সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার
  •   দৈনিক ইনকিলাবের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শহীদুল্লাহ্ মিজির দাফন সম্পন্ন
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

প্রকাশ : ২১ জুন ২০২২, ০০:০০

বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের গানের (লালনগীতির) কাব্যগুণ
অনলাইন ডেস্ক

লোক-সাহিত্যে যেনো প্রকৃতির আপন পরিবেশের অনায়সলব্ধ সৌন্দর্যরাশি। আধুনিককালে প্রতিটি দেশেই ‘শিষ্ট সাহিত্যে’র সমান্তরাল রেখায় ‘লোক-সাহিত্য’ প্রবাহিত হয়েছে। বাংলার লোক-সাহিত্য বাংলাদেশের অন্তরে বিরাজিত ভাব সম্পদের অজস্রতাকেই যেনো বিচিত্র বর্ণের পুষ্পসম্ভারে সজ্জিত করে তুলেছে। লোক-সাহিত্যের সূত্রেই ‘বাউল গানের’ কথা আসে। সুপ্রাচীন কাল হতে বাংলাদেশে ‘বাউল গানের’ নামে এক শ্রেণীর আধ্যাত্ম্য সঙ্গীতের ধারা চলে আসছে।

আপনাকে চিনে, যারা অচেনা আরশি নগরের পড়শির সন্ধানে দেহকেন্দ্রিক এবং মিথুনাত্মক যোগ-সাধনায় বিশ্বাসী সে সাধকগণই ‘বাউল’ নামে পরিচীত। এ সম্প্রদায় অন্তঃসলিলা নদীর মতো সুদীর্ঘকাল হতে বাংলার মানস চেতনাকে সরস করেছে। বাউলগণ কোনো সংস্কারাবদ্ধ রীতি-নীতিকে আমল দেন না, সহজ ও সংস্কারমুক্তভাবে জীবন-যাপন ও ধর্মাচরণই বাউলের ধ্যান এবং জ্ঞান/উদ্দেশ্য। কোনো বন্ধনকেই তারা স্বীকার করেন না। ‘তাইতো বাউল হইনু ভাই/এখন লোকের বেদের ভক্তি, ভেদের/আরতো দাবী দাওয়া নাই।’

ড. উপেন্দ্র ভট্টাচার্য্যরে মতে, ‘তান্ত্রিক বৌদ্ধ থেকে সহজযান, সহজযান থেকে মিথুনাত্মক যোগ সাধনার পর্যায় অতিক্রম করে বৈষ্ণব সহজিয়াদের চিন্তা-চেতনার সাথে মুসলমান ফকিরদের ধ্যান-ধারণা মিশে আনুমানিক ১৬২৫-১৬৭৫ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে বাউল মতবাদের উদ্ভব ঘটেছে।’ বাউলদের তত্ত্বকেন্দ্রিক গানগুলোই ‘বাউল-পদাবলী’ বা ‘বাউল গান’ নামে পরিচিত। এ গানের উল্লেখযোগ্য স্রষ্টারা হলেন ফকির লালন শাহ, শেখ মদন, পাগলা কানাই, নবনী দাস, শাহ আবদুল করিম, পূর্ণচন্দ্র দাস, রশিদ সরকার, উকিল মুন্সি প্রমুখ। নিঃসন্দেহে বলা যায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের হাতেই এ সঙ্গীতের সর্বশ্রেষ্ঠ বিকাশ লাভ করে।

কোনো মহৎ কবির জীবনদর্শন ব্যতীত তাঁর কাব্যকে বিশ্লেষণ করা যায় না। কবিতার সঙ্গে কবির জীবন দর্শন ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। তাছাড়া কবির কবিতা যে ‘হয়ে ওঠে’ সহজ স্বাভাবিক-সাবলীল রূপে কাব্য পদবাচ্য ও রসময়তা নির্ভর করে কবির হৃদয়াবেগ ও মগ্ন-চৈতন্যে অনায়স প্রস্ফুট দীপ্তির ওপর; যা তাঁর জীবন দর্শন থেকে স্বতোৎসারিত।

