প্রকাশ : ২৩ মার্চ ২০২৪, ০০:০০
বৃষ্টি ও যুগল
সাদিয়া হোসেন মাধুরী

১.
ক্লাস শেষ করে বের হতেই আকাশ ভেঙ্গে ঝম ঝম করে বৃষ্টি নামে। ছেলেটা খাতা মাথায় করে কোন মতে দৌড়ে একটা রিকশায় উঠে। টিএসসির মোড়ে চলে আসে রিকশা। কিছু দূরেই একটি মেয়ে রাস্তা দিয়ে প্রায় কাকভেজা হয়ে আস্তে আস্তে হেটে যাচ্ছে। মেয়েটির পড়নে সাদা থ্রিপিস হাতে লাল কাচেরঁ চুড়ি। মাঝে মাঝে আসা ধমকা হাওয়ায় মেয়েটির খোলা চুলগুলো এলোমেলো করে দিচ্ছিলো।
রিকশা প্রায় কাছাকাছি চলে আসতেই ছেলেটা হাত বাড়িয়ে এক ঝটকায় মেয়েটিকে রিকশায় তুলে নেয়।
আহ্ মাসুদ ছাড়ো তো। ভলো লাগছে না।
বাহ রে আমি কি করবো যদি ম্যাম আধা ঘন্টা এক্সট্রা ক্লাস করায়।
আমি সেই কখন থেকে অপেক্ষা করেছিলাম দুজনে বৃষ্টি বিলাস করবো আজ।
হ্যাঁ দেখলাম তো কেমন বিলাস করছিলা। বিলাস করে ফুলে ভিজে পেঁচার মতো হয়েছো হা হা হা।
উফফ থামবে তুমি। সব দোষ তোমার।
ইসস আমি আবার কি করলাম?
তুমি এত দেরি করলে দেখেই আমি রাগ করে হাটা ধরলাম।
তাই বলে তুমি রাগ করে এমন ভিজে চুপসায়ে পটল হয়ে যাবা?
তুমি জানো না রেগে গেলে আমার হুশ থাকে না।
আচ্ছা বাবা ক্ষমা করে দাও এত রেগে থেকো না আর।
এই কেয়া চলো না হা করে বষ্টির পানি খাই। খুব মজা হবে।
আহা মাসুদ রিকশার হুড নামিও না আমি আবার ভিজে যাবো।
তুমিই তো বলছিলে বৃষ্টি বিলাস করবে৷ না ভিজলে বিলাস করবো কি করে। তাছাড়া তুমিতো প্রায় ভিজেই গিয়েছো।
আসলেই তো, কিন্তু মানুষ কি বলবে।
আহ্, ছাড়ো তো তোমার মানুষ। লোকে আর কি বলবে, বড়জোর আমাদের পাগল বলবে আরকি। তো আমরা তো পাগলই।
খিলখিল করে হেসে উঠে কেয়া।
রিকশা চলতে থাকে আপন গতিতে, মুখ হা করে দুটি তরুণ তরুণী বৃষ্টির পানি খাচ্ছে। পথ চলতি কারো কারো কাছে ব্যাপার টা খুব হাস্যকর। কারো কাছে ইন্টারেস্টিং, কারো কাছে বেশ বেহায়ামি আর কেউ কেউ তো ভ্রক্ষেপই করছে না। তাতে ওদের কোন ভাবনা নেই। ওদের কিছু যায় আসে না। ওরা বৃষ্টি পাগল দুই প্রেমিক যুগল। ওরা তো মনের আনন্দে বৃষ্টি বিলাশ করছে।
একটা ছোট ছেলে রাস্তা দিয়ে কিছু গোলাপ বেলীফুল হাতে হেটে যাচ্ছে। ছেলেটির পরনে শুধুই হাফপ্যান্ট। দেখেই বুঝা যায় ফুল বিক্রেতা। ভিজে চুপসে আছে ছেলেটি। হি হি করে কাঁপছে শীতে। কোন দোকানের ছাউনির নিচে একটু নিরাপদ আশ্রয় চাচ্ছে।
এই কেয়া, ওই ছেলেটাকে দেখছো। ওর হাতের ফুল গুলো দেখো, ওখানে কয়েকটা তাজা লাল গোলাপ আছে।
হ্যা, তো?
