শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০০:০০

দেবদাস কর্মকারের কবিতা

অনলাইন ডেস্ক
দেবদাস কর্মকারের কবিতা

অবিনাশী খেলা

সজল মাটিতে জাগে মসৃণ কুয়াশা ছায়া

ভয়াল একটা কিছু নৈশব্দ নিয়ে আসে পথে

কতো কিছু জীবন্ত সত্য অবিনাশী খেলা

যেখানে মৃত্যু বিকায় অনায়াসে।

পললিক নদীতে ভেসে যেতে যেতে খড়কুটো ধরি

মুঠো ভরে উঠে তুচ্ছ জিনিস

ভুলুণ্ঠিত শান্তি বৃক্ষরাজি অন্ধ আচার

কাঁধ থেকে তুলে নাও হাতকে তুমি যূথচারী !

পৃথিবীর নাভিমূলে পলল দ্বীপে কত রিরংসা

বেপথু বেদনায় পোড়ে বুক, নড়ে উঠে অনন্ত আকাশ

শিউলি চন্দনের গন্ধে অনতিদীর্ঘ চুলের বেষ্টনী

হিরণ্য ছায়া পড়ে বিস্ময়ের সোয়াদে চূর্ণ সন্ধ্যায়

বিস্তৃত জীবন কি আমারই অধিকারে?

অতুলন চুম্বনে নীল নদী জাগে পান্থ তীর্থের ওপাশে ।

রচনাকাল : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা, ১০ আশ্বিন ১৪৩১, শরৎকাল।

পৃথিবীকে কি ছুঁয়ে যাবে জটিল সময় এক

তরুণী প্রহরে আকণ্ঠ নেমে যাই জলে

সুপ্ত মেঘদল ভাসে মাথার ওপর

তরুমগ্ন চারিদিক তারই ছায়া প্রতিবিম্বিত

থই থই বিষজল তবু ডুবে যাই জলপদ্ম নিয়ে ।

বয়সের দুর্দিনে বড্ড ভীরুতা মিছিলে যেতে

নির্ভয়ে তারাই যাবে, ওরাই নিজেকে সাজাবে

বদলের গানে

ঘোর প্রলয়ের মারণাস্ত্র কে জাগায় আবার অনিমেখে

মৃত্যু এড়াতে কোনো পথ নেই, সে আসে সন্ধ্যার মতো নিরবে

রাজছত্র মিছে, ক্ষমতার লোভ মিছে, মিথ্যা আলোড়ন।

হঠাৎ ঝিলমিলি হাওয়া নীল সমুদ্রের বুকে

বিষজল নেই বুঝি আর, হৃদয়ে অমৃত ঢালি নিজে

খিল খিল হেসে উঠে চন্দ্রাবলি মুখ অনন্ত জ্যোতির্লোকে

সময় কোথায় আর, যখোন সূর্যাস্তের ছোপে গোধূলির রাগ

যদি ডুবে যাই ঘুমের বিষাদে

হঠাৎ পৃথিবীকে কি ছুঁয়ে যাবে জটিল সময় এক!

রচনাকাল : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা, ৪ আশ্বিন ১৪৩১ শরৎকাল ।

তুমি কতো সুন্দর

সুদীর্ঘ বিরতির পর তোমার সুরধ্বনিময় বর্ণমালা

মন্ত্রমুগ্ধ আলস্যে স্তব্ধ সুর মূর্ছনায় ধীর নিত্যে,

চারিদিকে কতো বদল, রঙের ঘোর সামনে পেছনে

অতিশয় আশ্চর্য গোপনে অপূর্ব বিস্ময়ের স্বাদে।

যেন মেঘের ডানায় ঝুলে আছি,

নিচে মাটি ফুঁড়ে আজব শহর

দেয়ালে দেয়ালে শোভিত অশ্লীল নগর সঙ্গীত, শ্লোগান

আত্ম হননের পংক্তিমালা--

দাঁড়াই দুয়ারে, মেঘাচ্ছন্ন নিরুদ্দেশ দিগন্ত,

ঘন লতাগুল্মে ঢাকা অলীক বেষ্টনী,

পাঁজরের পাশ থেকে অজস্র নদী, ফসলের জমি

অবিরল ধারার জলাভূমি, শত শাপলা দ্বিরূপিণী

শিউলি চন্দন গন্ধের প্রতিটি শরৎ সকাল।

যখোন প্রকৃতি মগ্ন হিরণ্য দ্যুতিতে,

আমার ইচ্ছে ডানা

করে ভর নীলিম আকাশে

যাই ভুলে অনন্ত ক্রন্দনধ্বনি, ধুলোমাখা পথে হেঁটে

সাঙ্গ হয়ে আসে বেলা, তবুও গোধূলির রঙে আছি বেঁচে

আত্ম গ্লানিতে ভেসে যায় বুঝি সব

ছলাৎ ছলাৎ কেঁপে ওঠা ঢেউ জল

মনে কী রেখেছি জীবন ব্যাপিয়া এই ভেজা মাটি, দিগন্তলীন মাঠ, কৃতজ্ঞতা, প্রিয়তমা, দুধগন্ধী শিশু মুখ

পরমার্থ

তুমি কতো সুন্দর!

রচনাকাল :

১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা, ২৯ ভাদ্র ১৪৩১, শরৎকাল।

আমার যাবতীয় নীলিমা

কেউ চিনতে পারেনি

তবু সেই কিশোরকে আমি দেখি

যে পায়ের তলায় মাটি মাড়িয়ে যায়

চার পাশের মানুষ গাছপালা শিশিরিত ঝোপ ঝাড়

অপূর্ব নীল নদী পাড়ভাঙ্গা মাটি।

একটি অরূপ গাঁয়ের মানুষ ছিলাম তুমি আমি

সেখানে আকাশ ছিল নীল

মাথার ওপরে সাদা মেঘ

কেমন স্বপ্ন বুনেছিলে অন্তরে বাহিরে

কোমল গুপ্তচরের চোখ এড়িয়ে

তোমার কপাল ছুঁয়ে একটি রক্ত তিলক

এইটুকু দূরত্ব ভেঙ্গে স্পর্শ করেছি তোমার কোমল আঙ্গুল ।

পান্থ তীর্থের ওপাশে চূর্ণ সন্ধ্যার রঙ

মেঘ ছিন্ন চূড়া ভেঙ্গে চাঁদের জ্যোৎস্না

পাশ ফেরা নদীর জলে কী অপূর্ব আলোর বিচ্ছুরণ

তারপর স্বর্ণ চাপার অবয়বে তোমাকে দেখলাম

নিজের ভেতরে খুলে গেল নমিত একটি নীল খাম

যাবতীয় না বলা বর্ণমালা

হঠাৎ বাতাস দ্বিখণ্ডিত করে তুমি চলে গেলে

বহু দিন কাটলো-দেখলাম পাশফেরা নদীর পাশে

দারুণ ফুটফুটে আনন্দে তুমি বেঁচে আছো

কালপুরুষ রাতে মুড়ে দিলাম চন্দন চর্চিত বিবর্ণ চিঠিটা

দিগন্ত রেখার জল ছুঁয়ে যে নদী

সেই জলে নিতান্ত গোপনে ভাসিয়ে দিলাম যবতীয় আমার নীলিমা।

রচনাকাল : ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ঢাকা, ২২ ভাদ্র ১৪৩১ শরৎকাল।

নির্বিকার সময়ের মুখ

কাশফুলের উদ্ভিন্ন আড়ালে থমথমে রাত

নিখিলের কোলে কোনো স্মরণীয় বিস্ময়

আকাশভরা দারুণ দুর্বোধ্যতা

চাঁদের অন্তিম আভার কাছে নেই কোনো ঠাঁই

জলা জমি ডুবে যায় বন্যায়

তবুও রাতভর পিপাসা, আবছা আঁধার।

গর্জন করে ভাঙ্গা খোঁড়া পায়ে আসে নতুন

সুফলা মাটির গায়ে জমে কালো গাধ,

দূর নক্ষত্রের নীল আলো ঠিকরে উঠে ধীরে,

মুক্তা দানা বুকে নিয়ে ঝিনুকেরা দেয় ডুব

অবুঝ উল্লাসে বাঁধ ভাঙ্গা সাগরের ঢেউ,

স্বপ্নহীন শ্রদ্ধাহীন যতিহীন বিস্ময়ে চারিদিক।

অশরীরী হাওয়া-প্রবাহ বৃক্ষাচ্ছন্ন ছায়ার ভেতরে

চুনাবৃত দেয়ালে মারির মতো অশ্লীল শব্দ জাগে

বাতাস জানালা ঝাপটায়, তবু দোল খায় ফুলের মঞ্জরী

বিলুপ্ত ঈশ্বর হাঁকে এই বুঝি জাগার সময়

ঘুমন্ত নারীও গায় সুদীপ্ত শস্যের গান

দুয়ারে রৌদ্র বিন্দু, গ্রীবা নিচু করে প্রিয়া মুখ

ভয় চোখে দেখি চালতার ঝুল ডালে আনন্দ দোল খায়।

রচনাকাল : ২৯ আগস্ট ২০২৪, ঢাকা। ১৪ ভাদ্র ১৪৩১, শরৎকাল।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়