রবিবার, ১২ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জের লক্ষ্মীপুরে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় গুরুতর আহত ৩ : এলাকায় আতঙ্ক
  •   শিক্ষা খাতে নজিরবিহীন রদবদল: একযোগে চার বোর্ড চেয়ারম্যানকে ওএসডি
  •   মধ্যরাতের আতঙ্ক
  •   চীনা সেনাদের ভারতের অরুণাচলে অনুপ্রবেশ: বিতর্কিত অঞ্চল নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে
  •   আপনার টাকা কোথায় গেল?

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০

দীর্ঘ ১৬ বছরেও শেষ হয়নি ফরিদগঞ্জের আলোচিত রুবেল হত্যার বিচার
শামীম হাসান ॥

২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জের বড়ালী গ্রামের বোরহান উদ্দিন টেলুর বড় ছেলে রুবেলকে কে বা কারা জবাই করে হত্যার পর খালের পাশে ফেলে রাখে। ক্যালেন্ডারের পাতায় ১৬টি বছর চলে গেলেও আজও রুবেল হত্যার বিচার পায়নি তার পরিবার।

২০০৫ সালে ফরিদগঞ্জ এআর পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী রুবেল পড়াশোনার পাশাপাশি চাচার দোকানে থাকতেন। সে বছর পরীক্ষার জন্য এসএসসি পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশনও সম্পন্ন করেছিলো রুবেল। স্বপ্ন ছিলো পরীক্ষা দিয়ে ভালো রেজাল্ট করবে। বাবা-মায়ের দুঃখ দূর করবে। কিন্তু তা আর হতে দিলো না ঘাতকরা। বৃষ্টির দিনে বাড়ির পাশের খাল পাড়ে জবাই করা হয় তাকে। চতুর্ভূজের মত গলার মধ্যস্থান থেকে শ্বাসনালী কেটে বিচ্ছিন্ন করে ফেলেছিলো খুনিরা।

খুন হওয়ার রাতে কাকার দোকান থেকে বাড়ির পথে রওনা দিলেও জীবিত অবস্থায় বাড়ি ফিরতে পারেনি রুবেল। পরদিন গ্রামের শ্রমিকরা মাটি কাটার জন্য বাড়ির পার্শ্ববর্তী খাল পাড়ে গেলে রুবেলের লাশ দেখতে পায়। চিৎকার করে মানুষ জড়ো হয় বিলের মধ্যখানের সরু খালে। লাশ দেখে বেহুঁশ হয়েছিলেন বাবা বোরহান উদ্দীন টেলু। জ্ঞান হারান রুবেলের মা। তৎকালীন সময়ের ৭ বছরের ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম রাসেল আর বড় দুই বোনের কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছিলো বড়ালী গ্রামের বাতাস। গলা কাটা লাশ দেখতে ভিড় জমিয়েছিলো গ্রামবাসী। স্থানীয় প্রশাসন, ওয়ার্ড মেম্বার ও তৎকালীন ইউপি চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছিলেন ন্যায় বিচার পাওয়ার। রুবেলের স্কুলের ছাত্ররা বিক্ষোভ মিছিল করে চেয়েছিলো রুবেল হত্যার বিচার। সময়ের ব্যবধানে ফিকেহ হয়ে গেছে সবই। কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানি শুকিয়ে ফেলেছেন বাবা বোরহান উদ্দীন টেলু। আজও বিচারের আশায় তাকিয়ে আছেন আদালতের দিকে।

রুবেলের বাবার দেওয়া বর্ণনা অনুযায়ী শান্তশিষ্ট ছেলে রুবেল গ্রামের কারো সাথেই বাকবিত-ায় জড়াতে দেখেননি কখনো। পারিবারিক কিংবা সম্পত্তিগত শত্রুতাও ছিলো না কারো সাথে। তবে বাবার মনে সন্দেহের বাসা বুনছে একটি অযাচিত ঘটনা। তা হলো, রুবেলের নিজ খালার কোনো ছেলেমেয়ে না থাকায় তখন তিনি এক মেয়েকে দত্তক আনেন এবং পরবর্তী সময় ওই খালার কোনো সন্তান না থাকায় গোত্রের বিলুপ্তি থেকে রক্ষায় দত্তক আনা সেই খালার মেয়ের সাথে বিয়ে হওয়ার বিষয়ে পারিবারিকভাবে কথা হয়েছিলো। তার বছর দুয়েক পরই এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিলো। বাবার ধারণা, যেহেতু তখন অন্য কোনো বিষয় ছিলো না তাই খালার মেয়ের সাথে বিয়ের বিষয়টিকে কেন্দ্র করেই হয়ত ছেলেকে এমন নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিলো।

পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রুবেলকে হত্যা করার পর ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করলেও সেই মামলাটি গত ১৬ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। সন্তানহারা বাবা-মা বিচারের আশায় দিনের পর দিন থানা পুলিশের দ্বারস্থ হলে সন্দেহভাজন ২ জনকে আটক করেছিলো পুলিশ। মাস দুয়েক হাজতে থাকার পর তাদেরও ছেড়ে দেয়া হয়।

ফরিদগঞ্জের আলোচিত সেই রুবেল হত্যাকাণ্ডের বিচার গত ১৬ বছরেও কেন হয়নি, বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ কী হতে পারে এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ শহীদ হোসেন চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, ২০০৫ সালে আমি চাঁদপুরেই ছিলাম না। তাই এ বিষয়ে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি সম্পর্কে অবগত না থাকায় বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ার কারণ হিসেবে সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য দিতে পারছি না। ২০০৫ সালে করা অপেক্ষমান কোনো মামলা এখন ফরিদগঞ্জ থানায় নেই বলেও জানান তিনি।

ছেলে হারানোর সেই করুণ আর্তনাদ আজও শেষ হয়নি বাবার। ছেলের শৈশবের দুরন্তপনা, ধীরে ধীরে বেড়ে ওঠা রুবেলের স্মৃতিগুলো হাতড়ে বেড়ান বাবা। ছেলে হত্যার এতগুলো বছর কেটে গেলেও ছেলে হত্যার বিচার পাবেন এমন একবুক আশা নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন বাবা। ভাবছেন কবে পাবেন ছেলে হত্যার বিচার?

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়