প্রকাশ : ০৫ জুন ২০২২, ০০:০০
(পূর্ব প্রকাশিতের পর)
॥ চার ॥
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর গঠনতন্ত্রে মাসিক সাহিত্য সভা (আসর/আড্ডা) সম্পর্কে গুরুত্বের সাথে উল্লেখ রয়েছে বলেই এই একাডেমীর নির্বাচিত নির্বাহী পরিষদ দায়িত্বগ্রহণের এক বছরের মধ্যে ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে প্রতি মাসের শেষ বুধবার নিরবচ্ছিন্নভাবে সাহিত্য আসর/আড্ডার আয়োজন করতে থাকে। এটিই হয়ে যায় একাডেমীর সামগ্রিক কার্যক্রমের মূল চালিকাশক্তি। এ আসরে শুধু চাঁদপুর শহর নয়, জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে লেখক/সাহিত্যানুরাগীরা যোগদান করতে থাকে। এ আসরকে কেন্দ্র করে যেন সাহিত্যের মধুচক্র গড়ে উঠে।
সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর মাসিক এই সাহিত্য আসরের ৫০তম সংখ্যার পর ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের শেষ বুধবার পাঁচ বছর পূর্তিতে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। সে আনন্দ উদ্যাপনে ছিলো যেমন আনুষ্ঠানিকতা, তেমনি আনন্দ-অভিব্যক্তি।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসিক সাহিত্য আসরের মূল সঞ্চালক ছিলেন চাঁদপুর জেলা শিল্পকলা একাডেমীর কালচারাল অফিসার আবু ছালেহ মোঃ আব্দুল্লাহ। তাঁর লেখক-নাম সৌম্য সালেক। তিনি একজন বিদগ্ধ লেখক। তিনি ‘আমাদের প্রিয় সাহিত্য আসর’ শিরোনামে স্মৃতিচারণমূলক লেখায় লিখেন যে, মনে পড়ছে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর মাসের কথা। শহীদ মিনারের সেই সান্ধ্যকালীন আসরে উপস্থিত ছিলো চাঁদপুরের আট বা দশজন সাহিত্যকর্মী। আমি তাদের সামনে কিছুটা প্রত্যয়ের সাথে বলেছিলাম সহসাই নতুন আয়োজনে সাহিত্য একাডেমীতে আসর বসবে। সেটি যথাসময়ে বসেছেও। এক্ষেত্রে একাডেমীর তৎকালীন সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন এবং মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের ভূমিকা ছিল অগ্রগণ্য। মাসিক সাহিত্য আসর চাঁদপুরের সাহিত্য অঙ্গনে কী ভূমিকা পালন করেছে-এই প্রশ্নের উত্তর আসলে অনেক বিস্তৃত ও সম্প্রসারিত। ২০১৭ সালে চাঁদপুর জেলায় প্রথম সাহিত্য সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ আয়োজনটি ছিল চাঁদপুরের জন্যে বিরাট ঘটনা। যা সম্ভব হয়েছে সাহিত্য আসরের সাথে সম্পৃক্ত সকল সাহিত্যকর্মীর প্রচেষ্টা ও স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের ফলে। কমণ্ডবেশি বিভিন্ন ছোটকাগজের প্রায় ৪০টি সংখ্যা গত ৫ বছরে চাঁদপুর থেকে বের হয়েছে। এসব কর্মযজ্ঞের প্রণোদনা ও উৎসাহের জায়গা মূলত এই সাহিত্য আসর। গল্পকার রফিকুজ্জামান রণি ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান আাজ মোটামুটি সারাদেশে তাদের নাম ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। তারা ২০১৩ সালের আগেই লেখালেখি আরম্ভ করেছেন। কিন্তু তাদের প্রচেষ্টা অনেক বেশি অগ্রবর্তী হয়েছে এ সাহিত্য আসরের মাধ্যমে। কেবল তারা দুজন