সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০

ঈদ আরেকটু থেকে যাও
অনলাইন ডেস্ক

লোকে বলে , ঈদের আনন্দ নাকি ছোট-বড় সকলের জন্যে সমান। অথচ আমর কাছে এমনটা মোটেই মনে হয় না। আমার কাছে মনে হয় ঈদ একেক বয়সী মানুষের কাছে একেক রকম। আর আমার এ মানা-না মানা নিয়ে ভিন্ন সমাজে কয়েক শত অভিযোগ জমা হয়ে গেলেও কিছু আসবে যাবে না। আমি জানি এ নিয়ে লোকনিন্দা আসুক আর না আসুক লেখক নিন্দা আসবেই। এক্ষেত্রে আমি কেবল কিছুসংখ্যক লেখকের লেখাতেই ‘ঈদ সবার জন্য সমান আনন্দের’ কথাটুকু দেখেছি। আর বাদবাকি সব মানুষের মুখে একটাই কথা ছোটবেলার ঈদ আনন্দের ছিলো, এখন আর সে আনন্দ নেই। হারিয়ে গেছে।

মানুষ আবেগ দিয়ে সবকিছু মাপতে চায়। অথচ সবকিছু আবেগ দিয়ে মাপা সম্ভব না। সেদিন এক লেখকের লেখা দেখেই কিছুটা বিস্মিত হলাম। তার সে লেখা পড়ে উৎপন্ন বিস্মিত মনোভাব থেকেই আজ কলম ধরলাম একপ্রকার জোর করেই। লেখকের নাম বলবো না, তবে তার লেখা গল্পের প্রথম লাইন ছিলো এই যে ‘ঈদের আনন্দ ছোট বড় সবার জন্য সমান’ বাক্যটি একটু আগেও বলেছিলাম। ব্যস এতটুকু পড়েই মাথা গরম হয়ে গেলো। ‘ঈদের আনন্দ ছোট-বড় সবার জন্য সমান’! কিন্তু কীভাবে? বয়সের পার্থক্যে ঈদের আনন্দের ভিন্নতার পরিধি অনেক। মানুষ সবকিছু বোঝে-শোনে তবে আবেগের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে, বাস্তবতাকে আর গুরুত্ব দেয় না তেমন। ফলে বাস্তবতা হারায় আবেগের পরে।

শৈশবের ঈদজুড়ে থাকে এক অন্যরকম ভালোলাগা। আর সেই অন্যরকম ভালো লাগাটা মানুষ চাইলেই অস্বীকার করতে পারবে না। আজ শৈশব ছেড়ে দূর, দাঁড়িয়ে আছি। দাঁড়িয়ে আছি আমি, আপনি এবং শৈশব পার করে আসা আমাদের মতো আরো অনেকে। শৈশব ছেড়ে দূরে দাঁড়িয়ে আছি মানে অনেক দূর। ঠিক ততোটা দূরে, যতোটা দূর থেকে অতীত দেখা যায়, কিন্তু তা আর ধরা যায় না, ছোঁয়াও যায় না। যায় না অধীর আগ্রহে অতীতের সে সময়ে ফিরে যাওয়ার কাক্সিক্ষত ইচ্ছের বাস্তবতায়। আপনারা তো জানেন-ই সময় সবচেয়ে বড় ফাঁকিবাজ একক। বিষয়টা তখন বুঝতাম না যখন সময় হাতে ছিলো। তবে এখন বেশ বুঝতে পারছি, এখন কিন্তু আর সেই সময় হাতে নেই। নেই ফিরে পাওয়ার কোনো সুযোগ। অতীতের দিনগুলো প্রায়ই চোখের সামনে ভাসে। কখনো পুরোনো বন্ধুযোগের অতীত সংলাপে কিংবা মন খারাপের বিশেষ দিনে। এখন আর অতীত ফেরার পথ নেই। আর তাই, এখন শুধু অতীতের কিছু স্মৃতি আর বিশেষ ঘটনা ভেবে বর্তমান কাটিয়ে দিই। অতীত ফিরে পাবার কিংবা অতীতের কাছাকাছি পৌঁছানোর এরচেয়ে ভালো কোনো উপায় আছে বলে আমার জানা নেই। যদি আপনাদের কারো জানা থাকে তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবেন, আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকবো।

দুই.