কোনো মহৎ কবির কাব্য দৃশ্যত ‘হয়ে ওঠে’ ভাব, ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার এবং প্রসাধন কলার মধ্য দিয়েই। এর এসবের মধ্যে নিহিত থাকে শব্দ ও ভাবার্থশ্রয়ী নানা সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম কাব্যিক অলংকরণ। কাব্য সমালোচকবৃন্দের মতে, কবিতার বিষয়বস্তু এবং রূপকলার মিলিত সত্তা যখন আমাদের দৃষ্টিগোচর হয় তখনই আমরা তাকে কালোত্তীর্ণ, রসোত্তীর্ণ ও লাবণ্যময় বলি’।

সকল মহৎ কবির কবিতার মতো ফকির লালন শাহের গানের মধ্যেও এ গুণাবলির চিহ্ন বর্তমান ও পরিস্ফুট। সূর্যের সাত রং যেমন রঙধনুর মধ্যে ছড়িয়ে থাকে, তেমনি লালনের গানের প্রতিটি চরণে কবির মেধা-মনন, শিল্প-সৌন্দর্য, সুকুমার চিন্তা-চেতনা, আধ্যাত্মিক তত্ত্বরস ও কথার দীপ্তি ছড়িয়ে আছে।

লালনের গানের কাব্যগুণ বিচারে দুটি স্ববিরোধী মতবাদ লক্ষ্যণীয়। একটি ‘প্রাচীন মতবাদ’ আর অপরটি ‘আধুনিক মতবাদ’। প্রাচীন মতবাদীরা কাব্যের বহিরঙ্গদিকটিকে অর্থাৎ অলঙ্কার-বৈভবকে ‘কাব্যের প্রধান গুণ’ বলেছেন। কিন্তু অপরপক্ষে আধুনিক মতবাদীরা কাব্যের প্রসাধন কলাকে ‘কাব্যের প্রধান গুণ’ বলে স্বীকার করেছেন। এ দু স্ববিরোধী মতবাদের আলোকেই লালনের গানের (লালন গীতির) ভাষা, ভাব, ছন্দ, চিত্রকল্প, অলঙ্কার প্রভৃতি বিচার বিশ্লেষণে প্রয়াসী হবো।

ভাষা : ‘লালন গীতির’ ভাষা সৌষ্ঠবের প্রতি লক্ষ্য করে ড. মোঃ আবদুল হাই বলেছেন যে, সাধন মার্গের দার্শনিকতা ও জীবনানুভূতির মধ্য দিয়ে ভাষার যে সহজ স্বছন্দ, সাবলীলরূপ প্রকাশ পেয়েছে সেটি তাঁকে সমকালীন লোক কবিদের মধ্যে বিশিষ্ট আসন দান করেছে। তার গানের ভাষার এ রূপ উপভাষার উপরে প্রতিষ্ঠিত। উদাহরণস্বরূপ- ক) ‘কাছের মানুষ ডাক্ছ কেন শোর করে’। খ) ‘মন যদি তোরে ধরতে পারতাম হাতে/দেখতাম তুমি মন কি মনা/কেমন করে আল ডিঙ্গাতে’ এ রূপ ভাষার চমৎকারিত্ব ও লালিত্য লালন গীতিতে অজস্র প্রমাণ রয়েছে। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ফকির লালনে’র গানের ভাষা প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘লালনে’র গানের ভাষা বাঙ্গালীর দিন-রাত্রির ভাষা’। তাই লালনের গানের ভাষা সৌষ্ঠব শুধু সমকালীন কবি-সাহিত্যিকবৃন্দের মধ্যেই নয়, ঊনবিংশ শতাব্দীর কবি-সাহিত্যিকবৃন্দের মধ্যেও অনন্য।

