প্রকাশ : ১৭ মে ২০২২, ০০:০০
মাতৃস্নেহ
শৈশবে মাতৃহারা হয় যে হতভাগারা,
মায়ের অকৃত্রিম স্নেহ থেকে বঞ্চিত তারা।
প্রসূতির স্নেহ যে কতোটা অনন্য নিখুঁত,
কভু বুঝিবে না ভুক্তভোগী ব্যতীত।
গর্ভধারিণীর স্নেহে নাই বিনিময় প্রাপ্তির নেশা,
ডাইনীর কৃত্রিম স্নেহে জড়িত সর্বদা ভোগের আশা।
মা যে তাকিয়ে থাকে ঘরে ফেরা সন্তানের মুখপানে,
সস্নেহে জিজ্ঞাসে, খাওয়া হয়েছে কি মধ্যাহ্নে?
ডাইনী মা সাগ্রহে তাকিয়ে থাকে পকেট বা হস্তপানে,
নিশ্চয় কিছু একটা এনেছে স্নেহের বিনিময়ে।
গর্ভধারিণী, সন্তানের কর্মণ্ডক্লান্তি নিবারণে থাকে উদ্গ্রীব,
পালক মাতা তো রয়েছে রসনা বিলাসে সজীব।
এ সংসারে মায়ের বিকল্প মা, নেই তার উপমা,
মাতৃহারা ভাবে, মা যে সার্বক্ষণিক সাথী, শুধুই পটে থাকে না।
কর্তব্য
সতের শত সাতান্ন থেকে ঊনিশ শত সাত চল্লিশ,
ভারতবর্ষ শাসন করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ।
সূচনায় ছিল লর্ড ক্লাইভ, নীতি ছিল ‘ডিভাইড এন্ড রুল’,
এ কূটনীতির বশ্যতা স্বীকার করাই ছিল আমাদের ভুল।
জগত শেঠ আর রায় দুর্লভেরা ছিল ব্রিটিশ বেনিয়া দোসর,
যুদ্ধ ক্ষেত্রে মীর জাফরির পরিণামে দেহটি হলোই নিথর।
ব্রিটিশ প্রণীত আইন ছিল বেনিয়াগিরি টেকসই বাতাবরণে।
ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা, সূর্যসেনের মত বিপ্লবীরও প্রাণ গেল ঝুলন্ত দণ্ডে।
স্বাধীন বাংলায় আজও টিকে আছে সেই সংস্কার বিহীন আইনের প্রয়োগ,
যে আইনের ফাঁক ফোকরে শীর্ষ সন্ত্রাসীরাও ঘটে সাজার মেয়াদে বিয়োগ।
বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশীদের হাঁক-ডাক আছে সর্বস্তরে,
উদ্যোগ নিলে বাংলাদেশীরাই সক্ষম প্রচলিত আইন সংস্কারে।
কোনো কাজই যে বাঙালির নহে সাধ্যাতীত,
আট মাসে স্বাধীনতা অর্জন তার উজ্জ্বল প্রমিত।
ভূমি সন্ত্রাসী, সামাজিক সন্ত্রাসী, আইন সন্ত্রাসী ও আধিপত্য সন্ত্রাসী,
আইন আমলে থেকে আইনের ফাঁকে জামিন পেয়েই প্রবাসী।
এসব দুর্দান্ত সন্ত্রাসীর সাথে যুক্ত হয়েছে কিশোর সন্ত্রাসী দল,
তাতেই বাংলার চির শান্ত জনজীবন হয়েছে অশান্ত রসাতল।
সোনার বাংলা আজি পরোক্ষ গোরস্তান, সর্বত্রই সন্ত্রাসীরা শক্তিমান,
জামিন আইন সংস্কারে নিশ্চয়ই বাঁচবে দেশের মান।
প্রচলিত বেনিয়া আইনে দেশ গেল অতল রসাতলে,
দেশ বাঁচবে, স্বাধীনতা হাসবে জামিন আইন সংস্কারে।
একাল-সেকাল
অগণিত শহিদের রক্ত স্নাত এই অনুপম বাংলা,
কভু নিভিবে না শহিদ মাতাদের বক্ষের প্রজ্জ্বলিত জ্বালা।
স্বাধীনতা বিরোধীদের নগ্ন ষড়যন্ত্র চলছিল বহুকাল,
দক্ষ প্রশাসনে মিটিছে সেই কুৎসিত জঞ্জাল।
কত যে নাম জানা-অজানা মাদক রয়েছে এ দুনিয়ায়,
সব গুলোরই আসক্ত আছে এই যে সোনার বাংলায়।
ভার্সিটি পড়ুয়া থেকে ভবঘুরে কিশোর ডুবছে এ নেশায়,
অভিনব কায়দায় ধর্ষণ, খুন আর নির্যাতন আছে এদের পেশায়।
প্রতিদিনে ভানুর উদয়, ধরণী আঁধারমুক্ত আলোর পরশ পায়,
অভূতপূর্ব নিষ্ঠুরতার লোমহর্ষক খবরগুলো সংবাদে দিয়ে যায়।
সোনার বাংলার মানুষগুলো ছিল শান্ত, সহিষ্ণু আর অপরাধ মুক্ত,
আজি মানুষগুলো মাদকাসক্ত, সকল ধরনের অপরাধে যুক্ত।
প্রাচীন বাংলার কিংবদন্তিরা বাংলাকে দেখেছে অনুপম সৌন্দর্যে,
আধুনিক বাংলা কাঁদছে আজি দুর্বৃত্ত কর্মকাণ্ডের ঘৃণিত কদর্যে।
আদি বাংলায় দেশপ্রেমী আর প্রকৃতিপ্রেমীর ছিল না কমতি,
