সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:১৭

চাঁদপুরে টেকসই বালু ব্যবস্থাপনা ও নদী অধিকার বিষয়ে গণশুনানি

একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু -----জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

নদীতে অবৈধভাবে বালুকাটা অনেকটা নিয়ন্ত্রণে : নৌ পুলিশের এসপি সৈয়দ মুশফিকুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু -----জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী দেশে নদীর সংখ্যা ১১৫৬। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে নদীর সংখ্যা ছিলো দুই হাজার। পদ্মা-মেঘনা নদীতে বালু উত্তোলন বৈধ-অবৈধ নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। নদীর বালু উত্তোলন করাও প্রয়োজন। এ বিষয়গুলো একটা নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে উদ্যোগ নিয়েছে রিভার অ্যান্ড ডেল্টা রিসার্চ সেন্টার (আরডিআরসি)। তারই অংশ হিসেবে অংশীজনদের নিয়ে চাঁদপুরে দুই পর্বে সভা ও গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়েছে।

রোববার (১৯ জানুয়ারি ২০২৫) বেলা আড়াইটায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব মিলনায়তনে প্রথম পর্বে 'বালুমহাল ও বালু ব্যবস্থাপনা কীভাবে টেকসই, স্বচ্ছ এবং অন্তর্ভূক্তিমূলক হতে পারে' বিষয়ে বহুপক্ষীয় পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন নৌ পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার (এসপি) সৈয়দ মুশফিকুর রহমান। তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, নদীর পরিবেশ রক্ষায় অনেকেই জড়িত। এর মধ্যে নৌ পুলিশও কাজ করে। মূলত আইনশৃঙ্খলা ও নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করে পুলিশ। তবে নদীর বালু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সকল অংশীজনের মতামত লাগবে। এছাড়া যারা এটি নিয়ে গবেষণা করেন তাদের মতামত নিয়ে কাজ করলে সফলতা আসবে। যেহেতু চাঁদপুরে বর্তমানে কোনো বৈধ বালু মহাল নেই, সে কারণে আমরা বালু কাটার সংবাদ পাওয়ামাত্র ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। বলতে পারি অবৈধভাবে বালুকাটা অনেকটা আমাদের নিয়ন্ত্রণে।

নৌ এসপি আরো বলেন, চলতি জানুয়ারি মাসে পদ্মা-মেঘনায় অভিযান চালিয়ে ৩৪টি ড্রেজার জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় গ্রেপ্তার হয়েছে ৮৮জন। এজাহার নামীয় আসামী হলেন ৮৪জন। তিনি বলেন, এ ধরনের ব্যবস্থাপনায় সচেতনতা প্রয়োজন। বিগত মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আমি জনগণের মধ্যে সচেতনতা পাইনি। বালুমহাল ও বালু উত্তোলনের ক্ষেত্রে একটি ব্যবস্থাপনায় নিয়ে আসতে হলে সবার আগে স্থানীয় জনগণকে সচেতন হতে হবে। এরপর বহুমুখী সমন্বয় প্রয়োজন। এটি বন্ধ করার জন্যে নীতিমালা প্রণয়নে আমরা কাজ করতে চাই।

বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আল-ইমরান খান, চাঁবিপ্রবির ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত) মো. বাইজিদ আহমেদ রনি, চাঁসক'র ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ড. সুলতানা তৌফিকা আক্তার, চাঁদপুর নদী বন্দরের অভ্যন্তরীণ জাহাজ পরিচালনা বিভাগের পরিদর্শক মো. আশিকুর রহমান, চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক কাদের পলাশ, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ গাজী, বাংলাদেশ নৌযান পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. হারুনুর রশিদ।

প্রথম পর্ব সঞ্চালনায় ছিলেন আয়োজকদের পক্ষে মো. মনির হোসেন। টেকসই বালু ব্যবস্থাপনা বিষয়ে ধারণা নিয়ে বক্তব্য রাখেন পরিবশে ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন। নদী থেকে বালু উত্তোলনের ক্ষতিকর ও প্রয়োজনীয়তা বিষয় সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তব্য তুলে ধরেন চাঁদপুর পরিবেশ সংরক্ষণ আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা ও সাধারণ সম্পাদক মো. আশিক খান। এ বিষয়ে লিখেছেন অনুষ্ঠানের স্থানীয় আয়োজক মুসাদ্দেক আল আকিব। শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন আল-আমিন মডেল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আ.ন.ম. ফখরুল ইসলাম মাছুম।

এই পর্বে জেলে, বালুবাহী বাল্কহেড মালিক সমিতির নেতা ও সামাজিক সংগঠনের নেতারা পরামর্শমূলক বক্তব্য রাখেন। বক্তারা বালু উত্তোলনের ভিন্ন মত দিলেও ব্যবস্থাপনা নিয়ে ঐক্যমত হওয়ার আহ্বান জানান।

