প্রকাশ : ১৮ নভেম্বর ২০২৫, ২৩:৫৮
চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন উপলক্ষে সাক্ষাৎকার-৫
জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব থেকে রপ্ত করেছি
---নকীবুল ইসলাম চৌধুরী

চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের সহযোগী সংগঠন চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উপলক্ষে ধারাবাহিক সাক্ষাৎকারের অংশ হিসেবে চাঁদপুর কণ্ঠের মুখোমুখি হয়েছেন ১৯৯০-৯১ রোটারী বর্ষে
|আরো খবর
ক্লাবটির সাবেক সভাপতি নকীবুল ইসলাম চৌধুরী।
তিনি বর্তমানে চাঁদপুর অটোরাইস মিল মালিক
সমিতির সহ-সভাপতি। এছাড়া কমিউনিটি পুলিশিং চাঁদপুর অঞ্চল-৮-এর সভাপতি, গণি মডেল হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য, নূরিয়া পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য, আমিনুল হক পৌর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি এবং পেশাগতভাবে একজন ব্যবসায়ী। তাঁর কাছে ক্লাবের ইতিহাস, সাফল্য, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও মানবিক কাজ সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। তিনি বেশ সুন্দর ও স্বাচ্ছন্দ্যপূর্ণভাবে সকল প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। নিচে তা তুলে ধরা হলো। তার সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেছেন চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের আইপিপি এবং চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছরপূর্তি উদযাপন কমিটির সদস্য সচিব রো. কাজী আজিজুল হাকিম নাহিন এবং ৫০ বছর উদযাপন কমিটির তথ্য বিষয়ক সদস্য রো. ব্যভিন্টন দাশ কিরণ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আপনাকে স্বাগত জানাই। কেমন লাগছে এই বিশেষ মুহূর্তে?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : অবশ্যই ভালো লাগার বিষয় এটি। আনন্দ ও গর্বের বিষয়। এই ক্লাবের ৫০ বছর পূর্তি উদযাপন একটি ঐতিহাসিক সময়। এটি মহান আল্লাহ ভাগ্যে রেখেছেন, সেজন্যে আল্লাহর কাছে শোকরিয়া।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনি কীভাবে এ ক্লাবের সাথে যুক্ত হলেন?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের অভিভাবক ক্লাব চাঁদপুর রোটারী ক্লাব। রোটারী ক্লাবের মাধ্যমে সরকারি শিশু পরিবারের ১১জন মেয়েকে একসাথে বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে মোস্তাক হায়দার চৌধুরী সভাপতি ছিলেন এবং রোটার্যাক্ট সদস্যরা তার সহযোগিতায় ছিলেন। সেখানে আমি উপস্থিত ছিলাম। এই কার্যক্রমটি আমাকে এতো আনন্দ দিয়েছে এবং উৎফুল্ল করেছে যে, আমি চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের যুব সংগঠন চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সদস্য হতে অনুপ্রাণিত হই এবং ক্লাবে যোগদান করি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : এই ক্লাব আপনার জীবনে কী পরিবর্তন এনেছে? আপনি কি উপকৃত হয়েছেন?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : অবশ্যই উপকৃত হয়েছি। মানুষের জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিষয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো নেতৃত্ব, জীবনকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা, অপরিচিত ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন করা; আরেকটি বড়ো বিষয় হচ্ছে কারো সামনে বক্তব্য প্রদান করা। এই কয়েকটি বিষয়ে দক্ষতা মানুষের জীবনকে পরিবর্তন করে দেয়। আর এই বিষয়গুলোই আমি এই ক্লাব থেকে অর্জন করেছি।
চাঁদপুর কণ্ঠ : চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব নিয়ে কোন্ বিষয়টি গর্বের মনে হয় আপনার কাছে?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের অনেক ইভেন্টই আমার কাছে স্মরণীয়। তবে ১৯৯৩ সালে 'অঙ্গীকার' নামে ডিস্ট্রিক্ট অ্যাসেম্বলি সবচেয়ে স্মরণীয়। প্রোগ্রামটি হয়েছিলো চাঁদপুর শহরের লেডি প্রতিমা মিত্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে। সেখানে প্রায় এগারোশো রোটার্যাক্টর অংশগ্রহণ করেছিলো। মজার বিষয় হচ্ছে, আমরা সেখানে দিনরাত কাজ করে এই কার্যক্রমটি সফল করেছিলাম।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার জানা মতে, গত ৫০ বছরে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য মানবিক প্রকল্পগুলো কী কী? কোন্ প্রকল্পটি সমাজে সবচেয়ে প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হয়?