ছোটবেলায় আমার ঈদ আনন্দ শুরু হতো ‘বিশ’ রমজানের পরপর। আর এই আনন্দ কেবল আমার ক্ষেত্রেই না, আমার সমবয়সী চাচাতো-মামাতো, খালতো-ফুফাতো সব ভাই বোনদের জীবনেই শুরু হতো- তখনকার সময়ে।

আমাদের শৈশবে ঈদ নিয়ে যে আনন্দ সৃষ্টি হতো তার আগে আরেকটা বিষয় চলমান থাকতো আর সেটা হলো, ‘কে কার চেয়ে বেশি রোজা রাখতে পারে’ সেই প্রতিযোগিতা। বড় হওয়ার পর এখন বুঝতে পারছি তখনকার সে ঘটনাটা কেবলই লৌকিকতা ছিলো। যাকে বলে লোকদেখানো আরকি।

আমাদের শৈশব কিছুটা অপূর্ণ মগজ সহযোগেই চলমান ছিলো। সুতরাং লোকদেখানো ইবাদতের জন্য স্রষ্টা যে শাস্তি দিবেন বলে এখন জানি, ছোটবেলার সে ঘটনার জন্যে নিজেরা পাপী হয়েছি নাকি পূর্ণবান সেটা বুঝতে পারছি না। অবশ্য এক্ষেত্রে লোকের মুখে বেশ শুনেছি দশ বছরের আগে নামাজ না পড়লে গুনাহ নেই, তবে পড়লে সওয়াব আছে। আপনারা হয়তো জানেন বিশ্বাসীদের সবচেয়ে বড় শত্রু হলো ‘শয়তান’। আর মানুষের মুখে দশ বছরের আগে গুনাহ হবে না, শোনার পর তো আর আনন্দে সীমা রইলো না। তবে এ বিষয়ে যে কতবড় ধোকা খেয়েছি সেটা অবশ্য পরে বুঝতে পেরেছি। আর যখন বুঝতে পেরেছি তখন প্রবৃত্তির হাতে এমন ভাবে বন্দী হয়েছি যে, চাইলেও অতি সহজে এই জাল ছেড়ে বেরুতে পারবো না। কেবল আমি না আমার মতো শতকরা নিরানব্বই ভাগ মানুষই এভাবে আটকে আছে অদৃশ্য ধোঁকার জালে।

যাই হোক, ‘বিশ’ রমজানের পর থেকে আমাদের যে আনন্দ শুরু হতো সেই আনন্দের মূল উদ্দেশ্য ছিলো নতুন জামা হাসিল করা। আর সেজন্যে আমরা চাচাতো-মামাতো ভাইয়েরা প্রত্যেকে নিজ নিজ ঘরে এক অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিতাম ‘নতুন জামা কিনে দেয়ার একদফা দাবি’।

