প্রকাশ : ২৬ মে ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরের শীর্ষস্থানীয় পত্রিকা দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠের চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ঈদকে সামনে রেখে মতলব দক্ষিণে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি’। একই পত্রিকায় গত ১৮ মে প্রকাশিত সংবাদের শিরোনাম ছিল ‘ ইভটিজিং ও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে নাগরিক ভাবনা’। পরের নিউজটি মূলত ইউএসএইড ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল-এর সহযোগিতায় মাল্টিপার্টি অ্যাডভোকেসি ফোরাম চাঁদপুর জেলা শাখার আয়োজনে গোলটেবিল বৈঠক। দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, ঐ গোলটেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন চাঁদপুর জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম এন্ড অপস) মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম পিপিএম, চাঁদপুর প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দসহ ফোরামের নেতৃবৃন্দ।
প্রকাশিত সংবাদ এবং গোলটেবিল বৈঠকের বিষয়বস্তু বিশ্লেষণে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়াবহতা উঠে এসেছে। এই গ্রুপের নেতিবাচক ধ্যান ধারণার সামাজিক প্রভাবগুলোও উঠে এসেছে আলোচনায়। এর উত্তরণের পথও খোঁজা হয়েছে।
এছাড়া চাঁদপুর পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করতে দেখা যায়। একইভাবে বিভিন্ন সংস্থার পক্ষ থেকেও কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে বিভিন্ন আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। প্রত্যেকের চাওয়া একটাই, তা হলো আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম কোমলমতি ছেলেরা যেন কিশোর গ্যাং হয়ে সমাজ ও পরিবারের বোঝা না হয়। মাদকের কবলে পড়ে তাদের জীবন যেন নষ্ট না হয়। তারা যেন তাদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নির্মাণ করতে পারে। এই কিশোরদের বিপথগামী হওয়া থেকে ফিরিয়ে এনে সামাজিক ও পারিবারিক শন্তি-সমৃদ্ধি আনয়ন করাই বিভিন্ন প্রচেষ্টার লক্ষ্য। বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে আইনের সঠিক প্রয়োগ এবং মাদকমুক্ত এলাকা গঠনের প্রতিও গুরুত্বারোপ করেছেন। কারণ গত কয়েক বছর ধরে সারা দেশে নতুন এক ত্রাস, মারামারি ও অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার মুখোমুখি হতে দেখা গেছে সাধারণ মানুষকে। পাড়ায়-মহল্লায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়সের কিশোরের দল মারমুখি আচরণ করে এলাকায় ভীতি সঞ্চার করে চলেছে। বিশেষ করে দেশে করোনা মহামারীর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে গেলে কাজহীন হয়ে পড়ে এই বয়সের ছেলেরা। আর এই সুযোগে বেপোরোয়া হয় তারা। আর এজন্যেই কিশোর গ্যাং প্রতিরোধে আইনের সমন্বিত প্রয়োগ দরকার বলে মনে করেন সমাজ বিশ্লেষকগণ।
এই কিশোর গ্যাংয়ের দলের সদস্যরা বয়সে কম হওয়ায় তাদের কাণ্ডজ্ঞান স্বাভাবিকের চেয়ে কম। তারা মনে করে আমরাই সমাজের রাজা। তাই তাদের হাতে বয়স্কদের লাঞ্ছিত হওয়ার ঘটনাও ঘটেছে অনেক। আবার কিশোর বয়সের এই ছেলেরা গাঁজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদক হাত বাড়ালেই পাচ্ছে। এতেও তারা বেপরোয়া হয়ে যাচ্ছে।
এছাড়া সমাজে বসবাসকারী সুধী মহল কিশোর গ্যাংকে পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ক্ষেত্রবিশেষে রাজনৈতিক ব্যক্তিদের দায়ী করেন। সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অভিযোগ, কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থানীয় রাজনৈতিক কাজে প্রায়ই এসব কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের দেখা যায়। স্থানীয় কোনো কোনো রাজনৈতিক নেতা এসব ছেলেকে ছোট ভাই তকমা দিয়ে নিজেদের কাজে ব্যবহার করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ নিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের অভিভাবকদের সাথে কথা বলে দেখা গেছে, তারা নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছে। শিক্ষক, সমাজসচেতন ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ এদের স্বাভাবিক জীবনে দেখতে চায়। সুতরাং নিয়ন্ত্রণহীন কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টেনে ধরা একান্ত প্রয়োজন। এজন্যে ক’টি প্রস্তাব এই লেখায় উপস্থাপন করছি। প্রস্তাবগুলো জেলা এবং উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করতে পারেন।
(ক) প্রত্যেক ইউনিয়নে ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে ওয়ার্ডভিত্তিক কিশোর গ্যাং প্রতিরোধ কমিটি গঠন করা। ওয়ার্ড কমিটির প্রধান হবেন ওয়ার্ডের নির্বাচিত ইউপি সদস্য। ওয়ার্ড কমিটিতে সচেতন অভিভাবক, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ থাকতে পারেন। ইউনিয়নের সমন্বয়ক হবেন ইউপি চেয়ারম্যান। (খ) ইউপি চেয়ারম্যান কিশোর গ্যাং সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে অবহিত করবেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পুলিশ প্রশাসনের মাধ্যমে আইনানুগ ব্যবস্থাগ্রহণ করতে পারেন। (গ) প্রতি মাসে প্রত্যেকটি ইউনিয়নের ওয়ার্ডভিত্তিক চিত্র প্রতিবেদন আকারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট জমা দেয়া। (ঘ) উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জেলা প্রশাসন এবং জেলা পুলিশের নিকট উপজেলাভিত্তিক কিশোর গ্যাংয়ের তথ্য জমা দিতে পারেন। (ঙ) এভাবে আবার জেলা থেকে উপজেলা এবং উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনার সমন্বিত প্রয়াসের মাধ্যমে চাঁদপুর জেলাকে কিশোর গ্যাং মুক্ত জেলায় রূপান্তর করা যেতে পারে। অথবা এর চেয়ে ভালো কোনো পরামর্শ যে কেউ রাখতে পারেন। সব মিলিয়ে প্রিয় চাঁদপুর জেলাকে সারা দেশের জন্যে একটি শান্তিপূর্ণ মডেল জেলায় রূপান্তর করাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।