প্রকাশ : ১২ এপ্রিল ২০২৩, ০০:০০
হাজীগঞ্জে গ্রাহকের টাকা নিয়ে এফ.সি. ফাউন্ডেশন উধাও
হাজীগঞ্জে এফ.সি. ফাউন্ডেশন নামের একটি এনজিও উধাও হয়ে গেছে। উধাও হওয়ার সময় উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের বহু গ্রাহকের লাখ লাখ টাকা নিয়ে গেছে বলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন। সহজেই মিলবে ঋণ, সঞ্চয় করলে অধিক মুনাফা, আবার সদস্যদের সন্তানসহ অসহায় ও দরিদ্র শিশুদের বিনামূল্যে পড়ালেখা করাবে-এমন নানা উপায়ে আশ্বস্ত করে গ্রাহককে আকৃষ্ট করে এনজিওটি।
ভুক্তভোগীরা জানান, গত দুই সপ্তাহ আগে উপজেলার বড়কুল পশ্চিম, বড়কুল পূর্ব, গন্ধর্ব্যপুর উত্তর, গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন, হাজীগঞ্জ পৌরসভাসহ কয়েকটি ইউনিয়নের বেশ কিছু গ্রামে এফ.সি. ফাউন্ডেশনের কয়েকজন ফিল্ড অফিসার সাপ্তাহিক, মাসিক ও বাৎসরিক কিস্তিতে ১০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকার ঋণ দেয়ার কথা বলে তাদেরকে সদস্য (গ্রাহক) হিসেবে ভর্তি করায়।
জানা যায়, মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জনের জন্যে এনজিওটি ভর্তিকৃত সদস্যদের পরিবারের শিশুদের মাঝে শিশু ও প্রাথমিক শিক্ষার কিছু বই বিতরণ করে এবং ঋণের জামানত হিসেবে গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্লাঙ্ক ব্যাংক চেক নেয়। এভাবে মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে কয়েক শতাধিক গ্রাহক তৈরি করে তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা সংগ্রহ করে নেয় এফ.সি. ফাউন্ডেশন।
ঋণের জামানত নেয়া গ্রাহকদের গত সোমবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে ঋণ দেয়ার কথা ছিলো। কিন্তু এদিন গ্রাহকরা হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন খাটরা বিলওয়াই এলাকায় গিয়ে দেখেন অফিসে কেউ নেই। দুপুর গড়িয়ে বিকেল ও ইফতারির সময় অতিক্রম হয়ে গেলেও কোনো কর্মকর্তার দেখা পায়নি গ্রাহকরা।
এদিকে সরজমিনে গত সোমবার বিকেলে ও মঙ্গলবার দুপুরে এফ.সি. ফাউন্ডেশনের অফিস পরিদর্শন করে দেখা গেছে, তাদের অফিসে চেয়ার, টেবিল, কিছু শিশু ও প্রাথমিক শিক্ষার বই ও সমিতির সদস্য ফরম এবং পাসবই ছাড়া আর কিছুই নেই। তাদের ‘সঞ্চয় ও ঋণ’ নামক পাস বইটিতে লেখা ছিল, ‘এফ.সি. ফাউন্ডেশন’ (দাতা সংস্থা কর্তৃক পরিচালিত। প্রধান কার্যালয়ের ঠিকানা হিসাবে ‘পূর্বাচল নিউ মডেল টাউন, সেক্টর-৭, রোড- ১০৭, ঢাকা- ১২১৩’ উল্লেখ ছিলো। তবে পাস বইটিতে এনজিওর সরকারি কোনো নিবন্ধন নম্বর উল্লেখ নেই।
সরেজমিনে গেলে ভুক্তভোগী গন্ধর্ব্যপুর উত্তর ইউনিয়নের তারালিয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের পরিবারের কাছ থেকে ৬ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে ৬০ হাজার টাকা, ওয়াসিমের কাছ থেকে ৫ হাজার টাকা, ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে শাহআলমের কাছ থেকে ২০ হাজার ৫শ’ টাকা, ১ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে ১০নং গন্ধর্ব্যপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের পাচৈ গ্রামের আলমগীরের কাছ থেকে ১০ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা, ২ লাখ টাকা ঋণ দেয়ার কথা বলে বড়কুল পূর্ব ইউনিয়ের বড়কুল গ্রামের শিব বাড়ির বিজয়ের কাছ থেকে ২০ হাজার নেয় বলে জানান। এভাবে অসংখ্য গ্রাহকের কাছ থেকে তারা কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়।
এদিকে এফ.সি. ফাউন্ডেশনের অফিসে কাউকে না পাওয়ায় এবং ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (শাখা ব্যবস্থাপক) সাব্বির রহমানের মুঠোফোন নম্বরটি (০১৩২৬-৮৫৪৪৮৬) বন্ধ পাওয়ায় সংশ্লিষ্ট কারো বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এনজিওটির ভাড়া অফিসের বাড়ির মালিক মোঃ আব্দুর রহমান জানান, গত ৪ এপ্রিল এফ.সি. ফাউন্ডেশনের নামক একটি এনজিওর ব্রাঞ্চ ম্যানেজারসহ ৭ জন অফিসার আমার কাছে আসেন। তারা আমার নির্মাণাধীন ভবনের একটি ফ্ল্যাট দেখে পছন্দ করে ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এরপর তাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আসলে ভাড়াটিয়া হিসেবে জামানতের অগ্রিম টাকা প্রদান ও কাগজপত্র করার কথা বলেন। ওই সময় পর্যন্ত তারা ফ্ল্যাটটিতে অফিস করবেন। এরপর দেখি রোববার (১০ এপ্রিল) ঋণের জন্য তাদের অফিসে অনেক লোকজন এসে হাজির হন। কিন্তু তাদের কোনো খবর নেই। এমনকি ম্যানেজারের মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যায়। তখন আর বুঝতে বাকি নেই। আমিসহ এসব মানুষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ জোবাইর সৈয়দ জানান, অভিযোগ পেলে তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ রাশেদুল ইসলাম জানান, বিষয়টি এইমাত্র আপনার মাধ্যমে জানতে পেরেছি। এ সময় তিনি বলেন, অভিযোগ পেলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হবে।