প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২২, ০০:০০
আস্ত গরু কোরবানি দেবার পর সেই গরুর মাংসকে সমান তিনভাগে ভাগ করা হয়। এক ভাগ জমা রাখা হয়, বাকি দুই ভাগ যারা কোরবানি দেয় তারা নিজেরা ভাগ করে নেয়। এভাবে গ্রামে যত গরু জবাই করা হয় তার তিন ভাগের এক ভাগ আলাদা করে ফেলা হয়। এক গরুর এক ভাগ করে জমানো সকল মাংস গ্রামের নির্দিষ্ট স্থানে একত্র করা হয়। গ্রামের যারা কোরবানি দেয় না, জমানো মাংস সেই সকল পরিবারের মাঝে সমহারে বন্টন করে দেয়া হয়। এমনভাবে সমবন্টন করা হয়, যা থেকে একটি পরিবারও বাদ যায় না। এই নিয়মটি পুরো গ্রামে চলে আসছে ১৯৪১ সাল থেকে। ঘটনাটি হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড় গ্রামের। যা থেকে ব্যতিক্রম কিছু ঘটেনি ১০ জুলাই রোববার পালিত হওয়া ঈদে।
জানা যায়, হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন টোরাগড় আদর্শ সমাজ (পঞ্চায়েত) ব্যবস্থায় অসহায় মানুষের ঘরে ঘরে কোরবানির মাংস পৌঁছে দেয়া হয়। দীর্ঘদিনের ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই রোববার সহস্রাধিক পরিবারের মাঝে জনপ্রতি প্রায় ৩ কেজি করে মাংস প্রদান করা হয়েছে। ১৯৪১ সাল থেকে টোরাগড় গ্রামে দুটি সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়ে আসছে। কালক্রমে গ্রামের লোকসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে চারটি সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোরবানির মাংস বিতরণ করা হয়ে থাকে।
এর মধ্যে অন্যতম টোরাগড় আদর্শ সমাজ ব্যবস্থা। ১৯৪১ সাল থেকে এই সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে কোরবানির মাংস প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়াও সমাজ ব্যবস্থার বাইরে এবং যারা সমাজ ব্যবস্থার সাথে সম্পৃক্ত নয় তারা ব্যক্তিগত ও পারিবারিকভাবে নিজ নিজ উদ্যোগে কোরবানির মাংস মানুষের মাঝে পৌঁছে দিচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা সংবাদকর্মী হাবিব উল্ল্যাহ জানান, লোপ্তে আলী মিজির নেতৃত্বে আব্দুল হক মৃধা, আলী উল্যাহ মৃধা, সুলতান সর্দার, নূর খাঁ ও ইদ্রিস মজুমদারসহ অন্যান্য গণ্যমান্য ব্যক্তি এই সমাজ ব্যবস্থা চালু করেন। যা কোনো ধরনের সমালোচনা ছাড়াই বর্তমান সময় পর্যন্ত চলমান রয়েছে।
সমাজ ব্যবস্থার অন্যতম সদস্য ও পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর সিরাজুল ইসলাম খান জানান, আমি আশির দশক থেকে এ সমাজ ব্যবস্থার সাথে জড়িত। তখনকার সময় ১২টি গরু দিয়ে শুরু। লোকসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে এখন এই সমাজ ব্যবস্থা তিন ভাগ হয়েছে। প্রতিটি সমাজেই সমবন্টনের মাধ্যামে মাংস বিতরণ করা হয়। বর্তমানে টোরাগড় আদর্শ সমাজ ব্যবস্থায় ৬০ থেকে ৭০টি গরুর তিন ভাগের এক ভাগ সমাজে আসে। যারা কোরবানি দিতে না পারে, সমাজ ব্যবস্থার মাধ্যমে সমবণ্টন করে তাদের মাঝে কোরবানির মাংস দেয়া হয়ে থাকে।
বর্তমানে যারা এ সমাজ ব্যবস্থার সাথে জড়িত তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন : আনোয়ার হোসেন বতু, দুলাল মিজি, শাহজাহান তালুকদার, আবুল হাসেম ভূঁইয়া, জামাল মিজি, দেলোয়ার মিজি, মান্নান মৃধা, দেলোয়ার হোসেন (মোমবাতি), আকবর মৃধা, এনায়েত উল্যাহ, শহিদ মৃধা, শহীদুল ইসলাম, হাবীব উল্যাহ্, মনির খন্দকার প্রমুখ।