রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শনিবার চাঁদপুরে ৪ শতাধিক নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে ম্যারাথন প্রতিযোগিতা
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।

প্রকাশ : ২৯ ডিসেম্বর ২০২১, ০০:০০

সুবর্ণ-শতক-এর পাঠ পর্যালোচনা
মোঃ সাইদুজ্জামান

২০২০-২০২১ সাল বাঙালি জাতির জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে মুজিববর্ষ পালিত হচ্ছেÑযা ১৭ মার্চ ২০২০ থেকে শুরু হয়ে ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত চলবে। এই মহান নেতা ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে মধুমতীর কোল ঘেঁষে অবস্থিত টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ২৬ মার্চ ২০২১ উদ্যাপিত হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী। বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে হাজার বছরের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে বাঙালি মুক্তির স্বাদ লাভ করে ১৯৭১ সালের এই দিনে।

সাহিত্য একাডেমী প্রকাশিত সুবর্ণ-শতক (মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ) গ্রন্থটি জাতীয় জীবনের এই গুরুত্বপূর্ণ দুটি ঘটনাকে বিবেচনায় রেখে বিভিন্ন প্রবন্ধ, গল্প, কবিতা দিয়ে সাজানো হয়েছে।

মুজিববর্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন, কর্ম নিয়ে বহু সাহিত্য রচিত হয়েছে এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষেও গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু শেখ মুজিবের জন্মশতবর্ষ ও স্বাধীনতার ৫০ বছর ফুর্তি এই বিষয় দুটি একত্রে নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ গ্রন্থ ‘সুবর্ণ-শতক’ কেবল সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর প্রকাশ করেছে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার।

‘সুবর্ণ-শতক’ গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছেন পীযূষ কান্তি বড়–য়া ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান। গ্রন্থটির পৃষ্ঠপোষক জেলা প্রশাসক, চাঁদপুর (সভাপতি, সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর) এবং উপদেষ্টা সম্পাদক কাজী শাহাদাত (মহাপরিচালক, সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর)। ১৫২ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থের প্রচ্ছদ এঁকেছেন মুজিব জন্মশতবর্ষের লোগোর ছবি অবলম্বনে ইউনুস নাজিম। গ্রন্থটিতে মোট ৪টি ভাগ রয়েছে। ১ম ভাগে রয়েছে প্রবন্ধ। এতে মোট প্রবন্ধ রয়েছে ২১ টি, ২য় ভাগে ২টি ছোটগল্প, ৩য় ভাগে ৮টি কবিতা এবং ৪র্থ ভাগে রয়েছে পরিশিষ্ট।

গ্রন্থের ১ম ভাগে সন্নিবেশিত প্রবন্ধগুলোর শিরোনাম হলো: ‘চাঁদপুরের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ’, ‘গান্ধীর দর্শন এবং শেখ মুজিবের রাজনীতি’, ‘ত্রিকালদর্শী মহানায়কের অমর কাব্য’, ‘বঙ্গবন্ধু বেঁচে আছেন স্বপ্নের সীমানায় গৌরবের আকাক্সক্ষায়’, ‘আমার উপলব্ধিতে বঙ্গবন্ধু, আমার ভালোবাসায় বঙ্গবন্ধু’, ‘বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাশার বাংলাদেশ’, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আমাদের প্রাপ্তি’, ‘উন্নয়নের অর্থনীতি: যে বিষয়ে ভাবতে হবে’, ‘বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাব’, ‘সর্বোচ্চ ত্যাগের প্রতিভাসে বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুর বিদেশি বন্ধুরা’, ‘মুজিবের চোখে রবীন্দ্র-নজরুল’, ‘স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে বার্ধক্য বিষয়ে অর্জন’, ‘ভাষা-আন্দোলন ও শেখ মুজিবুর রহমান’, ‘তাঁর আপন আলোয় ভুবনভরা’, ‘ছোটগল্পে মুক্তিযুদ্ধ’, ‘সম্প্রীতির এক মানবিক রাষ্ট্রের স্বপ্ন দেখতেন বঙ্গবন্ধু’, ‘ছাত্রনেতা শেখ মুজিব’, ‘বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা : জনক-দুহিতার রসায়ন’, ‘স্বাধীনতা-উত্তর উপজেলাভিত্তিক সাহিত্য চর্চা: প্রেক্ষিত হাজীগঞ্জ’, ‘কৃষক-অন্তঃপ্রাণ বঙ্গবন্ধু’। ২য় ভাগে ছোটগল্প দুটি হলো: ‘যুদ্ধকথা’ ও ‘না-ফেরা’। ৩য় ভাগের কবিতাগুলোর শিরোনাম: ‘টুঙ্গিপাড়ায় ঘুমাও বাংলাদেশ’, ‘মাথা রাখি উঁচু’, ‘বিজয় বহর’, ‘বঙ্গবন্ধুর উদ্দেশ্য খোলা পঙক্তি’, ‘কবিতা’, ‘তারপর তুমি কবি’, ‘জীবনের অবলম্বন’, ‘ভাটির জল’। ৪র্থ ভাগ পরিশিষ্টে রয়েছে ‘সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর নবপর্যায়ের সাহিত্য আড্ডার সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন’ এবং ২০১২ সালে ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত ‘সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর-এর নির্বাহী কমিটি’র তালিকা।

