প্রকাশ : ৩১ জুলাই ২০২২, ০০:০০
অ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বী মিয়ার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে শূন্য হয়েছে একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের পদটি। ইতোমধ্যেই তার নির্বাচনী আসন গাইবান্ধা-৫ শূন্য ঘোষণা করা হয়েছে। নিয়মানুযায়ী আলোচনায় এসেছে একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার হচ্ছেন কে?
সংবিধান অনুযায়ী, সংসদ অধিবেশন চলাকালে ডেপুটি স্পিকারের পদ শূন্য হলে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে তা পূরণের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তবে অধিবেশন চলমান না থাকলে পরবর্তী অধিবেশনের প্রথম বৈঠকে তা পূর্ণ করার জন্য সংসদ সদস্যরা একজনকে নির্বাচিত করবেন।
সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, গত ৩০ জুন ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেট পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে সমাপ্তি ঘটে একাদশ জাতীয় সংসদের অষ্টাদশ অধিবেশন। আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষায় একাদশ জাতীয় সংসদের উনবিংশ অধিবেশন আহ্বান করতে পারেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। ওই অধিবেশনেই নির্বাচিত হতে পারেন নতুন ডেপুটি স্পিকার।
একাদশ জাতীয় সংসদের হুইপ ও সংসদ সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে ডেপুটি স্পিকার হিসেবে ৪ জন সংসদ সদস্যের নাম পাওয়া গেছে। তারা বলছেন, ওই ৪ জনের মধ্যে থেকেই পরবর্তী ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হতে পারে। ওই ৪ সংসদ সদস্যের নাম উল্লেখ করলেও নিজের নাম প্রকাশ করতে রাজি হননি কোনো হুইপ ও সংসদ সদস্য।
সংবিধানের ৭৪ অনুচ্ছেদের (১) উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকে সদস্যদের মধ্য থেকে সংসদ একজন স্পিকার ও একজন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত করিবেন এবং এ দুই পদের যে কোনটি শূন্য হইলে সাত দিনের মধ্যে কিংবা ওই সময়ে সংসদ বৈঠকরত না থাকিলে পরবর্তী প্রথম বৈঠকে তাহা পূর্ণ করিবার জন্য সংসদ সদস্যদের মধ্য থেকে একজনকে নির্বাচিত করিবেন। জাতীয় সংসদের কার্যপ্রণালী বিধির ১০ ধারায় একই কথা বলা হয়েছে।
রেওয়াজ অনুযায়ী, অধিবেশনের শুরুতে একজন সংসদ সদস্য ডেপুটি স্পিকার হিসেবে অপর একজন সংসদ সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন। তার প্রস্তাবকে অন্য একজন সংসদ সদস্য সমর্থন করবেন। পরে স্পিকার প্রস্তাবটি ভোটে দেবেন। কণ্ঠ ভোটে পাস হওয়ার মধ্য দিয়ে নতুন ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জাতীয় সংসদের সরকার দলীয় একজন হুইপ বলেন, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শহীদুজ্জামান সরকার, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ক্যাপ্টেন (অব.) এবি তাজুল ইসলাম, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু এবং সরকার দলীয় সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদণ্ড ওনাদের মধ্য থেকেই আসতে পারেন পরবর্তী ডেপুটি স্পিকার। নওগাঁ-২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য শহীদুজ্জামান সরকার দশম জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং পরে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনবারের এ সংসদ সদস্য।
এবি তাজুল ইসলাম ১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৬ আসনের। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদে সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত হন। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
পাবনা-১ আসনের সংসদ সদস্য শামসুল হক টুকু বর্তমানে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।
উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ মৌলভীবাজার-৪ আসন থেকে ৬ বার নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত সংসদে সরকার দলীয় হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। পরে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত অষ্টম জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় চিফ হুইপের দায়িত্বে ছিলেন। নবম জাতীয় সংসদে সরকার দলীয় চিফ হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দশম জাতীয় সংসদে সরকারি প্রতিশ্রুতি সম্পর্কিত কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মারা যান ফজলে রাব্বী মিয়া। তার মৃত্যুতে শূন্য হয়ে যায় একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকারের পদটি। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার নির্বাচিত হন অ্যাডভোকেট মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া।
গত ২৪ জুলাই (রোববার) প্রয়াত ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়ার সংসদীয় আসন গাইবান্ধা-৫ শুন্য ঘোষণা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় সংসদ সচিবালয়। কোনো সংসদীয় আসন শুন্য ঘোষিত হলে ৯০ দিনের মধ্যে উপনির্বাচনের কথা সংবিধানে উল্লেখ রয়েছে। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।