রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২২ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

মানবতা লালিত নৈতিকতা
অনলাইন ডেস্ক

মাতৃজঠরে মানব ভ্রুণের আগমন-হেতু এখনো কিন্তু আমাদের জ্ঞানাতীত। এখানকার জীবনচক্র মাত্র কম-বেশি ২৭০ দিন। এ জীবনচক্রের আদ্যোপান্ত স্পষ্টতই আমাদের অজানা।

ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরবর্তী কালের জীবনচক্র আমরা বয়স্ক সকলেই প্রত্যক্ষ উপলব্ধি করছি। এখানে শৈশব কাটে মাতৃক্রোড়ে। বিধাতা প্রদত্ত মাতৃদুগ্ধে সন্তানের উদরপূর্তি হওয়াটাই প্রাকৃতিক স্বাভাবিকত্ব। এখানে কৃত্রিমতাই অস্বাভাবিকত্ব। দেহ সৌষ্ঠব অটুট রাখার তাড়নায় শিশুরা এই ডিজিটাল যুগে মাতৃদুগ্ধ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। এর ভবিষ্যৎ ফলাফল বড় নির্মম পরিণতি।

এর পরবর্তী জীবনচক্র হলো বাল্যকাল। এ সময় পরিবারের সকল সদস্যের নৈকট্য এবং অন্যদের মূল্যবান সান্নিধ্য লাভ করে থাকে। ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর থেকেই মাতৃদুগ্ধ, বাল্যকালের পারিবারিক অপত্য স্নেহের নৈকট্য এবং অতি নির্মল সান্নিধ্য-এই ত্রিফলা গঠিত বীজ যদি শিশুর মনে উপ্ত হয় তবে তা-ই অনাগত ভবিষ্যতের স্বচ্ছ মানবতার পরিচায়ক।

এর পরবর্তী জীবন চক্রগুলো হলো কৈশোর এবং যৌবন। এই দুটি ধাপ হলো অতীব মূল্যবান। এই সময়েই বস্তুনিষ্ঠ শিক্ষার্জন করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতে হয়। এই মোক্ষম সময়কে যারা অবহেলায়, অনাদরে-অপরিণামদর্শিতায়-তারুণ্যসুলভ অপরাধের পঙ্কিল সলিলে অবগাহন করে চরিত্রহীন হয়ে যায়, তারাই বিপথগামী। তারাই সুন্দর জীবনের স্বাদ আস্বাদন করতে ব্যর্থ হয়ে যতসব অনৈতিক, অসামাজিক কাজ করে অভিভাবকের অশেষ দুঃখের কারণ হয়ে যায়। জীবনের ব্যর্থতার বোঝা কাঁধে নিয়ে আত্মহননের পথ বেছে নেয়। বর্তমান গতানুগতিক প্রথায় অধিকাংশ দম্পতি দুটির বেশি সন্তান নেয় না। এই দুর্ভাগা পিতাণ্ডমাতার মর্মে মর্মে যে বিষাদের সিন্ধু বয়ে যাচ্ছে, তার করুণ পরিণতি হয়তো বৃদ্ধাশ্রম নতুবা আত্মহনন।

মানব জীবনচক্রের মোক্ষম সময় কৈশোর আর যৌবনের প্রারম্ভকে যথাযথভাবে কাজে লাগায়ে জীবনে যারা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায় তাদের মাঝে উচ্চ শিক্ষার অতৃপ্তি থেকে যায়। এক সময় পিতাণ্ডমাতাকে নিঃসঙ্গ রেখেই চলে যায় প্রবাসে।

আজ যারা প্রৌঢ়ত্ব এবং বার্ধক্যের মাঝামাঝি, তাদের যৌবনে স্লোগান ছিল ‘ছোট পরিবার সুখী পরিবার’। তারা সেই মতে দীক্ষিত হয়েছিল। প্রবাসী সন্তান তাদের মা অথবা বাবাকে পালাক্রমে বিদেশে নিয়ে যায় বেড়াবার জন্য। মা-বাবা কিন্তু নাড়ির টানে আবার দেশেই চলে আসে এবং পুনরায় নিঃসঙ্গ জীবনযাপনে বাধ্য হয়ে যায়।

