রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

সব খোলা বন্ধ শুধু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
ড. মোহাঃ হাছানাত আলী

করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রন রোধে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দেশের সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয়গুলোকেও অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। ২১ জানুয়ারি শুক্রবার এ নির্দেশনাসহ ছয়টি জরুরি নির্দেশনা জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, (১) জানুয়ারি ২১ (শুক্রবার) থেকে আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সকল স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকবে। (২) বিশ^বিদ্যালয়গুলো নিজ নিজ ক্ষেত্রে অনুরূপ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। (৩) রাষ্ট্রীয়/সামাজিক/রাজনৈতিক/ধর্মীয় সমাবেশ/অনুষ্ঠানে ১০০ জনের বেশি সমাবেশ করা যাবে না। এসব ক্ষেত্রে যারা যোগ দেবেন তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট/২৪ ঘণ্টার মধ্যে পিসিআর সার্টিফিকেট আনতে হবে। (৪) সরকারি-বেসরকারি অফিস, শিল্পকারখানায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবশ্যই ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট গ্রহণ করতে হবে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে দায়িত্ব বহন করবে। (৫) বাজার, মসজিদ, বাসস্ট্যান্ড, লঞ্চঘাট, রেলস্টেশনসহ সবধরনের জনসমাবেশে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। (৬) বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী মনিটর করবে। করোনার নতুন ধরণ ওমিক্রনসহ করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় গত ১০ জানুয়ারি ১১টি বিধিনিষেধ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। যা ১৩ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে কার্যকর হয়েছে। যদিও সেসব নির্দেশনা বাস্তবায়নে জনসচেতনতা পরিলক্ষিত হয়নি বরং তা বহুলাংশে উপেক্ষিত হয়েছে। নতুন বছরের শুরু থেকেই ওমিক্রন ভ্যারিয়েন্ট চোখ রাঙাচ্ছিল। গত কয়েকদিন ধরে দেশে করোনার দৈনিক সংক্রমণ হঠাৎই বাড়তে শুরু করে।

মহামারি শুরুর পর থেকে দেশে এ পর্যন্ত মোট ১৬ লাখ ৫৩ হাজার ১৮২ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ভাইরাসটিতে মারা গেছেন ২৮ হাজার ১৮০ জন। আক্রান্তদের মধ্যে মোট সুস্থ হয়েছেন ১৫ লাখ ৫৪ হাজার ৮৪৫ জন।

দেশে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ২১ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন পুনরায় এক চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে পতিত হলো এবং তাদের শিক্ষাজীবন আরো দীর্ঘায়িত হবার শঙ্কা তৈরি হলো।

