প্রকাশ : ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৬:৫০
পশ্চিম রামদাসদীতে খাল ভরাট : ১১ বছর ধরে জলাবদ্ধতায় হুমকিতে ফসল আবাদ
বর্ষাকালে এক সময়ে এই খাল দিয়ে ছোট ও মাঝারি আকারের নৌকা চলাচল করত । খালটি দিয়ে একসময় নদী থেকে জোয়ার-ভাটার পানি আসত। বর্ষার পানির সঙ্গে পলি এসে বাড়ত জমির উর্বরতা। এ খাল বেয়েই সরত আশপাশের এলাকার অতিরিক্ত পানি। খালটির ওপর নির্ভর করে প্রতিবছর ৩ (তিন) ফসলের আবাদ করতেন খালের পাশের কৃষকগন। চাঁদপুর সদর উপজেলার ১০নং লক্ষ্মীপুর সাবেক সাখুয়া ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের সিআইপি বাঁধ বেষ্টিত পশ্চিম রামদাসদী গ্রাম।এ গ্রামেই অবস্থিত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা খাল।যেটি সরকারি খাল নামেই পরিচিত। শতবর্ষী খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে সরাসরি সংযুক্ত ছিল । কালের বিবর্তনে খালটি এখন মৃত প্রায় এক যুগ ধরে । খাল নির্ভর প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবন জীবিকা, কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, নিরাপদ পানির যোগান হুমকির মুখে পড়েছে ।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খালটি রামদাসদী মৌজায় জেএল নং ৯৪ আরএস দাগ ২৭৭ সহ আশেপাশের অনেক দাগের মধ্যে থাকা খালটি অবস্থিত । মেঘনা নদীর সাথে প্রবাহিত খালটি ড্রেজার দ্বারা বালু ভরাট করার কারনে খালের (উত্তর-দক্ষিণ) সামনের একাংশে মিজান রাজ এর বাড়ী থেকে মেঘনা নদীর পাড় পর্যন্ত ২০০(দুইশত) মিটার প্রায় পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে যায় । আর বাকি অংশ নাব্যতা হারিয়ে পানিপ্রবাহ হচ্ছে চরম বাধাগ্রস্ত এবং নদীর সাথে পানি প্রবাহ না থাকায় খালের বাকী অংশে বছরের পর বছর জলাবদ্ধতা থেকে যায় । ফলে খালের দূষিত পানি জলজ স্বাস্থ্য ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ভয়াবহ হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে ।
জানা যায় ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়নের ৮(আট) নং ওর্য়াড এর পশ্চিম রামদাসদী মেঘনা নদীর পাড়ে সাবেক আওয়ামীলীগ সরকার কর্তৃক ২০১৩ সালে রামদাসদী আশ্রয়ন প্রকল্প নামে অবকাঠামো নির্মান কাজ শুরু করা হয় । কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রকল্প এলাকার অভ্যন্তরে নির্ধারিত জায়গায় ড্রেজার দ্বারা বালু ভরাট করার সময় খালের পূর্ব সাইডে কোন সুরক্ষা বাঁধ (গাইড ওয়াল) তৈরী না করে খালটি একাংশ প্রকল্প ঠিকাদার ও স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা আতাত করে জোরপূর্বক রাতের আধারে ভরাট করা হয় । সংশ্লিষ্ট খালের সঙ্গে মেঘনা নদীর যে যোগাযোগ ছিল তা এখন বিচ্ছিন্ন । এখানে পূর্বে যে খাল ছিল তা এখন বুঝার উপায় নেই । এমনকি তৎকালীন আওয়ামীলীগ সরকার এর মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও তার ভাই ডা. জাওয়াদুর রহিম ওয়াদুদ টিপুর ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ১০নং লক্ষীপুর মডেল ইউনিয়ন চেয়ারম্যান গণপিটুনিতে নিহত সেলিম খান (বালু সেলিম) অবৈধভাবে খালের সামনের অংশে বাধঁ তৈরী করে ফেলে যা এখন পরিত্যক্ত । এ ছাড়া ভরাটকৃত খাল খনন না করায় অএ এলাকায় জন্মেছে আগাছা ও গাছগাছালি ।
স্থানীয় সমাজসেবক বীরমুক্তিযোদ্ধা ব্যাংকার মোঃ মজিবুর রহমান বলেন, শতবর্ষী খালটি খননের মাধ্যমে সংশিষ্ট এলাকা জলাবদ্ধতা স্থায়ী ভাবে নিরসন করতে হবে এবং একই সঙ্গে ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষা পাবে। সিএস ম্যাপ অনুযায়ী জরুরী ভাবে খাল খনন ও সংরক্ষণ করা হয় সেই দাবি জানিয়েছেন । এ ছাড়া ও খালের মুখে যে বাঁধ তৈরী করা হয়েছে তা অপসারন চেয়েছেন ।
খালটির ওপর নির্ভরতার প্রসঙ্গ তুলতেই স্থানীয় পশ্চিম রামদাসদী গ্রামের কৃষকগন মোতালেব গাজী, উত্তম মজুমদার সহ আরো অনেকে বলেন যুগ যুগ ধরে কৃষিকাজ করছি। জমিতে তিন পর্যায়ে আলু, শাকসবজি, ধান, পাট এবং জ্বালানী হিসেবে ধইঞ্চা ইত্যাদি চাষ করতাম । অএ এলাকায় ফসল উৎপাদনে খালটি আমাদের একমাত্র ভরসা ছিল। কিন্তু বৃষ্টির সময় আশ্রয়ন প্রকল্প থেকে বালু আবাদি জমিতে প্রবেশ করে এবং সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে । বছরের অধিকাংশ সময় ফসলি জমিতে জলাবদ্ধতা রয়ে যায়। গত কয়েক বছর আর তিন ফসল করা যাচ্ছে না। এমনকি শুষ্ক মৌসুমে পানির অভাবে বীজতলা তৈরি করতে অনেক সমস্যা হচ্ছে ।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, ২০-২৫ ফুট চওড়া খালটির দৈর্ঘ্য প্রায় ১.৫ কিলোমিটার । দোকানঘর বাজারের সাথে সংযুক্ত চাঁদপুর-হাইমচর সিআইপি বেড়িবাঁধ এর পশ্চিম-দক্ষিণ একাংশ হয়ে দোকানঘর রামদাসদী আশ্রয়ন প্রকল্প হয়ে রহিম হাওলাদার বাড়ি,বানিয়া বাড়ি,মনা মেম্বার বাড়ি, বীর মুক্তিযোদ্ধা দুলাল কর বাড়ী. আবদুল্লাহ মিজি বাড়ী, ইন্দ্র মোহন মজুমদার বাড়ী, আবুল জমাদার বাড়ী,খালেক মেম্বার বাড়ী, রহমান পাটওয়ারী বাড়ী,কালু পাটওয়ারী বাড়ী,,মিজান খান বাড়ী হয়ে শতবর্ষী খালটি মেঘনা নদীর সঙ্গে মিশেছে।
অএ এলাকাবাসী এবং কৃষকগন প্রত্যাশা করেন যে, শত বছরের ঐতিহ্যবাহী রামদাসদী-সাখুয়া ওয়াপদা সরকারি খালটি রক্ষায় স্থায়ী ভাবে উদ্যেগ নিয়ে পানি নিষ্কাশনের জন্য দ্রুত পুনঃ খনন করে পানি প্রবাহ নিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছেন ।