রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ০৬ মার্চ ২০২২, ০০:০০

কচুয়ায় অপরিকল্পিত রাস্তাঘাট নির্মাণের ফলে কমছে কৃষি জমি
মেহেদী হাসান ॥

কৃষি জমিতে অপরিকল্পিতভাবে বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট নির্মাণে কৃষি জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। কচুয়া উপজেলার কড়ইয়া, দরিয়া হায়াতপুর, পালাখাল, বিতারা, বাইচারা, সাচার, ডুমুরিয়া, রহিমানগর, আশ্রাফপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমির ওপর রাস্তা নির্মাণের ফলে সেখানে বাঁধ সৃষ্টি হচ্ছে, যার ফলে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হচ্ছে। কচুয়া পৌরসভার কড়ইয়া গ্রামের পশ্চিম পাশের কৃষি জমিতে অপরিকল্পিত রাস্তা নির্মাণের ফলে ওই এলাকার কৃষকরা চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছে। বিশেষ করে ফসলি জমিতে রাস্তা নির্মাণ করায় জলাবদ্ধতার কারণে ফসল উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। আর যত্রতত্র রাস্তা করার কারণে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় কৃষকরা ফলন নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে।

হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরীপুর সড়কের কড়ইয়া অংশ থেকে কড়ইয়া জমির মিয়াজীর বাড়ির রাস্তার মাথা পর্যন্ত প্রায় ১৫শ’ ফুট রাস্তা অপরিকল্পিতভাবে ফসলি জমির পাশের সরকারি হালট ব্যবহার করে নির্মাণ করা হয়েছে। কিন্তু স্থানীয় কৃষকদের দাবি, এ রাস্তাটি হওয়ার ফলে তাদের উপকারের চেয়ে অপকারই বেশি হয়েছে।

এই রাস্তা নির্মাণকে কেন্দ্র করে মনির হোসেন মিয়াজী বাদী হয়ে ওই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ জাহাঙ্গীর আলম মোল্লাকে বিবাদী করে কচুয়া থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে মনির হোসেন উল্লেখ করেন, আমি একজন প্রবাসী। প্রবাসে থাকার সুযোগে আমার দখলীয় জমির মধ্যখান থেকে জোরপূর্বক প্রভাব বিস্তার করে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ করার পাঁয়তারা করে আসছে বিবাদী জাহাঙ্গীর আলম। খবর পেয়ে প্রবাস থেকে দেশে এসে আমি ও আমার পরিবারবর্গ আমার জমি থেকে মাটি কাটতে বাধা প্রদান করলে আমাদেরকে মারধর করবে বলে প্রকাশ্যে হুমকি-ধমকি প্রদর্শন করে জাহাঙ্গীর আলম। গত শুক্রবার সকালে বিবাদী শ্রমিক নিয়ে আমার দখলীয় জমির মাঝখান থেকে মাটি কেটে রাস্তা নির্মাণ শুরু করে। আমি ও আমার পরিবারের লোকজন বিবাদীদের বাধা প্রধান করলে বিবাদীরা আমাদেরকে মারধর করার জন্য লাঠিসোঠা নিয়ে দৌড়িয়ে আসে।

মনির হোসেন মিয়াজী জানান, এলাকার ব্যাকসাইডে এই রাস্তাটি নির্মাণ করা হয়েছে। যার দরুণ এই রাস্তাটি দিয়ে এলাকার মানুষের কোনো উপকারতো হচ্ছেই না বরং কৃষকদের ক্ষতি হচ্ছে। এই রাস্তাটি জাহাঙ্গীর মোল্লা পৌরসভার বাজেট দিয়ে করার কথা বললেও মূলত কোনো প্রকার বাজেট ছাড়াই সে রাস্তাটি তার ব্যক্তিগত স্বার্থে নিজে ব্যবহারের জন্য সরকারি খাস জমির উপর নির্মাণ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করেছে। তাছাড়া আমি প্রবাসে থাকায় সে আমার ফসলি জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে জমিটিকে ডোবায় পরিণত করেছে। এখন আবার একই জমি থেকে মাটি কেটে রাস্তাটির কিছু বাকি অংশ নির্মাণ করার চেষ্টা করলে আমি তাতে বাধা দেই। ফলে সে আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। তাই আমি নিজের নিরাপত্তার স্বার্র্থে আইনের আশ্রয় নিয়েছি।

সম্প্রতি সরজমিনে গেলে কড়ইয়া পশ্চিমপাড়া সোনা মিয়া গাজীর ছেলে কৃষক আমির হোসেন এ প্রতিবেদককে জানান, আমরা এই মাঠে আগে দুই থেকে তিনটি ফলনসহ সবজি চাষ করতাম। কিন্তু আমাদের মাঠের উপর দিয়ে কড়ইয়া মহাসড়কের অংশ থেকে কড়ইয়া মিয়াজীর বাড়ির রাস্তার মাথা পর্যন্ত মাটির রাস্তা নির্মাণ করায় বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। যার দরুণ এখন আর আমরা ইরি-বোরো ধান ছাড়া আর কোনো ফসল করতে পারি না। এই রাস্তাটি হওয়ার দরুণ আমাদের উপকার থেকে অপকার বেশি হয়েছে।

কৃষক আঃ রহিম, সাব্বির আহমেদ, বাচ্চু মিয়া ও আবুল হোসেন জানান, ২০১৮ সালে রাস্তাটি নির্মাণের পূর্বে আমাদের এই মাঠে ফসল চাষে কোনো সমস্যা ছিলো না। আমরা মটর ডাল, সরিষা, আলু, ধান, লালশাকসহ বিভিন্ন ফসলাদি চাষাবাদ করতাম। কিন্তু এই রাস্তাটির কারণে মাঠের পানি সরতে না পারায় আমরা খুব সমস্যায় আছি। আমরা এখন ইরি ধান ছাড়া আর কিছুই চাষাবাদ করতে পারি না।

এ বিষয়ে কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম বলেন, আমি জনগণের প্রতিনিধি। এলাকার জনগণের স্বার্থে মেয়র মহোদয়ের প্রচেষ্টায় ২০১৮ সালে ১৫শ’ ফুট রাস্তা নির্মাণ শুরু করি। রাস্তার কাজটি সম্পন্ন হওয়ার পর প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। সড়ক ও জনপথ বিভাগের রাস্তার সাথে এই রাস্তাটি সংযুক্ত করা হয়েছে। গত বর্ষায় রাস্তার বিভিন্ন অংশে ফাটলের সৃষ্টি হলে উক্ত রাস্তার মেরামত কাজের সংস্কার হিসেবে রাস্তার উভয় পাশের জমি থেকে আংশিক মাটি উত্তোলন করে রাস্তাটি মেরামত করি। নতুন এই রাস্তাটি হওয়ায় এ এলাকার মানুষের জীবন যাত্রার মানোন্নয়ন হয়েছে।

অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা কচুয়া থানা পুলিশের সহকারী উপ-পরিদর্শক দিদারুল আলম জানান, অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কচুয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, কচুয়া উপজেলায় এই মুহূর্র্তে কৃষিতে প্রধান সমস্যা অপরিকল্পিতভাবে বাঁধ দিয়ে মাচের চাষ এবং খালগুলো বেদখল। যার ফলে প্রতিবছর প্রত্যক্ষভাবে ৫হাজার হেক্টর জমিতে আমন ধান উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষার পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সবজি উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব পড়ছে। জলাবদ্ধতা নিরসনে সরকারের পাশাপাশি স্থানীয় উদ্যোগ প্রয়োজন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়