প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
ঈদকে সামনে রেখে মতলব দক্ষিণে কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি
পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে মতলব দক্ষিণ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে দশ থেকে পনের বছর বয়সী ছেলেদের পনের-বিশজনের একাধিক দল এলাকায় শান্তি-শৃংখলা বিনষ্ট করে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে সামাজিক বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। ফলে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
মতলব দক্ষিণ সদরের আশপাশ এবং নারায়ণপুর, বাড়ৈগাঁও, হুরমহিষা, রসুলপুর, আশ্বিনপুর, গোবিন্দপুর, কালিকাপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাং হঠাৎ করেই নিজেদের শক্তিমত্তা জানান দিচ্ছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয় ব্যক্তি জানান, এখনই যদি কিশোর গ্যাংয়ের লাগাম টেনে না ধরা হয় তবে এরা এক সময় এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করবে।
কিশোর গ্যাংয়ের দৌরাত্ম্যে সম্প্রতি মতলবের খাদেরগাঁও ইউনিয়নের হুরমহিষা গ্রামে ইভটিজিংয়ের মামলা হয়েছে। নারায়ণপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে ধর্ষণের শিকার হয়েছে ৮ম শ্রেণির মাদ্রাসা পড়ুয়া শিক্ষার্থী। এ ঘটনারও মামলা হয়েছে। একই ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও ও গোবিন্দপুর গ্রামের দুই গ্রুপের মধ্যে একাধিক মারামারির ঘটনা ঘটে। কিশোর গ্যাংয়ের সর্বশেষ শিকার নারায়ণপুর বাজারের স্বর্ণ ব্যবসায়ী অমর ভক্ত। যিনি গত ২১ ফেব্রুয়ারী দিবাগত রাতে নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নিহত হন। যে ঘটনায় আটক হওয়া অমর ভক্তের কর্মচারী জয় বিশ্বাস ওরফে অনিক ও হৃদয় সূত্রধর বিপিএলের জুয়ার বাজিতে কয়েক লাখ টাকা ঋণ হওয়ায় টাকা পরিশোধের জন্যে খুনের পরিকল্পনা করে বলে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়।
কিশোর গ্যাংয়ের চরিত্রও মাঝে মাঝে বদলায়। তারা ইদানীং বিচ্ছিন্নভাবে ঘুরে বেড়ায়। সুযোগমতো সংঘবদ্ধ হয়ে তাদের অপকর্ম করার অপচেষ্টা চালায়। তাদের পোশাক, পায়ের জুতা, চলার ঢং প্রায় একই রকম। এরা মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়ানোর জন্যে বিভিন্ন অঙ্গ-ভঙ্গিতে রাস্তায় চলাফেরা করে।
কিশোর গ্যাংয়ের গ্রুপ নারায়ণপুর বাজারের কালিবাড়ি মন্দিরের গেইট ও সরকারি গোডাইনের পাশে উচ্ছৃংখল আড্ডা দেয়। এরা স্কুল-কলেজপড়ুয়া মেয়েদের অশ্লীল ভাষায় ইভটিজিং করে থাকে। এলাকার বয়স্কদের সাথে খারাপও আচরণ করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নারায়ণপুর বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, কিশোর গ্যাংয়ের একাধিক গ্রুপের বেপরোয়া মারামারিতে আমরা নির্বিঘেœ ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছি না। তারা কথায় কথায় মারামারিতে লিপ্ত হয়। ইতিমধ্যে কয়েকজন ব্যবসায়ী কিশোর গ্যাংয়ের হেনস্তার শিকার হয়েছেন।
এলাকার সচেতন মহল এ কিশোর গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, এরা বেপোরোয়া গতিতে চলাফেরা করে, উচ্ছৃঙ্খল কথা বলে, স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসার সামনে ছাত্রীদের ইভটিজিং করে, এলাকাভিত্তিক আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারামারি করে, রাস্তার মোড়ে বাজারের মোড়ে অহেতুক জটলা সৃষ্টি করে আড্ডা দেয়। এদের উৎপাত থেকে আমরা আমাদের সন্তানদের নিরাপদে রাখতে চাই। এলাকায় স্বাভাবিক পরিবেশে থাকতে চাই। এজন্যে আইন-শৃংখলা বাহিনীসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করি।
কিশোর গ্যাংয়ের তৎপরতা বিষয়ে জানতে চাইলে মতলব দক্ষিণ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মহিউদ্দিন মিয়া জানান, এ বিষয়ে আমাদের কঠোর পদক্ষেপ রয়েছে। ঈদের পরে স্থানীয় এলাকাবাসী ও জনপ্রতিনিধিসহ বসে সচেতনতামূলক সভা করবো। কিশোর গ্যাংয়ের হামলার ঘটনায় যেসব অভিযোগ এসেছে সেগুলো আইনি প্রক্রিয়ায় ব্যবস্থা নেয়া হবে। কিছু স্থানীয়ভাবে মীমাংসা হয়েছে। আমি নিজে গিয়েছি এবং থানা থেকে ফোর্স পাঠিয়েছি। আমাদের অভিযান অব্যাহত থাকবে।