প্রকাশ : ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:০৩
এসপির প্রেস ব্রিফিংয়ে মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুরস্কৃত
কিশোর অটোবাইক চালক হত্যা মামলার মূল অপরাধীসহ ৩ আসামী গ্রেফতার
মতলব দক্ষিণ উপজেলার কিশোর অটোবাইক চালক মহিন উদ্দিন মিয়াজী (১৭)-এর ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল অপরাধীসহ ৩ আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আসামীরা হলেন : মতলব পৌর এলাকার দগরপুর গ্রামের মোবারক প্রধানের ছেলে মো. রাব্বি প্রধান কালু (২৬), একই এলাকার জাকির হোসেনের ছেলে মো. জসিম (২৬) ও উপাদি উত্তর ইউনিয়নের দক্ষিণ নওগাঁ গ্রামের মৃত নুরু মিয়ার ছেলে মো. ইসমাইল হোসেন (৪৪)। সেই সাথে চোরাইকৃত অটোবাইক ও ব্যাটারী উদ্ধার করা হয়েছে। সোমবার নাগদা ও নওগাঁ এলাকা থেকে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) দুপুরে চাঁদপুরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভা কক্ষে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব পিপিএম । এসপি বলেন, কিশোর অটোবাইক চালক মহিন হত্যার ঘটনায় ১ ডিসেম্বর মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের হয়। ওই মামলার সূত্র ধরে মতলব দক্ষিণ থানার ওসি পুলিশের একটি বিশেষ দল গঠন করেন। ওই দলটি তদন্ত করে হত্যায় জড়িত আসামী মো. রাব্বি ওরফে কালুকে গ্রেপ্তার করে। তার তথ্যের ভিত্তিতে ২ ডিসেম্বর অভিযান চালিয়ে আসামী জসিম ও ইসমাইল হোসেনকে গ্রেপ্তার করে এবং ইসমাইলের হেফাজতে থাকা অটোবাইকের ৪টি ব্যাটারী উদ্ধার করে। তবে ঘটনায় জড়িত পলাতক আসামী সুজনকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে বলে জানান পুলিশ সুপার। এর আগে গত ২৯ নভেম্বর শুক্রবার দুপুর আড়াইটার সময় পূর্ব পরিকল্পনার আলোকে আসামী সুজন মোবাইল ফোনে কিশোর চালক মহিনকে ধনারপাড় আসার জন্যে বলেন। ওই চালক তাদের কথামত বাড়ি থেকে ধনার পাড় চলে যান। সেখানে গেলে সুজনসহ সকল আসামী তার ব্যাটারী চালিত অটোরিকশা করে নাগদা, আশ্বিনপুর, নারায়ণপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করেন। সন্ধ্যা ৭টা ৫০ মিনিটের সময় তারা ঘটনাস্থল খাদেরগাঁও ইউনিয়নের বেলুতি গ্রামের গোলগেইল্যা খালের পাড়ে অটোবাইকটি নিয়ে যান। সেখানে তারা রাত ৮টার সময় কৌশলে চালক মহিনকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন এবং চালকের মোবাইল ফোনসহ অটোবাইকটি চালিয়ে নওগাঁ বাজারে আসামী ইসমাইলের গ্যারেজে নিয়ে যান। সেখানে তারা ৪টি ব্যাটারী খুলে ২৩ হাজার ৫০০ টাকা বিক্রি করে টাকা ভাগাভাগি করে নিয়ে যান। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই জীবন চৌধুরী জানান, মহিনের বাবা নাছির উদ্দিন মিয়াজী বাদী হয়ে চারজনকে আসামী করে মতলব দক্ষিণ থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ৩০ নভেম্বর সকালে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মহিনের লাশ উদ্ধার করে। প্রেস ব্রিফিংয়ে এসপি বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে আসামীরা জানান, তারা সরাসরি এই হত্যার ঘটনায় জড়িত ছিলেন। তাদেরকে মঙ্গলবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। হত্যার শিকার কিশোর অটোবাইক চালক মহিন মিজি মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদি উত্তর ইউনিয়নের ডিঙ্গাভাঙ্গা গ্রামের নাছির মিজির ছেলে। ১০ বছর আগে মহিনকে ফেলে রেখে তার মা অন্যত্র চলে যান। দাদী তাকে লালন পালন করেন। মহিনের বাবা নাছির উদ্দিন মিয়াজী বলেন, আমি অসুস্থ মানুষ। আমার এই ছেলেই আয়-রোজগার করে আমার সংসার চালাতো ও মেয়েদের লেখাপড়া করাতো। এখন কীভাবে বাঁচবো, কী খাবো? আমার ছেলের খুনিদের বিচার চাই। চাঁদপুরে এসপি কার্যালয়ের প্রেস ব্রিফিংয়ে চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অর্থ, পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতিপ্রাপ্ত) সুদীপ্ত রায়, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস্) রাশেদুল হক চৌধুরী, সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (মতলব সার্কেল) খাইরুল কবির, মতলব দক্ষিণ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ সালেহ আহমেদ, চাঁদপুর প্রেসক্লাব সভাপতি শাহাদাত হোসেন শান্তসহ জাতীয় ও স্থানীয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে ক্লুলেস হত্যা মামলার মূল অপরাধী সহ আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হওয়ায় এবং ঘটনার আলামত অটোবাইক ও ব্যাটারী উদ্ধার করায় মতলব দক্ষিণ থানার ওসিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে পুরস্কৃত করা হয়।