ভাব : ভাষার ন্যায় ভাবগভীরতায় লালনগীতি বিশিষ্টতা লাভ করেছে। অতি সহজ সাধারণ বাণী দ্বারাও যে গভীরতম ভাবদ্যোতক কথা বলা যায়, লালনগীতিতে তার স্পষ্ট স্বাক্ষর আছে। যেমন : ক) ‘ও যার আপন খবর আপনার হয় না’, খ) ‘বাড়ির কাছে আড়শী নগর/সেথায় এক পড়শী বসত করে’, গ) ‘খাঁচার ভিতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়’, ঘ) ‘কে কথা কয়রে দেখা দেয় না/নড়ে চড়ে হাতের কাছে খুঁজলে জনম ভর মিলে না’। এসব কথার মধ্যে কাব্য ও তত্ত্ব উভয়ই বিদ্যমান, কিন্তু ‘তত্ত্ব’ তার কাব্যে থাকলেও প্রধান রূপে নয়, ভাবের প্রয়োজনেই এসে গেছে। যা তাঁর কাব্যে/গানকে আরো সুষমামণ্ডিত করে তুলেছে।

ছন্দ : ছন্দের ক্ষেত্রেও লালনের গানে বৈচিত্র্য লক্ষ্যণীয়। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও লালনগীতির ছন্দের প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছেন (বলাকা কাব্য)। এছাড়া ঊনবিংশ/বিংশ শতাব্দীর আধুনিক কবিগণও তাঁর ছন্দের কারুকার্যে বিমোহিত হয়েছেন/প্রশংসা করেছেন। স্বরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত, অক্ষরবৃত্ত-সব ধরণের ছন্দ ‘লালনগীতি’তে বর্তমান।

অলঙ্কার : প্রাচীন কাব্যকলাবিদগণ ভাষা, ভাব ও ছন্দ অপেক্ষা অলঙ্কারকেই কাব্যের ‘প্রধান বিষয়’ বলে মনে করেছেন। সংস্কৃত রসশাস্ত্রে অলঙ্কারের মধ্যে রসের বিকাশ, শব্দগত এবং অর্থগত ব্যঞ্জনার প্রকাশকেই প্রধান রূপে গণ্য করেছেন। ‘লালন গীতি’ প্রাচীন রস শাস্ত্রানুযায়ী রচিত নয়। তথাপিও প্রচুর রসের সন্ধান পাওয়া যায়। যেমন : ক) শান্তরস : ‘কি সাধনে আমি পাইবো তারে’, খ) সখ্যরস : ‘আর কি আসবে সেই গৌর চাঁদ এ নদীয়ায়’, গ) মধুররস : ‘ধন্যভাব গোপীর ভাব আ মরি মরি’।

এছাড়াও শব্দ এবং অর্থগত ব্যঞ্জনাও লালনগীতিতে যথেষ্ট রয়েছে। অনুপ্রাস, যমক, শ্লেষ, বক্রোক্তি, উপমা, উৎপেক্ষা, রূপক, সমাসোক্তি ইত্যাদি শব্দালঙ্কার ও অর্থালঙ্কার প্রাচুর্যে ‘লালন গীতি’ ভরপুর। নিম্নে কয়েকটি উদাহরণ উপস্থাপন করা গেল :

ক) অনুপ্রাস : ‘আকার সাকার নাই নৈরাকার’ খ) যমক : ‘পরশে পরশ মিলে/পূর্ণ হ’লে শশী’ গ) শ্লেষ : ‘কেন ম’লিরে মন ঝাঁপ দিয়ে/তোঁর বাবার পুকুরে’ ঘ) উপমা : মণিহারা ফণির মতন/প্রেম রসিকের নয়ন যেমন’ ঙ) উৎপেক্ষা : ‘দেখতে শোভা যে অমনি/তারার মালা চাঁদের গলে’ চ) রূপক : ‘সোনার মানুষ ঝলমল দ্বিদলে/যেমন মেঘের সাথে বিদ্যুৎ খেলে’ ছ) অতিশয়োক্তি : ‘চাতক প্রায় অহর্নিশি/চেয়ে আছি কাল শশী’-প্রভৃতি।

