প্রকাশ : ২৪ অক্টোবর ২০২১, ০০:০০
মূলত র্যাগ ডে আর স্কুল-কলেজের শেষদিন একই জিনিস নয়। স্কুল-কলেজের শেষদিনকে সমাপনী বলা হয়। আর র্যাগ জিনিসটা আসলে গ্রিক কালচার। সপ্তম-অষ্টম শতকে খেলার মাঠে টিম স্পিরিট নিয়ে আসার জন্যে র্যাগিংয়ের প্রচলন শুরু হয়। র্যাগ শব্দটি মূলত ইংরেজি র্যাগিং থেকেই এসেছে। আর ইউরোপে এর প্রচলন ঘটে অষ্টম শতকের মাঝামাঝি। ১৮২৮-১৮৪৫ সালের দিকে র্যাগ সপ্তাহের প্রচলন ঘটে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। বিশেষ করে ছাত্র সংস্থা পাই, আলফা, বিটা, কাপ্পা এই সপ্তাহটির প্রচলন ঘটাতে বড় ভূমিকা নিয়েছিলো। তবে মজার ব্যাপার হলো, ইউরোপ-আমেরিকায় এর যাত্রা হলেও বর্তমানে ভারতীয় উপমহাদেশেই এর ব্যবহার সর্বাধিক। বিশেষ করে ভারতে র্যাগিং এখন চূড়ান্ত বাজে আকার ধারণ করেছে।
যদিও বলা হয় বিনোদনের অংশ হিসেবে র্যাগ ডে উদ্যাপন করা হয়, তবে শেষ পর্যন্ত তা নতুনদের জন্যে কাল হয়ে দাঁড়ায়। মূলত র্যাগ ডে হচ্ছে নতুন ছাত্রদের সঙ্গে আনন্দের মাধ্যমে পরিচয় হয়ে তাদের সংকোচ কাটিয়ে ওঠার দিন; কিন্তু আদৌ কি তা হচ্ছে? দেখা যায়, শেষ পর্যন্ত এটা হয়ে ওঠে আত্মতৃপ্তি, প্রতিশোধ নেয়ার দিন। মনোবিজ্ঞানীরা র্যাগিংয়ের কয়েকটি কারণ তুলে এনেছেন। তা হচ্ছে...১. অবচেতন মনে নতুন শিক্ষার্থীদের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা। ২. নিজের জীবনের কিছু অতৃপ্ত কামনা-বাসনা, মানসিক ও শারীরিক অতৃপ্তির বহিঃপ্রকাশ ঘটায় এর মাধ্যমে। ৩. নতুন ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর নিজেদের ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর ইচ্ছা পোষণ। ৪. সিনিয়র দ্বারা নিজেদের পূর্ব র্যাগিংয়ের প্রতিশোধ নেয়া। ৫. জোরপূর্বক ভবিষ্যৎ অনৈতিক কাজে সাহায্যকারী হিসেবে তাদের ব্যবহারসহ নানা কারণে র্যাগ পালন করে যায় শিক্ষার্থীরা। মানসিকতায় তালঘোলবিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেসব ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসেন তাদের বেশির ভাগই মফস্বল কিংবা অন্যান্য শহর থেকে আসা। আধুনিক দুনিয়ার সঙ্গে তাদের পরিচয়-আলাপ সীমিত। ফলে র্যাগ ডে বিরাট এক প্রভাব ফেলে তাদের ওপর। হঠাৎ তারা যখন এমন একটি অবস্থানের মুখোমুখি হন, তখন স্বভাবতই আঁতকে ওঠেন তারা। নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয় তখন। অনেকেরই মানসিক শক্তি ভেঙে যায়। ফলে আত্মহত্যার মতো ঘটনারও সূত্রপাত হয় এ র্যাগিং থেকে। কেউ কেউ আবার মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। সারা জীবনের জন্যে নিজেকে ঘরকুনো কিংবা বন্ধুহীন করে তোলেন। কেউবা এর প্রতিশোধ নিতে অপকর্মেও জড়িয়ে পড়েন।