রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ১৮ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

পায়ে লাগা প্রেম কপালে লাগেনি
অনলাইন ডেস্ক

এসএসসি পরীক্ষার পর মনিরুল চাঁদপুর শহরে খালার বাসায় বেড়াতে এসে চাঁদপুর কলেজ দেখতে গেলো। চাঁদপুর কলেজের সুদৃশ্য ভবন, বিশাল খেলার মাঠ, হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর কোলাহলে মুখরিত ক্যাম্পাস কিশোর মনিরুলের মন ছুঁয়ে গেল। পরিবারের অমতে চরম অসহযোগিতা উপেক্ষা করে মনিরুল চাঁদপুর কলেজে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে গেল। জীবনে এই প্রথম এত বড় ক্লাসে বসে টিচারের লেকচার শোনার সুযোগ হলো। বাংলার ক্লাসগুলো মনিরুলকে মোহাবিষ্ট করে রাখলো। টিচারদের মধ্যে কে সেরা সেটা বুঝতে না পারলেও সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরা সৈয়দ আবদুস সাত্তার স্যারকে খুব পছন্দ হয়ে গেল। ইংরেজির ক্লাসে এসে মনিরুল বুঝতে পারলো অজপাড়াগাঁয়ের বেড়া ভাঙ্গা টিনের চালের স্কুলে শেখা কাঁচা ইংরেজি দিয়ে বোর্ড পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া যাবে না। ইংরেজির অধ্যাপকদের বাসায় ব্যাচ পড়ানোর ধুম পড়ে গেছে। ব্যাচে ফাঁকা পাওয়া খুবই মুশকিল। বাসেত স্যারের বিকেলের ব্যাচে একটা সীট শূন্য হলে মনিরুল শূন্য স্থান পূরণের সুযোগ পেয়ে যায়।

ব্যাচে পড়তে এসে দেখলো মহিলা কলেজের চারজন আর চাঁদপুর কলেজের ছয়জন। টেবিলের এক পাশে পাঁচ জন আরেক পাশে পাঁচজন। ব্যাচে একে অপরের সাথে পরিচিত হলেও মনিরুলের সাথে কারো পূর্ব পরিচয় ছিল না। মনিরুল প্রায়শই দেরি করে আসতো। দেরিতে এসে গেটে টোকা দিলে সুশ্রী একটা মেয়ে গেট খুলে দেয়। সে আর মনিরুল একই ব্যাচে পড়ে। মেয়েটির নাম লাইজু, সরকারি কর্মকর্তার মেয়ে। জীপে আসে আবার জীপে চলে যায়। বাসেত স্যার মাঝে মধ্যে কিছুক্ষণ পড়াতেন। বেশির ভাগ সময় নোট দিতেন, সেগুলো দেখে দেখে খাতায় তুলে আনতে হতো। মনিরুল আর লাইজু একদিন মুখোমুখি বসলো। টেবিলের নিচ দিয়ে লাইজু পা দিয়ে মনিরুলের পায়ে চাপ দিলো। মনিরুল টেবিলের নিচে মাথা ঢুকিয়ে দেখলো লাইজুর পা পিছনের দিকে গুটানো। আরেকদিনও এমন করে লাইজু মনিরুলের পায়ে চাপ দিলো। মনিরুল ভাবলো এটি হয়তো অনিচ্ছাকৃত স্পর্শ। লাইজু একদিন পড়তে আসলো না। পরদিন এসে বললো, আপনার খাতাটি দিন প্লিজ। কালকে স্যারের নোট তুলে ফেরত দিব। পরদিন স্যারের বাসায় পড়া শেষে মনিরুল কে খাতা ফেরত দিল। হোস্টেলে এসে খাতা খুলে একটা খাম পেল। লাইজু মনিরুলকে প্রেমপত্র লিখেছে। মনিরুল শতসহস্রবার পড়ে চিঠি মুখস্থ করে ফেলেছে। তারপর থেকে বই দেয়া নেয়ার মধ্য দিয়ে প্রেমপত্র চালাচালি চললো। কোনোদিন মহিলা কলেজের গেটে আবার কোনোদিন চাঁদপুর কলেজের গেটে দেখা হতো। পাশাপাশি দুজন হাঁটতে হাঁটতে পূর্ব দিকে রাস্তা ধরে অনেক পথ যেতো, তখন সূর্য থাকতো পশ্চিম আকাশে।

অবশেষে লাইজু-মনিরুল বিয়ের সিদ্ধান্ত নিলো। লাইজু পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দিলে মনিরুল ভয়ে রাজি হয়নি। কারণ লাইজুর পরিবার অনেক প্রভাবশালী। মনিরুলের কাপুরুষোচিত আচরণে লাইজু চুপসে গেল। অবশেষে লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে মায়ের বুকে ঝাঁপিয়ে পড়ে কাঁদতে থাকলো। মা বললো, মনিরুল আগে একটা চাকরি বাকরি করুক তারপর না হয় ভেবে দেখবো। এই অবস্থায় তোমার বাবার কাছে আমি এই প্রস্তাব নিয়ে যেতে পারবো না।

চল্লিশ বছর পর...............মনিরুলের স্ত্রী মারা গেছেন। লাইজু স্বামীকে তালাক দিয়েছেন। আবার দু'জনের দেখা হলো। মনিরুল বললো, তুমি একদিন কথা দিয়েছিলে আমি কখনো একা হয়ে গেলে আমাকে তোমার কাছে নিয়ে রাখবে। এখন আমি সেই সময়ে আছি। আমার যখন বিয়ে হয়ে যাচ্ছিল তখন তোমাকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য বলেছি। এখন সেটাই কি বেদ বাক্য? তোমাকে যখন পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করার কথা বলেছিলাম তখনতো চুপসে গিয়েছিলে। হিসাব-নিকাশ করে ঝুঁকি নিতে চাওনি। প্রেম হলো সাহসী বেকুবের কাজ। তুমি দুটোর একটাও না। আর যারা হিসাব নিকাশ করে, বুঝে শুনে, আগ পাছ ভেবে চিন্তে, ফলাফল সামনে রেখে প্রেম করে সেটা আসলে প্রেম না। ঘর সংসার করার পূর্ব প্রস্তুতি মাত্র! মনিরুল বললো, জীবনের শেষ ক’টাদিন আমরা একত্রে থাকতে পারি না? লাইজু বললো, তোমার ‘নিষ্ফলা মাঠের কৃষক’ হয়ে লাভ কি?

লেখক : প্রবীণ বিশেষজ্ঞ ও লেখক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়