আধুনিক কাব্য সমালোচকবৃন্দ অলঙ্কারের চেয়ে প্রসাধনকলাকেই কাব্যগুণ বিচারের প্রধান মাপকাঠি বলেছেন। তাঁদের মতে অলঙ্কার সৌন্দর্যবর্ধক বটে, কিন্তু লাবণ্য সঞ্চারক নয়। তাই প্রসাধনকলাকে কাব্য বিচারের মাপকাঠি ধরলে দেখা যায় যে, এসব প্রসাধনকলার মধ্যে রয়েছে যথাক্রমে চিত্রময়তা, সঙ্গীতময়তা ও বাণীদেহ নির্মাণ বা ‘স্টাইল’।

চিত্রময়তা : লালন স্বশিক্ষিত সুনিপুণ শিল্পী। তাই রং-তুলি স্পর্শে তাঁর গানসমূহে অসংখ্য চিত্রকল্পের সমাহার ঘটেছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় : ক) ‘মেঘের আড়ে পাহাড় লুকায়’ খ) ‘দেখতে শোভা যেন অমনি/তারার মালা চাঁদের গলে’ ইত্যাদি। উপর্যুক্ত স্তবক দুটিতে যথাক্রমে মেঘাবৃত আকাশ ও পাহাড় এবং চাঁদ ও তারার ঝলমলে আকাশের যে প্রতিচ্ছবি প্রস্ফুটিত হয়েছে তা যেমন জীবন্ত তেমনি আকর্ষণীয়। এমন অসংখ্য চিত্রকল্প অমরশিল্পি, ভাবুক কবি ফকির লালন শাহের বাণী ও সুরে ঝংকৃত হতো। তখন আত্মবিশ্বাসী লালন শাহ গেয়ে উঠতেন ‘ওরে তোরা আয়/আমার পোনামাছের ঝাঁক এসেছে’-এ ‘চিত্রকল্প’ বাঙালি মাত্রেরই চির পরিচিত।

সঙ্গীতময়তা : লালনের গানের শুধু বাণী নয়, সুরের মূর্ছনায় প্রতিটি বাঙালি চিত্তকে করে তোলে ভাব বিহ্বল ও বিমোহিত। তাঁর এ মিষ্টি মধুর আধ্যাত্মিক সুর ঝংকারে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত মুগ্ধ হয়েছেন এবং প্রভাবিত হয়েছেন। যা আমরা পরবর্তীকালে অনেক ‘রবীন্দ্র সঙ্গীতে’ সে ছাপ দেখতে পাই। লালনের গানের সুর যেনো জাদু ও সম্মোহনী শক্তিমিশ্রিত। প্রতিটি বাঙালির কাছে ‘লালনগীতি’ এজন্যেই এতো আদরণীয়, এতো আপনার, এতো ঘরোয়া। ইদানীং বিভিন্ন ভাষা-ভাষী মানুষদের দেখা যায় যে, লালনের গানের কোনো অনুষ্ঠানে বিমুগ্ধ শ্রোতা হিসেবে উপস্থিত থেকে আত্মতৃপ্তি লাভ করতে। লালনগীতির অবিসংবাদিত শিল্পী ফরিদা পারভীন যখন গেয়ে উঠে ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’ কেমনে আসে যায়’। তখন প্রতিটি মানুষ ক্ষণিকের জন্যে হলেও থমকে দাঁড়ায়।

বাণীদেহ : লালনগীতির বাণীদেহ নির্মাণে যে রূপকল্প, অঙ্গসজ্জা, স্তবক বিন্যাস রয়েছে তা সত্যিই অপূর্ব কাব্যগুণে সমৃদ্ধ ও বৈচিত্র্যময়। বাণীদেহ নির্মাণের রীতি লালনগীতিকে সমৃদ্ধশালী ও কালজয়ী করে তুলেছে।