নয় সাহিত্য আসর এমন আরও অন্তত ১০ জন লেখককে তুলে এনেছে। আজ যাদের লেখা দেশের বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় শোভা পাচ্ছে। সংস্কৃতি চর্চার সাথে সম্পৃক্ত সকলের সাথে আজ সাহিত্যকর্মীরাও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সাদরে আদৃত হচ্ছেন। জেলা প্রশাসক পাণ্ডুলিপি পুরস্কার প্রদানের ঘোষণাও সাহিত্যকর্মীদের সম্মিলিত চর্চা ও কর্মপ্রচেষ্টার সুফল। ২০১৩ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার বছর কর্মসূত্রে আমি নিজ জেলা শহর চাঁদপুরে অবস্থান করেছি। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের পাশাপাশি মাসিক সাহিত্য আসর সঞ্চালনা ছিল আমার প্রিয় কাজের একটি। ৫০তম আসরটি আমরা দারুণ আয়োজনে উদ্যাপন করেছি। সেদিনের স্মৃতি ও প্রীতি আমি কখনোই ভুলবো না। সাহিত্য আসরে কথা বলে, কবিতা পড়ে আমি যেমন শিখেছি তেমনি উপস্থিত উপকারভোগীরাও আধুনিক সাহিত্যের ধরণ প্রকরণ ও কৌশল সম্পর্কে সম্যক জেনেছে বলে মনে করছি। চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী যে উদ্দেশ্য নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেই উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণভাবে আমরা বাস্তবায়িত হতে দেখেছি সাহিত্য আসর আরম্ভ হবার পর থেকে। নতুন নতুন ভাবনা-চিন্তা ও করণকৌশলের সৃষ্টি ও উদ্ভাবনের লক্ষ্যে একাডেমি গড়ে ওঠে। সাহিত্য একাডেমী চাঁদপুর আজ সেই লক্ষ্যের অনুগামী হয়ে তার কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। যা ইতিমধ্যে দেশের সাহিত্য অঙ্গনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
চাঁদপুর-জল-শস্য-কাদামাটির লাবণ্যে লালিত এক অনুপম জনপদ। নদী এখানে তার আপন রূপকে আজও ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছে। আর স্বাদে ঘ্রাণে ভরা রূপালি ইলিশ চাঁদপুরকে দিয়েছে স্বতন্ত্র পরিচিতি। এই অনন্য প্রকৃতিলগ্ন জনপদ অনেক কবি-শিল্পীদেরও জন্ম দিয়েছে। আমাদের প্রত্যাশা শিল্প-সাহিত্য ক্ষেত্রে চাঁদপুরের যাত্রা আরো গতিশীল হবে। এক্ষেত্রে সাহিত্য একাডেমী হোক সকল সাহিত্যকর্মীর পীঠস্থান। পাঁচ বছর, দশ বছর-এভাবে যুগ যুগ ধরে চলমান থাকুক আমাদের প্রিয় সাহিত্য আসর। সকল সাহিত্যকর্মীকে শুভেচ্ছা ও অভিবাদন।
বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার বর্তমান সভাপতি, বিশিষ্ট নারী নেত্রী মুক্তা পীযূষ তাঁর ‘দীর্ঘজীবী হোক প্রাণের আড্ডা’ শিরোনামে লিখেছেন, ইলিশের বাড়ি চাঁদপুরের সাহিত্য একাডেমীর মাসিক সাহিত্য আড্ডার পাঁচ বছর পূর্তি উদ্যাপনের একজন ক্ষুদ্র অংশীদার হতে পেরে আমি গর্বিত। ২০০৫ সালের পরে বাজারের ফর্দ তৈরি করা ছাড়া কিছু লিখতাম না আমি আর! নবপর্যায়ের এই সাহিত্য আড্ডায় গিয়ে, চারপাশে কবি-সাহিত্যিকদের দেখতে দেখতে একদিন মনে হলো আবার কিছু লিখার চেষ্টা করতে পারি আমিও।
এ জেলার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও কর্ম সুবাদে এখানে বাস করা পর্দার আড়ালে থেকে যাওয়া লেখকগণও যেন প্রাণস্পন্দন ফিরে পেতে ছুটে আসেন এই সাহিত্য আড্ডায়। আমি মনে করি বর্তমানে চাঁদপুরে অনেক নারী আছেন, যারা খুব ভালো লিখেন। কিন্তু মাসিক সাহিত্য আড্ডায় এসে দুই-তিন ঘণ্টা ব্যয় করাকে সময়ের অপচয় বলে মনে করেন। কিংবা এখানে আসতে নানাবিধ বাধা বা টানাপড়েনে আটকে যান। মাসে একবার নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের কল্যাণের দিকে তাকিয়ে লেখক, পাঠক ও সাহিত্যামোদী নারীরা এই নির্মল ভালোবাসার স্থান সাহিত্য একাডেমীতে আসতে পারেন অনায়াসে।
আমি গত পাঁচ মাসে নিজের লেখা পাঠ করেছি এখানে, ছেলেদের বাবা ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, সাহিত্য একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত ভাই আর প্রিয় লেখক ফরিদ হাসানের অনুপ্রেরণায়।
সবশেষে বলতে চাই, দীর্ঘজীবী হোক আমাদের প্রাণের আড্ডা।
বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ চাঁদপুর জেলা শাখার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি পীযূষ কান্তি রায় চৌধুরী (বর্তমানে প্রয়াত) ‘সাহিত্য আড্ডার পাঁচটি বছর’ শিরোনামে লিখেছেন, চলতে চলতে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর সাহিত্য আসরের উদ্যমতার পাঁচটি বছর অতিক্রম করলো। প্রতি মাসের শেষ বুধবারটি সাহিত্য একাডেমী সাহিত্য রসিকদের এক মিলন মেলায় পরিণত হয়ে ওঠে। বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলে সাহিত্য আড্ডা। এই আড্ডাতে কবি-লেখকদের মেধার পরিচয় উঠে আসে। আলোচনা-সমালোচনার মধ্যে হয় লেখার বিকাশ। এই সাহিত্য আড্ডায় এসে কেউ বিফলে যায়নি। যাবেও না ভবিষ্যতে। কারণ এই একাডেমীর যিনি মহাপরিচালক তিনি চাঁদপুরের সকলের শ্রদ্ধার পাত্র কাজী শাহাদাত। তাঁর ধৈর্যের তারিফ করতেই হয়। তাঁর পাশাপাশি আড্ডার যিনি পরিচালক ছিলেন দীর্ঘদিন, কবি ও লেখক আবু ছালেহ মোঃ আব্দুল্লাহ, তাঁর অবদান স্মরণ করছি। তাঁকে অশেষ ধন্যবাদ জানাচ্ছি। তাঁর উপস্থাপনায় ও আচরণে সকলেই মুগ্ধ ছিলেন। তাঁর বদলির কারণে আমরা একটি শূন্যতা দেখলাম। তারপরেও আমরা লেখক, কবি, আড্ডারু দল হতাশ হইনি। সবাই চিরকাল কর্মজীবনে এক স্থানে অবস্থান করে না। পালাবদল হবেই। প্রতিষ্ঠানকে রক্ষা করতে হলে ধৈর্য এবং কিছু গুণাবলি থাকতে হবে। আলোচনা-সমালোচনা হবেই। এর মধ্য দিয়েই প্রকৃত ফুলটি তুলে নিতে হবে।
সাহিত্য আড্ডাতে বিখ্যাত কবি-সাহিত্যিকদের জন্ম-মৃত্যুদিন পালন, আলোচনা হয়ে থাকে। এসব জ্ঞানগর্ভ আলোচনা থেকে শেখার অনেক কিছু পাওয়া যায়। গুণীদের পথ প্রদর্শন করাই প্রকৃত শিক্ষা। এই আড্ডাতে কবি, সাহিত্যিক, শিল্পী ছাড়াও মাঝে মাঝেই সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদদেরও পদচারণা ঘটে থাকে। এতে আড্ডারুদের হৃদয়ে এক আনন্দের হিল্লোল বয়ে যায়। সাহিত্য আড্ডার মাঝ থেকে যদি কেউ চিরদিনের জন্য না ফেরার দেশে চলে যান তখন আড্ডারু লেখকদের হৃদয়ে বেদনার সুর বেজে উঠে। স্মরণ করছি প্রয়াত রণজিত চন্দ্র রায়কে, যিনি জীবিতাবস্থায় প্রতিটি আসরে সবার আগে এসে উপস্থিত হতেন। তাঁর প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা।
সাহিত্য একাডেমির উদ্যোগে একটি সাহিত্য সম্মেলন ২০১৭ সালে জেলা শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সেই সম্মেলনে বিখ্যাত কবি, সাহিত্যিক, চিত্রশিল্পীগণ এসে সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রমের ভূয়সী প্রশংসা করে গেছেন। এটা চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমী ও চাঁদপুরের লেখকদের পরম পাওয়া।
সবশেষে বলতে চাই, সাহিত্য একাডেমীর গতিধারায় নতুন নতুন লেখক-কবি সৃষ্টি হবে। নতুন নতুন বই প্রকাশিত হবে। আশা করি, একাডেমীতে আগামী প্রজন্মের জন্য একটি লাইব্রেরী তৈরি করবে কর্তৃপক্ষ। লেখকদের চিন্তাশীলতায় নতুনত্বের সৃষ্টি করবে। সাহিত্য একাডেমীর গতি আরো বেগবান হোক-এই প্রত্যাশা থাকলো।
পাঠক সমাদৃত ক’টি গ্রন্থের প্রণেতা, সাহিত্য আসরে সবচে’ বেশি অংশগ্রহণকারীদের অন্যতম মুহাম্মদ ফরিদ হাসান ‘সাহিত্য আসরের কথামালা’ শিরোনামে লিখেছেন, সম্ভবত সময়টা ২০১৩ সালের মাঝামাঝি। টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল। আমরা প্রথমে শিল্পকলা একাডেমি, পরে বিআইডব্লিউটিসির রেস্ট হাউজের পথে। সাথে প্রবীণ লেখক তছলিম হোসেন হাওলাদার ও গল্পকার রফিকুজ্জামান রণি। কুমিল্লা থেকে চাকুরির সুবাদে একজন কবি চাঁদপুরের এসেছেন। তিনি আছেন ওই রেস্ট হাউজে। কবির নাম সৌম্য সালেক। তার সাথে আমার পরিচয় ২০১১ কি ২০১২ সালে। তার সাথে দেখা করার জন্যেই হালকা বৃষ্টির পরশ নিয়ে ওখানে যাচ্ছি। কবির সাথে দেখা হলো সন্ধ্যার দিকে। গল্প-কবিতা, ছোটকাগজের কথা হলো অনেক। চলে এলাম। সৌম্য সালেক কুমিল্লার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির মধ্যে বেড়ে উঠেছিলেন। চাঁদপুরে এসে তিনি সাহিত্য একাডেমী আছে দেখে খুব খুশি হলেন। জানতে চাইলেন, এখানে আসর হয় কি না। জানালাম, এখানে সাহিত্য আসর আগে হতো, এখন হয় না। তিনি বললেন, সাহিত্য আসর যাতে করা হয় সেজন্যে তিনি একাডেমীর মহাপরিচালক জনাব কাজী শাহাদাতকে অনুরোধ করবেন। আমরাও সানন্দে রাজি হলাম। পরে মহাপরিচালক মহোদয়ের কাছে গিয়ে দেখি, তিনি সাহিত্য আসর করা নিয়ে আগে থেকেই প্রবল আগ্রহী। কিন্তু আসর পরিচালনার জন্যে যোগ্য লোক খুঁজে পাচ্ছিলেন না। সৌম্য সালেক হলেন সেই যোগ্য লোকটি, যাকে পেয়ে জনাব কাজী শাহাদাত আর দেরি করেননি। সিদ্ধান্ত হলো ২০১৪ সালের জানুয়ারি থেকে নবপর্যায়ের সাহিত্য আসর শুরু হবে। শুরু করাও হলো। সেই থেকে এখন পর্যন্ত সাহিত্য আসর চলছে অবিরাম, একই উৎসাহ ও গতি নিয়ে। কোনো ছেদ নেই, বিরাম নেই, ভাটা নেই। ঝর্ণার মতো উচ্ছ্বাসভরা গতি যেন।
