প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৪, ২২:২৩
আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দুর্নীতি ও নিয়োগ বাণিজ্য
চাঁদপুর শহরের মঠখোলা এলাকায় অবস্থিত আদর্শ হোমিওপ্যাথিক মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আতাহার আলী কলেজ থেকে প্রায় কোটি টাকা দুর্নীতি করে হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। জানা যায়, অধ্যক্ষ আতাহার আলী। গত তিন বছরে কলেজে দায়িত্ব পালন করাবস্থায় এক কোটি টাকার উপরে দুর্নীতি এবং নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন। এ নিয়ে কলেজের শিক্ষক প্রতিনিধি প্রভাষক, সহকারী অধ্যাপক ও অফিস স্টাফরা সাবেক জেলা প্রশাসককে অবহিত করলেও এর কোনো প্রকার প্রতিকার পাওয়া যায়নি। কেননা তৎকালীন ক্ষমতাসীন দলের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জেলা প্রশাসককে সবসময় প্রভাবিত করে রাখতেন।
|আরো খবর
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাহার আলীর চাকরির মেয়াদ গত ৩০ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে শেষ হয়। ৮ আগস্ট ২০২৩ ও ৬ মার্চ ২০২৩ তারিখে বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক বোর্ডের অফিস আদেশ মোতাবেক তিনি উক্ত পদে থাকতে পারেন না। তিনি মাদকসহ বিভিন্ন মামলা এবং ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ জিআর নং ৮৯৮ ধারা ১৪৩/১৮৬/২২৪/৩২২/৩৫০/৩০১/১০৯ পেনাল কোড নং ১৮৬০-এ অভিযুক্ত। তার দায়িত্বকালীন অবস্থায় শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা ৮ মাস যাবত বেতন এবং ৩ বছরের ঈদগুলোতে কোনো বোনাস পান নি। অভ্যন্তরীণ অডিট (২০২১-২০২২ এবং ২০২২-২০২৩)-এ ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৪১ টাকা কলেজের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট হতে অতিরিক্ত উত্তোলন করার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের কল্যাণ ট্রাস্টের ৫ লাখ টাকা চেকের মাধ্যমে (যার চেক নং-২০০০০৫৭৪২৭৬২ তাং ৪ জুলাই ২০২৩ খ্রি. এবং চেক নং ২১৮৭১২১) উত্তোলন করে তা আত্মসাৎ করেন। সহকারী মেডিকেল অফিসার, গ্রন্থাগারিক, স্টোর কিপার, আয়া, কুক নিয়োগ দেয়ার নামে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন । এ নিয়ে ম্যানেজিং কমিটিতে আলোচনা বা রেজুলেশনে উল্লেখ করা হয়নি। কলেজ অফিস থেকে ভুয়া ভাউচার এবং হাওলাত বাবদ ২০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেন। অফিস স্টাফরা চাকুরি হারানোর ভয়ে অনিয়মের বিষয়গুলো জেনেও না জানার ভান করে থাকেন। তদন্ত করলে এ সকল বিষয়ের সত্যতা পাওয়া যাবে। হোমিওপ্যাথিক বোর্ড থেকে পাওয়া ২০২২/২৩ সালের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন- ভাতার চেক আনতে খরচ দেখিয়ে জনপ্রতি ৫ হাজার টাকা করে প্রায় ১লাখ টাকা হাতিয়ে নেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ । তিনি সহযোগী অধ্যাপক, সহকারী অধ্যাপক, প্রভাষক ও অফিস কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পদোন্নতি দিতে গিয়ে জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেন, যা পূর্বে উক্ত কলেজে কখনো ঘটেনি। কলেজ লাইব্রেরী হতে ২৫ হাজার টাকা ভাউচারবিহীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিজে আত্মসাৎ করেন। যেটি অভ্যন্তরীণ অডিটের তদন্তে পাওয়া যায়। কলেজের বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খরচের চেয়ে দেড় থেকে দুই গুণ টাকা বেশি খরচ দেখিয়ে ভাউচারের মাধ্যমে হাতিয়ে নেন তিনি।
সাবেক অধ্যক্ষ ডাঃ মোঃ মোজাম্মেল হক পাটওয়ারীর কর্মকালের শেষ দিকে ৬৬ লাখ ৮৫ হাজার ৭ শ' ৩১ টাকা কলেজের বিভিন্ন একাউন্টে রেখে যান। কিন্তু সে টাকার বিল, ভাউচার কলেজ অফিসে না দিয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আত্মসাৎ করেন।
তিন অর্থ বছরে (২০২১-২০২২, ২০২২-২০২৩ ও ২০২৩-২০২৪) কলেজের মোট আয় হয় ৫৭ লাখ টাকা। সে টাকারও কোনো সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে না। কলেজের একাউন্টে থাকার কথা ১কোটি ২২লাখ ৮৫ হাজার ৭শ' ৩১ টাকা। কিন্তু একাউন্টে কোনো টাকা নেই। যার জন্য ৮/৯ মাসের বেতন বাকি পড়ে আছে শিক্ষক ও স্টাফদের। প্রশ্ন হচ্ছে, অনিয়ম ও দুর্নীতি করার পরও কোন্ খুঁটির জোরে এখনো ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বহাল তবিয়তে রয়েছেন আতাহার আলী, যার চাকরির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে প্রায় ১ বছর আগে।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আতাহার আলীর অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়টি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক খতিয়ে দেখবেন বলে সচেতন মহল আশাবাদী। এ ব্যাপারে ডাঃ আতাহার আলী বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো সঠিক নয়।