পরামর্শমূলক এ সভায় বক্তাদের আলোচনায় জানা গেছে, চাঁদপুরে ৭টি বৈধ বালুমহাল ছিলো। কিন্তু এখন একটি বালুমহালেরও অনুমোদন নেই। উচ্চ আদালত থেকে দুটির জন্যে অনুমোদন এনে জেলা প্রশাসনের নিকট দেয়া হলেও সেগুলোর জন্যে নীতিগত কোনো সিদ্ধান্ত না দিয়ে বালু উত্তোলনের সমস্যাগুলো তুলে ধরে জবাব দেয়া হয়। এছাড়া জানা গেলো সেলিম চেয়ারম্যান থেকে এখন পর্যন্ত পূর্বের বালু তোলার রাজস্ব বকেয়া পাওনা ২৭৪ কোটি টাকা।

বিকেল ৫টায় একই স্থানে ‘নদ-নদীকে জীবন্ত সত্তা ঘোষণা-কীভাবে নদীর অধিকারের স্থায়ী ভিত্তি নির্মাণ করা যাবে' বিষয়ে গণশুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এই পর্বের আলোচনায় অংশ নেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন।

তিনি তাঁর বক্তব্যে বলেন, একটি নদীর মৃত্যু মানে একটি সভ্যতার মৃত্যু। নদীকে তার গতিতে বাঁচতে দিতে হবে। কোন্ দেশে প্লাস্টিকের ব্যবহার নেই কেউ কি বলতে পারবেন? পৃথিবীর সকল দেশেই প্লাস্টিকের ব্যবহার আছে। পৃথিবীর সকল দেশেই প্লাস্টিক, বালুর যথাযথ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। যা আমাদের দেশে নেই। আমাদের ব্যবস্থাপনায় ত্রুটি রয়েছে। নদী দূষণের ক্ষেত্রে আমাদের ব্যবস্থাপনার সমস্যা রয়েছে। আর নদী দখলের ক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে।

তিনি বলেন, প্রতি মাসে আমরা পানির মান পরীক্ষা করি। আমাদের ডাকাতিয়া নদীর মান ভালো আছে। আপনার আমার ফেলে দেয়া পলিথিন সবশেষে যাচ্ছে ফসলি জমিতে। যার কারণে আমাদের ফসলের ক্ষতি হচ্ছে। নদীতে পলিথিন ফেললে নদী দূষণ হচ্ছে। পলিথিনের কারণে আমাদের নদীগুলো মরে যাচ্ছে। যে কোনো কিছুর বিনিময়ে আমাদের পলিথিনের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।

তিনি বলেন, চরের কারণে চাঁদপুর শহর রক্ষা বাঁধ হুমকির সম্মুখীন হবে। আমাদের ডুবোচরগুলো কেটে দিতে হবে এবং কাটানো দরকার।

তিনি আরো বলেন, দেশ, প্রকৃতি ও সভ্যতাকে বাঁচাতে হলে আমাদের নদীগুলোকে বাঁচাতে হবে। নদী দখলের নামে আমাদের দেশে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করা হয়ে থাকে। নদীর ভাঙা-গড়া একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া। নদীকে শাসনের উদ্যোগ নিতে হবে। নদীকে যদি আমরা দখল না করি, পলিথিন না ফেলি তাহলে নদী ভালো থাকবে। আমাদের নদী, খাল ভরাট হয়ে গেছে। দেশীয় প্রজাতির মাছ বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। নদীকে কেনো আমরা বাঁচিয়ে রাখবো তা প্রথমেই জানতে হবে।

এই পর্বে আরো বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ নুর আলম দীন, মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট নদী কেন্দ্র চাঁদপুর-এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল হক, কোস্টগার্ড চাঁদপুর স্টেশনের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট মো. ফজলুল হক, পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচারক মো. মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক লে. মো. শোয়ায়েব, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি রহিম বাদশা, সাবেক সভাপতি গিয়াস উদ্দিন মিলন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক চাঁদপুর খবর পত্রিকার প্রকাশক ও সম্পাদক সোহেল রুশদী, দৈনিক চাঁদপুর সময় পত্রিকার প্রধান সম্পাদক এম ফরিদুল ইসলাম উকিল, মৎস্য ব্যবসায়ী মো. সোহেল গাজী প্রমুখ।

গণশুনানি পর্বে সভাপতিত্ব করেন পরিবেশ ও নদী রক্ষা উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন।

দুই পর্বের অনুষ্ঠানে আরডিআরসি ছাড়াও সহযোগী আয়োজক সংগঠন ছিলো সিএনআরএস, আরডিআরএস, অক্সফাম এবং বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়