সৌম্য সালেক আমার বন্ধু। বন্ধু হিসেবে শুধু আমি নই, চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মীদের সৌভাগ্য যে, তারা প্রাণচঞ্চল আধুনিক চিন্তামনস্ক সৌম্য সালেককে পেয়েছেন। একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাতের সার্বিক তত্ত্বাবধানে, পৃষ্ঠপোষকতা ও অভিভাবকের ভূমিকায় সাহিত্য আসরে গতি সঞ্চার করেছিলেন সঞ্চালক সৌম্য সালেক। জেলা শিল্পকলা একাডেমি থেকে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে বদলির পূর্ব পর্যন্ত তিনি টানা ৫০টি আসর পরিচালনা করে গিয়েছেন। আজ সেই সাহিত্য আসরের ৫ বছর পূর্তি। ৫ বছরের সীমানা-তিলক স্পর্শ করতে পেরে কী যে ভালো লাগছে সেটি লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। বিনম্র শ্রদ্ধা ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি জনাব কাজী শাহাদাত ও সৌম্য সালেকের প্রতি। আপনারা চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মীদের জন্যে সোনালি সময় টেনে আনতে স্মরণীয় সহযোগিতা করেছেন।
৫ বছরের পরিসংখ্যানে সাহিত্য আসরের অর্জন অনেক। সাহিত্য আসরে স্বরচিত লেখা পাঠ করেন কবি-লেখকরা। পঠিত লেখার ওপর আলোচনা-সমালোচনা করেন উপস্থিত লেখকবৃন্দ। এতে করে কোনো রচনার ভালো দিক যেমন উদ্ভাসিত হয়, তেমনি রচনার দুর্বলতা সম্পর্কে অবগত হয়েও লেখক সংশোধনের সুযোগ পান। সাহিত্য আসরে যে-ই এসেছে সে-ই উপকৃত হয়েছে, তারই সাহিত্য চর্চায় নতুন গতি এসেছে। সাহিত্য আসরের অন্যতম সাফল্য এই যে, এটি ৫ বছরই ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে। একটি মাসের জন্যেও এ আসরে ছেদ পড়েনি। সাহিত্য একাডেমীর মুখপত্র হিসেবে ছোটকাগজ 'উছল'-এর দুটি ঢাউস সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে, এটিও উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি। সাহিত্য একাডেমীর সবচেয়ে বড় অর্জন ২০১৭ সালে শিল্পকলা একাডেমির সাথে যৌথভাবে চাঁদপুরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা। চাঁদপুর সাহিত্য সম্মেলনে দেশবরেণ্য লেখক-সাহিত্যিকদের আগমন এবং দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হৃদয়ে এখনো অমলিন হয়ে আছে। চাঁদপুরের সাহিত্য চর্চা যদি বেগবান না থাকতো তাহলে এমন জাতীয় মানের একটি সাহিত্য সম্মেলন করা সম্ভব হতো না। মনে আছে,র সম্মেলনে এসে বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক ড. শামসুজ্জামান খান বলেছিলেন, এখন সাহিত্যের রাজধানী হচ্ছে চাঁদপুর!
সাহিত্য আসরে এসে সাহিত্যিকদের চর্চায় সমবেত হয়েছেন চাঁদপুরের সংস্কৃতি, রাজনীতি, প্রশাসনের আলোকিত মানুষগুলো। স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে চিকিৎসক, সাংবাদিক, শিক্ষক কে আসেননি এই আসরে? যারা এসেছে তারা ঋদ্ধ হয়েছেন এবং অন্যকে ঋদ্ধ করেছেনও।
সাহিত্য আসরের প্রাণ চাঁদপুরের সাহিত্যকর্মীরা। তারা নিয়মিত আসরে না এলে সাহিত্য আসর তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারতো না। এ পর্যন্ত সাহিত্য আসরে কাছে বা দূরের স্থান থেকে যারা কষ্ট করে এসেছেন, সময় দিয়েছেন, তাদের সবাইকে অশেষ ধন্যবাদ জানাই। চাঁদপুরের কৃতীজন মোহাম্মদ নাসিরউদ্দীন, চিত্রনিভা চৌধুরী, শান্তিময় ঘোষদের উত্তরসূরি হিসেবে আমরা চাঁদপুরের সাহিত্য চর্চার ঐতিহ্যকে অব্যাহত রাখবোথএই দৃঢ় প্রত্যাশা রেখে সাহিত্য আসরের সফলতা কামনা করে শেষ করছি। (চলবে)