দুর্নীতিবিরোধী সামাজিক আন্দোলনকে তৃণমূল পর্যায়ে আরও বিস্তৃত করা এবং সেবাগ্রহীতাদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সেবাখাতের সুশাসন নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পার্টিসিপেটরি অ্যাকশন এগেইনস্ট করাপশন : টুওয়ার্ডস্ ট্রান্সপারেন্সি অ্যান্ড অ্যাকাউন্টেবিলি (প্যাকটা) প্রকল্পের আওতায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত করে সেবা গ্রহণের অভিজ্ঞতার আলোকে তৃণমূল পর্যায়ের সেবাদানকারী নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানসমূহে স্বচ্ছতা-জবাবদিহিতা বৃদ্ধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চাঁদপুর-এর শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, চাঁদপুর-এর সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে ২৪ নভেম্বর ২০২১ অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) গঠন বিষয়ক দুটি সভা অনুষ্ঠিত হয়।

রেলওয়ে শিশু বিদ্যালয়ের হলরুমে বেলা ১১টা গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) গঠন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সনাকের সাবেক সভাপতি ও প্যাক্টা পাইলটিং বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক কাজী শাহাদাত এবং আড়াইশ’ চাঁদপুর শয্যাবিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি) গঠন বিষয়ক সভা অনুষ্ঠিত হয় কে.জি. সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বিকেল ৪টায়। এতে সভাপতিত্ব করেন সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম।

উক্ত সভায় সনাকের সাবেক সভাপতি ও প্যাক্টা পাইলটিং বিষয়ক উপ-কমিটির আহ্বায়ক কাজী শাহাদাত বলেন, এসিজি মূলত বিদ্যালয়ের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং সুশাসন নিশ্চিত করে শিক্ষার মানোন্নয়নের জন্যে কাজ করবে। এছাড়া বিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্যে কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করবে। আমরা কোনো পুলিশি অ্যাকশন গ্রুপ নই। আমরা একটি প্রতিষ্ঠানের সেবার মানোন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করি। যারা সচেতন, যাদের মধ্যে শুদ্ধাচার আছে, যারা দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করতে আগ্রহী আমরা সেই সমস্ত মানুষদের নিয়ে এসিজি গঠন করবো। আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে একটি বড় তালিকা প্রণয়ন করেছি। তারপর যাচাই-বাছাই সাপেক্ষে আমার আজ আমরা আপনাদেরকে নির্বাচন করেছি। আমরা আশা করছি, আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় সনাক-চাঁদপুরের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন আরও ত্বরান্বিত হবে।

তিনি গুয়াখোলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়কেন্দ্রিক ১৫ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ (এসিজি)-এর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। সভায় উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে মু. মঈন উদ্দিন পাটওয়ারী ফুটন-কে সমন্বয়কারী এবং নাছরিন আক্তার ও হাবীবুর রহমান-কে সহ-সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন জনি চন্দ্র দাস, সাবরিনা ইয়াসমিন নূহা, খন্দকার ফয়সাল রহমান সাব্বির, জয়নব বিনতে মাইনুদ্দিন, সেলিনা আক্তার, উম্মে কুলছুম, নদী বর্মণ, রাজন চন্দ্র দাস, রাকিবুল ইসলাম, মোঃ ইউনুছ পাটওয়ারী, আল-আমিন সানি ও তুষার কান্তি দাস।

সনাক সভাপতি শাহানারা বেগম বলেন, আমরা ইয়েস গ্রুপকে যেভাবে সক্রিয় দেখছি তেমনি আপনাদেরকে অর্থাৎ অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপের সদস্যদেরও সক্রিয় দেখতে চাই। আপনাদের মতো মানুষগুলোকে পেয়ে আমরা অনেকটা আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা ও সুশাসন থাকলে দুর্নীতি এমনিতেই কমে যাবে। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিরুদ্ধে আরও জনসচেতনতা তৈরির জন্যেই অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ গঠন করা হয়। আর এই এসিজি গ্রুপ প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কাজ করবে।

তিনি আড়াইশ’ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালকেন্দ্রিক ১৫ সদস্যবিশিষ্ট অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। উপস্থিত সকলের মতামতের ভিত্তিতে মাইনুল ইসলাম মানিক-কে সমন্বয়কারী এবং আশিক বিন রহিম ও শিল্পী সেন-কে সহ-সমন্বয়কারী হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। গ্রুপের অন্য সদস্যরা হলেন মোঃ হাসান খান মিশু, ফাতেমা তুজ জোহরা, মোঃ জসিম উদ্দিন, প্রণব চন্দ্র দাস, সাদ আল-আমিন, মোঃ আরিফ সরকার, নূরজাহান আক্তার, মু. আঃ হোসাইন রিটন, মারিয়া জাহান, শাহরিয়ার পলাশ, মাসুদুর রহমান মাসুম ও আতিকুর রহমান রুবেল।

অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ গঠনের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, এটা কি, কেনো গঠন করা হবে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখেন টিআইবির সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের কো-অর্ডিনেটর কাজী শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, পৃথিবীতে বহু ধরনের মানুষ আছে। তবে মানুষের মতো মানুষ হওয়াটাই সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রত্যেক মানুষের আজীবন লালিত স্বপ্ন একটা। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের পথচলা একটু শান্তির জন্যে। মানুষ স্বপ্নবাজ। আমরা সবাই স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। আমরা স্বপ্ন বিক্রি করি। আমরা আইনের শাসন ও দুর্নীতিমুক্ত একটি বাংলাদেশ দেখতে চাই। আমরা অনেক সময় নিজের অজান্তেই নিজের স্বপ্নটাকে বিক্রি করে দিই।

তিনি বলেন, আজকে যারা এ গ্রুপের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্যে এসেছেন তারা প্রত্যেকেই বয়সে তরুণ। পাশাপাশি সনাকে ১৫-২৭ বছর বয়সী তরুণ প্রজন্মদের নিয়ে একটি ইয়েস গ্রুপ রয়েছে। যারা সনাকের দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে। দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি গণজাগরণ সৃষ্টির জন্যে ১৯৯৬ সাল থেকে টিআইবি বাংলাদেশে কাজ করছে। তারপর দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটা তরঙ্গ সৃষ্টির জন্যে, বস্তুনিষ্ঠ পরিবর্তনের জন্য এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণজোয়ার সৃষ্টির জন্যে বেশ কয়েকটি প্রকল্পে টিআইবি ও স্থানীয় পর্যায়ে সনাক কাজ করছে। সনাকের ও অংশীজনের পরামর্শে প্যাক্টা প্রকেল্প টিআইবি কয়েকটি খাতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করবে।

তিনি বলেন, প্যাক্টা প্রকল্পটির পরীক্ষামূলক বাস্তবায়নের জন্যে বাংলাদেশের ৪৫টি সনাকের মধ্যে ৯টি সনাকে কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হবে। তার মধ্যে চাঁদপুর সনাক একটি। সনাক-চাঁদপুর যেকটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ করবে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক একটি করে অ্যাকটিভ সিটিজেন গ্রুপ গঠন করা হবে। আপনারা প্রতিষ্ঠানের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে পরবর্তীতে ওই প্রতিষ্ঠানের সাথে আলোচনা করে সমস্যা সমাধানের জন্যে ভূমিকা পালন করবেন। আপনাদের এ সকল কার্যক্রম বান্তবায়ন করার জন্যে সনাক-টিআইবি সব ধরনের সহযোগিতা করবে।

তিনি আরো বলেন, আপনাকে যদি দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে হয় তাহলে সবার আগে আপনাকে স্বচ্ছ থাকতে হবে। আপনারা হয়তো দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলতে চান। হয়তো কোনো প্লাটফর্ম না থাকার কারণে বলতে পারছেন না। টিআইবি আপনাদেরকে আজ থেকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে একটা প্লাটফর্ম তৈরি করে দিয়েছে। আমরা চাই ১৬ কোটি মানুষের ৩২ কোটি চোখে জোনাকির আলো জ্বালাতে। আমরা আশা করছি, আপনাদের সার্বিক সহযোগিতায় আমাদের সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে। তিনি এসিজি গ্রুপে যুক্ত হওয়ার জন্যে সবাইকে ধন্যবাদ জানান।

টিআইবির ক্লাস্টার কো-অর্ডিনেটর মোঃ জসিম উদ্দিনের সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন সনাকের সহ-সভাপতি ডাঃ পীযূষ কান্তি বড়ুয়া, সদস্য রফিক আহমেদ মিন্টু। অনুভূতি ব্যক্ত করেন মু. মঈন উদ্দিন পাটওয়ারী ফুটন, নাছরিন আক্তার, হাবীবুর রহমান, মাইনুল ইসলাম মানিক, আশিক বিন রহিম ও শিল্পী সেন।

উপস্থিত ছিলেন সনাক-চাঁদপুরের স্বজন, ইয়েস ও ইয়েস ফ্রেন্ডস্ গ্রুপের দলনেতা, সহ-দলনেতাসহ সদস্যবৃন্দ।