নকিবুল ইসলাম চৌধুরী : আসলে ৯০ দশকে আমরা যারা রোটার্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছি, তখন চাঁদপুর রোটারী ক্লাবের তৈরি চাঁদপুর চক্ষু হাসপাতালের সহযোগিতায় আমরা আমাদের ক্লাব থেকে আই ক্যাম্পের আয়োজন করেছিলাম। সেখানে আমরা একেবারে প্রত্যন্ত অঞ্চল, যেমন ইব্রাহিমপুর, রাজরাজেশ্বর এবং অন্যান্য আরো অনেক জায়গায় আই ক্যাম্পের জন্যে যেতাম এবং সেখানে আমরা অনেকদিন থাকতাম। মজা লাগতো এই জিনিসটাই। আমার কাছে সেটা অনেক স্মরণীয় ও অ্যাডভেঞ্চার্স মনে হয়েছিলো। সে কথা মনে পড়লে গা শিউরে উঠে এবং যৌবনের সেই তারুণ্য এখনও আমার হৃদয়ে ভেসে বেড়ায়।
চাঁদপুর কণ্ঠ : স্থানীয় যুবকদের সমাজসেবায় যুক্ত করতে ক্লাবটি কীভাবে ভূমিকা রাখছে?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : স্থানীয় যুবকদের সমাজসেবায় যুক্ত করতে ক্লাবটি বেশ ভালোভাবেই গুরুত্ব রাখছে মনে করি। নাহলে এই ক্লাবটি ৫০ বছর টিকতো না। যুবকরা ক্লাবটিতে আসছে, এই ক্লাবের গুরুত্ব বুঝছে, জীবনে কাজে লাগাচ্ছে এবং চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব বিভিন্ন কাজের মাধ্যমে ক্লাবের পরিচিতি যুবকদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে। ফলে আমি মনে করি, ক্লাবের কার্যক্রমের পরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় স্থানীয় যুবকরা তা জেনে সমাজসেবায় যুক্ত হচ্ছে এবং ক্লাবটি ৫০ বছর ধরে এভাবে ভূমিকা রাখছে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আগামী ৫ বা ১০ বছরে ক্লাবকে কোথায় দেখতে চান?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : মানবতার সেবার চেয়ে আর বড়ো গুণ কী হতে পারে। তাই রোটার্যাক্ট ক্লাবের মাধ্যমে সামনের ১০ বছরের মধ্যে কয়েক হাজার যুবককে স্বাবলম্বী করার পরিকল্পনা ও শক্তিশালী সম্পদে রূপান্তর করাটাই আমি মনে করি রোটার্যাক্ট ক্লাবের গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এটাই বর্তমান সময়ের অপরিহার্য কাজ।
চাঁদপুর কণ্ঠ : সমাজের কিশোর-তরুণদের জন্যে আপনার বার্তা কী হবে?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : নতুন প্রজন্মের প্রতি আমার আহ্বান থাকবে, আত্মবিশ্বাস ও সততা অর্জন করার জন্যে একটি চমৎকার প্ল্যাটফর্ম আছে, আর সেটি হচ্ছে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব। এখানে কাজ করার সুযোগ আছে এবং এটি ভবিষ্যৎ দক্ষতা অর্জন করার জন্যে উপযুক্ত সংগঠন।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আজকের তরুণ প্রজন্মকে রোটার্যাক্টে যুক্ত হতে আপনি কীভাবে উৎসাহ দেবেন?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : সমাজের উন্নয়নের জন্যে কাজ করতে চাইলে যে সকল সংগঠন রয়েছে, তার অন্যতম চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব। ব্যক্তিত্ব বিকাশের জন্যে চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাবই সেরা। রোটার্যাক্টে তরুণ প্রজন্মকে যুক্ত করতে তাদের সাথে বিভিন্ন কার্যক্রমে যোগ দিতে হবে।
চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনাকে অনেক প্রশ্ন করলাম। এ প্রশ্নমালার বাইরে আপনার আর কিছু বলার আছে কি?
নকীবুল ইসলাম চৌধুরী : এই সমাজে সৎ ও সাহসী লোকের অভাব আছে। কারো সাহস আছে, কিন্তু সততা নেই । তাই সৎ ও সাহসী ব্যক্তি গড়ার জন্যে আমি মনে করি চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব শক্তিশালী মাধ্যম । আমার আহ্বান থাকবে, ক্লাবের অভিভাবক সংগঠন চাঁদপুর রোটারী ক্লাব যেন দেশ গড়ার কারিগর এখান থেকে তৈরি করে। কেননা বিগত ৫০ বছরে অনেক রোটার্যাক্টর বের হয়েছে, যারা আজ দেশ ও দশের জন্যে কাজ করে এবং করছে। চাঁদপুর রোটার্যাক্ট ক্লাব বহুদূর এগিয়ে যাক--এ শুভ কামনা করছি।