প্রথমদিকে এ দাবি কেবল মুখে মুখে উচ্চারণ চললেও, যখন চাচাতো ফুফাতো ভাই বোনদের মধ্যে কেউ একজন সবার আগে নতুন জামা কিনে ফেলতো ঠিক তার পরপরই শুরু হয়ে যেতো বাকিদের হরতাল। চলতে থাকতো অসহযোগ আন্দোলন তীব্রতা। এ আন্দোলনের কোনো ভিত্তি-বৈশিষ্ট্য নেই। নেই অতিরক্ত দাবি-দাওয়া। তবুও আন্দোলনের মাত্রা ছিলো এ রূপ যে এই দাবি আমাদের একান্ত প্রাপ্য। যেনো আমাদেরকে আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। কেড়ে নেয়া হচ্ছে শূন্য কিছু। আর এই বঞ্চিত হওয়ার জ্বালা সহ্য করতে না পেরেই আমরা বাধ্য হয়ে আন্দোলনের ডাক দিতে হয়েছি। আমাদের এই একদফা দাবির আন্দোলন নতুন জামা কিনে দেয়ার আগ অবধি চলতো। এভাবে করে বহু কষ্টের পর তাদের নির্দেশিত সময়ের আগে নতুন জামা হাসিল করে নেয়ার আনন্দ অনেকটা বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে জিতে যাওয়ার মতোই ছিলো। নতুন জামা তো কেনা শেষ। একদফা দাবির আন্দোলনও শেষ। পরিবারের সাথে আমাদের এখন আর কোনো সমস্যা নেই। এবার শুরু হলো নতুন জামা লুকিয়ে রাখার পালা। এক্ষেত্রে আমরা চাচাতো-মামাতো ভাইবোনরা একবাক্যে এই কথা বিশ্বাস করতাম যে, ঈদের একদিন আগেও যদি কেউ কারো নতুন জামা দেখে ফেলে তাহলে তার ঈদ শেষ। সুতরাং এ বিষয়ে তখন কার সময়ে আমরা বেশ সচেতন ছিলাম। অবশ্য এই বিষয়টা বিবেচনার পর্যায়ে নিয়ে ততোটা গুরুত্ব দেয়া হয়নি। যদি দেয়া হতো তাহলে হয়তো দোকান থেকে কিনে আনার সময় দোকানীকেও দেখতে দিতাম না। যেহেতু নতুন জামা দেখে ফেললে ঈদ শেষ।

একবার হয়েছে কি, আব্বু-আম্মুর সাথে বাজারে গিয়ে ঈদের জন্যে কাক্সিক্ষত নতুম জামা কিনে নিয়ে আসলাম। জামা বলতে কেবল একটা শার্ট কিংবা একটা প্যান্ট নয়। বরং শার্ট, প্যান্ট, জুতা, মানিব্যাগ, চশমা ইত্যাদি ইত্যাদি সব। মানে যা কিছু কিনলে চাচাতো-মামতো ভাইবোন কিংবা এলাকার সমবয়সী ছেলেমেয়েদের সাথে টক্কর দেয়া যায় তার সবকিছুই। তো ঈদের কেনাকাটা শেষে বাজার থেকে বাসায় ফিরেই সবকিছু আলমারিতে লুকিয়ে রাখতে যাবো, ঠিক এমন সময় পাশের বাড়ির এক বড় বোন এসে উপস্থিত। তাকে দেখে আমি আরো দ্রুত জামা কাপড় লুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু না, কিছুতেই কিছু লাভ হলো না। তিনি স্বাভাবিকভাবেই ঘরে ঢুকেছিলেন কিন্তু আমার তড়িঘড়ি দেখে আগ্রহরে মাত্রা বাড়িয়ে জিজ্ঞেস করলেন কি ওসব? আমি আমতা আমতা করে বললাম কিছু না, ‘ঈদের জামা’।

ঈদের নতুন জামা! দেখি, দেখি-

ব্যস সবকিছু খুলে একের পর এক ঘেটে ঘেটে দেখলেন। নিজের অজান্তেই মনের মধ্যে একটা মোচড় মেড়ে উঠলো। হায়! হায়! আমার নতুন জামা দেখে ফেলছে- তার মানে আমার ঈদ শেষ। ব্যস শেষ কথাটা মনে মনে উচ্চারিত হওয়ার সাথে সাথে চোখ দিয়ে অনর্গল পালি বেরুতে লাগলো। সঙ্গে মুখ দিয়েও বেরুলো কান্নার আওয়াজ। আর সে কান্না যে কি রকম কান্না ছিলো, তা মুখে বলে বুঝানো দায়।

