই লিংকে ক্লিক করেন তাহলে আপনার একাউন্ট হ্যাক হওয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে গেলেন। কারণ লিংকে ক্লিক করার পরে হুবহু ফেসবুকের লগইন পেজের মত একটা পেজ আসবে যেখানে আপনার পাসওয়ার্ড দিতে বলবে। বেশিরভাগ ফেসবুক ব্যবহারকারী ভুলটা এখানেই করেন, তারা এই ভুয়া লগইন পেজ দেখে আসল ভেবে তখনই পাসওয়ার্ড দিয়ে দেন সেখানে, তখন সাথে সাথে আপনার পাসওয়ার্ড চলে যাবে হ্যাকারের কাছে। আর হ্যাকারের কাছে পাসওয়ার্ড যাওয়া মানে আপনার একাউন্ট হ্যাক, সাথে আপনার ফেসবুক পেজও হ্যাক হয়ে যাবে।
পদ্ধতি ২ : হ্যাকার যেকোনোভাবে আপনার ফেসবুক একাউন্টে থাকা ই-মেইল সংগ্রহ করবে এবং আপনাকে ফেসবুক-এর নাম করে একটা ফেইক ই-মেইল থেকে মেইল পাঠাবে এই সংক্রান্তে যে, আপনার পেজে ভায়োলেশন পাওয়া গেছে এবং আপিল করার জন্যে একটি লিংক পাঠাবে। এরপর পদ্ধতি ১-এ যেভাবে বর্ণনা করেছি এমন একটা ঘটনা ঘটতে পারে এবং আপনার একাউন্টসহ পেজ হ্যাক হতে পারে।
পদ্ধতি ৩ : লেখার শুরুতে বলেছিলাম, এ ব্যাপারে যে কেউ একজন ই-মেইলের বা হোয়াটস অ্যাপের মাধ্যমে আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। সে বলবে, আপনার পেজ তার ভালো লেগেছে এবং আপনার পেজের সাথে সে কাজ করতে চায়। আপনার পেজে আনুমানিক ৩-১০ হাজার ডলার বুস্ট/অ্যাডস দিয়ে দিবে এমন একটি অফার দিবে। এমন একটি অফারতো কেউ হাতছাড়া করতে চাইবে না। আপনি যদি রাজি হয়ে যান তাহলে সে আপনার একাউন্টে থাকা ই-মেইল চাইবে। আপনি যদি আপনার ই-মেইলটি তাকে প্রদান করেন তাহলে সে তার বিজনেস ম্যানেজারে আপনাকে এডমিন করে দিবে এবং আপনাকে বলবে সেই বিজনেস ম্যানেজারে আপনার পেজটি এড করে দিতে। আপনার যদি বিজনেস ম্যানেজার নিয়ে ধারণা না থাকে তাহলে আপনি কোনো প্রকার সন্দেহ ছাড়াই আপনার পেজটি তার বিজেনস ম্যানেজারে অ্যাড করে দিবেন। মজার ব্যাপার হলো, আপনার যেহেতু বিজেনস ম্যানেজার নিয়ে ধারণা নেই, তাই হ্যাকার আপনাকে সব কিছু স্ক্রিনশর্ট দিয়ে দেখিয়ে দিবে কীভাবে আপনার পেজ সেখানে এড করতে হয়।
সুতরাং আপনার ফেসবুক প্রোফাইল এবং পেজ হ্যাকার থেকে নিরাপদ রাখতে নিম্নে বর্ণিত কয়েকটি নির্দেশনা অনুসরণ করুন।
১. ফেসবুক একাউন্টে টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন ফিচার অ্যাক্টিভ রাখুন।
২. আপনার ফেসবুক পেজে আপনার নিজস্ব বিজনেস ম্যানেজার কানেক্ট করে রাখুন।
৩. ঋধপবনড়ড়শ.পড়স ব্যতীত কোনো লিংকে গিয়ে আপনার ফেসবুক একাউন্টের পাসওয়ার্ড দেওয়া থেকে বিরত থাকুন।
৪. ফেসবুকে কোনো নোটিফিকেশন পেলে তা’ ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখুন সেটা ফেসবুকের পক্ষ থেকে কি-না এবং সেখানে কী বলা আছে।
৫. আপনার ন্যাশনাল আইডেন্টি কার্ডের সাথে মিল রেখে ফেসবুক প্রোফাইলের নামকরণ করে রাখবেন। এতে করে আপনার প্রোফাইল হ্যাক হয়ে গেলেও রিকভার করতে পারবেন।