শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২০ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

দাদু বাড়ির আনন্দ

নওল নজরুল
দাদু বাড়ির আনন্দ

বাবা মায়ের একমাত্র ভালোবাসার ধন সাজিদ। সবেমাত্র ক্লাস ফোরে পড়ে। সাজিদ তার বাবা মাকে অনেক দিন ধরে বলে আসছিল গ্রামে দাদুর বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু স্কুল খোলা থাকায় বাবা তার কথায় রাজি হননি। এতে তার মন খারাপ হয়ে যায়। কিন্তু সাজিদের মা তা বুঝতে পেরে তাকে বুঝিয়ে বলে, কয়দিন পর তো তোমার স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। তখন তোমাকে নিয়ে দাদুর বাড়ি বেড়াতে যাবো। সাজিদ সেই দিনগুলোর অপেক্ষা করতে লাগলো।

সাজিদ গ্রামের মনকাড়া সবুজ দৃশ্যগুলো দেখতে খুব ভালোবাসে। গ্রামে গেলে ছোটো চাচ্চুর সাথে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ায়। দাদা-দাদী পরম ভালোবেসে তাকে আগলে রাখে। এসব সাজিদের খুব ভালো লাগে।

প্রতিদিনের মতো সাজিদ আজও স্কুলে যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে আর মাকে বলছে-

-আম্মু! আজ আমাদের স্কুল বন্ধ হয়ে যাবে। গ্রামে কখন যাবো?

-তুমি স্কুল থেকে এসো তারপর বলবো। পরম স্নেহের মা উত্তর দিলেন।

মায়ের কথা শুনে সাজিদ স্কুলের পথে পা বাড়ালো। সেইসাথে ভাবতে লাগলো ছুটির দিনে দাদুর বাড়ি গিয়ে কী কী করবে। কোথায় কোথায় ঘুরবে। সাজিদের বড়োই ইচ্ছা যেদিকে মন চায় সেদিকেই ঘুরে বেড়াবে। গাঁয়ে রয়েছে সাজিদের পরম স্বাধীনতা। নির্মল আনন্দ। দাদা-দাদীর সামনে সাজিদ অন্যায় কিছু করলেও বাবা মা বকাঝকা দিতে পারে না। একটু কিছু বললেই দাদা-দাদী চেঁচামেচি শুরু করে দেয়। বলে, তোরা আমার একমাত্র নাতিকে বকা দিতে দিতে শুকিয়ে ফেলেছিস। দাদা-দাদীর এমন ভালোবাসা পেয়ে সাজিদও আপ্লুত হয়। সাজিদের আশা সে নদীর তীরে কাশবন দেখতে যাবে। ফড়িংয়ের পিছুপিছু দৌড়াবে। কাশবনে চুপটি করে বসে থাকা কানাবকের সাথে ভাব জমাবে। এসব ভাবতে ভাবতে স্কুলে পৌঁছায় সাজিদ।

অন্যদিকে সাজিদের মা গ্রামে যাওয়ার জন্য কাপড়-চোপড় আর ব্যাগ গুছিয়ে নিচ্ছে। অনেকদিন পর গ্রামে বেড়াতে যাবে তাই তার বাবাও দাদা-দাদীর জন্য শপিং করতে বের হলো।

সাজিদ স্কুলে বসে বসে বন্ধুদের সাথে কে কোথায় যাবে আর কোথায় বেড়াবে তা নিয়ে আলোচনা করছিল। এমন সময় রমিজ স্যার ক্লাসে প্রবেশ করলেন। একে একে প্রত্যেকের হাজিরা ডাকলেন। তারপর বন্ধের ঘোষণা দিলেন। তখনই ছাত্ররা চিৎকার আর হইচই শুরু করে দিলো। ছাত্রদের চিৎকার আর হইচই শুনতে শুনতে রমিজ স্যার হেসে হেসে ক্লাস থেকে বের হয়ে গেলেন। ছুটির ঘণ্টা বাজতেই সাজিদ দৌড়ে ক্লাস থেকে বের হয়ে সোজা বাসায় চলে আসলো। দেখলো মা সব গুছিয়ে বসে আছে। সাজিদের যেন আর তর সইছে না। সে অস্থির হয়ে বলল-

-গ্রামে কখন যাবো আম্মু?

-এইতো একটু পরেই রওয়ানা হবো। তোমার আব্বু আসতে আসতে তুমি গোসলটা সেরে নাও।

সাজিদ খুব তাড়াতাড়ি গোসল করে নতুন কাপড় পরে নিলো। তখনই তার আব্বু এলো। তারপর ব্যাগ আর দাদাদের জন্য কেনা উপহার সামগ্রী নিয়ে রওয়ানা দিলো উদ্দেশ্যে।

সাজিদ বাসে জানালার পাশে বসে বাইরের দৃশ্যগুলো দেখছে আর একটু পরপর বাবাকে নানা বিষয়ে প্রশ্ন করছে। ওর আব্বুও সব প্রশ্নের উত্তর সুন্দর করে বুঝিয়ে দিচ্ছে।

এদিকে তার দাদা-দাদী আদরের একমাত্র নাতি গ্রামে আসছে সেই সংবাদ শুনে নাতির জন্য কী করবে ভেবে কূল পাচ্ছেন না।

