প্রকাশ : ৩০ জুলাই ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর) ॥ সাত.
পরদিন সকালে নুপুরের লাশ সরকারি জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। একটি অপমৃত্যু মামলা করেছে পুলিশ। এবার গ্রামের মানুষের মাঝে নানা কথাবার্তা শুরু। বাতাসে ভাসছে উড়ো কথা। যেসব কথার কোনো ভিত্তি নেই। তারপরেও মানুষ বলছে। কেউ বলছে ভূতে মেরেছে, কেউ বলছে জ্বীন। কোনো মানুষ মেরেছে এটা কারো মাথায় আসছে না। গ্রামের মানুষ অপেক্ষার প্রহর গুনছে মেডিকেল রিপোর্টের জন্যে। মেডিকেল রিপোর্ট মানুষের ভাবনাকে সত্যি করবে কি করবে না সে বিষয়টিই এখন দেখার রয়েছে। পোস্টমর্টেম শেষ হলে লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ সুযোগে মাটি না দিয়ে হিন্দু ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী লাশ দাহ করার সিদ্ধান্ত নেয় পরিবার। কিন্তু লাশতো আর ঘটনাস্থলে বা গ্রামে দাহ করার সুযোগ নেই। বাধ্য হয়ে নুপুরের বাবা লাশ নিয়ে চলে যায় লক্ষ্মীপুরে। এখানে শান্তিপুর গ্রাম থেকে কেউ আসনি। অথচ স্বভাবতই শুভর আসার কথা এখানে। পরিবারের চাপে আসতে পারে না। তবে নিপু ইচ্ছে করেই এসেছে। ঘটনার পরদিন থেকে আজও নিপু স্বাভাবিক হতে পারেনি। মানুষও নিপুকে খুব ন¤্র-ভদ্র ছেলে হিসেবেই জানে। এটাই তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। নিপু লক্ষ্মীপুর এসে শুনে লাশ দাহ করা যাবে না। মাটি দিতে হবে। পুলিশি রিপোর্টের উপর ভিত্তি করবে মামলাটি কতো দূর এগুবে। কিন্তু নিপুর এখানেই আপত্তি। বারবার বুঝিয়ে-শুনিয়ে লাশ দাহ করার পক্ষে মত দেয় সে। অবশ্য পরিবারও চায় লাশ দাহ করতে। কিন্তু পুলিশ লাশ হস্তান্তর করার সময় বলে দিয়েছে দাহ না করে শ্মশানে মাটি দেয়ার জন্যে। আরেক বিপত্তি। মানুষ মরলেও এমন বিপত্তিতে পরতে হয় এ দুই এলাকার মানুষ খুব হারে হারে টের পাচ্ছে। অথচ স্বাভাবিক মৃত্যু কতো সহজেই কাজ শেষ করা যায়। কিন্তু এখানেই যতো সমস্যা। অবশ্য ঠাকুর মহোদয়েরও পরামর্শ লাশ যেনো দাহ করা হয়। এক্ষেত্রে ঠাকুর মহোদয়ের কিছুটা স্বার্থও আছে বলা চলে। পয়সা কড়ি বেশি পাওয়া যাবে। তাছাড়া দাহ করলে ছাঁই হয়ে যায়। পরে আবার লাশ মাটির নিচ থেকে উঠানো নামানোর ঝামেলা থাকবে না। গত দুই দিনেই একপ্রকার ক্লান্ত হয়ে পড়েছে নুপুরের বাবা অমল বাবু। ধর্মের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে লাশ দাহ করার পক্ষেই বিভিন্নভাবে সাফাই গাইছে নিপু।
সবশেষ বাধ্য হয়ে লাশ মাটি দিতে হয়েছে। এ নিয়ে নিপু একটু ভাবনায় পড়ে যায়। ধর্মের কোনো অবমানা হলো না তো? তার মুখে বিষণœতার ছাপ।
