প্রকাশ : ১১ জুন ২০২২, ০০:০০
বাস চলছে। দুইজনই পাশাপাশি বসে আছে। আঁখি বাইরের দিকে অপলক দৃষ্টি দিয়ে চেয়ে আছে। অন্যদিকে অবিরত চোখের পানি ঝরছে আরিফের। ছেলেরা সহজে কাঁদে না। কোনো খুঁত নেই, ছলনা নেই। অফুরন্ত কষ্ট বা ভালোবাসা ছাড়া তারা কাঁদতে পারে না।
আরিফ যে কান্না করছে সেটা আঁখি বুঝতে পারছে। তবুও সে ফিরে তাকাচ্ছে না। আর এটা ভেবেই আরিফের বুকটা ফেটে যাচ্ছে। চোখের পানি গাল দিয়ে বেয়ে পড়ছে।
আরিফ সীটে মাথা রাখে। ভাবছে কী করে আঁখি এতোটা পাষাণ হতে পারে! পাথর ছেদেও তো ঝর্ণা বয়ে। তাহলে কি সে পাথরের চেয়ে বেশি শক্ত হয়ে গেছে? কী এমন অন্যায় করলো যে হঠাৎ ব্রেকাপ করে দিলো! এটা কোনোভাবেই মানতে পারছে না আরিফ।
অথচ আঁখিই আগে এসে আরিফকে ভালোবেসে ছিলো। আরিফ ভালো করেই জানে আঁখি তাকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসে। যে মেয়ে শপথ করে মাকে বলেছে আরিফের সাথে আর কথা বলবে না। দুবার এ কাজটা করেও আরিফের সাথে কথা না বলে থাকতে পারে না। অথচ সে-ই মেয়ে আজ তাকে অকারণেই প্রত্যাখান করছে! ভালোবাসাকে অস্বীকার করছে!
-আঁখি, আঁখি, এই আঁখি।
-হয়েছেটা কী? তোমাকে না বলেছি আমাদের সকল সম্পর্ক শেষ। আমাকে অযথা বিরক্ত করছো কেনো?
মুখের খুব বাজে প্রতিক্রিয়া নিয়ে কথাগুলো বললো আঁখি।
এটা শুনে আরিফের অসহায়ত্ব বেড়ে যায়। আত্মহত্যার ইচ্ছা জাগে। কিন্তু সে এ-ও জানে শিরকের পরে আত্মহত্যা মহাপাপ। মারাত্মক পাপ। পবিত্র আল কুরআনে আছে, ‘তোমরা নিজেরা নিজেদের ক্ষতি করো না। যদি করো তাহলে সীমালঙ্ঘনকারীদের দলে চলে যাবে!’।
অধিকাংশ মানুষ ডিপ্রেশনের ভোগে। হুট করেই সেদিনের প্রতিবেদনটার কথা মনে হলো আরিফের। বিশ্বে প্রতি চল্লিশ সেকেন্ডে একজন যুবক আত্মহত্যা করে। সেদিন কথাটা শুনে অবাক হয়েছিলো আরিফ।
আঁখিও এ কান্না সহ্য করতে পারছে না। কিন্তু কোনোভাবেই সেটা আরিফকে বুঝতে দেয় না। মেয়েদের বুক ফাটে তুবুও মুখ ফোটে না। সেটাই আবার অক্ষরে অক্ষরে প্রমাণ করে চলছে আঁখি। তার ইচ্ছে করছে উড়াল দিয়ে চলে যেতে। কারণ যন্ত্রণার পথ দেরিতে শেষ হয়।
অন্যদিকে বারবার অপমান সহ্য করেও সম্পর্কটা জোড়া লাগাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে আরিফ। আরিফ ভালো করেই জানে, আঁখি রাগ করে হোক আর যে করেই হোক একবার যেই সিদ্ধান্ত নেয় সেই সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করে। পরে ভুল বুঝতে পেরেও সেই ভুল সিদ্ধান্তেই অটল থাকে সে। ফেলে দেয়া থুথুর মতো সকল কিছু মনে করে। যা পড়ে চায় তা তোলা যায় না।
আসলে আঁখি শিক্ষা আর টাকাই ওকে ইগোময়ী করে তুলছে। অথচ সে কখনোই স্বীকার করে না ইগোও এক ধরনের অহংকার। অধিকাংশ মানুষ এই ইগো রোগে আক্রান্ত। আল্লাহ মাপ না করলে অহঙ্কারীরা জাহান্নামী। এ সকল কিছুই আরিফ জানে। কতবার আঁখিকে এগুলো বোঝাতে চেষ্টা করছিলো। কিন্তু সে বুঝতে চায়নি। বরং বলেছে, তুই বেশি হুজুরগিরি করছ। তুই যা বলছ, সেগুলো আজকের দিনে চলে না।
হঠাৎই বাতাসের মতো ফুঁফিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠে আরিফ। তারপর আবারো চেষ্টা চালায়,
-আঁখি কেনো তুমি সম্পর্কটা ভেঙ্গে দেয়ার কথা বলছো? প্লিজ বলো। তবুও আঁখি ঘুরে তাকায় না। বাইরের দিকেই চেয়ে থাকে।
-প্লিজ বলো। সম্পর্কটা রাখতে চাও না কেনো? কী দোষ করেছি আমি?
-পাগলামো করো না।
-এটা কী ধরনের কথা? কারণ ছাড়া গাছের পাতাও নড়ে না।
আাঁখি ধমক দিয়ে বলে, বলছি না কোনো কারণ নাই? আর যদি কারণ থেকেই থাকে, তাহলে আমি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স নিবো। স্যার বলছে, আমাদের ক্লাসের এ+ পাওয়ার মতো পাঁচজন আছে। আর সেই তালিকায় আমিও আছি। তোমার সাথে কথা বলার জন্যে বার বার আমার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। সেদিন ইংরেজি পরীক্ষা খারাপ হয়েছে।
-ও এই কথা! আমার খারাপ হয় নাই? তোমার জন্যে আমার জীবনের ক্ষতির হিসাব করিনি। আমি তো শুধু তোমাকেই চেয়েছি আর এখনো চাই। তাহলে তুমি করলে কীভাবে?
-আমি এতো কথা বুঝি না। সম্পর্ক বাদ। এটাই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।
-তাহলে আমাদের ভালোবাসার প্রতিশ্রুতি? আমাকে ছেড়ে কখনো যাবে না। সেই দেয়া কথার কী হবে?
-আজ-কাল অনেক কিছুরই মূল্য নাই আর তুমি প্রতিশ্রুতির কথা বলছো! হা হা হা।
-মানুষ তার প্রিয় মানুষকে ভালো রাখার জন্যে সবসময় কাছে থাকে। পাশে থেকে উৎসাহ দেয়। কিন্তু ছেড়ে যায় না।
* পাঠক ফোরাম বিভাগে লেখা পাঠানোর ঠিকানা : [email protected]