বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর, ২০২৫
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫, ২০:০০

ফরিদগঞ্জে পাঁচ বছর পর সন্তানের দাবি নিয়ে তালাক দেয়া স্ত্রী হাজির! প্রবাসীর পরিবারে আতঙ্ক

এমরান হোসেন লিটন।।
ফরিদগঞ্জে পাঁচ বছর পর সন্তানের দাবি নিয়ে তালাক দেয়া স্ত্রী হাজির! প্রবাসীর পরিবারে আতঙ্ক
প্রবাসী ইকবাল হোসেনের বাড়ি।

দীর্ঘ ৫ বছর আগে পারিবারিক বিরোধের জের ধরে তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী দু সন্তানের দাবি নিয়ে হাজির হলেন সাবেক স্বামীর বাড়িতে। জানা যায়, বিরোধের জেরে সাবেক স্বামীর পরিবারের বিরুদ্ধে যৌতুকসহ নানা অভিযোগ তুলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও বিজ্ঞ আদালতে মামলা করেন স্ত্রী। আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দু শিশু কন্যা সন্তানকে রেখে চলে যায় সুখের ঠিকানায় ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের গৃহবধূ জোছনা আক্তার। মায়ের অবর্তমানে পরম মায়া মমতা দিয়ে নিদারুণ কষ্ট সহ্য করে সন্তানদের আগলে রাখলেন পিতা ইকবাল হোসেন। ৫ বছর পূর্বের সেই শিশু সন্তানরা এখন বিদ্যালয়েও যাচ্ছে। কিন্তু হঠাৎ করে সন্তানদের দাবি নিয়ে সাবেক স্বামীর বাড়িতে এসে হট্টগোল করে যাচ্ছেন মা জোছনা আক্তার। কোনো প্রকার আইনী ব্যবস্থা ছাড়া এ গৃহবধূর আগমনে জীবনের ঝুঁকি আর আতঙ্কে দিন কাটছে ভুক্তভোগী পরিবারের।

অভিযোগের আলোকে ওই বাড়িতে গিয়ে জানা যায়, উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নের চাঁদপুর গ্রামের তোফাজ্জল হোসেনের ছেলে মো. ইকবাল হোসেনের সাথে প্রায় ১৫ বছর পূর্বে ইসলামী শরিয়াহ মতে ১ লাখ টাকা দেনমোহরে নারায়ণগঞ্জ জেলাধীন ফতুল্লা থানার ভূঁইগড় এলাকার শুক্কুর আলীর মেয়ে জোছনা আক্তারের বিয়ে হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের দু কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। গত ৫ বছর পূর্বে এ দম্পতির জীবনে শুরু হয় বিরোধ। গৃহবধূর অবাধ্য আচরণ, পরকীয়াসহ নানা কর্মকাণ্ডে শুরু হয় বিরোধের তীব্রতা। এক পর্যায়ে আদালতের মাধ্যমে ২০২১ সালে স্ত্রী জোছনাকে তালাক দেন স্বামী ইকবাল হোসেন। সেই থেকে নিরুদ্দেশ স্ত্রী জোছনা বেগম। কিন্তু গত ১৭ অক্টোবর ২০২৫ হঠাৎ করে ইকবাল হোসেনের বাড়িতে এসে হাজির হন জোছনা বেগম। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়ে পরিবারের লোকজন।জীবনের ঝুঁকি নিয়ে একই ছাদের তলায় গত ৫-৬ দিন বসবাস করে আসছেন পরিবারটি।

পরে তারা উপায়ন্তর না পেয়ে জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে ফরিদগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও ব্যবস্থা নেয়নি থানা পুলিশ। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের দাবি ইকবাল হোসেনের পরিবারের লোকজনের। বড়ো ধরনের আপত্তিকর ঘটনার আগে বিষয়টির সমাধান চান তারা।

মো. ইকবাল হোসেনের বড়ো মেয়ে স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। সুমাইয়া আক্তার তার নাম। সংবাদ কর্মীদের কাছে মায়ের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে সুমাইয়া বলেন, গত ৫ বছর পূর্বে যখন আমাদের জন্যে মায়ের প্রয়োজন ছিলো, তখন মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। এখন ৫ বছর পর আসছে আমাদের প্রতি দরদ দেখাতে। মায়ের কাছে আমরা নিরাপদ নই।

জোছনা বেগম বলেন, আমি স্বামীর বাড়িতে থাকার জন্যে আসিনি, এসেছি আমার সন্তানদের নিয়ে যেতে। আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এতো আইনের দোহাই দিয়েন না। এদিকে প্রবাসে থাকা ইকবাল হোসেনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান, আমার কলিজার টুকরা সন্তানদের রেখে আমার তালাক দেয়া স্ত্রী ৫ বছর পূর্বে যখন চলে যায়, তখন অনেক চেষ্টা করেছি বিরোধ সমাধান করে তাকে রাখার জন্যে। কিন্তু সে উল্টো স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ ও আদালতে নিজে বাদী হয়ে মামলা করেছে। আমি তখন আইনকে সম্মান জানিয়েছি। কিন্তু জোছনা বেগম বাদী হয়েও আদালতের সাথে প্রতারণা করেছে, তাই রায় আমার পক্ষে এসেছে। আদালতের মাধ্যমে আমি জোছনা বেগমের সাথে বিবাহ বিচ্ছেদ করেছি, যা আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সকল নিয়ম কানুন মেনে হয়েছে। এখন সে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য আমার বাড়িতে এসে সমস্যা সৃষ্টি করছে। আমি সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি। এ মুহূর্তে তার উপস্থিতির কারণে আমাদের পরিবারে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. জাকির হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়েছি। জোছনা বেগমকে বলেছি চলে যেতে, কিন্তু সে কাউকে তোয়াক্কা করছে না। তবে সে বেআইনীভাবে এ বাড়িতে অবস্থান করার কারণে যে কোনো সময় বড়ো ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন তিনি। তাই বিষয়টি আইনানুগভাবে সমাধান করা জরুরি হয়ে পড়েছে।

ফরিদগঞ্জ থানার উপ-পুলিশ পরিদর্শক (এসআই) আরিফ হোসেন বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ পেয়েছি। ঘটনাস্থল পরিদর্শনও করা হয়েছে। বিধি মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন বলে তিনি জানান।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়