তো আবার কি? তুমি পড়ে এসেছো সাদা। সাদার মাঝে লাল গোলাপে তোমাকে মারাত্মক লাগবে।
তাই বুঝি? মুচকি হাসে কেয়া।
তোমার ওই বৃষ্টি ভেজা এলোমেলো কালো চুলের বন্যায় একটি লাল গোলাপ আমার চোখে নেশা ধরিয়ে দিবে।
বেশ, চলো ছেলেটির কাছে তোমার যেহেতু এতই ইচ্ছে।
এই মামা রিকশাটা ওই দোকানের দিকে ঘুরাও। রিকশা ওয়ালা মামা কথা মত তাই করলো।
এই ছেলে নাম কি তোর?
কাঁপতে কাঁপতে উত্তর দেয় ছেলেটি
আমার নাম সবুজ।
সবুজ তোর বাড়িতে কে আছে।
মায় আমি আর আমার ছোড ওউজ্ঞা বইন। বাপ জানে নাই গত ঈদে মারা গেসে।
সবুজ এই আপা টাকে কেমন লাগে বলতো? সুন্দর?
হ, ভাইজান এক্কেরে পরীর লাখান চেহারা। পরী ও মনো হের তন বেশি সুন্দর না।
হা হা হা। তা সবুজ তোর এই পরী আপাটির জন্য বেছে বেছে তাজা একটা ভালো গোলাপ দে।
সব গুলান ই তাজা বড় ভাই। খারান আমনেরে আমি সবার বড়ডা ই দিতাসি।
হ্যাঁ, দে।
এই লন বড় ভাই।
ধন্যবাদ তোমাকে সবুজ। এক মিনিট কি যেন ভেবে,
সবুজ এক কাজ কর, তুই আমাকে সব গুলো ফুলই দিয়ে দে।
বড়টা তোর আপার কানে গুজে দিবো আর বাকিগুলো আমার কাছে থাক।
বড় ফুলটা নিয়ে মাসুদ কেয়ার কানে গুজে দিতে থাকে। রিকশা ওয়ালা মুচকি মুচকি হাসে আর সবুজ হা করে দেখতে থাকে। কেয়া লজ্জায় লাল হয়ে যায়।
সবুজ মামা তা তোমার সবগুলো ফুলের দাম কত হলো?
সবুজ মাথা চুলকে হিসাব করতে শুরু করে।
মাসুদ মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টাকার একটা নোট বের করে সবুজের দিকে আগিয়ে দেয়।
এইটা রাখো, বাড়ি গিয়ে মা কে দিবা। আরো একশো টাকার নোট দিয়ে বলে আর এটা তুমি রাখো চকলেট খাবা।
রিকশা নিজ গন্তব্যে ছুটে চলে।
সবুজ নামের ছেলেটা অবাক হয়ে দাড়িয়ে থাকে এক হাজার টাকার নোট হাতে নিয়ে। সে কোনদিন এক হাজার টাকার নোট দেখেনি। একশো টাকাও কেউ কোনদিন তাকে চকলেট খেতে দেয়নি।
বৃষ্টির জোর কিছুটা কমে আসে। সন্ধ্যার অন্ধকারের মত অন্ধকার হয়ে আসে, রাস্তাটা এখন পুরাই নির্জন। দমকা বাতাস দিচ্ছে।
মাসুদ রিকশার হুডটা তুলে দাও প্লিজ।
রিকশার হুড তুলে দিতেই কেয়া একদম জড়োসড়ো হয়ে গা ঘেসে বসে।
কেয়ার ঠোঁট দুটি ভিজে লাল হয়ে ফুলে আছে। কেমন নেশা ধরে যায় মাসুদের। হঠাৎ কোথাও বাজ পড়ে জোরে। কেয়া ভয়ে মাসুদকে জড়িয়ে ধরে।
মাসুদ ও শক্ত করে বুকের সাথে আঁকড়ে ধরে কেয়াকে।
অনেকটা সময় কেউ কাউকে ছাড়ে না। চুপচাপ জড়িয়ে ধরে রাখে। একটা সময় কেয়া লজ্জা পেয়ে মাসুদকে ছেড়ে দেয়। মাসুদ ছাড়ে না। আরো কাছে টেনে এনে ভেজা শীতল লাল ঠোট দুটিতে নিজের ঠোট খানা ডুবিয়ে দেয়।
২.
