প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২১:১৩
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে অভিযোগ
কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সফিউর রহমান ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ উঠেছে। গত বুধবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিভিন্ন দপ্তরের ৫০জন কর্মকর্তা- কর্মচারীর স্বাক্ষরে চাঁদপুরের সিভিল সার্জনের মাধ্যম স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর এ লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়।
|আরো খবর
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, ডা. সফিউর রহমান ভূঁইয়া চলতি বছরের ১৬ এপ্রিল কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদান করেন। যোগদান করার পর তিনি বরিশাল মেডিকেল কলেজের সাবেক ছাত্রলীগের ক্রীড়া সম্পাদকের পরিচয় দেন এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের সাথে তার সখ্যতার কথা বলে প্রভাব বিস্তার শুরু করেন। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে হয়রানি, অসদাচরণ ও গালমন্দ করে হেনস্তা শুরু করেন। গত ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর তিনি ভীত ও কিছুটা শান্ত থাকেন। সম্প্রতি জেলায় নতুন সিভিল সার্জন যোগদান করার পর তিনি নিজেকে সিভিল সার্জনের বন্ধু পরিচয় দিয়ে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্নভাবে বদলির হুমকি, হয়রানি, গালমন্দ ও অসদাচরণের মাত্রা বাড়িয়ে দেন। তিনি হাসপাতালের ভেতরে তার নিজ চেম্বারে বসে ৪০০ টাকা ভিজিটের বিনিময়ে রোগী দেখার জন্যে রিপাত ও কাউছার নামে দুজন দালাল নিয়োগ দেন। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে কোনো রোগী সেবা নিতে আসলে জরুরি বিভাগের সেকমো সেলিমের মাধ্যমে বড়ো ডাক্তার দেখানোর কথা বলে রোগী তার ব্যক্তিগত চেম্বারে নিয়ে যান। তার ব্যক্তিগত চেম্বারে রোগী পাঠানোর জন্যে হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে সব সময় চাপ প্রয়োগ করে থাকেন। রোগী দিতে না পারলে তার অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মানসিকভাবে হেনস্তা করেন। ইতিপূর্বে রোগী দেখার ঘটনাকে কেন্দ্র করে বহিরাগত এক দালাল রাছেলকে দিয়ে হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সোহেল রানাকে তিনি লাঞ্ছিত করেন। এ ঘটনায় হাসপাতালের সকল কর্মকর্তা-কর্মচারী ওই সময় মানববন্ধন করে এবং তৎকালীন সিভিল সার্জন মোঃ সাহাদাৎ হোসেনকে অবহিত করেন। হাসপাতালের হিসাব রক্ষক জান্নাতুল তার অসুস্থ বৃদ্ধা মাকে নিয়ে হাসপাতালে প্রবেশ করতে গেলে তার দালাল জান্নাতুলকে বাধা প্রদান করেন। এ বিষয়টি ডা. সফিউর রহমানকে অবহিত করলে তিনি হিসাব রক্ষককে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগের এমটি ল্যাব ফাতেমা খাতুন দাপ্তরিক কাজে তার অফিস কক্ষে গেলে দীর্ঘক্ষণ তাকে দাঁড় করিয়ে রাখেন। অসুস্থ আর্থারাইটিস রোগে আক্রান্ত ফাতেমা একসময় বসে পড়লে অনুমতি ব্যতীত বসার অজুহাত দেখিয়ে গালমন্দ করে অফিস কক্ষ থেকে বের করে দেন।
ডা. সফিউর রহমান সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স দাপ্তরিক কাজের বাইরে ব্যক্তিগত কাজে তার ঢাকার বাসা শাহজাহানপুর, কুমিল্লা ও চাঁদপুর যাতায়াতে বহুবার ব্যবহার করেছেন। যার তেল খরচ বাবদ ২৪ হাজার ৬শত টাকা ব্যয় হয়েছে বলে জানান অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার। ওই টাকা তিনি পরিশোধ করেন নি। নিজের ব্যক্তিগত প্রয়োজনে হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করে আসছেন। তাছাড়া ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের নিকট থেকে বনভোজনের কথা বলে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করায় ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশ করতে নিষেধ করে দেয়া হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সফিউর রহমানের কাছে বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া যায়নি। জেলা সিভিল সার্জন মোহাম্মদ নূর আলম দীন বলেন, কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমার মাধ্যমে যে অভিযোগটি এসেছে, সেটি আমি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে পাঠিয়ে দিয়েছি। আর কোনো কিছু তিনি বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
ক্যাপসন কচুয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ইনসেটে অভিযুক্ত ডা. সফিউর রহমান