আধুনিক বঙ্গে অনভিপ্রেত ব্যাংক লোন, মানি লন্ডারিং প্রভৃতি।
বাঙ্গালের চরিত্র ছিল সহজ-সরল আর অতিথিপরায়ণ অতি,
বাংলাদেশে আজি কৃত্রিমতার বাতাবরণে খুনের কারণে ভীত বসুমতি।
বাংলাদেশীরা সবাই দেশপ্রেমিক তাতে সন্দেহের নেই কোনো অবকাশ,
দক্ষিণ বঙ্গে তৈরী ব্রিজ কিংবা বেড়িবাঁধ মেয়াদ মাত্র কয়েক মাস।
দলীয় সদস্যরা পাচ্ছে প্রকৌশলীর ঠিকাদারি লাইসেন্স,
প্রাচীন বাংলায় বাঁশ, গাছ আর চাইয়া লতায় সাঁকোর ছিল দৃঢ় পারফরমেন্স।
এ দেশে কী যে হবে আর কী যে আদৌ হবে না,
নিজের অবৈধ উন্নয়ন ছাড়া, দেশপ্রেমের নেই কোনো উন্মাদনা।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ জেনেও স্বাধীনতা মানে না ভাই,
তারা যে বাংলায় অপাঙ্ক্তেয় এতে বিন্দু মাত্র ভুলের রেশ নাই।
রঙ-বেরঙ
সাতটি রঙের নামগুলো হলো বেনীআসহকলা,
যার কাছে যেটা সুন্দর সেটাই তার গলার মালা।
সে বেশি প্রশংসা কুড়ায় যার চরিত্রটা সুন্দর,
তার গ্রহণযোগ্যতাও বেশি সংসার ভিতর।
নম্রতার কদর বেশি মানব কুলের সর্বস্তরে,
উগ্রতা বর্জিত মানুষই ভদ্র বলে পরিচিত হয় সংসারে।
নম্র-ভদ্র লোকের ঘোষণা চলমান থাকে লোক মুখে,
রূঢ় আচরণের লোক ঘৃণিত হয় চোখের আড়ালে।
শুধু অবয়বে মানুষ হলেই হয় না সে মানুষ,
মানুষ হতে হলে তার মধ্যে থাকবেই মানবতার হুঁশ।
ভদ্র সেজে অমানুষগুলো সমাজের অপাঙ্ক্তেয় জঞ্জাল,
নারী পাচারের মত কাফেরীয় কাজ স্ত্রীকে নিয়েও করে ভেজাল।
আঁধার কালো, কুকর্ম কালো, তার চেয়ে বেশি কালো অসভ্যতা,
সাতটি রং একত্রে মেশালে প্রভেদ থাকে না, সবই হয় সাদা।
লোক দেখানো ধর্ম চর্চায় বিবর্ণ আজি মানব সমাজ,
চলমান বীভৎসতা নিবারণ প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাজ।
আইনে নিষিদ্ধ শিশুশ্রম চলছে অবাধে এই দেশে,
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার হুঁশ, এর বিলুপ্তি ঘটাতে পারে।
যৌতুকের বলি আর পরকীয়ার মর্মান্তিক নিত্যনতুন উদ্ভব,
আইনের কঠোরতম সংস্কার হলেই বন্ধ করা নিশ্চয়ই সম্ভব।
অর্থের রোজনামচা
অর্থ তুমি সকল জাগতিক অনর্থের মূল,
তোমার মোহে উদ্ভব যত সব মারাত্মক ভুল।
অর্থের লিপ্সায় এদেশে ললনারা যৌতুকের বলি,
অবৈধ অর্থের কাঙ্গালরাও খেলে রক্তের হোলি।
তোমার আকর্ষণে পিতাও যন্ত্রণা পায় পুত্রের হাতে,
স্ত্রীও বিকর্ষিত হয় স্বামীর পরকীয়ায় তোমার প্রভাবে।
অর্থ বিহনে কোনো অফিসে হয় না কাজের সুষ্ঠু সমাধান,
এ অমানবিকতার বিকারে মানুষের দিতে হয় অর্থের জোগান।
অর্থের বিনিময়ে জোটাতে হয় চাকুরি নামক সোনার হরিণ,
এই চাকুরিটাই আলাউদ্দিনের প্রদীপের অধীন।
বিভিন্ন চরম দুর্নীতির নামাবলির ছোঁয়াচে নিমজ্জিত,
পঙ্কিল সলিলে আকণ্ঠ ডুবে ঘুষে মানবতা বিসর্জিত।
অর্থ তুমি বিনিময় মাধ্যম নেই কোনো একক মালিকানা,
অর্থ-ই একমাত্র বহুরূপী, চরাচরে নেই তার তুলনা।
অর্থ তুল্য শক্তিমান নাহি কেহ এই চরাচরে,
কেবলমাত্র অর্থই মানুষকে অবিবেচক করতে পারে।
মহাকর্ষ বল যেমন মহা বিশ্বের অদৃশ্য বলের নিয়ন্ত্রক,
অর্থই হলো মানব সভ্যতা বিরোধী অপকর্মের প্ররোচক।
একদিন যাদের প্রয়াসে মানব সভ্যতা এসেছিল তিলে তিলে,
আজ তাদের অপপ্রয়াসে সভ্যতা লজ্জিত পলে পলে।
বিমল কান্তি দাশ : কবি ও লেখক; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।