মানুষের জীবনটা এমন হয় কেন? যৌবনে বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয় স্বজনের কোনো অভাব হয় না। কিন্তু বার্ধক্যে নিঃসম্বল অবস্থায় স্ত্রী ব্যতীত কাউকে কাছে পাওয়া না (তাও সৌভাগ্য বশত স্ত্রী জীবিত থাকলে)। এইটা কি বাঙালি সংস্কৃতি ছিল? না ডিজিটাল যুগের সংস্কৃতি? সেই কিছুদিন আগে পত্রিকায় দেখলাম, ঢাকায় এক নিঃসঙ্গ চিকিৎসক নিদারুণ বেদনায় এক ফোঁটা পানি না পেয়ে চলে গেলেন সেই দিব্যলোকে না ফেরার দেশে। মৃত্যুর পূর্বে ওনার স্ত্রীও প্রবাসে সন্তানদের কাছে ছিলেন। মৃত্যু লড়াইয়ের সাথে সবাই পরাজিত হয়, কিন্তু এই লড়াই মেনে নেওয়ার মতো নয়। দেহখানা পচে-গলে-দুর্গন্ধ ছড়ানোর পর সবাই জানলো যে, সেই চিকিৎসক চলে গেছেন নিঃসঙ্গ অবস্থায়।

করোনাকালে ধানমন্ডির এক বিশিষ্ট বিত্তশালী বয়স্ক মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। আপনজন এবং সন্তানরা সকলেই প্রবাসী হওয়ায় মৃতব্যক্তির লাশটি শেষ পর্যন্ত 'আঞ্জুমানে মুফিদুল ইসলাম' দাফন করে। এই মানুষটিকে দেখার জন্য প্রচুর অর্থ-বিত্তই ছিল, শুধু কাছে ছিল না নিকটজনেরা। বার্ধক্যের অসহায়ত্ব এবং আপনজনদের নিষ্ঠুর অবহেলার নির্মম শিকার হয়ে নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করলেন ঢাকায় এক ভদ্রলোক (সূত্র : ১৭ জুলাই ২০২২ দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিন)

এই অখিল-বিশ্বচরাচরের রাণী আমাদের এই বাংলাদেশ। এদেশটিকে চির বার্ষিকী পরিকল্পনায় সজ্জিত করেই স্রষ্টা সৃষ্টি করেছেন। এদেশের প্রচলিত মৌলিক শিক্ষার সাথে আদি শিক্ষা ব্যবস্থার ব্যত্যয় আছে বলেই নানা সামাজিক অবক্ষয়ের উদ্রেক হয়েছে। যেমন আদিতে ছিল ‘লম্ফ দিয়া পথ চলিও না’--বর্তমানে আমরা শিখি ‘উচ্চ লম্ফ না দিলে অভীষ্ট পথ ফুরাবে না’।

এদেশের বেকার কর্মক্ষম যুবা ও যুবীরা মানসিক বিকারগ্রস্ত হয়ে চরম বিষণœতার চাপে কেউ বা আত্মহনন করে আবার কেউ বা অন্ধকারাচ্ছন্ন পথে চলে যায়। কারণ এদেশে বর্তমানে যে কোনো চাকুরি নামক সোনার হরিণটি ধরতে সোনার রশির প্রয়োজন।

