প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২২, ০০:০০
আগুনঝরা দুপুরে তরুণ বটের ছায়াতলে বসে প্রকৃতির সাথে ভাব জমিয়ে নিজের ভেতরের গুমোট ভাবটা অনেকটাই হালকা হয়ে উঠেছে। মেঘনার গভীর থেকে বয়ে আসা মৃদুমন্দ বাতাস, চলাৎ চলাৎ ঢেউয়ের শব্দ, নিকোটিন পোড়া ধোঁয়ার স্বাদ সব মিলিয়ে ওষ্ঠাগত প্রাণে স্বস্তির পরশে ভরে গেছে।
নদীর কাছে এলে পৃথিবীটাকে এতো নিষ্ঠুর ও পাষ- মনে হয় না। মনে হয় মিল্কিওয়ে ছায়াপথের এ গ্রহটাতে বেঁচে থাকার কোনো একটা স্বার্থকতা অবশ্যই আছে। এতো লড়াই, এতো এতো ভাঙ্গা-গড়া, এতো রিক্ততা সত্বেও সমস্ত জীবনের কোথাও না কোথাও অনেক অনেক আনন্দ আছে। আমরা সবাই সারাটা জীবনভর জীবনের অতলে হাতড়ে সেই আনন্দের নির্জাসটা তুলে আনতে চাই। রাশি-রাশি আনন্দের ফানুস উড়াতে চাই। ঝঞ্জামুখর জীবনের এই গোলক ধাঁধাঁবিস্তৃত পথে হেঁটে কজন ধরতে পারে আনন্দের শ্বেত-শুভ্র পায়রাটাকে?
আমাদের কাছে আনন্দের উৎস হচ্ছে বিস্তর অর্থ-সম্পদ, কোমল ত্বকের মানবী, ক্ষমতা কিংবা সম্মান। কিন্তু আমরা কেউই কখনো জীবনের স্বার্থকতাটাকে খুঁজে দেখিনি। আমরা কেউই কখনো জীবনটাকে মেলে ধরতে পারি না নিজের চোখের সামনে। একটা বিবর্তনবাদী সভ্যতার বাসিন্দা হিসেবে ঝলমলে রঙিন চশমা আঁটা আমাদের চোখে। ফলে আমরা সর্বত্রই সবকিছু রঙিন চোখে দেখতে অভ্যস্ত। রঙিন দৃষ্টি আমাদেরকে অস্থির করে তোলে কথিত সফলতা বা প্রাপ্তির সীমানায় পৌঁছার উন্মাদনায়। আমরা ভুলে যাই অনুভূতির কথা। আবেগ, বিবেক ও প্রেমকে দুমড়ে-মুষড়ে দিয়ে উচ্চতার শিখরে আরোহণ করতে তাগড়া ঘোঁড়ার মতো ছুটে চলি দিন-রাত। এদিকে বেলা ফুরিয়ে গোধূলীলগ্নে প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার হিমালয়কে জয় করেও অতৃপ্তি আর হাহাকার নিয়ে আমরা মিলিয়ে যাই সাঁঝের ওপাড়ে ঘুট-ঘুটে আঁধারের অরণ্যে!
আমি জীবনটাকে অবশ্য অন্যপথে খোঁজার চেষ্টা করি। একটা শ্যামল-সজল মুখের হাসি। যে হাসি আমার মধ্যাহ্নের প্রখর আকাশটাকে মেঘনার গভীর থেকে বয়ে আসা মৃদুমন্দ বাতাসের মত শীতল করবে। ঝিরিঝিরি কোনো বিকেলে বেলীফুলে বাঁধা বড় একটা খোঁপায় প্রাণভরে ঘ্রাণ নিয়ে সারাদিনের ধকল কাটনোটা যেনো আমার অনেক অনেক আনন্দ।
বাদল রাতে টিনের চালে ঝুমঝুম বৃষ্টির শব্দ, বহু দূরের ঝড়ো বাতাসের সাথে ভেসে আসা কদমণ্ডকেয়ার গন্ধে আমি যেনো বেঁচে থাকার স্বার্থকতা খুঁজে পাই।
গলির মাথায় আধবুড়ো চায়ের দোকানি দুলাল মিয়ার সাথে প্রসন্নচিত্তে রসিকতায় মেতে উঠা যেনো এক টুকরো জীবন। ছোটো একটা শহরের যানজট, গাড়ির উচ্চ শব্দের হর্ণ, ফুয়েল পোড়া গন্ধ, রিকশার টুংটাং শব্দ, এখানে ওখানে হইচই, ফুটপাথে সাজানো বাহারী পণ্যের পসরা, হকারের হাঁকডাক, হরেক রকমের মানুষ, উঁচু-উঁচু দালান, বড়-বড় বিল বোর্ড, রোদে পুড়ে, আপাদমস্তক ঘামে ভিজে শূন্যতাণ্ডরিক্ততা বুকে নিয়ে সভ্যতার এমন মঞ্চায়ন দেখে ফেরাটাও জীবনের বড় একটা অংশ।
মেঘনার জলরাশির উপর চিকচিক করা সোনালি রঙের রোদ হলুদ হয়ে উঠেছে। পকেটে থাকা মুঠোফোন বিরক্তিকর বাজনা বাজিয়ে ডাকছে আমায় যন্ত্রণাদগ্ধ আাগ্রাসী একটা জীবনের দিকে!
* পাঠক ফোরামে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]