ঘটনার পর এক সপ্তাহ পার হয়ে গেছে। নিপু ও শুভর মাঝে একটা অদৃশ্য দেয়াল তৈরি হয়েছে। দুজনের মাঝে এখন কথাবার্তা কম হচ্ছে। যদিও দেখাও হচ্ছে কম। কিন্তু নুপুরের মৃত্যুর পর শুভ নিপুদের বাড়িতে যাওয়া-আসাও কমিয়ে দিয়েছে। আর নিপুও একটু নিরিবিলি চলা ফেরা করে। কারো সঙ্গে কথা বলে না। আগের চেয়ে দ্বিগুণ চুপচাপ থাকে সে। ঘটনার ঠিক আটদিন পর পুলিশ মেডিকেল রিপোর্ট হাতে পায়। মেডিকেল রিপোর্ট উল্লেখ করা হয়, নুপুরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। এবার পুলিশ একটু নড়েচড়ে বসে। সমস্যা এবার জট বাঁধতে শুরু করেছে। আবারও ঘটনাস্থলে পুলিশ। নিপুদের বাড়িতে এসে একজন একজন করে কথা বলছে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। কেনো এ হত্যাকাণ্ড; কী এমন হয়েছিলো যে একটা মেয়েকে হত্যা করতেই হবে। নিপু অবশ্য বাড়িতেই আছে। পুলিশ সবার সাথে কথা বললেও অজানা কারণে নিপুর সাথে কোনো কথা বলে না। তবে একটা সূত্র পায় নিপুর চাচাতো বোন অলকা ও শোলকা। এ দুজনের সাথে কথা বলতে শুরু করে পুলিশ। অবশ্য তাদের ভাষ্যে খুব বেশি কিছু পাওয়া গেলো না। যদিও এ বাড়িতে শুভর আসা-যাওয়া কমে যাওয়া প্রশ্নের উদ্বেগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অলকা তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বলে, নুপুর যেদিন এ বাড়িতে আসে। পরদিন সকালে শুভকে নিয়ে আসে নিপু। তারপর দেখতাম প্রায়ই নুপুর শুভর সাথে কথা বলে। কিন্তু কী কথা হতো বুঝতে পারতাম না। আমরা একসাথেই গ্রামের এ পাড়া-ওপাড়া ঘুরেছি। মাঝে মাঝে নিপুও আমাদের সাথে থাকতো। অবশ্য গ্রামে ঘুরার সময় শুভ আমাদের সাথে কম যেতো। শুভ মুসলমান বলে গ্রামের মানুষ হয়তো ভালো চোখে দেখবে না তাই। অবশ্য শুভও খুব ভালো ছেলে। সবশেষ নিপুর সাথে কথা বলে পুলিশ থানায় চলে আসে।
তদন্তকারী কর্মকর্তা ও থানার ওসি বসে আলাপ করে। ডাক্তার রিপোর্ট বলছে এটি হত্যা। শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে। আমাদের দায়িত্ব এখন অন্তত কাউকে না কাউকে আটক করা। কারণ এ মামলা পুলিশ সুপারও পর্যবেক্ষণ করছেন। দ্রুত একটা কিছু করতেই হবে।
ওসি বলেন, আচ্ছা। শুভকে কি কোনো ভাবে জড়ানো যায়? যেহেতু সে মেয়েটিকে ভালোবেসেছে বলে স্বীকার করেছে। কিন্তু কিভাবে? ও শুধু বলেছে আমরা শুনেছি। কোনো প্রমাণ তো নেই। কেউ সাক্ষি হবে বলেও মনে হয় না। অথবা নুপুরের বেয়াই নিপুকে কি জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে থানায় আনা যায়?
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এবার মাথা নেড়ে সায় দেয়। অবশ্য কোনো কারণ ছাড়াই। ভদ্র ছেলে হিসেবে সবাই তাকে চেনে জানে। কথাও কম বলে।
- ওকে। ডান। নিপুকে থানায় নিয়ে আসো। অথবা ফোন করে থানায় আসতে বলো। তার সাথে আমরা কথা বলে দেখি কিছু পাওয়া যায় কিনা? কারণ নুপুর রাতে ওই ঘরেই ঘুমাতো। যেটা নিপুদের ঘর। ওই ঘর থেকে মেয়েটা কিভাবে বের হলো? যুবক নিপু নিশ্চয় বিষয়টি টের পেয়েছিলো। যদিও কারো সন্দেহের চোখ তার দিকে যাচ্ছে না। তারপরেও আমরা একটা লটারি মেরে দেখি কি হয়।
- স্যার পাশাপাশি শুভকেও এনে আবারও জিজ্ঞাসাবাদ করা যায়। শুভ ও নিপু যেহেতু বন্ধু তাই দুজনকে একসাথে করে কিছু কথা বলি। দেখি কিছু বের করা যায় কি না? (চলবে)
[পরের পর্ব আগামী সংখ্যায় প্রকাশিত হবে]
* পাঠক ফোরামে লেখা পাঠানোর ই-মেইল : [email protected]