প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর) রাজস্ব আদায়ে প্রায় সাড়ে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। প্রবৃদ্ধিতে আশার সঞ্চার হলেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় রাজস্ব আদায়ে বেশ পিছিয়ে আছে প্রতিষ্ঠানটি। সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী ছয় মাস বা বছরের অর্ধেক সময় পর ঘাটতি ১৭ হাজার ৮১ কোটি ৫৪ লাখ টাকা।
অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে ১ লাখ ৪৩ হাজার ২৯০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় হয়েছে প্রায় ১ লাখ ২৬ হাজার ২০৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৮৮ শতাংশ অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে এনবিআর। ২০২০-২১ অর্থ বছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার ৮৩ দশমিক ২৮ শতাংশ অর্জন করেছিলো প্রতিষ্ঠানটি।
এনবিআরের পরিসংখ্যান বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ছয় মাসে রাজস্ব আহরণের প্রধান তিন খাত আয়কর, ভ্যাট ও আমদানি-রফতানি শুল্ক কোনো খাতেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি, বরং রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত ভ্যাট বা মূসকে সাড়ে ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও রাজস্ব আহরণে পিছিয়ে আছে ৫ হাজার ৮৯৪ কোটি টাকার বেশি। তবে বেশি পিছিয়ে আছে আমদানি ও রফতানি শুল্কে। এ খাতে সাড়ে ১৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ঘাটতি ৭ হাজার ৯৫ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। সবচেয়ে কম ঘাটতি হয়েছে আয়কর খাতে। এ খাতে ঘাটতি প্রায় ৪ হাজার ৯১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা, প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৫ শতাংশ।
অন্যদিকে শুধু ডিসেম্বর মাসের হিসাবে তিন খাত মিলিয়ে পিছিয়ে আছে ৪ হাজার ২৮৯ কোটি ৬৭ লাখ টাকা। প্রায় ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধিতে ২৯ হাজার ৯১৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আহরণ করা হয়েছে ২৫ হাজার ৬৩৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
রাজস্ব আদায় প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আবু হেনা রহমাতুল মুনিম বলেন, রাজস্ব আদায়ে প্রবৃদ্ধি মোটামুটি সন্তোষজনক। এনবিআর থেকে যেসব সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আদায় বহুগুণ বেড়ে যাবে। সামনে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে।
ভ্যাট আদায়ে আরও সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, দেশে ভ্যাট দেয়া নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার। এ সংখ্যা আরও বাড়াতে হবে। দেশে লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান, কিন্তু ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আছে মাত্র সাড়ে ৩ লাখ। এজন্যে কমিশনারেটগুলোকে আরও সচেতন হতে হবে। কমিশনারদের এটি নিয়ে কাজ করতে হবে। নিবন্ধন বাড়ানোর পাশাপাশি ভ্যাট আহরণ বাড়াতে হবে। এটি কঠোরভাবে মনিটরিং করতে হবে। ভ্যাট দেয়ার যোগ্য প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভ্যাটের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
এনবিআর থেকে পাওয়া প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত আমদানি ও রফতানি পর্যায়ে শুল্ক আহরণে সরকারের লক্ষ্যমাত্রা ছিলো ৪৭ হাজার ২৯৭ কোটি ৯৯ লাখ টাকা। বিপরীতে এনবিআরের সংগ্রহ ৪০ হাজার ২০২ কোটি ১৩ লাখ টাকা। এ খাতে লক্ষ্যমাত্রার ৮৫ শতাংশ অর্জিত হয়েছে।
স্থানীয় পর্যায়ে মূসক বা ভ্যাট বাবদ আয়ের ৫২ হাজার ৪৮০ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর সংগ্রহ করেছে ৪৬ হাজার ৫৮৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। ছয় মাস শেষে পিছিয়ে আছে ৫ হাজার ৮৯৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা। এ খাতে প্রায় ৮৮ দশমিক ৭৭ শতাংশ রাজস্ব আদায় হয়েছে।
অন্যদিকে আয়কর বাবদ জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে ৪৩ হাজার ৫১৩ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এনবিআর আদায় করেছে ৩৯ হাজার ৪২১ কোটি ৬২ লাখ টাকা। যদিও এ খাতে সবচেয়ে বেশি ৮৮ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেছে এনবিআর।
অর্থবছরের প্রথম চার মাসে (জুলাই-অক্টোবর) রাজস্ব আদায়ে রেকর্ড ১৬ শতাংশের বেশি প্রবৃদ্ধিতেও লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এনবিআর আট হাজার ৭৫৩ কোটি এক লাখ টাকা পিছিয়ে ছিলো। পাঁচ মাস শেষ তা বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা। যদিও প্রবৃদ্ধি ছিলো প্রায় ১৫ শতাংশ। ছয় মাস শেষে প্রবৃদ্ধি কিছুটা কমার পাশাপাশি রাজস্ব ঘাটতি আরও বেড়ে ১৮ হাজার কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে।
উল্লেখ্য, ৪১ হাজার ১১৮ কোটি ২০ লাখ টাকার রাজস্ব ঘাটতি নিয়ে গত ২০২০-২১ অর্থবছর শেষ করেছিলো এনবিআর। চলতি ২০২১-২০২২ অর্থবছরের বাজেটে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৯ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে এনবিআরের লক্ষ্যমাত্রা তিন লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর বা ভ্যাট থেকে সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ এক লাখ ২৮ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, আয়কর ও ভ্রমণ কর থেকে এক লাখ পাঁচ হাজার ৪৭৫ কোটি টাকা এবং আমদানি শুল্ক থেকে ৯৫ হাজার ৬৫২ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সূত্র : ঢাকা পোস্ট।