প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
সিকেডিএফ যা কেবলই আবেগ, ভালোবাসা, দুর্বলতা, সম্মান আর প্রাপ্তির কেন্দ্রবিন্দু। সিকেডিএফ যেন একটি পরিবার। কাজী শাহাদাত আংকেল এই পরিবারের পিতা আর আমরা আমরা বিতার্কিকরা এই পরিবারের তিল তিল করে গড়ে ওঠা সন্তান। সিকেডিএফ-এ জড়িত অন্যান্য সকল শ্রদ্ধাভাজন সদস্য আমাদের মায়ের মতো স্নেহ, নৈতিক শিক্ষা, সুন্দর বাচনভঙ্গি, জীবন যুদ্ধের একজন যৌক্তিক যোদ্ধা হিসাবে গড়ে তুলেছেন। আমি এই চাঁদপুর কন্ঠের একজন খুদে বিতার্কিক। আমার বিতর্কযাত্রা শুরু হয় ২০১৪ সালে।
তখন আমি সপ্তম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। এর আগে আমি বিতর্ক শব্দটির মাঝে এত আবেগ, এত সম্মান খুঁজে পাইনি। ক্লাসে সহপাঠী ও শিক্ষকদের সামনে খুব সম্ভবত ২-৩ বার বিতর্ক করেছিলাম। জীবনের প্রথম এত বড় প্ল্যাটফর্মে বিতর্কের জন্য যখন ডায়াসের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম, সেদিনের অভিজ্ঞতা যদি বলি তবেই বুঝা যাবে আমি কত অবুঝ, কত খেয়ালিপনায় ছিলাম বিতর্ক নিয়ে। বক্তব্য শুরু করার আগে বিতর্কের নিয়ম অবগত করেছিলেন সম্মানিত মডারেটর সাহেব-'৩ মিনিটে সতর্ক সংকেত' '৪ মিনিটে চূড়ান্ত সংকেত' বাজবে। আমি তিন মিনিট বক্তব্য দেওয়ার পর যখন সতর্ক সংকেত বেজেছিল তখন আমি বক্তব্যের মাঝখানে মডারেটরকে প্রশ্ন করেছিলাম, আমার কি সময় শেষ? আর কিছু বলতে পারবো না? সম্মানিত মডারেটর হতবাক হয়ে আমাকে এক লাইনে উত্তর দিলেন, আর ১ মিনিট আছে। আবার বক্তব্য দিয়ে পুরো ৪ মিনিট শেষ করলাম। সেদিন কচুয়া উপজেলায় প্রথম ভেন্যুতে ছিলো আমার দলের বিতর্ক এবং আমি ছিলাম প্রথম বক্তা। খুব হালকা পাতলা ছোট একটা বাচ্চার মতো ছিলাম। বক্তব্য শেষে যখন দর্শক সারিতে এসে বসলাম, সবাই শুধু বললো মাশাল্লাহ্ সুন্দর বক্তব্য দিয়েছ, তবে মাঝের ভুলটা আর করবে না। সেদিন থেকেই আমি বিতর্ক জ্বরে আক্রান্ত।
আয়নায় নিজেকে দাঁড় করিয়ে কত রকমভাবে বক্তব্য দেয়ার চেষ্টা করতাম। যখন জেলা পর্যায়ে অন্য বিতার্কিকদের বক্তব্য দেখতাম, তখন খুব করে চাইতাম আমিও তাদের মতো সুন্দর কথা বলা শিখবো, বাচনভঙ্গি শিখবো। আর এভাবে করতে করতেই ৫টি বছর বিতর্ক করেছি পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক প্রতিযোগিতায়। প্রতি বছর মার্চণ্ডএপ্রিল মাসে অপেক্ষায় থাকতাম কখন সিকেডিএফ থেকে চিঠি আসবে। এখন অনার্স ২য় বর্ষ শেষের দিকে। এখনো অপেক্ষায় থাকি কবে যে পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক হবে। বিতার্কিক না হলেও এই বিতর্কের তিন বারের প্রতিশ্রুতিশীল বিতার্কিক রাবেয়া হিসেবে সিকেডিএফ পরিবারে গিয়ে বিতার্কিকদের বক্তব্য শুনবো, গুণীজনদের বক্তব্য শুনবো।
এই বিতর্ক প্রতিযোগিতা আমাকে দিয়েছে জীবনের সেরা কিছু প্রাপ্তি। কখনো বিতার্কিক হিসেবে পেয়েছি সেরা বিতার্কিকের প্রশংসা। ফাইনালের মঞ্চে বিতার্কিক হিসাবে অংশগ্রহণ করতে না পেরে ৯ম পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠের ফাইনালের মঞ্চে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেয়ার সময় আমার ছলছল চোখ দেখে মাননীয় শিক্ষামত্রী ডাঃ দীপু মনির কাছে আশার বাণী শুনেছিলাম। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন সামনে ভালো করবে। আর ১০ম পাঞ্জেরীর উদ্বোধক হিসেবে নিজেকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলাম। আজও জীবনের সুন্দর সময়, সুন্দর স্মৃতি এবং অন্যতম প্রাপ্তি আমার কাছে এগুলোই। আজীবন আমি কৃতজ্ঞ থাকব সিকেডিএফ পরিবারের কাছে, যারা অসংখ্য বিতার্কিক জন্ম দিয়েছে। যারা আমার মতো ক্ষুদ্র মানুষকে বড় আসনে বসার সুযোগ করে দিয়েছেন এবং আমার চিন্তার দুয়ার খুলে দিয়েছেন। যাদের কারণে আজ আমি মুক্তচিন্তা করতে পারছি, অন্য অনেক প্ল্যাটফর্মে বিতর্ক করার সুযোগ হয়েছে। আমি বিতর্ক করি এবং করছি। তবে বিতার্কিক হিসেবে আমার জন্ম সিকেডিএফের হাত ধরেই।
এতো সময় পরে সিকেডিএফ আবার পাঞ্জেরী-চাঁদপুর কণ্ঠ বিতর্ক শুরু করছে শুনে আমার ঈদ ঈদ মনে হওয়া শুরু করেছে। অনেক শুভকামনা ও দোয়া। ১২ বছর পূর্তিতে সুন্দর ও সুষ্ঠু ফাইনালের মঞ্চের অপেক্ষায়। সিকেডিএফ পরিবারের সকল সদস্যের জন্যে শুভ কামনা ও দোয়া সব সময়।