এছাড়াও প্রসাধন কলার মধ্যে প্রবাদ, প্রবচন, সুভাষণও অন্তর্ভুক্ত। যা কাব্যকে আরো দ্যুতিময় ও শ্রীমণ্ডিত করে তোলে। লালনগীতিতে ব্যবহৃত ‘কবির উক্তি’ যা প্রবাদণ্ডপ্রবচন হিসেবে চিরস্থায়ী স্বীকৃত/আসন লাভ করেছে। যেমন : ক) ‘শ্যাম রাখবো না কুল রাখবো’ খ) ‘লোভে পাপ পাপে মরণ’ গ) ‘পীড়েয় বসে পেড়োর খবর’। ইত্যাদি এসব প্রবাদণ্ডপ্রবচন লালন গীতিকে কাব্যমণ্ডিত করেছে।

পবিত্র হাদীসে আছে ‘মান আরাফা নাফসাহু, ফাকাদ আরাফা রাব্বাহু’। অর্থাৎ যে নিজকে চিনেছে, সে মহান আল্লাহকে জেনেছে। গ্রীক দার্শনিক সক্রেটিস বলেছেন, ‘কহড়ি ঞযু ঝবষভ.’ জীবনের চরম ও পরম সাধনা হচ্ছে নিজকে জানা, খোদাকে (স্রষ্টাকে) চেনা। আত্মা পরমাত্মার অংশ বলে দেহাধারস্থিত আত্মাকে চেনা/জানা-ই বাউলদের ব্রত। লালন বলেছেন ‘ও যার আপন খবর আপনারে হয় না/আপনার চিন্তে পারলেরে যাবে অচেনারে চেনা’। লালনের রূপক অভিব্যক্তিতে সে পরমাত্মা হচ্ছে, মনের মানুষ, অটল মানুষ, অধর মানুষ, মানুষ রতন, মন-মনুয়া, অচিন পাখি, অলখ সাঁই। এ প্রসঙ্গে লালন লিখেছেন : ক) খাঁচার ভেতর অচিন পাখি কেমনে আসে যায়/তারে ধরতে পারলে মন বেড়ি দিতাম পাখির পায় খ) আমি একদিনও না দেখিলাম তারে/আমার বাড়ির কাছে আরশী নগর/সেথায় এক পড়শী বসত করে গ) আমি কোথায় পাব তারে/আসবে ‘মনের মানুষ যেরে’ ঘ) এ মানুষে আছেরে মন/যারে বলে মানুষ রতন ইত্যাদি।

ধর্মগত, জাতিগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে মানবাত্মার সত্যানুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে লালন (জীবাত্মা) তাঁর পরমাত্মার স্বরূপ অনুভব করেছিলেন। পূর্বসূরি বৈষ্ণবকবিদের ‘সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই’ এই অসাম্প্রদায়িক চেতনা লালনকেও ভীষণ অনুপ্রাণিত করেছিলো। তাইতো তিনি বলতে পেরেছিলেন ‘সব লোকে কয় লালন কিজাত সংসারে/ফকির লালন বলে জাতের কিরূপ দেখলাম না এ নজরে’।

লালনের গানের মনোরম বর্ণনাভঙ্গীও কাব্যগুণ সমৃদ্ধ। লালন ফকিরের এক তারায় বিশ্ব জনমতের যে অশ্রুতপূর্ব ঐক্যতান বেজে উঠেছে কবি রবীন্দ্রনাথ ও নজরুলসহ উত্তরসূরি বাউলগণ সে সুরে প্রভাবিত হয়ে তাদের আপন বীণায় সহস্র তারে সে ঐক্যতানের নব নবরূপ রচনা করেছেন। তাইতো আমরা দেখি, লালনের গান একাধারে ধর্ম শাস্ত্র , দর্শন, সাধন সঙ্গীত ও অমর গীতি কবিতা। এখানেই লালন গীতির সার্থকতা।

মোঃ নূর ইসলাম খান অসি : পরিচালক, ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। মোবাইল ফোন : ০১৮১১-৪৫৮৫০৭।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়