প্রকাশ : ৩০ মে ২০২৫, ১৮:৩৫
সুমন কুমার দত্ত
সাহিত্য একাডেমির নির্বাচন ও আমার অনুভূতি

সাহিত্য একাডেমীর নির্বাচনকে ঘিরে একটি নতুন অভিজ্ঞতার সঞ্চার হলো গত কয়েক মাস তথা সর্বশেষ গত কয়েক দিনে। স্বভাবতই সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচন-২০২৫-এ 'নির্বাহী সদস্য' পদে আমি একজন প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ধরে প্রত্যেকজন সম্মানিত ভোটারের শরণাপন্ন হওয়া ও সান্নিধ্য লাভ করা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য এবং সে ধারাবাহিকতায় ভোটার তালিকায় বয়োজ্যেষ্ঠজন ও আমার সহকর্মীবৃন্দসহ অন্যান্য যাঁরাই আছেন, তাদের প্রত্যেকের কাছেই ফোনে কথা বলা বা সরাসরি দেখা করার চেষ্টা করেছি আন্তরিকভাবে। এর মধ্যে অল্প কয়েকজন, সংখ্যায় হিসেব করলে পাঁচ থেকে ছয়জন সম্মানিত সদস্য বা ভোটার যাঁদের সাথে সরাসরি বা ফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করার সুযোগটুকু হয়ে উঠেনি। বাকি যে সকল সম্মানিত সদস্য বা বর্তমান ভোটারবৃন্দ আছেন তাঁদের প্রায় সবার সাথেই একাধিকবার সরাসরি বা ফোনে যোগাযোগ করতে সক্ষম হয়েছি।
|আরো খবর
মূল কথায় আসি, একটি নির্বাচন বা ভোটের বিষয় একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের পারস্পরিক সম্পর্ক মেয়াদহীন। মজার ব্যাপার হচ্ছে, আমরা যারা নির্বাচনে প্রার্থী হয়ে অংশ নিয়েছি, সবাই সবার সহকর্মী, অনেকদিনের জানাশুনা ও আপনজন এবং দিনিশেষে একই আড্ডায় চায়ে চুমুক দেই প্রতিনিয়ত। লক্ষণীয় বিষয় হলো, একই পদে প্রার্থী হয়েও আমরা একসাথে ভোট চেয়ে ছুটে চলেছি ভোটারদের দোরগোড়ায় সর্বমুহূর্ত এবং যাদের কাছে ভোট প্রার্থনা করেছি, তাঁরা কেউ আমাদের কর্মযজ্ঞের অভিভাবক, পরামর্শদাতা, কেউ আবার সহকর্মী। প্রার্থীও আমরা, ভোটারও আমরা। এখানেই সাহিত্যপাড়ার সৌন্দর্যের বিশেষত্ব লুকায়িত।
ভোট চেয়ে রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে, সময় অসময়ে রাত-দিন চিন্তা না করে ভোট প্রার্থী হয়ে কারো বাসায়, কারো অফিসে, আবার কারো কর্মস্থলে যখন তখন গিয়ে বিরক্ত করেছি অনেক। এমন হয়েছে, ভাত খাওয়া অবস্থায় খাওয়া শেষ না করেই হাসিমুখে আমাদের কথা শুনেছেন। কেউ আবার পত্রিকার কাজ রেখে গুরুত্বপূর্ণ সময় দিয়ে পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়েছেন, কেউ আবার মাথায় হাত রেখে আশীর্বাদ করে কথা দিয়েছেন। আর যাদের সাথে সরাসরি সাক্ষাতের ভাগ্য হয়নি তাঁদের ফোনে জ্বালিয়েছি খুব। সবার আন্তরিকতায় মুগ্ধ হয়ে এই মুহূর্তে শ্রদ্ধেয় মোহাম্মদ রফি'র গাওয়া গানটির দুটো লাইন খুব মনে পড়ে গেলো-- তোমাদের আশীর্বাদের এই শতদল মাথায় রাখি। তোমাদের ভালবাসার এই মনিহার বুকে রাখি।
নির্বাচনের দুটি বিষয় একটি জয় অপরটি পরাজয়। আর এই জয়-পরাজয় নিয়ে আমি একদমই ভাবছি না কিন্তু। কারণ আমার জয় হলে সেটা আমার সহকর্মীদের জয় হবে, তদ্রূপ আমার পরাজয় হলে সেটা আমার অন্য সহকর্মী'র (প্রার্থী) জয় হবে। এখানে হিসেব কষলে আমরাই আমরা। সুতরাং নির্বাচনে আমার জয় পরাজয় যাই হোক সেটা মেনে নিয়ে সবাই এক হয়ে কাজ করবো এই মানসিকতা নিয়ে পথ চলি। রাত পোহালেই নির্বাচন। শেষ হবে দীর্ঘসময়ের একটা পথ পরিক্রমা। অতঃপর সাহিত্য একাডেমী একটা নির্বাচিত কমিটি পেয়ে ফিরে পাবে তার হারানো জৌলুস। তবে নির্বাচনকে ঘিরে বয়োজ্যেষ্ঠ ও সহকর্মীদের যে ভালোবাসা ও আতিথেয়তা আমি পেয়েছি তা কৃতজ্ঞতায় বেঁধে রাখবো সারাজীবন।
বিশ্বাস করুন, নির্বাচনের ব্যাপারে যাঁদের সান্নিধ্যে গিয়েছি, বয়োজ্যেষ্ঠদের কারো চোখে মুখে বিন্দুমাত্র বিরক্তির ছাপ চোখে পড়েনি, বরং উনাদের আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হয়েছি অবাক হয়ে। পাশাপাশি ব্যক্তিগত কারণে যতজনই চাঁদপুরের বাইরে আছেন, তাঁদের প্রায় সবার সাথেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেছি সাধ্যমত। সেখানেও অবাক হয়েছি ভীষণ রকম। উনারা একেকজন কর্মজীবনে অনেক উচ্চতায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করেন জানি। তবুও যখনই আমি পরিচয় দিয়ে উনাদের কাছে দোয়া ও পরামর্শ চেয়েছি, বিশ্বাস করুন হাস্যোজ্জ্বল স্বরে উনারা শুভ কামনা জানিয়েছেন প্রত্যেকে। আমি সত্যিকার অর্থেই আবেগাপ্লুত। বয়োজ্যেষ্ঠ কয়েকজন ভোটার নানা কারণে ভোটের দিন আসতে পারবেন না। এই না আসতে পারার বিষয়টা কতোটা দরদ দিয়ে ব্যাখ্যা দিয়েছেন, যারা ভোট প্রার্থনা করে সঠিক যোগাযোগ করেছেন তাঁরাই তা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলে আমি মনে করি। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও বৈরী আবহাওয়া উল্লেখপূর্বক তবুও অনেক সম্মানিতজন কথা রেখেছেন, আমাদের হৃদয়ে সাহস সঞ্চারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করবেন ভোটের দিন উপস্থিত থাকতে এবং আমি মনে প্রাণে এই বিশ্বাসটুকু বহন করি, উনাদের উপস্থিতি আমাদের আগামীর পথ চলাকে সুন্দর ও মসৃণ করবে।
সুমন কুমার দত্ত :
সাধারণ সদস্য,
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর।