প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২২, ০০:০০
পত্রিকাটির শুভ সূচনা শুরু হয়েছিলো ১৭ই জুন ১৯৯৪। ঐ সময়টিতে আমার জন্ম হয়নি। আমার জন্মের পর যখন কিছুটা বুঝতে শিখলাম তখন থেকেই ভাবতে থাকলাম পত্রিকায় এতো লেখা সুন্দর করে সাজানো থাকে কীভাবে, কারা লিখে। এছাড়া ছোট বেলায় আমার বাবা (যিনি চাঁদপুর কণ্ঠের প্রধান সম্পাদক কাজী শাহাদাত) প্রায়ই বলতেন তোমার নাম আজ পত্রিকায় আসছে। আমি আশ্চর্য হয়ে যেতাম আমার নামটি দেখে। কে লিখে এটা! পরে যখন বুঝতে শিখেছি তখন বুঝেছি চাঁদপুর কণ্ঠের নিয়মিত আয়োজন শব্দ খেলাতে আমার নামটি সোহাঈদ খান জিয়া আঙ্কেল লিখে দিতেন।
সন্ধ্যার পর কিছুটা সময় কাটানোর জন্য আমি চাঁদপুর কণ্ঠে ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত কম্পিউটার বিভাগে কাজ করে আসছি। কাজ করতে করতে বুঝতে থাকলাম, কম্পিউটার বিভাগে যারা কাজ করেন সকাল বেলা প্রিয় পাঠকদের হাতে সাজিয়ে গুছিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটি পৌঁছে দেয়ার জন্যে, তারা কম কষ্ট করেন না। দু-তিন বছর আগে চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটি নিজস্ব প্রেসেই ছাপানো হতো। নিজস্ব প্রেসে ছাপানোর সময় নিউজগুলো মেইল থেকে নামানো, ৩ থেকে ৪ বার করে প্রতিটা নিউজ সম্পাদনা বিভাগ কর্তৃক কারেকশন, ট্রেসিং করে পৃষ্ঠা সাজানো, নিউজের জাম্প মিলিয়ে পত্রিকার কাজ শেষ হতে হতে সময় লেগে যেতো বিকেল থেকে শুরু করে রাত ২টা থেকে ৩টা পর্যন্ত। এই দীর্ঘসময় ধরে প্রধান সম্পাদক, বার্তা সম্পাদক, পেস্টার এবং অফিস সহকর্মীসহ একজন কম্পিউটার অপারেটরকেও থাকতে হতো অফিসটিতে কাজ সম্পন্ন না করা পর্যন্ত। কখনো ঝড়-বৃষ্টি, শীত উপেক্ষা করে কম্পিউটার বিভাগে কর্মরত সদস্যরা পত্রিকার কাজ সম্পন্ন করে বাসায় ফিরতেন। আমি এমনও দেখেছি এবং নিজেও ভুক্তভোগী, প্রচুর ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে রাত ২টা-৩টায় একজন অপারেটরকে বাসায় ফিরতে। যখন আমি ছোট তখন আমি দেখেছি সিডর, আইলা ঘূর্ণিঝড়ের রাতে আমার বাবাকে পত্রিকার কাজ সেরে বাসায় আসতে। তিন বছর ধরে চাঁদপুর কণ্ঠ পত্রিকাটি ঢাকা থেকে ছাপিয়ে আনা হয়। এ সময়টিতে বিকেল থেকে শুরু করে রাত ১২ থেকে ১টা পর্যন্ত চলে পত্রিকার কার্যক্রম। পত্রিকাটির সূচনালগ্ন থেকে বহু মানুষ কম্পিউটার বিভাগে কাজ করে আসছেন। বর্তমানে সিস্টেম ডেভলপার উজ্জ্বল হোসাইন ভাই, মোস্তফা কামাল সুজন ভাই এবং আল-আমিন হোসাইনসহ আমি কাজ করছি। এখন রাত ২টা-৩টায় সময় না গড়ালেও রাত ১১টার ভেতর পত্রিকাটির সংবাদগুলো নামানো থেকে শুরু করে বানান শুদ্ধ করে পৃষ্ঠা মেকআপ করে ঢাকায় মেইলের মাধ্যমে পাঠানোর প্রয়োজন হয় এবং পাঠানোর বাইরেও অনেক কাজ থাকে। এই সময়টিতে একজন অপারেটরকে হাতে, চোখে, মাথায় প্রেশার নিয়ে প্রয়োজনীয় কাজগুলো সারতে হয়। কাজগুলো মোটেও সহজ নয়। এ সময়টিতে অনেক সময় ভুলও হয়, মাঝে মাঝে বকাও খেতে হয়। তারপরও মাথা ঠাণ্ডা রেখে কাজ সম্পন্ন করতে হয়। কিন্তু যখন চাঁদপুর কণ্ঠের শুভাকাঙ্ক্ষী, সংবাদদাতা, পাঠকরা চাঁদপুর কণ্ঠের বিভিন্ন বিভাগীয় সম্পাদককে ধন্যবাদ জানান, তখন কম্পিউটার বিভাগের সদস্যদেরও সেটি না জানানোতে তাদের কিছুটা তুচ্ছ মনে হয় এবং কষ্টও পান তারা।
দীর্ঘ ২৮ বছর পত্রিকাটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ নিরলসভাবে সাজিয়ে গুছিয়ে। অনেক পরিশ্রম, মায়া, ভালোবাসা দিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠের পত্রিকার সাথে যারা জড়িত আছেন, তাদেরকে অভিনন্দন জানাই চাঁদপুর কণ্ঠের জন্মদিনে। সেই সাথে শুভ কামনা জানাই চাঁদপুর কণ্ঠকে। মহান আল্লাহর কাছে প্রার্থনা থাকবে, যাতে চাঁদপুর কণ্ঠের ৫০ বছর পূর্তি মর্যাদা সহকারে দেখতে পারি। প্রকাশক, সম্পাদক, রিপোর্টার, বিভাগীয় সম্পাদক, পাঠক, সংবাদাতা, বিজ্ঞাপনদাতা, ম্যানেজার, অফিসকর্মীসহ দীর্ঘ ২৮ বছর যারা পত্রিকাটিকে সচল রেখেছেন তাদের সবাইকে জানাই প্রাণঢালা অভিনন্দন এবং দোয়া। চাঁদপুর কণ্ঠের ২৮ বছর পূর্তি সফল হোক।