আকাশ ভেঙ্গে ঝর ঝর করে বৃষ্টি নেমেছে আজ। একটি ছেলে আর মেয়ে রিকশায় পাশাপাশি বসে আছে। রিকশা চালক গামছা মাথায় করে বৃষ্টিতে ভিজে রিকশা চালিয়ে নিচ্ছে।
ছেলেটা স্যুট টাই পড়া ভদ্র গোছের। মেয়েটা একটা নীল লাল এ মিলানো শাড়ি পড়নে। হাতে লাল কাচের চুড়ি। উদাস নয়নে বাইরে চেয়ে আছে।
ফারাজ, রিকশার হুডটা একটু নামাই প্লিজ।
কেয়া তোমার কি মাথায় সমস্যা আছে। দেখছো না কিভাবে বৃষ্টি হচ্ছে।
অতটাও তো জোরে হচ্ছে না ফারাজ।
হ্যাঁ, কিন্তু এই বৃষ্টির ফোটা গুলো পড়লে তোমার ওই সস্তা শাড়ির কিছু হোক বা না হোক আমার দামি স্যুট টার বারোটা বেজে যাবে।
শাড়িটা তুমিই আমাকে দিয়েছিলে ফারাজ। মন খারাপ করে বলে কেয়া।
হ্যাঁ, কিন্তু তখন কি জানতাম দামি শাড়িটাও তোমার কাছে সস্তাই হবে। আমার বসের জন্মদিনের পার্টিতে পড়তে বলেছিলাম। তখন তো পড়তে পারোনি কিন্তু আজ এই ঝড় বৃষ্টি কাদার মধ্যে পড়ে এসেছো।
এগুলা কি আমাকে ইচ্ছে করেই অপমান করার জন্য করো?
ফারাজ প্লিজ চুপ করো। চোখ জোড়া ভিজে উঠে কেয়ার।
হ্যা এখন তো চুপ করতে বলবা ই যত্তসব।
কেয়ার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। ফারাজের সেদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
কিছুদূর যেতেই একটা ছেলেকে দেখে রাস্তায় ভিজে ভিজে ফুল বিক্রি করছে অনেকদিন আগের স্মৃতি মনে পড়ে যায় কেয়ার।
ফারাজ একটা ফুল কিনে পড়িয়ে দিবে প্লিজ।
রাখো তোমার ফুল। বলেছিলাম গাড়িটা নিয়েই ছেলের স্কুলে যাবো। তোমার কথায় রিকশায় চড়তে হলো এখন ভিজে নাজেহাল অবস্থা স্যুটটার আবস্থা শেষ।
তুমিই গিয়ে নিয়ে আসো তোমার ছেলেকে। আমি ড্রাইভারকে আসতে বলেছি। যত বদ বুদ্ধি মাথায়।
রিকশা থেকে নেমে যায় ফারাজ।
বনানীর রাস্তা ধরে এগিয়ে চলে আরেকটি রিকশা। নেভিব্লু কালার শার্ট আর হাল্কা বিস্কিট কালার প্যান্ট পড়া একটি ছেলে আর পাশাপাশি বসে আছে কালো দামি থ্রিপিস পড়া একটি মেয়ে। চোখে মুখে তার অন্ধকার।
ছেলেটা হাই তোলার ভঙ্গি করে রিকশাওয়ালা কে বলে, মামা হুডটা একটু নামায় দাও আজ কঠিন বৃষ্টি। অনেকদিন এমন বৃষ্টি দেখিনা।
না মামা হুড নামাবে না। ঠান্ডা গলায় রিকশা ওয়ালাকে মানা করে মেয়েটি।
ছেলেটা আর কোন কথা বলে না।
অনেক্ষণ পর নিরবতা ভাঙ্গে মেয়েটি।
তোমার সমস্যাটা কি বলতে পারো আমায়?
আমার কি সমস্যা থাকবে?
আজ ববির পার্টিতে এমন করলে কেন?
কই কিছুই তো করিনি। কিছু করেছি বলেও মনে পড়ছে না।
মেয়েটা এবার চোখ মুখ আরো অন্ধকার করে বলে
মাসুদ, কথার উত্তর ঠিক ভাবে দাও। তুমি ববির পার্টিতে আজ গেলে একটা নরমাল শার্ট আর সস্তা প্যান্ট পড়ে। তোমাকে কত করে বললাম আমার মামা যেই স্যুটটা তোমার জন্য এনেছে ওটা পড়তে।
তোমার মামা এনেছে বলেই পড়িনি।
আচ্ছা, তো ফরিদ সাহেবের সাথে তোমার কি সমস্যা ছিলো? ববির পার্টিতে উনার সাথে এমন বাজে রসিকতা তুমি কেন করলে?
লোকটা আস্ত লুচ্চা বুঝলে রিয়া। সারাক্ষণ তোমাকে কিভাবে পা থেকে মাথা পর্যন্ত শকুনের মত দেখে। ওর চেহারাটাও কিন্তু শকুনের মত।
বাজে বকবে না একদম।
আচ্ছা বকবো না। হাসতে থাকে মাসুদ।
আর আমার বান্ধবী কি দোষ করেছিলো? তুমি ওর বাসায় ঠিকমতো খাওনি উল্টা আজে বাজে রসিকতা করে ওর গেস্টদের অপমান করেছো।
তোমার বান্ধবীর দোষ হচ্ছে ও একটা চরম মাত্রার অভদ্র।
হোয়াট?