এই বাংলায় সহমর্মিতা আর মায়া-মমতা আজ শুধুই আভিধানিক। এর বাস্তবতা নেই বললেও অত্যুক্তি হবে না। আজ যারা বার্ধক্যে উপনীত তারাই যৌবনে ভেবেছিলেন, ছোট পরিবার সুখী পরিবার। যে অক্ষম বৃদ্ধ লোকের দুটি সন্তান-ই প্রবাসী, সে তো বাস্তবেই নিঃসঙ্গ। তার সান্ত¡না হয়তো বৃদ্ধাশ্রম নতুবা আক্ষপের আত্মহনন। যা প্রতিনিয়ত ঘটে যাচ্ছে। এর প্রতিকার হচ্ছে শিক্ষাস্তরের প্রতি ধাপে মানবতা সম্বলিত নৈতিক শিক্ষার প্রবর্তন করা অপরিহার্য।

* বিমল কান্তি দাশ : কবি-প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ (জে.এন) উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

মানব সভ্যতা

এ বিশ্বব্রহ্মাণ্ডে স্রষ্টা কবে, কখন, কীভাবে কোন্টি কেন সৃষ্টি করেছেন সেটি চির রহস্যাবৃত রয়ে গেছে এবং থাকবে। সৃষ্টির আদি রূপে এ মহাবিশ্ব ব্রহ্মান্ড একটি মহা উত্তপ্ত পি- বিশেষ ছিল, তার উপরে মহাকাশে মহাজাগতিক ধূলিকণা ভাসমান ছিল। যার অন্যতম উপাদান ছিল জৈবিক অণু। এই মহাবিশ্বের উত্তপ্ত পি- ক্রমশ শীতল থেকে শীতলতম হওয়ার পর মহাশূন্যে ভাসমান জৈবিক অণুগুলো বিক্ষিপ্ত ভাবে শীতল ভূমণ্ডলে পতিত হয় এবং তা থেকেই ভূ-মণ্ডলে প্রাণের সূচনা হয়। জীব মাত্রই অসংখ্য জৈব অণুর সমষ্টিমাত্র। জৈবিক অণুর বৈচিত্র্য থেকে বিভিন্ন প্রাণী ও বিভিন্ন রকম উদ্ভিদের সৃষ্টি হয়েছিল। এ কারণেই প্রাণী ও উদ্ভিদ পরস্পর পরস্পরের ওপর অনিবার্যভাবে নির্ভরশীল। সঙ্গত কারণেই ভূমণ্ডলে প্রাণের উদ্ভবকাল অনেকটাই স্ব-শিক্ষায় আবিষ্ট।

এই মহাবিশ্ব প্রপঞ্চ মাত্র ১১৮ টি মৌলিক কণার স্বাতন্ত্ররূপ থেকে অগণিত সংখ্যক যৌগ কণার সৃষ্টি করে বিশ্বকে নিত্য নতুন আধুনিকতার চমকে চমকিত করছে। আর ঐদিকে বিশ্ব প্রপঞ্চের পালন কর্তা তথা সৃষ্টিকর্তা রবি, শশী, তারকা পুঞ্জ নিয়ে খেলা করতে করতে অসংখ্য সৌরজগতের সৃষ্টি করে ফেলেছেন। তাও মানব ইন্দ্রিয়াতীত।

Man Made Miracle of Modern Adventure হলো: ৪এ এবং ৫এ নামক মোবাইল, যার ভিতর উইকিপিডিয়া নামক এমন একটি অ্যাপ রয়েছে, যা মানুষের যে কোনো চাহিদা (জ্ঞান সম্পর্কিত) চোখের নিমিষেই মোবাইল পর্দায় সরবরাহ করে । মানুষের 'মন' নামক অদৃশ্য ইন্দ্রিয়টি অসীম শক্তির অধিকারী। তেমন 'মন' যা করতে চায়, বুঝতে চায় বা বলতে চায় তাও ঐন্দ্রজালিকভাবে কুহকী কাণ্ড ঘটে যায়।

৩৮০ কোটি বছর পূর্বে পৃথিবীতে যে প্রাণের সন্ধান পাওয়া গিয়েছিল, তা অত্যন্ত সংবেদনশীল প্রাণী 'অ্যামিবা'। কালান্তরে বিবর্তনের মাধ্যমে প্রোটোজোয়া, পরিফেরা, সিলেক্টারেটা প্রভৃতি প্রাণীর উদ্ভব ঘটে। বিভিন্ন আকৃতি, প্রকৃতি এবং বিভিন্ন বর্ণের উদ্ভব ঘটতে থাকে। এরা জলেস্থলে এবং বায়ুতে বসবাস করতে শুরু করে। এরা সবই অমেরুদণ্ডী প্রাণী। অপেক্ষাকৃত বেশি বলশালী প্রাণীর উৎপীড়নে অপেক্ষাকৃত কম বলশালীরা বাঁচার তাগিদে কেউবা জল থেকে স্থল ভাগে, কেউবা স্থল ছেড়ে জল ভাগে আবার কেউবা শূন্যে চলতে অভ্যস্ত হয়ে যায়। এভাবে প্রাণীর শ্রেণী বিন্যাসের ধারণা প্রচলিত আছে। ভূমণ্ডলে প্রথম প্রাণীগুলো সবই অমেরুদণ্ডী ছিল। তারপর প্রাকৃতিক বিবর্তনের মাধ্যমে কর্ডেটা পর্বের তথা মেরুদণ্ডী প্রাণীর উদ্ভব ঘটে।

আফ্রিকাকে এক সময় বলা হতো অন্ধকারাচ্ছন্ন মহাদেশ, অতিবেশি দুর্গম ছিল। আফ্রিকার পূর্ব প্রান্তে মরক্কোয় মানবাকৃতির জীবাশ্ম (তিন লক্ষ বছরের পুরানো) পাওয়া যায়। এরা নাকি বিবর্তনিক আধুনিক সভ্য মানবজাতির পূর্বসূরি। বিজ্ঞান এদের নাম দিয়েছে ‘হোমিমিন’। আর পরিপূর্ণ আধুনিক সভ্য মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম হলো ‘হোমোসেপিয়াস’।

সেই যুগের মানুষগুলোই বোধ হয় আধুনিক যুগের চিড়িয়াখানার ‘বন-মানুষ’। এদের বাক্ শক্তি ছাড়া অন্য সব কিছুইতো মানুষের হুবহু। মানুষ যে কখন থেকে সভ্য হতে শিখলো তার সঠিক হিসাব অজ্ঞাত। তবে ইতিহাস থেকে জানা যায়, সিন্ধু সভ্যতা ছিল ব্রোঞ্জ যুগীয় সভ্যতা। উৎপত্তি হলো (৩৩০০-১৩০০) খ্রিস্টপূর্বাব্দে সিন্ধু নদ উপত্যকায়। তারপর এলো প্রস্তর যুগ। তারপর মানুষ আগুন জ্বালাতে শিখলে নগর সভ্যতার শ্রেষ্ঠ দুটি শহর হরপ্পা ও মহেনজোদারো গড়ে উঠে। ডিজিটাল যুগেও এটা গবেষণার বিষয়।

মানুষ নিজের মানব সত্তা সম্পর্কে খুবই কম জানে। প্রস্তর যুগের জ্ঞানান্ধকারকে দূরীভূত করে মানুষই আলোক বর্তিকাময় এই ডিজিটাল যুগের সূচনা করে দিয়েছে। এতে স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ায় কিন্তু মানুষ অতৃপ্ত হয়ে পার্থিব পঙ্কিলতার আসক্তিতে মানব সত্তার ‘আবেগ’ হারিয়ে ফেলেছে। এ থেকে নিষ্কৃতির একমাত্র উপায় বাস্তব জ্ঞানার্জন, বিদেশি অপসংস্কৃতি বর্জন আর দুমুখো রাজনৈতিক সর্প চিহ্নিতকরণ। মানব সভ্যতা বিকাশের পথে এরাই প্রধান অন্তরায়, অন্ধকার। এই অন্ধকার দূরীকরণে প্রয়োজনীয় আলোকে জানাই সু-স্বাগতম।

* বিমল কান্তি দাশ : কবি-প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ (জে.এন.) উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়