অবশেষে ঈদ আগমন। বলে রাখা ভালো ঈদের আগের দিন রাতে কিন্তু ঘুম আসতে চায় না। মনের ভেতর চাপা উত্তেজনা! কখন সকাল হবে, কখন গোসল করবো; কখন নতুন জামা গায়ে দিয়ে ঈদের ময়দানে যাবো। একশ’ ভাবনা ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমিয়ে যেতাম, মনে থাকতো না। ঘুম ভাঙ্গার পরপর নিজেকে আবিষ্কার করতাম, আবছা আলোযুক্ত ফজর ওয়াক্তের শেষ সময়ে। একটু দ্রুতই উঠে যেতাম। তাতেও সমস্যা ছিলো না, একটু দ্রুত উঠেছি তো কি হয়েছে? ঈদ তো একটু পরই শুরু হবে। অবশেষে বিছানা ছেড়ে ব্রাশ, লুঙ্গি আর গামছা নিয়ে, হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় চলে যেতাম পুকুরঘাটে। একসাথে অনেকে গোসল করতাম। আমি আমার বাবা, আমার কাকারা, আমার চাচাতো-ফুফাতো ভাইয়েরাও। বেশ মজাও হতো ওইসময়ে। যেহেতু ওইটা ঈদের দিনের গোসল, সুতরাং অনেকটা সময় নিয়ে পানিতে ডুবানোর মতো মনমানসিকতা কারোরই থাকতো না। অথচ এর বাহিরের অন্যান্য দিনে আমাদেরকে পুকুর থেকে উঠানোর জন্যে বাড়ির বড় কর্তারা লাঠি হাতে তেড়ে আসতেন। পানিতে চোবাবেন বলে ভয়ও দেখাতেন। যাই হোক, প্রতিযোগিতামূলক গোসল শেষে সবাই সবার ঘরে চলে যেতাম। শুরু হতো তালাযুক্ত ড্রয়ের থেকে নতুন জামা বের করে আনার অনুসন্ধান। অবশেষ বের করে দ্রুত গায়ে দিয়ে সবার আগে যাকে সালাম দিতাম তিনি হলেন মা। এসেই একবাক্যে বলে উঠতাম ‘আসসালামু আলাইকুম আম্মা ঈদ মোবারক। এবার বকশিস দেন’! আমার এই একটা মাত্র বাক্য উচ্চারণ আমার মাকে কি পরিমাণ প্রশান্তি দিতো তা বলে বোঝাতে পারবো না। খুশি হতেন বটে তবে তা পুরোপুরি প্রকাশ করতেন না। তবে বকশিত দিতে গিয়ে নানা অযুহাত জড়ো করেতন। এই হইছে, সেই হইছে, সালাম দেয়া হয় নাই, সালাম দিলে বকশিস দিতে হয় না, মুরব্বিদের দোয়াই অনেক ইত্যাদি ইত্যাদি। সালামি চাওয়ার পর আমার মতো ছোট্ট মানুষকে তারা যে কি পরিমাণ যৌক্তিক তর্কেবিতর্কে ফেলতেন সেটা এখন আর মনে না করাই ভালো। অবশেষে অনেক কাকুতি-মিনতি করে বকশিস আদায় করতাম। সালামি বলতে এখনকার মতো, এক হাজার, দু হাজার টাকার নোট না। তখন পনের টাকা বিশ টাকাই আমাদের ঈদ খুশির সর্বোচ্চ আনন্দ ছিলো। অথচ এখনকার বাচ্চাদের দু থেকে তিন হাজার টাকা সালামি দিলেও হয় না। অপূর্ণ থেকে যায়। মনের মধ্যে তবুও ক্ষোভ, আক্ষেপ, শূন্যতা। মায়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে যেতাম বাবার কাছে। তবে বাবা অত সহজে দিতো না। তিনিও নানা অযুহাত উপস্থাপন করতেন। তার মধ্যে এটাও বলতেন যে, ‘তোর আম্মু দিলেই আমার দেয়া হয়ে যায়’। আমাকে এবং আমার বাকি ভাই-বোনদেরও একই কথা বলে পিছু ছাড়াতে চাইতেন। কিন্তু আমি ছিলাম নাছোড়বান্দা। এতো সহজে হাল ছাড়ার পাত্র নই। ফলে অনেক কাকুতি-মিনতি করে বাবার কাছ থেকে টাকাটা আদায় করে নিতামই। আর আমার দেখাদেখি আমার বাকি দুই বোনও টাকা পেয়ে যেতো। এরই মধ্যে আমার চাচাতো-ফুফাতো ভাইয়েরা তাদের বাবা-মায়ের কাছ থেকে টাকা আদায় করে নিতো। এরপর শুরু হতো এক্সচেঞ্জ। অর্থাৎ আমার বাবা-মার কাছে তারা এবং তাদের বাবা-মা র কাছে আমরা যেতাম। আর গিয়ে যে যে যার যার মতো সালামি আদায় করে নিতাম। অবশেষে একটু সেমাই মুখে দিয়ে ঈদের মাঠের দিকে ছুটে যেতাম। অবশ্য ঈদের খুশিতে সেমাই খাওয়ার একটুও ইচ্ছে করতো না। কিন্তু কিছু করার নেই! বাব-মায়ের বকা খাওয়ার ভয়ে অন্তত দু-তিন চামচ তো মুখে দিতেই হয়। নয়তো রক্ষা থাকবে না।