উত্তেজিত হয়ো না রিয়া, কথা শেষ করতে দাও আমায়।
তোমার বান্ধবীর দোষ হচ্ছে অন্যের পারসোনাল ব্যাপার নিয়ে সে বেশি মাথা ঘামায়। আর তুমি কি দেখেছো সে আমাদের নিয়ে প্রায়ই সস্তা ধরণের রসিকতা করে। তাকে শিক্ষা দেয়া উচিৎ ছিলো।
ভুল কিছু তো বলে না। এত বছরে একটা বাচ্চা কি দিতে পেরেছো আমায়? বাবা হতে পেরেছো কি?
সেটা আমাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। ওর উচিৎ না এসব নিয়ে কথা বলা। আর তুমি কি আসলেই মা হতে পারবে?
মানে? চোখ জোড়া লাল করে মাসুদের দিকে তাকিয়ে থাকে রিয়া।
মানে তুমি সারাদিন ব্যস্ত থাকো তোমার ক্লাব পার্টি আর ওই বদমাশ বান্ধবীদের নিয়ে। কাজের কাজ তো কিছুই করো না। তুমি কি আসলেই পারবে ভালো মা হতে।
সজোরে একটা চড় পড়ে মাসুদের গালে।
তোমার মত অসভ্যের সাথে এক রিকশায় যাওয়ার চেয়ে আমি ভিজে ভিজে একাই বাড়ি যাবো।
রিকশা থেকে নেমে হন হন করে হাটতে থাকে রিয়া।
একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে মাসুদ।
যাক মামা আপদ বিদায় হয়েছে। হুডটা এবার নামায় দাও। আজ বৃষ্টিতে ভিজবো।
৩.
গুলশানের একটি দামি স্কুলের সামনে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে কেয়া। আহিয়ানের ছুটির সময় হয়ে গিয়েছে। এখনি ছুটতে ছুটতে চলে আসবে ছেলেটা। আর এসেই জড়িয়ে ধরবে কেয়াকে। ওকে বুকে নেয়া মাত্রই সব ক্লান্তি, হতাশা, কষ্ট, ব্যর্থতা ভুলে যায় কেয়া।
কিছুক্ষণের মধ্যেই ছুটি হয়ে যায়। একদল ছেলে মেয়ে ছুটতে ছুটতে চলে আসে। বছর পাঁচের মায়া ভরা চেহারার একটি ছেলে ছুটে এসে মাম্মা বলে কেয়াকে জড়িয়ে ধরতেই কেয়া তাকে কোলে তুলে নেয়।
ওরে আমার বাবাটা, তুমি মাম্মাকে খুব মিস করেছো তাইনা?
মাম্মা জানো আজ মিস আমাদেরকে জেলিফিশ এর ব্যাপারে বলেছে।
তাই!
হ্যাঁ মাম্মা। জেলিফিশ গুলো নাকি অনেক কিউট দেখতে।
ঠিক তোমার মতো বাবা।
ছেলেকে কোলে নিয়ে গেটের বাইরে আসতেই রাস্তার ওপাশে একটি চায়ের দোকানে একটা পরিচিত মুখ দেখে থমকে দাড়ায় কেয়া। অনেক বছরপর এই পরিচিত মুখটিকে দেখতে পাচ্ছে।
নাহ্, ওসব স্মৃতি ভেবে আর কোন লাভ নেই। গাড়ির দিকে পা বাড়ায় কেয়া। ফারাজ গাড়ি পাঠিয়েছে ওদের জন্য। আহিয়ান কে ভিতরে বসিয়ে কি ভেবে যেন ড্রাইভারের কাছে যায় কেয়া।
চাচা, আপনি বাবুকে নিয়ে বাসায় যান। আমার একটু জরুরি কাজ আছে আর ফারাজ কে জানানোর প্রয়োজন নেই।
আচ্ছা ম্যাডাম, বলেই ড্রাইভার আহিয়ানকে নিয়ে চলে যায়।
চায়ের দোকানটার ছাউনির নিচে দাড়াতেই মাসুদ বলতে থাকে।
জানতাম, আমাকে দেখে এখানে ঠিকই চলে আসবা। ওটা কে তোমার ছেলে নাকি? বেশ সুন্দর হয়েছে তো দেখতে। একদম তোমার মত।
কিছুক্ষণ চুপ থেকে, অনেকবছর পর তোমার দেখা পেলাম। অনেক বদলে গিয়েছো তুমি। দামী শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াও আজকাল হাহা।
যাইহোক তোমাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।
ধন্যবাদ। তুমিও তো বিয়ে করে বেশ সুখেই আছো।
আর সুখ।
কেন বউ তো বেশ বড়লোক তোমার।
হা হা টাকার শুধু বড়লোক ও। মনের বড়লোক হতে পারেনি।
কিন্তু তুমি তো টাকা দেখেই বিয়ে করেছিলে।
এ্যাই, চলো না কথাও বসে কথা বলি।
এই বৃষ্টির মধ্যে কই বসবে?