পঞ্চাশ বছরের ঘটনাবহুল জীবনে নানা বাঁক, উত্থান-পতন ঘটেছে বঙ্গবন্ধুর জীবনে। তাঁর জীবন একদিক থেকে বাঙালির জাতিসত্তা বিকাশের সময়। তিনি বাঙালি রাষ্ট্রের স্বাধীনতায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। তিনি ইতিহাসের নির্মাতা এবং ইতিহাসের মানসপুত্র।

তরুণ শেখ মুজিবের দায়িত্বশীল ছাত্রনেতা, ভাষা-আন্দোলন সংগ্রাম, ছাত্রনেতা থেকে জাতীয় নেতা, জাতীয় নেতা থেকে ইতিহাসের নির্মাতা, এরপর জাতির পিতায় পরিণত এবং তাঁর সপরিবারে নৃশংস হত্যাকা-ের চিত্র এই গ্রন্থের বিভিন্ন লেখায় উঠে এসেছে। পাশাপাশি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে আমাদের প্রাপ্তি, অর্থনৈতিক উন্নয়ন, মুক্তিযুদ্ধে বিদেশিদের অবদান, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্মে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের প্রভাব, কৃষিসহ দেশের সার্বিক উন্নয়নে বঙ্গবন্ধুর অবদান গ্রন্থটিতে তুলে ধরা হয়েছে। বইটির প্রথমে যে প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে তাহলো ‘চাঁদপুরের জনসভায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণ’ (২০ ফেব্রুয়ারি ১৯৭০)। ভাষণে তিনি রক্ত দিয়ে বাংলার দাবি আদায়ের কথা বলেছেন। চাঁদপুর কলেজ মাঠে বঙ্গবন্ধুর দেয়া এই ভাষণটি কেবল চাঁদপুরবাসীকে নয়, সারা বাংলার মানুষকে উজ্জীবিত করেছিলো। যুদ্ধ-পূর্ববর্তী সময়ে চাঁদপুরে তিনি যে বক্তৃতা দিয়েছেন তা অনেকের অজানা। এই প্রবন্ধ সংযোজনের মাধ্যমে পাঠকের সামনে অজানা তথ্যের দ্বার উন্মোচিত হয়েছে।

মাদারীপুরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শুরু হলেও গোপালগঞ্জে মিশনারি স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে ভর্তি হন কিশোর মুজিব। ছাত্রাবস্থায় তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর সঙ্গে তাঁর পরিচয় ঘটে। তখন থেকেই সাহসী, স্পষ্টবাদী, দক্ষ, আন্তরিক এক তরুণ ছাত্রনেতা মুজিবের সাক্ষাৎ পাই। পরবর্তীতে ইসলামিয়া কলেজে সোহ্রাওয়ার্দীর আস্থাভাজন হওয়া, কলেজের জিএস নির্বাচিত এবং ব্রিটিশবিরোধী প্রচারণা ও পাকিস্তান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ১৯৪৬ সালের ১৬ আগস্ট ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ বা ‘প্রত্যক্ষ সংগ্রাম দিবস’ পালনে তিনি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।