তবে ইতোমধ্যেই রাজশাহী বিশ^বিদ্যালয়, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়, বুয়েট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ^বিদ্যালয়সহ দেশের অধিকাংশ বিশ^বিদ্যালয় অনলাইনে তাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার ঘোষণা দিয়েছে, যা নিঃসন্দেহে প্রশংসাযোগ্য। দেশের করোনা পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছে, যে মাত্রায় সংক্রমণের হার লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে তা যদি নিয়ন্ত্রণ করা না যায় তাহলে তা দেশের শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রতি পুনরায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। গত বছরের লকডাউনে বহু মানুষ চাকরি হারিয়ে পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন। বলার মতো কোনো নতুন কর্মসংস্থান দেশে আজও সৃষ্টি হয়নি। মাত্র দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মুখরিত হতে শুরু করেছে। প্রাণ ফিরে পেতে চলেছিলো ক্যাম্পাসের সবুজ চত্বরগুলো, তখন এ ধরনের ঘোষণা শিক্ষা ক্ষেত্রে বড় আঘাত। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মেয়াদ যেনো কোনভাবেই দীর্ঘায়িত না হয় সে বিষয়টি সংশ্লিষ্ট সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। এমনিতেই শিক্ষা ক্ষেত্রে যে সেশন জটের সৃষ্টি হয়েছে, আজকের ঘোষিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধের মধ্য দিয়ে তা আরও দীর্ঘায়িত হবে। তবে এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অনলাইন ক্লাস ও পরীক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখা গেলে এ ক্ষতি অনেকাংশে পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হবে। তবে তা দেশের প্রাথমিক ও গ্রামাঞ্চলের মাধ্যমিক এবং উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বাস্তবায়ন বেশ কষ্টকর হয়ে পড়বে। গ্রামের অনগ্রসর পরিবারের সন্তানদের পক্ষে ব্যয়বহুল প্রযুক্তি নির্ভর অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে নিয়মিত অংশগ্রহণ অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া ইন্টারনেটের ধীরগতি, এন্ড্রয়েড ফোন সেট না থাকা ও ইন্টারনেটের চড়া মূল্যের কারণে দেশে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম এখনও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য শিক্ষা পদ্ধতির স্বীকৃতি লাভ করতে পারেনি। দেশে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু রাখার লক্ষ্যে গ্রামাঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যার যতটুকু সামর্থ্য আছে তার সর্বোচ্চ কাজে লাগিয়ে শিক্ষা কার্যক্রমকে চালু রাখার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে বিদ্যালয়সমূহের গভর্নিং বডি, শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিবিড় সুপারভিশন এই কার্যক্রমকে ত্বরান্বিত করতে পারে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করা নিয়ে ইতোমধ্যেই সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। বিশ^বিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্তকে স্বাগত না জানালেও প্রাইমারী ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অনেকেই সরকারি সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। আবার সমাজের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ মনে করে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাণিজ্য মেলা, বিপণী-বিতান, শপিংমল, বিনোদন কেন্দ্র, পর্যটনকেন্দ্র, হাট-বাজার, কল-কারখানা চালু রাখা গেলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও চালু রাখা যেত। একই সাথে তারা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম অব্যাহত রাখারও দাবি জানিয়েছেন। অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করা অনেকটা ব্যয়বহুল পদ্ধতি হওয়ায় নি¤œ মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানদের পক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে দীর্ঘদিন অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করা অনেকাংশে কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে সরকার শিক্ষার্থীদের ডাটাবেজ তৈরি করে মোবাইল কোম্পানির সাথে চুক্তি করে শিক্ষার্থীদেরকে ফ্রি ইন্টারনেট সেবা প্রদান করার ব্যবস্থা করলে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমকে দেশে জনপ্রিয় ও কার্যকর পদ্ধতি হিসেবে সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য করে তোলা যেত। এ ধরনের ব্যবস্থা বিশ্বের অনেক দেশেই চালু আছে। কর্পোরেট সোস্যাল রেসপনসিবলিটির আওতায় দেশের ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী সংস্থা ও মোবাইল অপারেটর কোম্পনিগুলোর সাথে এ ব্যাপারে সরকার দ্রুত একটি সমঝোতা করে ফেলতে পারে। এমনটি হলে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি সহজলভ্য ও মন্দের ভালো হিসেবে সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হবে। তবে অনলাইন শিক্ষা পদ্ধতি কোনভাবেই ক্লাসরুম ভিত্তিক শিক্ষার বিকল্প হতে পারে না।

সরকার একই আদেশে করোনার ঝুঁকিহ্রাসে সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালতে অর্ধেক জনবল নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দিয়েছে। এতে করে বেসরকারি পর্যায়ে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে পুনরায় চাকরি হারানোর শঙ্কা তৈরি হয়েছে। কোনোভাবেই যাতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহ তাদের কর্মী ছাঁটাই করতে না পারে বা তাদের বেতন বন্ধ করে দিতে না পারে, বেতন কমিয়ে দিতে না পারে বা বিনা বেতনে কর্মীকে ছুটিতে পাঠাতে না পারে সে বিষয়ে সরকারের দৃশ্যমান তদারকি ও নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি। প্রয়োজন মতে সরকার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে আর্থিক প্রণোদনা প্রদান করতে পারে। করোনা সারা বিশ্বের সামগ্রিক অর্থনৈতিক অবস্থাকে নাজুক করে তুলেছে। করোনার নতুন ভেরিয়েন্ট ওমিক্রন ইউরোপ আমেরিকাসহ উন্নত বিশ্বে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন আক্রান্ত মানুষের সংখ্যার নতুন নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। মানব সভ্যতা অনেকটা স্থবির। রপ্তানি বাণিজ্যের সিংহভাগ দখল করা গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি অনেকটা শঙ্কার মধ্যে পড়ে যাবে সন্দেহ নেই। যদি দেশে করোনা পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়, বিমান যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য দারুণভাবে ব্যাহত হবে। তখন সঙ্গত কারণে ইউরোপ ও আমেরিকার ক্রেতাগণ পণ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে বিলম্ব করতে পারে। ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত মালিক-শ্রমিক উভয়কে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। তাই জীবন ও জীবিকা একইসাথে সচল রাখার জন্য এখন থেকেই কার্যকরি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সর্বক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে আরো কঠোর আইন প্রয়োগ জরুরি। এছাড়া টিকা কার্যক্রমকে বেগবান করতে হবে। যারা এখনও টিকা গ্রহণ করেনি তাদেরকে অনতিবিলম্বে টিকার আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য দেখানো বা শৈথিল্য প্রদর্শন পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে।

লেখক : প্রফেসর ড. মোহাঃ হাছানাত আলী, আইবিএ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়। ফৎযধংহধঃ৭৭@মসধরষ.পড়স

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়