তাহলে চলো একটু হাটি।
বৃষ্টির মধ্যে হাঁটবে কোথায় অদ্ভুদ ।
মাসুদ চুপ করে থাকে। কেয়ার দৃষ্টি দূরের ল্যাম্পপোস্ট গুলোর দিকে চলে যায়। চোখ জোড়া কেমন ছল ছল করে উঠে।
অনেকদিন টিএসসি তে যাওয়া হয়না।
আজ যাবে?
কেয়া কোন উত্তর করে না
আমার সাথে যাবে?
কেয়া কিছু বলে না, মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়।
টিএসসির মোড়ে একটি রিকশা ছুটে চলে আপন গতিতে। রিকশায় বসে আছে মাসুদ কেয়া যুগল। অনেক বছর তারা যেন আবার যুগল হয়েছে।
অনেক কথার পর কেয়া জিজ্ঞেস করে,
তা টাকার জন্য যে মেয়েটিকে বিয়ে করলে সে ভালো রাখছে তো তোমায়?
মাসুদ আড় চোখে দেখে কেয়াকে। কেয়া আজও ব্যাপারটা নিয়ে রাগ পুষে রেখেছে। রাগ থাকারই কথা।
উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করে মাসুদ।
তোমার বাবা ও তো বড় সরকারি কর্মকর্তা দেখে বিয়ে দিলেন। তা দেখা যাচ্ছে বেশ ভালোই রাখছে তোমায়। অত দামী শাড়ি আমি সাত জনমেও দিতে পারতাম কিনা সন্দেহ।
চুপ করবে তুমি, এত খারাপই যখন লাগছে তখন কেন বাবার কাছে বড় মুখ করে চাইলে না। নিজের বসের মেয়েকে বিয়ের জন্য বললো আর তো সুর সুর করে রাজি হয়ে গেলে। আমার থেকে টাকা টাই বড় হয়ে গেলো তোমার কাছে? কেয়ার চোখে পানি।
নাহ্, কেয়া তোমার থেকে টাকা টা কখনই বড় ছিলো না আমার কাছে।
শুধু তোমাকে চাওয়ার মত ক্ষমতা ছিলো না। আমার মা হসপিটাল এ ছিলো। চাকরিটাই ভরসা। বসকে না করতে পারিনি। আর তোমার বাবা ও একটা প্রাভেট জব করা ছেলের সাথে কখনই বিয়ে দিতো না। সব দিক বিবেচনা করেই আমি সিদ্ধান্ত নেই। এখন এর জন্য যদি আমি তোমার দৃষ্টিতে সারাজীবন এর জন্য খারাপ হয়ে যাই, তো আমি খারাপ ই ।
কেয়া কিছু বলতে পারেনা নিরবে কান্না করতে থাকে।
কান্না করো না কেয়া। আমি কান্না সহ্য করতে পারিনা।
আচ্ছা রিকশার হুডটা কি নামিয়ে দিবো? একটু হা করে বৃষ্টির পানি খাবে কি?
কেয়ার কান্না আরো দিগুণ হয়।
আমার হাত টা ধরবে প্লিজ?
কেয়া নিরবে মাসুদের হাতটা আকড়ে ধরে।
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে। মাসুদের কাছ থেকে বিদায় নেয় কেয়া। একটা রিকশায় উঠে পড়ে কেয়া। মাসুদ দাড়িয়ে থেকে কেয়ার চলে যাওয়া দেখে।
বুকের একপাশটা পুড়ছে মাসুদের। সেদিন ও পুড়েছিলো, এতগুলা বছর ও পুড়েছে আর আজ কেয়া চলে যাওয়ার মুহূর্তে ও পুড়ছে। আর সবসময় ই পুড়বে। এ ব্যাথার কোন ওষুধ নেই।
এক পশলা ঠাণ্ডা হাওয়া কোথা থেকে এসে যেন জড়িয়ে ধরে মাসুদকে।
হাতে ধরে আছে দু'টি গোলাপ।...