নানা ঘটনা ও পট-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে দেশভাগের পর ছাত্রনেতা শেখ মুজিব ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা, ভাষা-আন্দোলন সংগঠন এবং আওয়ামী লীগ গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বায়ান্নর ভাষা-আন্দোলনের সময় শেখ মুজিব ছিলেন উদীয়মান তরুণ নেতা। এ সময়ে তিনি ফরিদপুর কারাগারে বন্দি এবং অনশনরত। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে ছাত্রদের মিছিলে সরকার বাহিনীর গুলিতে শহিদ হন সালাম, রফিক, বরকতসহ অনেকে। বঙ্গবন্ধু তখন জেলে অনশনরত থেকেও এই ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর জীবনের একটি বড় অংশ কেটেছে কারাগারে। মাত্র ৫৫ বছরের জীবনে তিনি ৪৬৮২ দিন কারাভোগ করেছেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবন ও কর্মে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যের প্রভাব অনেকখানি। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের কর্মী গৃহশিক্ষক হামিদ মাস্টারের হাতে রাজনৈতিক দীক্ষার সাথে সাথে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে জানার আগ্রহও তাঁর সৃষ্টি হয়। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির দুঃসময়ে একজন কর্ণধারের আগমন কামনা করেছিলেন; যিনি ত্রাতারূপে আবির্ভূত হয়ে সব ভয় বাধা ও উত্তাল ঊর্মিপ্রবাহ অতিক্রম করে জাতিকে পৌঁছে দেবেন পাড়ে। “তিনি যেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই বহুল আকাক্সিক্ষত ‘মহামানব’ এবং কাজী নজরুল ইসলামের পরাধীন বাঙালি জাতির ‘কান্ডারি” (পৃ: ৮০-৮১)।

বঙ্গবন্ধু গান্ধীজির অসাম্প্রদায়িক ও অহিংসার আদর্শে বিশ্বাসী ছিলেন। তবে গান্ধীজির কাছে অহিংসা ছিল দর্শন আর বঙ্গবন্ধুর কাছে তা ছিল কৌশল। ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশে সশস্ত্র বিদেশি শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে প্রথম অহিংস অসহযোগ আন্দোলনের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই সঙ্গে অস্ত্র ধারণে প্রস্তুত হওয়ার জন্যও জাতিকে ডাক দিয়েছিলেন। জাতি তাঁর ডাকে সশস্ত্র মুক্তি সংগ্রাম শুরু করে’ (পৃ: ১৯) । এই রাখাল রাজার বজ্রকণ্ঠ দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং চাঁদপুরের ‘অলিপুর’ গ্রামের সদ্য কৈশোর উত্তীর্ণ যুবকরাও যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশ-মাতৃকার মুক্তির জন্য। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাও (বর্তমানে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী) পিতার আদর্শে উজ্জীবিত ও অনুপ্রাণিত ছিলেন সবসময়। তাইতো বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে এবং ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের চেতনায় তিনি বাংলাদেশকে পৌঁছে দিয়েছেন উন্নয়নের মহাসড়কে।

স্বাধীনতা-পরবর্তী বাংলাদেশ সংবিধান প্রণয়নে বঙ্গবন্ধু নির্দেশিত রাষ্ট্রীয় চার মূলনীতিÑগণতন্ত্র, ধর্ম নিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কৃষিই বাংলাদেশের উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তিÑবঙ্গবন্ধু এটি অনুধাবন করেছিলেন বলেই কৃষির অমিত সম্ভাবনাকে ঘিরেই একটি সুখী ও সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন দেখতেন এবং এজন্য তিনি অক্লান্ত শ্রমও দিয়েছেন। অথচ স্বাধীন বাংলাদেশে সোনার বাংলা গড়ার এই কারিগরকে বিপথগামী কিছু কুলাঙ্গার সেনাসদস্যের ষড়যন্ত্রের কারণে মাত্র সাড়ে তিন বছরের মাথায় সপরিবারে জীবন দিতে হয়; যা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল।

