প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০০:০০
দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের সময় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের একটি অংশ হিসেবে চাঁদপুরে ইন্টারমিডিয়েট সেকশন চালু হয় (তখন সময়কাল ১৯৪৬ সাল)। আব্বা তখন ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র ছিলেন। এ সেকশনটিকে চাঁদপুর কলেজ হিসেবে তৈরি করার জন্য আব্বাসহ অনেকেই ইট মাথায় করে এনে কাজ করেন। তৎকালীন মুসলিম হোস্টেল (বর্তমানে যেখানে কলেজের বাস রাখা হয়) মেসে আব্বা থাকতেন। ১৯৪৭ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু চাঁদপুর আসেন। তখন বঙ্গবন্ধু আমার শ্রদ্ধেয় বাবাসহ অনেক ছাত্রকে নিয়ে নিউমার্কেটে মিটিং করেন বিকেল বেলা। বঙ্গবন্ধু কলেজের হোস্টেলে এসে আবার বাবাসহ অনেককে নিয়ে মিটিংয়ের আয়োজন করেন। তখনই আব্বা বঙ্গবন্ধুর সান্নিধ্য পান। এরপর আব্বা ইন্টারমিডিয়েট পাস করে জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়ে) ভর্তি হন ১৯৪৮ সালে ডিগ্রিতে। তখনই বঙ্গবন্ধুর সাথে আব্বা রাজনীতিতে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে পড়েন এবং ভাষা আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৮ সালের শেষের দিকে অথবা ১৯৪৯ সালের প্রথম দিকে ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আব্বাকে জেলে যেতে হয়। তখন বঙ্গবন্ধুও জেলে ছিলেন। একই সাথে বঙ্গবন্ধুসহ আব্বা প্রায় ৬ মাস জেল খাটেন। ওই সময় রাজনৈতিক কারণে আব্বা আর ডিগ্রি পরীক্ষা দিতে পারেন নি। এরপর আব্বা বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন করতে গিয়ে ঢাকায় ভাষা মতিন, অলি আহাদ, তমুদ্দন মজলিসের প্রিন্সিপাল আবুল কাশেমের সাথে যুক্ত হন এবং ১৯৫৪ যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর সাথে বিভিন্ন জেলায় সফরে যান। শুধু তাই নয়, ওই সময় আব্বা অনেকেকে নিয়ে দলবলে বঙ্গবন্ধুর সাথে পায়ে হেঁটে ফরিদপুর থেকে বঙ্গবন্ধুর গ্রামের বাড়ি টুঙ্গিপাড়াতে যান। যাওয়ার সময় গরমকালে রাস্তার পাশেই খিরাই ক্ষেত পড়ে। ওই সময় বঙ্গবন্ধুর সাথে আব্বাসহ যারাই ছিলেন তারা কৃষকদের ওই ক্ষেত থেকে খিরাই ছিঁড়ে খাওয়ার সময় কৃষক বঙ্গবন্ধুকে ডেকে বলেছিলেন, ও শেখের পো, খিরাইয়ের দাম দেবে কেডা?
তখন বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন যে, আমি নিজে অনেক কিছু দিবো তোমাদেরকে। বঙ্গবন্ধুর ওই কথা যখনই জীবিত অবস্থায় স্মরণ করতেন তখনই হাউমাউ করে কাঁদতেন বাবা। বঙ্গবন্ধু শুধু কৃষকদের জন্যেই নয়, এদেশের সকল মানুষের জন্যে একটি স্বাধীন দেশ, একটি জাতীয় পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত উপহার দেন। পরবর্তীতে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনের পর যখন যুক্তফ্রন্ট ক্ষমতায় আসে তখন কিছুটা (প্রায় ২ বছর) স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি থাকার কারণে সম্ভবত শাহরাস্তি সূচীপাড়া হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা হেডমাস্টার হিসেবে যোগ দেন। আওয়ামী রাজনীতির সাথে একজন শিক্ষক হিসেবে সক্রিয়ভাবে রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করেন এবং এক পর্যায়ে ১৯৫৮ সালে সামরিক আইন জারির পর আইয়ুব বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর হিসেবে চাঁদপুর (তৎকালীন মহকুমা)সহ দেশের বিভিন্ন জেলাতে রাজনেতিক সক্রিয় কর্মী হিসেবে অংশগ্রহণ করেন। সম্ভবত ১৯৫৯ বা ১৯৬০ সালে আবার কারাবরণ করেন। প্রায় অনেক দিন জেল খেটে বের হয়ে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। তখন চাঁদপুর জেলায় (তৎকালীন মহকুমায়) ফরিদগঞ্জ উপজেলাতে আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করেন। এ অবস্থায় ১৯৬৯ সালে গণআন্দোলন এবং ১৯৭০-এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতা হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৮ সালে কুমিল্লার ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় কাজীম উদ্দিন খন্দকার হাইস্কুলের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় কুমিল্লা ল’ কলেজে ভর্তি হন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে কুমিল্লা থেকে দলবল নিয়ে অংশগ্রহণ করেন। ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণের পর কুমিল্লায় বঙ্গবন্ধু এক জনসভায় আসার পথে ক্যান্টনমেন্টের পশ্চিম পাশে ওই বছরে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে কাজিমউদ্দিন স্কুলের সামনে বঙ্গবন্ধুর বহরকে থামিয়ে বঙ্গবন্ধুকে সংবর্ধনা দেন। ওই সময়ে স্কুলের বাচ্চাদের নিয়ে আমি (সেলিম আকবর)ও ছিলাম। তিনি বঙ্গবন্ধুকে ফুলের মালা পরিয়ে দেন এবং পথসভায় বক্তব্য রাখেন। এগুলো সকল কিছুই আব্বা নিজেই আয়োজন করেছিলেন। ২৫ মার্চের কালোরাত্রিতে কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টের বাঙালি আর্মিরা ক্যান্টনমেন্ট থেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসেবে অস্ত্র পাচারের ক্ষেত্রে আব্বাকে সহযোগিতা করেন। আমি তখন এগুলো নিজেই দেখেছি। ২৬ মার্চ যুদ্ধ শুরু হলে স্কুল এলাকা থেকে রাতের বেলা ২টি রিকশাযোগে কাবিলা বাজার হয়ে ৩০০ টাকা ভাড়া দিয়ে চাঁদপুরের কালিয়াপাড়ায় আমাদের ফুফুর বাড়িতে পৌঁছি এবং সেখান থেকে পরের দিন আমাদের ফরিদগঞ্জের শোল্লা নিজ বাড়িতে বাবাসহ চলে আসি। আসার আগ পর্যন্ত বাবা কুমিল্লার কাজিমউদ্দিন স্কুলে শিক্ষকতা করার কারণে মাসহ আমাদের পুরো পরিবার ওইখানে বসবাস করতো। কুমিল্লা থেকে আসার পথে অনেক লোকজন পথে আমাদেরকে পানি, ডাব, মুড়িসহ বিভিন্ন খাবার দিয়েছে। আমরা যখন আমাদের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছি, এরপর বাবা আমাদেরকে বাড়িতে রেখে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। আমার বাবার নানার বাড়ি ছিলো শ্রীকালিয়া ভূঁইয়া বাড়ি। ওই বাড়িতে মুক্তিযুদ্ধের ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। বাবা সাবেক এমএলএ আঃ করিম পাটওয়ারী, অ্যাডঃ সিরাজুল ইসলাম, আবু জাফর মাইনুদ্দীনসহ ওই ক্যাম্প থেকে মুক্তিযুদ্ধের জন্য অস্ত্র, খাবারসহ যুদ্ধের বিভিন্ন জিনিস জোগান দিতেন। ওই সময় বর্ষাকাল থাকায় ওনাদের সবচেয়ে নিরাপদ বাহন ছিলো নৌকা। ওই নৌকায় বিশ^স্ত মাঝি ছিলো আম্ভর আলী। স্বাধীনতা যুদ্ধের ৯ মাস আব্বার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ ছিলো না। মাঝখানে একজন মুক্তিযোদ্ধার সোর্স গিয়ে আমাদের খোঁজ-খবর নিয়েছিলেন। আমার বাবা ও চাচারা মুক্তিযুদ্ধে থাকার কারণে পাকিস্তানী আর্মিরা আমাদের বাড়িতে ২বার আগুন লাগাতে যায়। কিন্তু খাজুরিয়া এবং পাইকপাড়ায় মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে পাকিস্তানী সৈন্যদের গোলাগুলি হওয়ার কারণে তারা বাড়িতে ঢুকলেও পরে সটকে পড়ে। তারা আমাদের বাড়ির দিঘির পাড় পর্যন্ত এসে ফিরে যায়। পরবর্তীতে আমরা ভয়ে আমাদের পুরো পরিবারের সদস্যদেরকে নিয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার গাছতলায় নানার বাড়ি (জমাদার বাড়ি) চলে আসি। গাছতলায় কিছুদিন থাকাবস্থায় বাবাকে রাজাকাররা মেরে ফেলার জন্য রাতে নানাদের ঘর ঘেরাও করে। এক পর্যায়ে দরজা ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে। আমি ও আমার মেঝো মামা এই ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। পরে আমার সাথে থাকা মেঝমামা কাঁড়ের মধ্যে উঠে পালিয়ে যান। মামার পরিহিত স্যান্ডেল ঘরের মধ্যে দেখে রাজাকাররা আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে তোলে। তখন তারা উচ্চস্বরে খারাপ ব্যবহার করতে থাকে এবং আমাকে ধমকের সুরে বলে, এই তোর বাপ কই। তখন আমি তাদেরকে (রাজাকারদের) বলি আব্বার সাথে আমাদের কোনো যোগাযোগ নেই। তখন তারা আমার এই কথা শোনার পর আমার সাথে আরো খারাপ আচরণ করতে থাকে। তখন মামার রেখে যাওয়া জুতা দেখে রাজাকাররা বলে, ঐ যে তোর বাবার জুতা। তখন আমি তাদেরকে বলি যে, এটা মামার জুতা। তারা সেটা বিশ^াস করে নাই। উল্টো আমার সাথে এমন খারাপ আচরণ করেছে যে, তারা পারে না আমাকেই মেরে ফেলে। পরে তারা ঘরের বিভিন্ন কোণায় খোঁজাখুঁজি করে বাবাকে না পেয়ে গালি-গালাজ করে চলে যায়।
এর কয়েকদিন পরে পাকিস্তানী সৈন্যরা ডাকাতিয়া নদী দিয়ে লঞ্চে গাজীপুরের দিকে যাওয়ার পথে নানা বাড়িতে এলোপাতাড়ি গুলিবর্ষণ করতে করতে যায়। সেদিন আমরা প্রাণে বেঁচে যাই। পরে আমরা ভয়ে আবার আমাদের গ্রামের বাড়ি শোল্লায় চলে আসি। সেখানে আমার বাবার কারণে আমাদের ওপর হামলা হওয়ার আশঙ্কায় বালিথুবা ভূঁইয়া বাড়িতে (বাবার আত্মীয়) আশ্রয় নেই। এই বাড়ির একটি রুমে মানবেতরভাবে ১ মাস আমরা থাকি। খাবারের কষ্টসহ বিভিন্ন অসুবিধার মধ্য দিয়ে পুনরায় আবার গ্রামের বাড়িতে চলে যাই এবং ৮ ডিসেম্বর মুক্ত দিবসের সময় আমাদের বাড়িতে আবার পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর সদস্যরা এলোপাতাড়ি গোলাগুলি করে। ওইদিনই আমাদের মৃত্যুর সম্ভাবনা ছিলো। তার স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে এখনো আমাদের বাড়ির টিনের বেড়ায় গুলির চিহ্ন আছে। গোলাগুলির কারণে আমরা ওইদিন প্রকট শীতের মধ্যে খালের পানি পাড়ি দিয়ে অন্য বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেই। সারাদিন আমরা ওই বাড়িতে না খেয়ে ছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা মাঝে মাঝে চুপিচুপি রেডিওতে এমআর মুকুলের চরমপত্র শুনে অনেক সময় উজ্জীবিত হয়েছি। তার কণ্ঠে ওইরকম কথা শুনে আমরা বুঝতাম, এইবুঝি দেশ স্বাধীন হয়ে যাচ্ছে।
আমরা রাতে বাড়ির উঠোনে বসে রেডিওতে চরমপত্র শুনতাম ভয়ে। স্বাধীনতা যুদ্ধচলাকালীন এলাকার বিভিন্ন চিহ্নিত চোর পাকিস্তানীদের পাশে ছিলো। ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হওয়ার ২/৩ দিন পর আব্বা বাড়িতে আসেন। বাবা বাড়িতে ফিরে আসায় আমার দাদী, আম্মাসহ আমরা সকলেই খুশি হয়ে উঠি। দীর্ঘ ৯ মাসের ভাতের কষ্ট, খাওয়ার কষ্ট এবং জীবনের নিরাপত্তার ঝুঁকি শেষ হওয়াতে সে কী আনন্দ। স্বাধীনতার পর আমাদের ইউনিয়নে রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যান আব্বাকে বানানো হয়। কিন্তু সততার সাথে রিলিফ কমিটি পরিচালনা করা অনেক কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। যার ফলে রিলিফ কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব ছেড়ে দিয়ে আব্বা চাঁদপুর চলে আসেন এবং আইন পেশার সাথে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৭৩ সালে নির্বাচনে প্রথমে বঙ্গবন্ধু আমার বাবাকে ফরিদগঞ্জ থেকে নৌকা প্রতীকে মনোনয়ন দেন। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ভাগিনা শেখ মনির রুমমেট হওয়ার কারণে এম সফিউল্লাহকে মনোনয়ন দেয়ার জন্য বঙ্গবন্ধুকে অনুরোধ করে তার ভাগিনা শেখ মনি। তখন বিএলএফের প্রধান আঃ মমিন খান মাখন এবং আব্বাসহ কতিপয় নেতা বঙ্গবন্ধুর কাছে গেলে তিনি বলেন, ‘আমার ভাগিনা এই সিট দাবি করেছে। আবুল ফজল পরবর্তীতে তোকে আমি দেখবো।’
১৯৭৪ সালে দেশে বন্যা এবং চরম দুর্ভিক্ষ দেখা দিলে আওয়ামী লীগের পক্ষে রিলিফ দেয়াসহ বিভিন্ন কাজে জড়িয়ে পড়লে আব্বা গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন চাঁদপুর মহকুমা কৃষকলীগের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন। ’৭৪ সালে দুর্ভিক্ষের ওই দুর্দিনে বঙ্গবন্ধু বিশে^র বিভিন্ন দেশ থেকে সাহায্য-সহযোগিতা এনে দেশের মানুষকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছেন। ওই সময় আমরা দিনে ঠিকমতো একবার মুখে ভাত জোগাতে পারি নি। ’৭৪-এর শেষদিকে আব্বা প্রচ- হার্টের রোগী হিসেবে দীর্ঘ ১ বছরের মতো প্রচ- অসুস্থ ছিলেন এবং বিছানায় ছিলেন। ’৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারকে হত্যা করার পর তৎকালীন সময় পুলিশ আব্বাকে ধরে নিতে এসেছিলো। তখন আমরা শহরের গুয়াখোলা এলাকায় থাকতাম। কিন্তু আব্বার অবস্থা এমন খারাপ ছিলো যে, পুলিশ এসে আব্বাকে দেখে চলে যায়।
বাবা জীবিত থাকাবস্থায় স্কুল, মক্তব, মাদ্রাসাসহ মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি একজন ভালো আইনজীবী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরি করার সময় তৎকালীন টিএনও আব্বাকে যাচাই-বাছাই কমিটির সামনে উপস্থিত হয়ে যুদ্ধকালীন বিষয়ে জানতে চেয়ে চিঠি প্রদান করেন। আব্বা বলে দেন যে, আমি বঙ্গবন্ধুর কর্মী হিসেবে আওয়ামী লীগ করেছি, যুদ্ধ করেছি। আমার ছেলের সমান বয়সী টিএনও’র কাছে কিসের যাচাই-বাছাই। সে আমার থেকে কী জানতে চাইবে ? আব্বা না যাওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধের যাচাই-বাছাই কমিটি পরবর্তীতে আব্বার নাম দেয়নি।
ভাষা সৈনিক আবুল ফজল জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৯ সালে। তাঁর বাবার নাম মরহুম মনসুর আলী পাটওয়ারী এবং মায়ের নাম খায়রুন নেছা। মৃত্যুবরণ করেন ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। তাঁর অনেক পূর্বে আমাদের মা সালেহা খাতুন মারা যান। মৃত্যুকালে তিনি ৫ ছেলে-মেয়ে ও নাতি-নাতনি রেখে যান। এরা হলেন- অ্যাডঃ সেলিম আকবর (জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি), শাহিন জালাল (যুক্তরাষ্ট্রে ব্যবসার সাথে জড়িত), মুনিরা আক্তার (ব্যবসায়ী, সমাজসেবী), এহসান কবির (বর্তমানে মৃত, শিক্ষকতা করতেন) এবং হাসিনা বেগম হাসি (১৮তম বিসিএস ক্যাডার, অর্থনীতি বর্তমানে ইউনিসেফের সাথেত জড়িত)।
অনুলিখন : অ্যাডঃ মোহাম্মদ ইয়াছিন আরাফাত ইকরাম।