ঈদের ময়দানে তো সবাই যায়, তবে মানুষের উদ্দেশ্য থাকে ভিন্ন ভিন্ন। যেমন যারা পূর্ণবয়স্ক তারা যায় ঈদের নামাজ পড়তে। আবার কেউ আছে ঈদে কিছু বিক্রি করে নিজের আয়-উপার্জন করবে, কেউ আছে কেবল ভিক্ষে করে লাইন দিয়ে। এতো কিছুর মাঝে তখনকার সময় কেবল আমরাই যেতাম ঈদ থেকে কিছু কেনার জন্যে। আর এর মাঝে না ছিলো নামাজ পড়ার খেয়াল আর না ছিলো ঈদে উপলক্ষে হাতে আসা বকশিসের টাকায় কিছু খাওয়ার ইচ্ছে। এরপর আমরা ভাইয়েরা ভাইয়েরা মিলে নানা জিনিস কিনতাম, কেনাকাটার ক্ষেত্রে আমরা অনেকটা মিল রেখেই কিনতাম। যাতে সবাই সবার বরাবর থাকতে পারি। এক্ষেত্রে আমাদের কেনাকাটার লিস্টে পিস্তল আর লেজার লাইটই অধিক প্রাধান্য পেতো। এগুলোই আমরা কিনতাম। তবে এগুলো কেনার জন্যে পরিবারের কাছ থেকে বকা খাওয়ার পূর্বাভাস জানা থাকলেও কিছুতেই কিছু পরোয়া করতাম না।

হাসি-আনন্দের মাঝে ভয়ের মাত্রা যোগ হওয়ার কোনো সুযোগই দেয়া ঠিকনা। দিলেই মনে করুন সব আনন্দ মাটি।

অবশেষে ঈদ আনন্দ কাটিয়ে বাসায় ফিরতে ফিরতে দুপুর বারোটা বেজে যেতো। এর মধ্যে আবার অনেক আত্মীয়-স্বজন মিষ্টি, মুড়লি, বাদাম ইত্যাদি নিয়ে দেখা করতে আসতো। তবে আমরা একটু বেশিই আনন্দে ভাসতাম বলে দুপুরের আগে বাড়িতে আর সশরীরে অবস্থান করতাম না। আর এতে করে ঈদ উপলক্ষে বাড়িতে আসা মেহমানদের সাথে আমার এবং আমার চাচাতো-ফুফাতো ভাইদের দেখা হতো খুব কমই। দুপুরে বাড়িতে এসে খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিলেই বিকেল এসে হাজির। ঈদের দিন খেলার মাঠে যাওয়ার কোনো আগ্রহ থাকতো না। তাই ওইদিন আর খেলতে যেতাম না। অতঃপর সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত হলে বুকের ভেতর কেমন যেনো শূন্যতা অনুভব করতাম। মনে হতো কি যেনো হারিয়ে ফেলেছি। একটু ভাবাঘুরে অনুসন্ধান করলেই বুঝা যেতো ঈদ চলে যাওয়ার তীব্র বেদনা বুকজুড়ে হাহাকার করছে। মনে হচ্ছে ঈদ খুব দ্রুতই চলে গেলো। ছোট্ট মনের ছোট্ট একটা আশা ঈদ আরো কিছুক্ষণ থেকে যাও...। জানি থাকবে না, তবুও পরবর্তী ঈদের অপেক্ষায় মগজস্থির করে মনে মনে আকাক্সক্ষা রেখে দিতাম, ‘ঈদ আরেকটু থেকে যাও’।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়