বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৩ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ২১ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০

সম্পত্তির লোভে জন্মদাতা পিতাই আমাকে মৃত দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ নিলেন
প্রবীর চক্রবর্তী ॥

সম্পত্তির লোভে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে মৃত দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ নিয়ে জোরপূর্বক সম্পত্তি দখলসহ নানা অভিযোগে পিতার বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর মৃত দেখানো ওই সন্তানই নিজেকে জীবিত প্রমাণ করতে গতকাল শনিবার সকালে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। চাঞ্চল্যকর এ ঘটনার স্থান ফরিদগঞ্জ উপজেলার পূর্ব আলোনিয়া গ্রাম। পুত্রের দায়ের করা জালিয়াতির মামলায় বর্তমানে পিতা আহাম্মদ উল্যা বেপারী কারারুদ্ধ।

পিতার বিরুদ্ধে কেনো মামলা দায়ের করতে বাধ্য হলেন, সেই বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতেই ২০ নভেম্বর শনিবার সকালে ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রবাসী ছেলে এমরান হোসেন জহির প্রকাশ ঝুটন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে ঝুটন জানান, আমি আমার পিতা আহাম্মদ উল্যা বেপারীর প্রথম স্ত্রী খুরশিদা বেগমের ছেলে। এই ঘরে আমার আরেক বোন খাদিজা বেগম লাকি, বর্তমানে যিনি মৃত। আমার পিতার আমার মায়ের সাথে বিবাহবিচ্ছেদ হওয়ার পরে তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করেন এবং সেই ঘরে সৎমা ও তিন বোন রয়েছেন।

তিনি বলেন, জন্মের পর থেকে আমি পিতার আদর, স্নেহ, ভালবাসা থেকে বঞ্চিত হলেও জীবিকার টানে প্রবাসে যাওয়ার পর থেকে পিতার সার্বক্ষণিক দেখভাল করেছি। তাকে খোরপোষ বাবদ টাকা এবং সৎ বোনের বিয়ে ও বাবার চোখের অপারেশনের জন্যে টাকা দিয়েছি। কিন্তু আমার সেই জন্মদাতা বাবা আমাকে মৃত দেখিয়ে গত ০৮/০৮/২০১০ তারিখে আমাদের স্থানীয় ১১নং চরদুঃখিয়া পূর্ব ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় থেকে তৎকালীন চেয়ারম্যান হারুনুর রশিদ পাটওয়ারী ও সচিবের স্বাক্ষরে নিজের নামে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। একই তারিখে তিনি আমার বোন খাদিজা বেগম লাকির মৃত্যু সনদ দেখিয়ে নিজেকে একক ওয়ারিশি দেখিয়ে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। ফলে আমি আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও আমার পিতার কাছে আমি মৃত। জন্মদাতা পিতা হয়ে তিনি কীভাবে শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে মৃত দেখালেন, সেটা বিস্ময়। শুধু তাই নয়, তিনি তার পিতার একমাত্র সন্তান দাবি করে তথা আমার ৫ (পাঁচ) ফুফুর অস্তিত্ব অস্বীকার করে গত ২৭/১০/২০১০ তারিখে একই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে একই চেয়ারম্যানের নিকট থেকে ওয়ারিশ সনদ গ্রহণ করেন। জাল-জালিয়াতির এমন নজির আমি অদ্যাবধি দেখিনি।

এমরান হোসেন জহির আরো বলেন, আমি প্রবাস থেকে গত দেড় মাস পূর্বে দেশে ফিরে আসার পর আমার ফুফু কর্তৃক আমাকে দান করা ও আরেক ফুফু থেকে ক্রয়কৃত জমিতে বাড়ি নির্মাণ করতে গেলে বাধার সম্মুখীন হই। এক পর্যায়ে এর কারণ জানতে গিয়ে বাবার এসব কুকর্মের কথা জানতে পারি। ফলে আমি আজ আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে সংবাদ সম্মেলন করলেও আমার পিতার কাছে আমি মৃত। জন্মদাতা পিতা হয়ে তিনি কিভাবে শুধুমাত্র সম্পত্তির লোভে নিজের ঔরসজাত সন্তানকে মৃত দেখালেন, তা বিস্ময় নয় কি ?

জহির জানান, স্থানীয়ভাবে মীমাংসার জন্যে এলাকায় এই বিষয়ে কয়েকবার সালিসি বৈঠক হলেও কোনো সুরাহা না হওয়ায় আমি বাধ্য হয়ে গত ১৮ নভেম্বর বৃহস্পতিবার চাঁদপুর আদালতে অভিযোগ দায়ের করি। পরে আদালতের নির্দেশে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ অভিযোগটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার রাতেই আমার পিতাকে আটক করে। পরদিন ১৯ নভেম্বর শুক্রবার পুলিশ তাকে আদালতে পাঠালে আদালত আমার বাবাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।

তিনি বলেন, আমরা প্রবাসে থেকে এতদিন শুনে এসেছি, কুসন্তানের দ্বারা পিতা-মাতা নিগৃহীত হওয়ার নানা কাহিনী। আজ আমি নিজেই আপনাদের সামনে আমার জন্মদাতা পিতার আমার প্রতি করা ঘৃণ্য আচরণের কাহিনী বর্ণনা দিলাম। আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে সন্তান হয়ে পিতার বিরুদ্ধে কথা বলতে বুক কাঁপছে। কিন্তু আমার পিতা কিভাবে নিজের সন্তানকে মৃত দেখানোর মতো কাজটি করলেন, তার কি বুক কাঁপেনি ?

প্রেসক্লাব সভাপতি মোঃ কামরুজ্জামানের সভাপতিত্বে ও সম্পাদক আব্দুস ছোবহান লিটনের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে এ সময় এমরান হোসেন জহির প্রকাশ ঝুটনের মা খুরশিদা বেগম, স্ত্রী মুক্তা আক্তার, ফুফাতো বোন সরলা বেগম, ফুফাতো ভাই জাহাঙ্গীর আলম, সেলিম পাটওয়ারী, দেলোয়ার হোসেন এবং এলাকাবাসীর পক্ষে সোহেল ঢালী ও সামছুল আরেফিন মুকুল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়