বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮:৪৩

রায়পুরে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পোস্টার ব্যানার অপসারণের নির্দেশ

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি
রায়পুরে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে পোস্টার ব্যানার অপসারণের নির্দেশ

আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। রাজনৈতিক দলগুলোর প্রার্থী-নেতাদের ব্যানার-পোস্টার-ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে লক্ষ্মীপুরের রায়পুর শহরের দেয়ালগুলো। অধিকাংশ গ্রাফিতিই এখন পোস্টারে ঢাকা। নির্বাচনী প্রচারণার পাশাপাশি অন্য পোস্টারও চোখে পড়ার মতো।বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর ২০২৫) সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেন নির্বাচন কমিশন।

পোস্টার-ব্যানারে রীতিমতো শ্রীহীন রায়পুর শহর। তারপরও পোস্টার লাগানো ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তৎপর থাকলেও দেয়ালগুলো পরিচ্ছন্ন করার কোনো উদ্যোগও নেই সংশ্লিষ্টদের।

শহরবাসীর অভিযোগ, সাধারণত যে কোনো দিবসের আগে দেয়ালে পোস্টার, সড়কে ব্যানার, ফেস্টুন, বিলবোর্ডে ছেয়ে যায়। এখন আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সম্ভাব্য সংসদ সদস্য পদপ্রার্থীদের পোস্টার লাগানোর হিড়িক পড়েছে। ‘দেয়ালে পোস্টার লাগানো নিষেধ’ এমন সতর্কবার্তা লিখেও নিস্তার পাচ্ছেন না বাড়ি ও ভবন মালিকরা। থানার প্রাচীরে আঁকা গ্রাফিতিও ঢাকা পড়েছে পোস্টারে। ফলে নোংরা হচ্ছে শহর, নষ্ট হচ্ছে সৌন্দর্য। কিন্তু সেদিকে খেয়াল নেই পৌর কর্তৃপক্ষের।

রায়পুর পৌরসভার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শহরে অধিকাংশ ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন, বিলবোর্ড বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের। এগুলো অপসারণ করতে বিভিন্ন সময় অভিযান চালানো হয়। কিন্তু তারপরও যত্রতত্র পোস্টার লাগানোর প্রবণতা কমছে না। গণঅভ্যুত্থানের পর পোস্টার অপসারণে পৌরসভার কোনো তৎপরতা নেই। শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে বলে জানান সামাজিক সংগঠক এমএ রহিম। শহরে যত্রতত্র পোস্টার লাগানো বন্ধে ভালো একটি উদ্যোগ নিয়েছে উপজেলা প্রশাসন। আগের মত নির্ধারিত স্থানে না লাগিয়ে অলিগলির দেওয়াল, পদচারী সেতু, বৈদ্যুতিক বাতির খুঁটিতে পোস্টার লাগানো হচ্ছে।

রায়পুরে রাজনৈতিক নেতা ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পোস্টার লাগানো রয়েছে আশপাশের দেয়ালে। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেয়াললিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণ আইন গেজেট আকারে প্রকাশ করে সরকার। আইনানুযায়ী, নির্ধারিত স্থান বাদে অন্য কোনো দেয়াল বা স্থানে পোস্টার লাগানো নিষিদ্ধ। আইন না মানলে জেল-জরিমানার বিধান আছে। ওই আইনের কথা উল্লেখ করে দেয়ালে পোস্টার লাগানো বন্ধে বিভিন্ন সময় সংবাদপত্রে গণবিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিলো।

গণবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো নিয়ন্ত্রণে আইন রয়েছে। দেয়াল লিখন ও পোস্টার লাগানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১২ অনুসরণের জন্য সবার প্রতি অনুরোধ জানানো হচ্ছে। কেউ বিধি লঙ্ঘন করলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যদিও এ ধরনে আইনের প্রয়োগ কখনো দেখা যায়নি।

বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তরের লক্ষ্মীপুরের সহকারী পরিচালক হারুন অর রশীদ পাঠান বলেন, "শহরের দেয়ালে পোস্টার খুবই দৃষ্টিকটু। পোস্টারের এ অপসংস্কৃতি বন্ধে রাজনৈতিক দলগুলোকে তৎপর হতে হবে। পাশাপাশি যে বা যারা পোস্টার, ব্যানার বা ফেস্টুন লাগান, সেখানে কিন্তু তাদের নাম ঠিকানা থাকে। পৌর কর্তৃপক্ষের উচিত তাদের নামে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া। গণঅভ্যুত্থানের পর পোস্টার অপসারণে পৌরসভা কোনো কাজই করেনি। আমরা চাই শহরের সৌন্দর্য রক্ষায় আইনের কঠোর প্রয়োগ করতে হবে।"

রায়পুর পৌরসভাসহ ১০টি ইউনিয়ন এবং সদর উপজেলার নয়টি ইউনিয়ন নিয়ে লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসন গঠিত। এ আসনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের আট জন সংসদ সদস্য প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলনসহ অন্যান্য দলের নেতাদের পোস্টার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এসব দলের প্রার্থীদের পোস্টার সব জায়গায় ছেয়ে গেছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন করে আসছেন ৩বারের সাবেক এমপি আবুল খায়ের ভুইয়া। তিনি প্রচারণা বেশি চালাচ্ছেন। জামায়াত ইসলামী থেকে দুবারের প্রার্থী রুহুল আমিন ভুঁইয়া। নির্বাচনী পোাস্টার ও প্রার্থী হওয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা বলেন, ‘এ আসনে আমাদেরকে দলের প্রার্থী হিসেবে চূড়ান্ত করা হয়েছে।’ দ্রুত পোস্টার ও ব্যানার খুলে নেয়া হবে বলে তারা জানান।

রায়পুরের সোনাপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা মাওলানা হেলাল উদ্দিন। দেওয়ালে পোস্টার লাগানো নিয়ে ইসলামী আন্দোলনের এমপি প্রার্থী হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘কয়েক বছর আগে ব্যানার-পোস্টার অপসারণে পৌরসভা বেশ তৎপর ছিল। আর এখন তাদের কোনো তৎপরতা নেই। বিশেষ করে পোস্টার, ব্যানার অপসারণে কোনো কার্যক্রম নেই। এভাবে একটি শহর চলতে পারে না। পৌর কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে। এখন উপজেলা প্রশাসনকে সাধুবাদ জানাই।'

পৌরসভার সচিব মাসউদ মোরশেদ বলেন, ‘শহরে দেওয়ালের পোস্টার বা গাছে ব্যানার, ফেস্টুন অপসারণে কখনও কার্যক্রম পরিচালনা করেনি।। এখন কমিশন থেকে নির্দেশনা আসায় বিষয়ে পৌরসভা তৎপর।’ এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন হতে হবে।’

রায়পুর গুরুত্বপূর্ণ স্থান বাস টার্মিনাল, থানার সামনে, ট্রাফিক মোড়ে, আলিয়া মাদরাসার সামনে, হাসপাতালের সামনে, উপজেলা পরিষদের সামনে, নতুনবাজার, লেংড়া বাজার, পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে, আবাসিক বাসাবাড়ি, স্কুল, কলেজ ও সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের দেয়ালে বিভিন্ন ধরনের পোস্টার বেশি। অন্য এলাকায়ও সম্ভাব্য সংসদ সদস্য প্রার্থী, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, কোচিং সেন্টারের পোস্টারে ছেয়ে গেছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও পৌরসভার প্রশাসক মেহেদী হাছান কাউছার বলেন, ‘এখন পৌরসভায় মেয়র নেই। গণঅভ্যুত্থানের পর তিনজন প্রশাসক রুটিন দায়িত্ব পালন করেছেন। শহরের সৌন্দর্য নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা ছিলো না। এখনো একই তালে চলছে পৌরসভা। আমি দু মাস হলো এখানে যোগদান করেছি। শহর থেকে সকল প্রার্থী এবং সংশ্লিষ্ট সকলের পোস্টার ও ব্যানার সরানোর জন্য আজকে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন থেকে নোটিস দেয়া হয়েছে। না মানলে আইনগত ব্যাবস্থা নেয়া হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়