প্রকাশ : ২০ অক্টোবর ২০২৩, ০০:০০
॥ ৫ম পর্ব ॥
২০১৩ সাল থেকে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতার সাথে পথচলা। আজ ২০২৩ সালের ২১ অক্টোবর। কিছুদিন আগে কাজী শাহাদাত আংকেল তার ব্যক্তিগত ফেসবুক একাউন্ট থেকে একটি পোস্ট শেয়ার করেন যে, করোনার কারণে স্থগিত হওয়া ২০২০ সালের বিতর্ক প্রতিযোগিতাটি আবার শুরু হতে যাচ্ছে। আমি তখন কুমিল্লাতে। পোস্টটি দেখে আবেগ আপ্লুত হয়ে যাই। সেখানে শাহাদাত আংকেল আমাকে উদ্দেশ্য করে কমেন্ট করেন, মেহেদী হাসান সোহেল, তোমার তো আর বিতর্ক করার সুযোগ নেই। কুমিল্লা থেকে এসে বিতর্ক শ্রমিক হিসেবে কাজ করতে হবে যে। আমি তখন থেকেই স্থির করি এ মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হবার। কারণ বিতর্কের এক দশক পূর্তি অনুষ্ঠানেও আমি অংশ নিতে পেরেছিলাম। কাজী শাহাদাত আংকেল আরো জানালেন যে, এ বছর বিতর্ক শুরু হবে রহিমানগরে, সম্ভাব্য তারিখ ৭ অক্টোবর। আমি অপেক্ষাতে থাকলাম। কিন্তু অক্টোবরে আমাদের অভ্যন্তরীণ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা হবার কথা থাকায় চিন্তায় পড়ে গেলাম। কিন্তু অপেক্ষাতে রইলাম। মজার বিষয়, বিসিএস শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তাদের কর্মবিরতির কারণে আমাদের পরীক্ষা এক সপ্তাহ পিছিয়ে যায়। আমি নিশ্চিত হলাম যে, ৭ অক্টোবর আমি রহিমানগরে বিতর্কের এক যুগপূর্তি অনুষ্ঠানে থাকছি। হঠাৎ একদিন বিকেলে আবু সালেহ ভাই ফোন দিলেন, শাহাদাত আংকেল আমার সাথে কথা বলতে চান। সালাম বিনিময়ের পর আংকেল জানতে চান, আমি ৭ অক্টোবর বিতর্কে থাকতে পারবো কি না।
আমি ওনাকে সম্মতি জানালাম। কিন্তু তিনি জানালেন, আমি এ বছর বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালন করবো। এ কথাটি শোনার জন্যে আমি আসলে প্রস্তুত ছিলাম না। নিঃসন্দেহে এটি আমার মতো একজন নগণ্য বিতর্কপ্রেমীর জন্যে বিরল স্বীকৃতি। বিতর্কায়নে নিয়মিত লেখা দিতে পারি না বলে শাহাদাত আংকেলের অভিযোগ। আমি চিন্তা করলাম, বুধবার ক্লাস শেষ করে বাড়ি ফিরতে বাসে বসে যে সময়টা পাবো সেটাই কাজে লাগাবো। আমার ধারাবাহিক লেখার চতুর্থ পর্বটি বাসে বসে লেখা। আমি বাসায় ফিরে আসলাম।
৭ অক্টোবর ২০২৩, ভোরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ফোন হাতে নিয়ে দেখলাম শাহাদাত আংকেল ফোন করেছেন। আমি ফোন ব্যাক করতেই জানতে পারলাম ওনারা রহিমানগরের কাছাকাছি। আংকেলকে যতদিন চিনি, তিনি সময়ের ব্যাপারে কোনো আপোষ করেননি। তিনি দশ মিনিট লেট করেন না, বরং দশ মিনিট আগে বিতর্ক শুরু করার প্রচেষ্টাতে থাকেন।
বৃষ্টি হচ্ছে বাইরে, রহিমানগর হাজী চাঁদ মিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও পালাখাল উচ্চ বিদ্যালয়ের বিতর্কের মধ্য দিয়ে বিতর্কের সূচনা হয়। বিতর্ক চলাকালে ইউএনও কচুয়া মহোদয় এসে উপস্থিত হন। সাথে যোগ দেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সম্মানিত ডিজিএম সৈয়দ আনিসুর রহমান ও শিল্পপতি মুজিব উল্লাহ, যাঁরা আমাদের কাজী শাহাদাত আংকেলের বন্ধু।
বাইরে বৃষ্টিও ততক্ষণে কমে যায়। একটি শোভাযাত্রার মাধ্যমে বিতর্কের বারো বছরপূর্তি উৎসবের শুভসূচনা হয়। মোট ৭টি বিতর্কে ১৪টি দল অংশ নেয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১টা ১০ মিনিটে শুরু হয় ফলাফল ঘোষণা। শেষ হয় একটি মহাকর্মযজ্ঞের। কাজী শাহাদাত আংকেল বিতর্কের ফাঁকে আমার স্মৃতির আঙ্গিনা রহিমানগর বাজার, আমাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখেন। বিতার্কিকদের যে কোনো সংকটে তিনি পাশে থেকেছেন। তাদের কারো নিকটজনের জানাজায় পর্যন্ত ছুটে গিয়েছেন। নিজ উপজেলা, নিজ আঙ্গিনা, যেখানে আমার শৈশবের দুরন্তপনার সময়টুকু কেটেছে সেই আঙ্গিনাতে বিতর্ক প্রতিযোগিতায় মডারেটর ও বিচারক হিসেবে দায়িত্ব পালনের স্মৃতি আমার জীবনে চির অম্লান হয়ে থাকবে।
আমার বিতার্কিক থেকে লেখক, সংগঠক, মডারেটর এবং সর্বশেষ বিচারক হবার নেপথ্যে নায়ক কাজী শাহাদাত আংকেল। তিনি যখন যেভাবে চেয়েছেন, সেভাবেই দায়িত্ব পালন করেছি। বিতর্কের প্রশ্নে কাজী শাহাদাত আংকেলের নেতৃত্বের প্রশ্নে আমার প্রশ্নাতীত সমর্থন। (চলবে)
মোঃ মেহেদী হাসান সোহেল : সদস্য, চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক ফাউন্ডেশন।