সাজিদের ছোটো চাচ্চু নারিকেল গাছ থেকে তাদের জন্য কচি কচি ডাব পেড়ে ঠান্ডা করতে পানিতে ডুবিয়ে রাখলো।

দাদা বাজার থেকে লাউ কিনে আনলো মুরাব্বা তৈরির জন্য। তাদের আদরের নাতি মুরাব্বা খেতে খুব পছন্দ করে তা দাদুর আগে থেকেই জানা ছিল।

ছোটো চাচ্চুর ডাবপাড়া আর দাদুর মুরাব্বা বানানো শেষ হতে না হতেই সাজিদরা এসে পৌঁছালো। সাজিদকে দেখে দাদু জড়িয়ে ধরে বলল-

-ওমা! আমার সাজিদ দাদুভাই তুমি তো অনেক বড়ো হয়ে গেছ।

-বড়ো হয়েছি বলেই তো সবার আগে আদর পেতে তোমার কাছে ছুটে এসেছি।

-তাই নাকি দাদুভাই?

-তা নাহলে আগে ছোটো চাচ্চুর কাছে ছুটে যেতাম।

-এতো দেখছি আমার দাদুভাই অনেক পাক্কা হয়ে গেছে।

-হুমম পাক্কা হয়েছি!

সাজিদের উত্তর শুনে দাদু মৃদু হেসে উঠলো। সাজিদ তার দাদুর সাথে কথা বলতে বলতে আর হাসাহাসি করতে করতে দু’জন কোথায় যেন হারিয়ে যায়।

এদিকে তার ছোটো চাচ্চু ডাবের পানি এনে তার আব্বু আম্মুকে পান করতে দিলো। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছে তার ছোটো চাচ্চু। সেদিকে তাদের কোনো খেয়ালই নেই। একটু পর ছোটো চাচ্চু সাজিদকে ডাকলো,

-সাজিদ! এই সাজিদ!

ছোটো চাচ্চুর ডাকে সাজিদের কোনো খেয়াল নেই। সে দাদুর সাথে কথা বলছে আর হাসছে। তখন চাচ্চু পিছনে গিয়ে সাজিদকে একটা চিমটি কাটলো। তখন সাজিদ ‘উউউ!’ করে চিৎকার দিলো। তারপর পিছনে ফিরতেই চাচ্চুকে দেখে বলল-

-চাচ্চু তুমি?

-হ্যাঁ, আমি।

-চিমটি কাটলে কেন?

-অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে তোমাদের দাদা-নাতির কিচ্ছা শুনতেছি। আমার ডাকে সাড়া দিচ্ছ না, তাই চিমটিটা তোমার পাওনা ছিল!

-হুমমম! আচ্ছা চাচ্চু বলো কী বলবে?

-এই নাও তোমার পানি।

-কীসের পানি?

-ডাবের পানি। তোমরা আসবে জেনে পেড়ে রেখেছিলাম।

-তাই নাকি চাচ্চু? আচ্ছা চাচ্চু তোমার সঙ্গে আমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে?

-না।

-কেন?

-তুমি যে দাদুর সঙ্গে গল্পে বসেছ আমার কথা এক্কেবারে ভুলেই গেছ।

-না না চাচ্চু। তোমার কথা ভুলে যাইনি। বলো না চাচ্চু তোমার সঙ্গে আমায় নিয়ে যাবে!

-আচ্ছা ঠিক আছে নিয়ে যাবো। এখন খাওয়া-দাওয়া করে একটু রেস্ট নাও। বিকেলে আমরা বের হবো। এই বলে ছোটো চাচ্চু চলে গেল। সাজিদ বিকেলে বেড়াতে বের হবে, নদী দেখবে, কাশফুল দেখবে, আরো কত কী তা তার মাথায় আনন্দে ঘুরপাক খাচ্ছে।

সময়টা কখন ফুরিয়েছে তা সে টেরও পায়নি। বিকেল হতে না হতেই ছোটো চাচ্চু এসে হাজির। ছোটো চাচ্চু সাজিদকে নিয়ে বের হলো বেড়াতে। চাচ্চুর সাথে হাঁটতে হাঁটতে সাজিদ হারিয়ে যায় আনন্দের মোহনায়। ক্ষেতের পাশ দিয়ে আঁকাবাঁকা আইল পেরিয়ে যাচ্ছে নদীর দিকে। চারিদিকে সবুজ আর সবুজ।

ঝিরিঝিরি দক্ষিণা বাতাস সাজিদের মন কেড়ে নিচ্ছে। গ্রামের এমন অপরূপ প্রাকৃতিক শীতল পরিবেশ দেখে সাজিদ খুবই মুগ্ধ।

হাঁটতে হাঁটতে চাচ্চুর সাথে চলে যায় নদীর তীরে কাশবনে। কাশবনে কাশফুলের শোভা দেখে সাজিদের আরো বেশি ভালো লাগছে। এদিকে ছোটো চাচ্চু তার বন্ধুদের দেখে বলল-

-চল, আমরা ফুটবল খেলবো।

-কিন্তু আমি কী করবো? বললো সাজিদ।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়