প্রকাশ : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ০০:৪৯
টাকার লোভ মানুষকে ধ্বংস করে দেয়

পার্থিব জীবনের নানা কাজে টাকার প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য। আজীবন মানুষের প্রয়োজন মেটায় টাকা। টাকা না থাকলে জীবনে দুঃখ-কষ্টের শেষ থাকে না। জীবন তখন অর্থহীন বা মূল্যহীন বলে বিবেচিত হয়। তাই টাকা সব মানুষের কাম্য বস্তু। আবার এ টাকাই সব সর্বনাশের মূল। টাকা ছাড়া যেহেতু জগতে কিছুই সম্ভব হয় না, তাই এ টাকা পাওয়ার জন্যে মানুষ অমানুষের মতো আচরণ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। টাকাকে করায়ত্ত করার জন্যে মানুষ অনেক সময় নির্যাতন, অত্যাচার, অবিচার এবং যে কোনো রকমের জঘন্য কাজ করতে সংকোচ বোধ করে না। পৃথিবীতে যতো দ্বন্দ্ব, কলহ, অশান্তি, মারামারি, কাটাকাটি সংঘটিত হয়, তার অধিকাংশই ঘটে এই টাকার কারণে । টাকার লোভ মানুষকে পশুতে পরিণত করে। আর এই লোভের বীজ হচ্ছে লিপ্সা। লিপ্সা থেকেই লোল-লালসার জন্ম। মানুষ জীবনে যতই ধার্মিক হোক না কেন, লোভ সামলাতে না পারলে সবই বৃথা, সবই শূন্য, সবই শয়তানি কর্ম!
|আরো খবর
বর্তমানে কামনা-বাসনা ও খায়েশ পূরণের লোভে, পদ-পদবী ও ক্ষমতার মোহে এবং হাজারো হীনস্বার্থ হাসিলের লোভে বেশির ভাগ মানুষের চোখ চকচক করছে! তারা মানবিক মূল্যবোধ ও নৈতিকতার তোয়াক্কা করছে না। লোভাতুর, তোষামোদকারী অতি উৎসাহীদের ভিড়ে ভালো মানুষের মূল্যায়ন হচ্ছে না। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষগুলো মুখ থুবড়ে পড়ছে। অতি লোভীরা যেন স্বার্থের জিভ মেলে পৃথিবীকে গ্রাস করতে চাইছে! পৃথিবীতে মানুষ যতো অনাসৃষ্টি করছে, সব লোভের বশবর্তী হয়েই করছে। অতি লোভের কারণে মানুষ অমানুষিক কাজ করছে, নিষ্ঠুর ও অত্যাচারী হচ্ছে, দুর্নীতিবাজ ও স্বার্থপর হচ্ছে। লোভ-লালসা যদি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তখন মানুষ হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। বুকের জ্বালা বেড়ে যায়। শয়তান শিরায় শিরায় সফলতার জয়ধ্বনি তুলে অহংকারের সীমা লঙ্ঘন করে এবং মানুষকে চরম ও ভয়াবহ পরিণতির দিকে ঠেলে দেয়। তখন ভয়, মানবতা, দয়ামায়া, ঈমান-আমল, বিবেক ও সুবুদ্ধি লোপ পায়। তখন সে ভুলে যায় তারও পরিবার, স্বামী-স্ত্রী, ছেলে -মেয়ে, প্রেমিক-প্রেমিকা, বন্ধু-বান্ধব বলে কেউ ছিলো। কোনো মানুষের লোভ-লালসা যখন মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, তখন মানুষ জীবন-জিন্দেগিকে প্রয়োজনের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে পারে না। অধিক আশার জগতে প্রবেশ করে জগতের সব কিছু একাই পেতে চায়।
মানুষ এই লোভের কারণেই ভুলে যায় ক্ষণস্থায়ী জীবনের কথা। ছোট্ট এক জীবনে কতো টাকা, কতো ক্ষমতা, কতো সম্মান ও প্রতিপত্তি প্রয়োজন? এতো লোভ, এতো অহংকার কেন? মাটির নিচে চলে গেলে এসব কী কাজে আসবে? দিন যাচ্ছে, বয়স ফুরাচ্ছে, অথচ লোভাতুর হয়েই মানুষ একে অন্যের থেকে বেশি পাওয়ার লোভ বা প্রতিযোগিতায় নেমেছে। টাকাকেই জীবনের বড়ো সম্পদ মনে করে তারা স্বাভাবিক জ্ঞান হারিয়ে চরিত্রহীন হয়ে পড়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, অবৈধভাবে এতো টাকা বানিয়েছে, যা তারা নিজেরা ভোগ করার আগেই পরপারে পাড়ি জমায়। আমার মনে হয়, সেই ছোট বেলায় স্কুলে ভাবসম্প্রসারণ পড়েছিলাম অর্থই অনর্থের মূল। বর্তমান যুগে অর্থই অনর্থের মূল কথাটি শতভাগ সত্য।
ড. আব্দুস সাত্তার : লেখক ও সাংবাদিক, ওয়াশিংটন ডি








