প্রকাশ : ১১ নভেম্বর ২০২৪, ১৫:৪৫
চাঁদপুর জেলা আইন-শৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক
প্রতিদিনই মাদক, কিশোর গ্যাং ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে যৌথভাবে অভিযান চালাতে হবে
চাঁদপুর জেলা আইন শৃঙ্খলা কমিটির মাসিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার (১০ নভেম্বর) সকালে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত সভায় জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিনের সভাপতিত্ব করেন। সভার শুরুতে জেলার আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয়ে বিগত সভার সিদ্ধান্ত সমূহ ও অগ্রগতির প্রতিবেদন তুলে ধরেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) একরামুল ছিদ্দিক। সভায় বক্তব্য রাখেন পুলিশ সুপার মুহম্মদ আব্দুর রকিব, পিপিএম, স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক ও চাঁদপুর পৌরসভার প্রশাসক মো. গোলাম জাকারিয়া, র্যাব- ১১ কমান্ডার মিঠুন কুমার কুন্ডু, নৌ-পুলিশ চাঁদপুর অঞ্চলের সহকারী পুলিশ সুপার ইমতিয়াজ আহমেদ, ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. একেএম মাহাবুবুর রহমান, জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি কোহিনুর রশিদ, নারী ও শিশু আদালতের স্পেশাল পিপি শামসুল ইসলাম মন্টু, চাঁদপুর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক গোপাল সাহা প্রমুখ। সভাপ্রধানের বক্তব্যে জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, আদালতে চলমান মামলাগুলো যত দ্রুত নিষ্পত্তি করা যায় এ ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। মামলা নিষ্পত্তি হলে সমাজে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রের স্বার্থে আমাদের ভালোভাবে কাজ করতে হবে। প্রতিনিয়ত উপজেলাতে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। উপজেলা প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, শান্তির উপজেলা তৈরিতে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসন। জেলা প্রশাসক রাজনৈতিক সভা ও ওয়াজ মাহফিল প্রসঙ্গে বলেন, আমরা চাই বড়ো ধরনের কোনো রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ বা ওয়াজ মাহফিল হলে বিষয়টি যেন প্রশাসনকে অবহিত করা হয়৷ বর্তমানে বেশ কিছু সভা বা ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে প্রশাসনকে না জানিয়ে। সেক্ষেত্রে আমি অল্প সময়ের মধ্যে সংশ্লিষ্টদের সাথে আলোচনা সভা করবো। উপজেলা পরিষদের ভেতরে সভা-সমাবেশ করা ঠিক হবে না। সেক্ষেত্রে উপজেলার নেতা-কর্মীদের সাথেও আলোচনা সভা করা দরকার। নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও উপজেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, নদীতে বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজের জন্যে প্রতিদিন অভিযান করতে হবে। কাউকেই আমরা অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করতে দিবো না। প্রতিদিন নদীর ওপর নজরদারি রাখতে হবে। বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে অভিযান করতে হবে। জেলা প্রশাসক মাদক প্রসঙ্গে বলেন, চাঁদপুর রেলওয়ে পুলিশ মাদকের ওপর অভিযান করবে এবং আগামী মাসে তার রিপোর্ট দিবে। জেলা প্রশাসক মাদক নির্মূলের বিষয়ে জোর দিয়ে বলেন, প্রতিদিনই মাদকের বিরুদ্ধে যৌথভাবে অভিযান করতে হবে। বিভিন্ন স্পট বা জায়গা রয়েছে, যা মাদক বিক্রেতা বা সেবনকারীদের আড্ডাস্থল হিসেবে পরিচিত, সেসব জায়গা চিহ্নিত করে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। । সেক্ষেত্রে একটি কর্ম পরিকল্পনা করতে হবে। আমরা চাই না জেলায় কোনো মাদকসেবী থাকুক। জেলা প্রশাসক কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণে পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, কিশোর গ্যাং নিয়ে আত্মতৃপ্তির কোনো সুযোগ নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। এ সময় হাজীগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, উপজেলা প্রশাসন অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের ব্যাপারে যথাযথ ভূমিকা পালন করেছে। এ ধরনের অভিযানগুলো অব্যাহত রাখতে হবে। যানজট নিরসনে জেলা প্রশাসক বলেন, যানজট নিরসনে পৌরসভার সাথে ট্রাফিক পুলিশের জনবল বাড়ানো প্রয়োজন। আগামী ১ মাসের মধ্যে অন্য জেলা বা উপজেলার সিএনজি অটোরিকশা ও ইজিবাইক চলাচল করতে পারবে না। বাজারের যেসব ফুটপাত দখল হয়ে গেছে, সেসব ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। সভায় পুলিশ সুপার (এসপি) মুহম্মদ আব্দুর রকিব বলেন, কোনো ঘটনাকে আমরা ছোট করে দেখি না। প্রতিটি ঘটনাকেই আমরা গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছি। কিশোর গ্যাংয়ের ক্ষেত্রে আইনের কঠোর প্রয়োগ শুরু করেছি। আইনের প্রয়োগ শুরু হলেই কিশোর গ্যাংয়ের অপরাধ প্রবণতা কমে আসবে। অস্ত্র যখন হাতে থাকে তখন তারা বাচ্চা থাকে না। অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতার প্রয়োজন। আমরা চাই না, মামলা দিয়ে তাদের ভবিষ্যতের সমস্যা হোক। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের বেশি সচেতন হওয়া প্রয়োজন তাদের সন্তানদের প্রতি। পুলিশ সুপার আরো বলেন, মাদক পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব না হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। মাদকের বিরুদ্ধে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়রা যদি তথ্য দেয় তাহলে আমাদের আরো বেশি সহযোগিতা হবে। আমরা একটি টিম হিসেবে কাজ করছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জেলাকে ভালো রাখার জন্যে কাজ করে যাচ্ছি। সবার প্রচেষ্টায় জেলা আইন-শৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে।