প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
বিখ্যাত লেখক গ্যারী উইলস ১৯৯৪ সালে ‘দি আটলান্টিক মান্থলী’ পত্রিকায় ‘হোয়াট মেকস এ গুড লিডার’ প্রবন্ধে বলছেন যে, নেতৃত্বের যে বৃত্ত তার উপাদান ৩টি Leader, Followers & Goals. নেতার প্রয়োজনীয় গুণাবলি হলো : ব্যক্তিত্বের দৃঢ়তা, ব্যক্তিত্বের সম্মোহনী ক্ষমতা, জনগণের সামনে স্পষ্ট এমন একটি লক্ষ্য অর্জনের জন্যে প্রয়োজনীয় উদ্যম ও উদ্যোগে নেতৃত্ব দেয়ার মতো নেতার দক্ষতা ও অভিজ্ঞতা। এমন গুণাবলি সমৃদ্ধ নেতাকে ‘কারিশমা’ সম্পন্ন নেতাও বলা হয়। একজন নেতা তখনই তার অনুসারীদের জন্যে সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারেন যখন তিনি ত্রিকালদর্শী হন অর্থাৎ নেতা অতীত সম্পর্কে অভিজ্ঞ, বর্তমানকে অনুধাবন করেন এবং ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা হতে পারেন।
আমাদের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামী নেতৃত্বের মধ্যে উল্লেখিত সব উপাদান পরিলক্ষিত হয়। তাঁর নেতৃত্বের দুটো পর্ব আছে। স্বাধীন বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা পর্যন্ত ১ম পর্ব এবং ২য় পর্ব স্বাধীন বাংলাদেশ (১৯৭২-৭৫)। ১ম পর্বে ছিলো স্বাধীনতা অর্জনের সংগ্রাম। আর ২য় পর্বে ছিলো অত্যন্ত কঠিন ও বৈরী পরিস্থিতিতে দেশ গড়ার সংগ্রাম। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন ও বঙ্গবন্ধু মুজিবের বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃতি লাভে শেরে বাংলা এ.কে.এম. ফজলুল হক, হোসেন শহীদ সোহরায়ার্দী, মজলুম জননেতা মাওলানা ভাসানী ও মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগীশসহ অনেকের নাম স্মরণীয়। এঁদের কাছে বঙ্গবন্ধুরও ঋণ ছিলো অপরিসীম।
তবে অনস্বীকার্য যে, চূড়ান্ত মুহূর্তে বাঙালি জাতির নেতৃত্বের কর্ণধার ছিলেন শেখ মুজিবই। আর সে কারণেই তিনি মুজিব থেকে মুজিব ভাই, বঙ্গবন্ধু, জাতির পিতার পদ অলকৃত করেছিলেন। রাজনৈতিক ঘটনাবহুল জীবনের অধিকারী, বাঙালি জাতীয়তাবাদ ও স্বাধীনতার নিপুণ রূপকার স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব।
মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে ২৫ মার্চ ৭১ হানাদার পাকিস্তানিরা তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে গেলে এই মুজিবের নামেই বাংলার মুক্তি পাগল বীর সন্তানেরা ৯টি মাস দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে প্রাণপণ যুদ্ধ করেছিলো। পূর্ব বাংলার স্বাধিকার আন্দোলন এবং মহান মুক্তিযুদ্ধ তাঁরই দিকনির্দেশনায় এবং নামে পরিচালিত হয়।
তিনিই প্রথম বাঙালি সরকার প্রধান যিনি জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে বাংলায় বক্তৃতা প্রদান করেছিলেন। বাঙালি জাতিসত্তা বিকাশের আন্দোলনে অনন্য ভূমিকা পালন করায় এবং এর ভিত্তিতে স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় মুজিব বাঙালি জাতির ইতিহাসে ‘জাতির পিতা’ রূপে অমর হয়ে থাকবেন। তিনিই ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের মূল চালিকাশক্তি ও প্রাণপ্রদীপ।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি দেশে ফিরে কপর্দকহীন হাতে যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠিত করা, শহীদ পরিবার, আহত ও পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধাসহ এক কোটি ভারত প্রত্যাগত বাঙালি শরণার্থীর পুনর্বাসিত করে যখন ২য় বিপ্লবের কর্মসূচি ডাক দিয়ে দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিশ্বের দরবারে বাঙালি জাতিকে এগিয়ে নেয়ার পথে অগ্রসর হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের ভোরে বঙ্গবন্ধু ধানমন্ডি রোডস্থ ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ইশারায় বিশ্বাসঘাতক স্বাধীনতা বিরোধী কতিপয় সেনা কর্মকর্তার হাতে শাহাদাতবরণ করেন। বাংলার মাটিতে রচিত হলো বিশ্বাসঘাতকতার কলঙ্কজনক ইতিহাস।
প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন বলেছিলেন, Some people can be fooled for some time, But all people can not be fooled for all time ( কিছু সময়ের জন্য কিছু লোককে হয়তো বোকা বানানো যায়, কিন্তু সব লোককে সব সময়ের জন্যে বোকা বানানো যায় না)। সে আলোকে বলতেই হয়, বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিশ্বাসঘাতকতা, উচ্চাভিলাষী ধ্যানধারণা বাস্তব রূপ লাভ করেনি। এ দেশের মানুষকে বোকা বানানো যায়নি, তাদের হৃদয় থেকে বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেলা যায়নি।
স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক বঙ্গবন্ধু চিরকাল বেঁচে থাকবেন ৫৫ হাজার বর্গমাইলের সবুজ শ্যামল এই গাঙ্গেয় ব-দ্বীপের মাটি ও মানুষের অস্থিমজ্জায়। বাংলাদেশের মতোই শাশ্বত চিরায়ত ও দেদীপ্যমান বঙ্গবন্ধুর অস্তিত্ব। বঙ্গবন্ধুর হত্যার সকল দুরভিসন্ধি আজ দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হয়ে গেছে। আজ মানুষ বুঝতে পেরেছে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি জাতিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে বাংলাদেশের নাম মুছে ফেলবে পৃথিবীর মানচিত্র থেকে। কিন্তু তাদের সে উদ্দেশ্য সফল হয়নি। বাংলাদেশকে মুছে ফেলতে না পারলে কেয়ামতের পূর্ব পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকেও মুছে ফেলতে পারবে না।
বঙ্গবন্ধু চিরঞ্জীব-অমর। তাইতো কবি অন্নদা শঙ্কর রায় বলেছেন, ‘যতোদিন রবে পদ্মা, মেঘনা/গৌরি যমুনা বহমান/ততোদিন রবে কীর্তি তোমার/শেখ মুজিবর রহমান’।
লেখক : মোঃ নূর ইসলাম খান অসি । নাট্যকার, প্রবন্ধকার ও সংগঠক । ছাত্র জীবনে দীর্ঘদিন (১৯৭০-১৯৮৭) মুজিবাদর্শের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের সাথে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট ছিলেন। পরিচালক- ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি), দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। সভাপতি-বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি। মুঠোফোন : ০১৭১১-৫৮৫৮৭৫