স্বাধীনতার এই পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’ থেকে আজ সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করছে উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে। পঞ্চাশ বছরে, বিশেষ করে আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় বসার পর দেশের প্রভূত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের ফলে বাংলাদেশ ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের মতো সফলতা দেখাতে পেরেছে। এই সময়ে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা, এমজিডি অর্জন, এসজিডি বাস্তবায়নসহ শিক্ষা, স্বাস্থ্য, লিঙ্গ সমতা, কৃষি, দারিদ্র্যসীমা হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন, ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল, পোশাক শিল্প, ঔষধ শিল্প, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি প্রভৃতি অর্জন হয়েছে। এছাড়াও পদ্মা সেতু, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, পায়রা গভীর সমুদ্রবন্দর, ঢাকা মেট্রোরেলসহ দেশের মেগা প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের পথে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কেবল রাষ্ট্রনেতা বা বিশ্বনেতারাই নন, বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন পদ ও পেশার (লেখক, গায়ক, কূটনীতিক, রাজনীতিবিদ, ধর্মযাজক, সমাজসেবী, চিকিৎসক) মানুষেরা ভ্রাতৃত্ব আর সংহতি প্রকাশ করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন। তাদের মধ্যে নেদারল্যান্ডের সাইমন ওডারল্যান্ড (মুক্তিযোদ্ধা), ভারতের মোহাম্মদ আলী (সৈনিক), অন্নদাশংকর রায় (ছড়াকার), গৌরি প্রসন্ন মজুমদার (গীতিকার), রবিশঙ্কর (কণ্ঠশিল্পী), ইংল্যান্ডের লুসি হল্ট (সিস্টার), সাইমন ড্রিং (সাংবাদিক), মার্ক টালি (সাংবাদিক), অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস (সাংবাদিক), ইতালির মারিনো রিগন (ফাদার), মার্র্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিডনি শনবার্গ (সাংবাদিক), অ্যালেন গিন্সবার্গ (কবি), টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ইমেরিটাস জোসেফ ও’কনেল, আর্জেন্টিনার ভিক্টারিয়া ওকাম্পো (লেখক), ফ্রান্সের আঁদ্রে মার্লো (লেখক), বিটল্স ব্যান্ডের জর্জ হ্যারিসন, সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপ্রধান নিকোলাই পদগর্নি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী প্রিয়দশির্নী ইন্দিরা প্রমুখ উল্লখযোগ্য।

গ্রন্থে উপস্থাপিত দুটি ছোটগল্পই মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক; যার একটিতে মুক্তিযুদ্ধের পর যুদ্ধের কাহিনি নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার বই রচনার সংগ্রাম এবং অবশেষে সফলকাম হওয়া, অন্যটিতে এক বীর মুক্তিযোদ্ধার যুদ্ধ শেষেও বাড়ি না ফেরার ঘটনা বর্ণিত। গ্রন্থটিতে আটটি কবিতা স্থান পেলেও এই আটটি কবিতার মধ্য দিয়ে স্বল্প পরিসরে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ সম্পর্কে পাঠকরা ধারণা পাবে।

কোনো গ্রন্থই রচনা সহজ কাজ নয়। এর সাথে সংশ্লিষ্ট সকলকে যথেষ্ট শ্রম দিতে হয়। তারপরেও সামান্য ভুল-ভ্রান্তি থাকা অসম্ভব কিছু নয়। মনোযোগী পাঠকের কাছে বইটির কিছু দুর্বলতা সহজেই ধরা পড়ে। গ্রন্থের সূচিপত্রে প্রবন্ধ এবং ছোটগল্পের শিরোনাম রয়েছে; কিন্তু কবিতাংশে কবিতার নাম উল্লেখ করা হয়নি, কেবল কবির নাম রয়েছে। ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও আমাদের প্রাপ্তি’ প্রবন্ধের (পৃ. ৩৩) ৫মÑ৭ম লাইনে হয়তো মুদ্রণজনিত প্রমাদের কারণে বাক্যটি অসম্পূর্ণ ও দুর্বোধ্য মনে হয়েছে। বানান ও শব্দ ব্যবহারে সম্পাদকম-লী আরো সতর্ক ও মনোযোগী হলো ভালো হতো। সংম্বর্ধনা (পৃ. ১৫), দেশী বিদেশী (পৃ. ২৯) কাহিনী (পৃ. ৩০, ৫০, ৯৪), অঙ্গীকারাবদ্ধ (পৃ. ৩২), রপ্তানী (পৃ. ৩৪), খিস্টাব্দের (পৃ. ৪৯), মুগ্ধা (পৃ. ৪৯), হিজরী (পৃ. ৫২), খ্রিঃ (পৃ. ৫২), মিশনারী (পৃ. ৫৮), লেলিন (পৃ. ৭৫), পল্লীর (পৃ. ৯৪), ইসলামী (পৃ. ৯৫), কল্পকাহিনী (পৃ. ৯৬), জহুরী (পৃ. ১০০), অসাম্প্রদায়িক (পৃ. ১০১) , কারাবন্দী (পৃ. ১১৩), কা-ারি (পৃ. ১১৫), গ্রীক (পৃ. ১১৬), স্বাধীনতোত্তরকালে (পৃ. ১১৬), প্রজ্জ্বালন (পৃ. ১১৬), ঝা-া (পৃ. ১১৮), খাতওয়ারী (পৃ. ১১৯), মহামারী (পৃ. ১১৯), শহীদের (পৃ. ১২০), ভা-ার (পৃ. ১২৩), সুুখি (পৃ. ১২৪),

ঠা-া (পৃ. ১২৬), নাভী (পৃ. ১৩৫), মধুমতি (১৪২), শোকগাঁথা (১৪২), এবারে (পৃ. ১৪৩), সংগাম (পৃ. ১৪৩), ঝরণা (পৃ. ১৪৪) এই শব্দগুলো হবে যথাক্রমে সম্বর্ধনা, দেশি বিদেশি, কাহিনি, অঙ্গীকারবদ্ধ, রপ্তানি, খ্রিস্টাব্দের, মুগ্ধ, হিজরি, খ্রি., মিশনারি, লেনিন, পল্লির, ইসলামি, কল্পকাহিনি, জহুরি, অসাম্প্রদায়িকতা, কারাবন্দি, কান্ডারি, গ্রিক, স্বাধীনতা-উত্তরকালে, প্রজ্বালন, ঝান্ডা, খাতওয়ারি, মহামারি, শহিদের, ভান্ডার, সুুখী, ঠান্ডা, নাভি, মধুমতী, শোকগাথা, এবারের, সংগ্রাম, ঝরনা। কমা, হাইফেন ব্যবহারেও ঘাটতি রয়েছে। যেমনÑরবীন্দ্র, নজরুল, সুকান্তজয়ন্তী হবে রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্তজয়ন্তী (পৃ. ১১৭)। অনেক প্রবন্ধের ক্ষেত্রেই যে সকল উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে; সেখানে তথ্যসূত্র উপস্থাপন করা হয়নি। বইয়ের ১০২ পৃষ্ঠায় বর্ণিত “২৯ জুলাই বোম্বে শহরে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগ কাউন্সিলে জিন্নাহ সাহেব ১৬ আগস্ট তারিখে ‘ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে’ ঘোষণা করলেন”। এখানে কত খ্রিস্টাব্দে এই ঘোষণা দেওয়া হলো তার উল্লেখ নেই। যেহেতু পূর্ব আলোচনার কোথাও সালের কথা বলা হয়নি, এতে পাঠক বিভ্রান্তির মধ্যে পড়বে। কোথাও কোথাও উদ্ধৃতি চিহ্ন শুরু আছে শেষ নেই, আবার উদ্ধৃতি চিহ্ন শুরু নেই, শেষ আছে (পৃ. ২৮, ৪৯)।

সামান্য সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সুবর্ণ-শতক (মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ) একটি চমৎকার গ্রন্থ। উপদেষ্টা সম্পাদক, সম্পাদকদ্বয় ও লেখকবৃন্দ যে কঠোর পরিশ্রম করেছেন তার ছাপ রয়েছে বইটিতে। বইয়ের পা-ুলিপি প্রণয়ন, সম্পাদনা, গবেষণা ও প্রামাণ্যকরণের কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই। সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর বইটি প্রকাশ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে। গ্রন্থটিতে বঙ্গবন্ধুর জীবনের না আসা তথ্য ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর যে বিষয়গুলো উঠে আসেনি বর্তমান ও ভবিষ্যতের গবেষক তা বিশ্লেষণ করবেন। গ্রন্থেও নতুন তথ্য, উপাত্ত সংযোজিত হবে এবং এর সকল সীমাবদ্ধতা পরবর্তী সংস্করণে সংশোধিত হবে বলে আশা করা যায়।

সুবর্ণ-শতক (মুজিব শতবর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী স্মারকগ্রন্থ) ॥ পীযূষ কান্তি বড়–য়া ও মুহাম্মদ ফরিদ হাসান (সম্পাদনা); সাহিত্য একাডেমী, চাঁদপুর। প্রথম প্রকাশ : আগস্ট ২০২১; পৃষ্ঠা : ১৫২ ॥ মূল্য ৩০০ টাকা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়