প্রকাশ : ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৬
কলেজটির অনিয়ম রোধে জেলা প্রশাসকের হস্তক্ষেপ চাই
গত ৭ নভেম্বর চঁাদপুর কণ্ঠে 'আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য' শিরোনামে সোহাঈদ খান জিয়া একটি প্রতিবেদন পরিবেশন করেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, চঁাদপুর শহরের মঠখোলা এলাকায় অবস্থিত আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আতাহার আলী কলেজ থেকে প্রায় কোটি টাকা দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তিনি গত তিন বছরে কলেজে দায়িত্ব পালন করাবস্থায় এক কোটি টাকার উপরে দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও অফিস স্টাফরা সাবেক জেলা প্রশাসককে অবহিত করলেও এর কোনো প্রকার প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কেননা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জেলা প্রশাসককে সবসময় প্রভাবিত করে রাখতেন।
|আরো খবর
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাহার আলীর চাকরির মেয়াদ গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে শেষ হয়। ৮ আগস্ট ২০২৩ ও ৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অফিস আদেশ মোতাবেক তিনি উক্ত পদে থাকতে পারেন না। তিনি মাদকসহ বিভিন্ন মামলা এবং ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখের জিআর নং ৮৯৮ ধারা ১৪৩/১৮৬/২২৪/৩২২/৩৫০/৩০১/১০৯ পেনাল কোড নং ১৮৬০-এ অভিযুক্ত। তার দায়িত্বকালীন অবস্থায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৮ মাস যাবত বেতন এবং ৩ বছরের ঈদগুলোতে কোনো বোনাস পান নি। অভ্যন্তরীণ অডিট (২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩)-এ ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪১ টাকা কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হতে অতিরিক্ত উত্তোলন করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্টের ৫ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে (যার নং-২০০০০৫৭৪২৭৬২ তাং ৪ জুলাই ২০২৩ খ্রি. এবং নং ২১৮৭১২১) উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন। সহকারী মেডিকেল অফিসার, গ্রন্থাগারিক, স্টোর কিপার, আয়া, কুক নিয়োগ দেয়ার নামে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে আলোচনা হয়নি বা রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়নি। কলেজ অফিস থেকে ভুয়া ভাউচার এবং হাওলাত বাবদ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। অফিস স্টাফরা চাকুরি হারানোর ভয়ে অনিয়মের বিষয়গুলো জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। তদন্ত করলে এ সকল বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যাবে। হোমিওপ্যাথিক বোর্ড থেকে পাওয়া ২০২২/২৩ সালের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন- ভাতার চেক আনতে খরচ দেখিয়ে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রায় ১লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ। তিনি সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন, যা পূর্বে উক্ত কলেজে কখনো ঘটেনি। কলেজ লাইব্রেরী হতে ২৫ হাজার টাকা ভাউচারবিহীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজে আত্মসাৎ করেন। যেটি অভ্যন্তরীণ অডিটের তদন্তে পাওয়া যায়। কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ টাকা বেশি খরচ দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন তিনি। প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটওয়ারী তঁার কর্মকালের শেষ দিকে ৬৬ লাখ ৮৫ হাজার ৭শ’ ৩১ টাকা কলেজের বিভিন্ন একাউন্টে রেখে যান। কিন্তু সে টাকার বিল, ভাউচার কলেজ অফিসে না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন। তিন অর্থ বছরে (২০২১-২০২২, ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪) কলেজের মোট আয় হয় ৫৭ লাখ টাকা। সে টাকারও কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যাচ্ছে না। কলেজের একাউন্টে থাকার কথা ১ কোটি ২২লাখ ৮৫ হাজার ৭শ’ ৩১ টাকা। কিন্তু একাউন্টে কোনো টাকা নেই। যার জন্যে ৮/৯ মাসের বেতন বাকি পড়ে আছে শিক্ষক ও স্টাফদের। প্রশ্ন হচ্ছে, অনিয়ম ও দুর্নীতি করার পরও কোন্ খুঁটির জোরে এখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন আতাহার আলী, যার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় ১ বছর আগে। তার অনিয়ম- দুর্নীতির বিষয়টি চঁাদপুরের জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখবেন বলে সচেতন মহল আশাবাদী। এ ব্যাপারে ডাঃ আতাহার আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সঠিক নয়।
৫ আগস্টের গণঅভ্যুত্থানের পর নূতন বাংলাদেশে ডাঃ আতাহার আলীর মতো দুর্নীতিবাজ কোনো ব্যক্তি চঁাদপুর আদর্শ হোমিওপ্যাথিক কলেজে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে চাকরির মেয়াদ শেষ হবার পরও অধিষ্ঠিত থাকুক, সেটা সচেতন কেউ প্রত্যাশা করে না। তারই আপন ভ্রাতুষ্পুত্র শাহরাস্তিতে অবস্থিত আরেকটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে ইতোমধ্যে নারী কেলেঙ্কারি ও দুর্নীতির দায়ে অপসারিত হয়েছেন, যেখানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার হস্তক্ষেপ ছিলো। হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান ডাঃ দিলীপ চঁাদপুরের দুটি হোমিওপ্যাথিক কলেজে এই দুজন অধ্যক্ষের নিয়োগ অবৈধ সুবিধা নিয়ে অনুমোদন করেছেন বলে কথিত আছে। তিনি একটি জেলায় দুটি হোমিওপ্যাথিক কলেজের প্রয়োজনীয়তা না থাকা সত্ত্বেও সেগুলোর অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। চঁাদপুর জেলা সদরে অবস্থিত আদর্শ হোমিওপ্যাথিক কলেজের অনিয়ম রোধে প্রয়োজনীয় তদন্ত ও ব্যবস্থাগ্রহণে বিরত থাকতে গভর্নিং বডির সভাপতি, সদ্য বিদায়ী জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের ওপর গভর্নিং বডির সহ-সভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারী দুলাল সবসময় চাপ সৃষ্টি করে রাখতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ফ্যাসিবাদী আচরণে দেশের অন্যতম সেরা হোমিওপ্যাথিক কলেজ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া এই কলেজটি সার্বিকভাবে তলানিতে গেছে। যেহেতু বর্তমানে তার অবৈধ চাপ সৃষ্টির সুযোগ নেই, সেহেতু গভর্নিং বডির সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসকের উচিত বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতির তদন্ত করা, দোষী সাব্যস্ত হলে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া এবং নূতন অধ্যক্ষ নিয়োগের পদক্ষেপ নিয়ে কলেজটিকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনার ত্বরিত উদ্যোগ গ্রহণ করা। আমাদের বিশ্বাস, বর্তমান জেলা প্রশাসক চাপমুক্ত থেকে সেটি অবশ্যই করবেন।