শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩১ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা গণফোরামের কর্মী সমাবেশ
  •   নিষেধাজ্ঞার প্রথম দিনে ফরিদগঞ্জে অবাধে ইলিশ বিক্রি
  •   পিকনিকে যাওয়া শিক্ষার্থীর মরদেহ মেঘনায় ভেসে উঠলো দুদিন পর
  •   নেতা-কর্মীদের চাঁদাবাজি না করার শপথ করিয়েছেন এমএ হান্নান
  •   বিকেলে ইলিশ জব্দ ও জরিমানা

প্রকাশ : ১৫ অক্টোবর ২০২৪, ০০:২১

অনুস্যূত

বিমল কান্তি দাশ
অনুস্যূত

যুগের প্রয়োজনেই ক্ষণজন্মা মহাপুরুষদের এই ধরণীতে আগমন ঘটে। সাথে সাথেই আবির্ভূত হয়ে যায় মানবজীবনের এক সর্বোৎকৃষ্ট সংবিধান। এ সংবিধান কিন্তু প্রতিটি মানব হৃদয়ে, বিবেকে অতি সযতনে সংরক্ষিত থাকে। একমাত্র মানবতার স্খলনেই এর মধ্যে বিকৃতির উদ্ভব ঘটায়। তখনই মানব অবয়বে সজ্জিত এই প্রাণীটি বাহ্যিক হিংস্রতায় মত্ত হয়ে যায়। হিতাহিত জ্ঞান লোপ পায়। উদভ্রান্ত হয়ে যায় নিরর্থক জাগতিক ক্ষমতার নেশায়।

এই মহাবিশ্বের সকল অণু-পরমাণু ও শক্তির মধ্যে অনুস্যূতে রয়েছেন এক বিরাট পুরুষ, যাঁর আদেশে ভূ-মণ্ডলে বায়ু প্রবাহিত হচ্ছে, প্রজ্বলিত হচ্ছে অগ্নি, মেঘ বারিবর্ষণ করছে এবং জন্ম-মৃত্যু জগতে পরিভ্রমণ করছে। সেই অনন্ত-অসীম-প্রেমময় শক্তির বিন্দুমাত্র আবেশ মর্ত্যলোকে পরিশ্রুত করার জন্যে যেসব অমৃতের সন্তান প্রয়াস চালিয়ে ছিলেন, তাঁরা হলেন দার্শনিক সক্রেটিস, অতিমানব গৌতমবুদ্ধ, অতিমানব যীশুখ্রিস্ট, মহামানব হজরত মুহাম্মদ (সাঃ), মহাযোগী শ্রীশ্রী রাম কৃষ্ণ পরমহংস দেবসহ আরো অনেক বাকসিদ্ধ মহাপুরুষ প্রমুখ।

এই মর্ত্যভূমিতে বিধাতা প্রেরিত অমৃতের অধিকারী মানব সন্তানরাই পবিত্র এবং পরিপূর্ণ। জাগতিক সর্ব-মাঙ্গলিক কর্ম এঁদের দ্বারাই সম্পাদিত হওয়া সম্ভব, যতক্ষণ পর্যন্ত মানুষের মধ্যে দেবত্ববোধ জাগরিত থাকে।

কিন্তু মানব মনে পশুত্ববোধের জাগরণে যত সব কুকর্ম তাদের দ্বারাই সম্পাদিত হয়। মানব সন্তানের বিবেক দেবত্ব আর পশুত্বের দোলাচলে নিরন্তর আবর্তমান। এটা স্বতঃসিদ্ধ যে, এ অবণীতে যতগুলো ধর্ম বিশ্বাস বিদ্যমান রয়েছে, সব বিধাতার ইঙ্গিতেই সৃষ্টি হয়েছে।

যে কেউ যে রূপ মতাশ্রয়ী হোক না কেন, সে কিন্তু অবশ্যই অমৃতেরই সন্তান (মানুষ)। সাম্প্রদায়িকতা মিচকে সংকীর্ণতা এবং ভয়াবহ ধর্মোন্মত্ততা এক অতিসুন্দর মানবীয় পরিবেশ কতবার যে নরশোণিত সিক্ত করেছে, তার মধ্যে ১৯৪৮,১৯৬৪,১৯৭১, ২০০১ সাল উল্লেখযোগ্য। এতে ধর্মীয় উগ্রবাদিত্বের বার্তা বিশ্ববাসীর কাছে পৌঁছে গেল। যাহা ধর্মীয় দর্শন : জবষরমড়হ রং হড়ঃ ঃযবড়ষড়মু নঁঃ ঢ়ৎধপঃরপব. অর্থাৎ ধর্ম শিকায় তুলে রাখার জন্যে নয়, শুধুই নিয়ত চর্চা করার জন্যে-এর পরিপন্থি। এরিস্টোটাল বলেছেন : ঊাবৎু বারষ পড়সবং ড়ঁঃ ড়ভ রমহড়ৎধহপব. নবীজি বলেছেন, ‘জ্ঞান অর্জনের জন্যে সুদূর দুর্গম চীনে যেতে হলেও যাও।’ কারণ জীবনে শুদ্ধতা এবং পরিপূর্ণতার জন্যে জ্ঞানই অপরিহার্য।

নাস্তিকতাও একটা বিশেষ ধর্ম। বিধাতা মর্ত্যলোকে সর্বত্র পূজিত হন। কিন্তু বিভিন্ন নামে এবং বিভিন্ন উপায়ে। মহান ও সুন্দর নামে বিধাতাকে ভক্তি এবং প্রেম দিয়ে উপসনা করলে অবশ্যই মানুষের মনে চরম ন্যায়পরায়ণতা জন্মে।

কিন্তু এদেশে কিছু লোক ধার্মিক না হয়েই ধার্মিক সেজে যায়। তাদের কুৎসিত নিপীড়নেই সংখ্যালঘু সম্প্রদায় দেশত্যাগে বাধ্য হয়। নিপীড়িতের ক্রন্দন রোলে কোথাও সমব্যথী না মিললে ভুক্তভোগী চরম নিরুৎসাহিত হয়ে স্বর্গের চাইতে গরীয়সী জন্মভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। যে হিসাব যথাযথ পরিসংখ্যানের বাইরে থেকে যায় এবং রয়েছে। নিকট অতীতে ১৯৬৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর পাক-ভারত ঘোরতর যুদ্ধ শুরু হলো কাশ্মির ইস্যু নিয়ে। ২৩ সেপ্টেম্বর যুদ্ধের আগুন নির্বাপিত হলো ঠিকই, কিন্তু পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব বিলুপ্তির লক্ষ্যে একটি কালাকানুন ‘শত্রুসম্পত্তি আইন’ অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে প্রণীত হয়। যা নামান্তরে ভূমি অফিসগুলোতে নির্যাতনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এ আইনের মূলোৎপাটন হওয়া অনিবার্য। এটা নির্ভর করে ছাত্র-জনতা মনোনীত উপদেষ্টা সরকারের সদিচ্ছার ওপর।

প্রাণী ও উদ্ভিদের পারস্পরিক নির্ভশীলতায় যেমন প্রকৃতির ভারসাম্য বজায় থাকে, তেমনি মনান্তর এবং মতান্তরের ওপর রাষ্ট্রীয় স্থিতিশীলতাও নির্ভরশীল। মাননীয় আইন উপদেষ্টার দৃঢ় প্রত্যয় অনুযায়ী স্বাধীন বাংলাদেশ কালা কানুন মুক্ত হবেই। ফলে ধর্ম যার যার-দেশটা কিন্তু সবার--এ মতাদর্শ কায়েম হবেই। বাংলাদেশে ১৯৬৯ সালে পাকিস্তানের জারি করা বিষাক্ত সাম্প্রদায়িকতার কালো আইনের অর্ডিনেন্সটি সমূলে বাতিল করার মাহেন্দ্রক্ষণের অপেক্ষার প্রহর গুণছে এদেশের নিপীড়িত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়।

লেখক : কবি ও প্রাবন্ধিক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়